somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্ম আমার ধন্য হল- আ হা রে!! (২)

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(*কোনভাবেই লেখাটা এর থেকে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করতে পারলাম না। তবে ব্লগারদের অনুরোধ রইল লেখাটায় চোখ বুলানোর। বলা যায় না এই লেখা পড়ে আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ হয় পুরনো গাড়ি বিক্রি চক্রের ফাঁদ থেকে বেঁচে যেতে পারেন।)
তপর্বে লিখেছিলাম ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে বিড়ম্বনা কথন-এ পর্বে একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ! কিন্তু বিষয়টা অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ। আপনারা কেউ দালাল বা মিডিয়ার কাছে পুরনো গাড়ি বিক্রি করেছেন? উত্তরা খালপাড় দিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই দেখবেন সারি সারি পুরনো গাড়ি কেনা-বেচার দোকান। যাকে ভাব নিয়ে বলা হয় 'শো-রুম'! ঢাকা শহরে আরো অনেকগুলো স্থানে পুরনো গাড়ি বেচা-কেনা হলেও, আমি যতদুর জানি ওটাই সবচেয়ে বড় মার্কেট। খুব সহজ ও স্বাভাবিকভাবে সেখানে গাড়ি কেনা-বেচা হলেও কিছু ক্ষেত্রে অন্য এক খেলা হয়, যেই খপ্পড়ে পরে বিক্রেতা নিজের অজান্তেই ভয়ঙ্কর এক ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন বা আচম্বিতে ফেঁসে যান।

আমার হল শুরুঃ
২০১৯ সালের ডিসেম্বর বেশ কিছুদিন ধরেই অনুভব করছিলাম আমার পুরনো গাড়িটা বেঁচে একটু আপ মডেলের গাড়ি কেনার। ওই গাড়িটার দেহ সাস্থ্য ভাল থাকলেও চেহারায় একটা ফকিন্নি ভাব ছিল- সেটাতে চড়ে আমার ইজ্জত বহাল তবিয়তে থাকলেও পাড়া পড়শির নাকি আর ইজ্জত থাকে না। পরিচিত কারো সাথে দেখা হলেই বলে, ভাই এই মাল আর কদ্দিন চালাবেন-এইবার একটু পাল্টান। পুরনো রদ্দি মাল হলেও গাড়িটার প্রতি আমার মায়া ধরে গেছিল। তবুও পরিচিতজন ও প্রতিবেশীর ইজ্জত বাঁচাতে আমি ধানমন্ডি থেকে কালাচাঁদপুর(বারিধারার পুর্বপাশে) দৌড়ে বেড়ালাম পছন্দের এক গাড়ির খোঁজে। পেলাম অবশেষে একখানা।
শো-রুমের মালিক আমাকে গাছ বলদ ঠাউড়ে বিগলিত হাসি হেসে বললেন, ভাইজান এইটাতো অন্যপার্টি এসে মুলামুলি করে গেছে। বিকালে এসে কনফার্ম করার কথা। আপনার পছন্দ হইলে দাম ফাইনাল করে কিছু এডভান্স করে যান, তাহলে 'কাম তামাম হবে'। আমি তাঁর টোপ গিলে রাজী হয়ে মাইঙ্ক্যা চিপায় পড়লাম!
কিছু টাকা নগদ আর বাকিটা আমি আমার গাড়ি বিক্রি করে নেবার অফার দিলে তিনি বললেন, পুরাতন গাড়ি কবে বিক্রি হয় কি না হয় ঠিক নাই। এর থেকে কোন দালাল ধরে জায়গায় কল্লা কেটে দেন।

মিডিয়া খোঁড়া রহমানের জালে যেচেই ধরা দিলামঃ

আমার মনে পড়ল খোঁড়া রহমানের কথা। পাশের বাসার দাড়োয়ান বহু আগে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। খুব আদব লেহাজওয়ালা মানুষ। গাড়ি কেনা বেচার কারবার করে। তাঁকে ফোন দিলাম, সে দুই দিনের মধ্যে পার্টি এনে হাজির। পার্টির কথা বার্তাতেও আমার দিল খুশ। সময়ের অভাবে গাড়িটা প্রায় পানির দরেই ছেড়ে দিলাম। ( যদি পানির দর বলতে কি বোঝায় সেটা আমার মালুম হয় না- কোন কোন দেশে এখন বিয়ারের থেকে পানির দাম বেশী।)
তারা সব কাগজ পত্র রেডি করে সই সাবুদ নিয়ে নগদ টাকা গুনে দিয়ে সব ডকুমেন্ট নিয়ে বিদায় নিল। বিদায় নেবার আগে মুল দালাল বলল, বস আমরাতো এই গাড়ি শো-রুমে নিয়ে বিক্রি করব তা দুই তিনমাস সময়ও লাগতে পারে। সেজন্য নাম পরিবর্তনটা হতে একটু সময় লাগবে। আমি যথাস্তু বলে আমার এতদিনের প্রিয় সাথী গাড়িটার গমন পথের দিকে চেয়ে অতি আবেগে কয়েক ফোটা চোখের জল ফেললাম! আহা কত-শত স্মৃতি এই গাড়িটাকে ঘিরে।
***
করোনায় -চিন্তায় শুধু মৃত্যুভয়, ওদিকে ঘুণে করে সব ক্ষয়ঃ

০২০ সালের মার্চ মাস! ২৬ শে মার্চ থেকে লকডাউন শুরু। লক ডাউনের বছর সরকার গাড়ির মালিকদের ব্যাফক একটা ছাড় দিল; সেই বছর গাড়ির কাগজপত্র আপডেট না করলেও চলবে। পরের বছর কোন ফাইন ছাড়া একবারে দুবছরের ফি দিয়ে আপডেট করা যাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০/২১ সাল ছিল সবচেয়ে কম ট্রাফিক সার্জেন্টদের উৎপাতের বছর!
আমি সেই সুযোগ লুফে নিলাম। আমার ট্যাক্স টোকেনের সময় সেপ্টেম্বরে শেষ। তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেকদুর এগিয়েছে। অনলাইনে গাড়ির যাবতীয় বকেয়া ফি চেক করা যায়। আমি চেক করতে গিয়ে দেখি আমার এ আই টি ও ট্যাক্স বকেয়া; এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার। টাকার অঙ্ক দেখে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা জলের স্রোত বয়ে গেল! যতবার চেক করি টাকার অঙ্ক আর কমে না। পরে ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি একই কাহিনি।
আমি যতই মাথা চুলকাই আর একে ওঁকে জিজ্ঞেস করি কেউ সদুত্তর দিতে পারে না।
পরে এক দালালের সাথে যোগাযোগ করলে সে বলল, সরকার করোনার ফাঁকে বিশেষ সুযোগ দিয়ে অতি গুফনে কোন প্রজ্ঞাপন না দিয়ে এ আই টি প্রায় দ্বীগুন করে দিয়েছে!!!
আমার একটা জিনিস বুঝে আসে না; প্রাইভেট গাড়ির কেন AIT থাকবে। AIT মানে এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স। কেনরে ভাই কি জন্য এই ভয়ঙ্কর নিস্পেষন; কেউ কি সদুত্তর দিতে পারেন?

***এ বিষয় নিয়ে ব্লগার আহমেদ জী এস ভাই দু'বছর আগে চমৎকার একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন; কেউ চাইলে লেখাটা পড়ে আসতে পারেনমহাবেকুব জাতক কথন - ছয়

১৬০০ সিসির গাড়ির AIT এক লাফে ৩০ থেকে ৫০ হাজার হয়েছে। আমার গিন্নি একথা শুনে লাফালাফি শুরু করল; তোমারে বলছিলাম ১৬০০ সিসির গাড়ি কিইনো না। তুমি বেশী বুঝলা।
আমি তখন গ্যাঁড়াকলের চিপায়! তবুও হিসাব মিলে না; দুবছরের এ আই টি না হয় ১ লাখ হবে কিন্তু বাকি পঞ্চাশ??
শেষে কোন কুল কিনারা না পেয়ে সরকারের চৌদ্দগুষ্টিরে উদ্ধার করে চোখের জল নাকের জলে এক করে একগাদা টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে এসে অন্ধকারে ভুতের মত বসে রইলাম...

২০২২ সালের জানুয়ারি। NBR থেকে একখান প্রেমপত্র পেলাম। এমন মায়ায় মোড়ানো ভাব ভালবাসার বচন সমৃদ্ধ প্রেমপত্র একমাত্র আপনি এই বাংলাদেশের নাগরিক হলেই পেতে পারেন।

এই প্রেমপত্রখানা নিয়ে আলোচনা করব আরেকদিন। এমনিতেই এই লেখা আনাকোন্ডার মত ধেড়ে আর লম্বা হয়ে যাচ্ছে।
সেই পত্রের মাধ্যমেই জানতে পারলাম- আমি নিন্ম মধ্যবিত্ত থেকে একলাফে বিত্তবানের কাতারে পৌঁছে গেছি। আমার এখন দুই-দুইখানা গাড়ি! আয়করে তেমন কোন স্থাবর সম্পত্তির বয়ান না থাকাতে তাদের সন্দেহ হয়েছে- এবং তারা শতভাগ নিশ্চিত 'এই মালের গ্যাঁড়াকলে ফেলে ভাল মাল কামানো যাবে'।
আমার রাইতের ঘুম হারাম হয়ে গেল! কোন দুশমনে আমাকে আরেকখানা গাড়ি গিফট করল ভেবে ভেবে আমি হয়রান!!



অবশেষে 'দিমাগ কি বাত্তি জ্বালা'। আ রে তাইতো!!আমি ধরলাম খোড়া রহমানকে, সে প্রথমে আকাশ থেকে পড়ল যেন- তাঁরপর থেকে শুধু ধানাই পানাই করে।
কোনভাবেই আমাকে মুল মিডিয়ার খোঁজ দেয় না। ওদিকে আমি বহু আগে ক্যামেরায় তুলে রাখা ডকুমেন্টের ছবি খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান।
অবশেষে আর্কাইভে পেলাম যদিও কিন্তু স্ট্যাম্পের প্রথম পাতার ছবি ঝাঁপসা। অনেক কষ্টে সেই দালালের নাম ঠিকানা উদ্ধার করলেম কিন্তু NID'র নম্বর আর উদ্ধার করা গেল না।
অনেক ভয় ডর দেখানোর পরে 'রহমান' দালালের ফোন নম্বর আমাকে দিল।
সেই দালালকে ফোন দিলে সে খুব আদব লেহাজের সাথে কথা কইল- গাড়ি কোথায় বিক্রি করেছে সে নাকি ভুলে গেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানাবে বলল।
এরপর আমি যতবার ফোন দেই, ততবার এক কথা; বস আমি খুজতেছি। খোঁজ পাওয়া মাত্রই আপনাকে জানাব। ওদিকে NBR অধৈর্য। তারা বলল ঝামেলা সেটেল না করলে সামনের বছর থেকে তারা 'আয়কর' যেইটা নির্ধারন করে দিবে সেটাই দিতে হবে।
কোন দেশে আছি মাইরি- কি কয় শালার পুতেরা!!!



ভয়ে-হতাশায় দৌড়ের উপ্রে আমি যখনঃ
অবশেষে উপায় না দেখে আমি আমার এক বাল্য বন্ধু ডিবি কর্মকর্তার সাথে কথা বললাম। সে কয় দোস্ত তুমিতো বড় বাঁচা বাইচ্যা গেছ। আজকেই একজনরে ধইরা আনলাম। উনি এমন পুরনো গাড়ি বেঁচছিল। সেই গাড়ি ড্রাগ ক্যারি করতে গিয়ে ধরা খাইছে। আমরা জানি, মালিকের দোষ না তারপরেও তাঁর নামে তো গাড়ি।
এইরকম বহু কেস হচ্ছে। চোরাচালানী,ছিনতাই, খুন সহ হেন কোন আকাম নাই যা এইসব গাড়ি দিয়ে হচ্ছে না। গাড়ি ধরা পড়লেই মুল মালিক ফাইস্যা যায়। অথচ তারা জানেও না তাদের গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন হয় নাই। করোনার সময় থেকে সরকার ডিজিটালাইড TIN-এ গাড়ির AIT অটো অন্তর্ভুক্ত করাতে সবাই এখন বুঝতে পারছে বিষয়টা। আগেতো ধরা না পড়লে ঘুনাক্ষরেও জানত না কেউ।
তুই তাড়াতাড়ি গাড়ির বিক্রির যা ডকুমেন্ট আছে তাই নিয়ে থানায় একটা জিডি কর। ভয়ে আতঙ্কে আমি তখন শর্টস পরেই থানায় ছুটছিলাম জিডি করব বলে।
আমার ওই বন্ধু বিরাট ঘুষখোর! দেশের নামকরা এক সন্ত্রাসীর গিন্নীর কাছ থেকে ঘুষ খাওয়ার সময়ে ধরা পড়ায় চাকুরিচ্যুত হয়েছিল। দীর্ঘ দশ বারো বছর পরে চাকরি ফেরত পেয়ে মা লক্ষীর 'বর'-এর কৃপায় সার্টিফাইড ঘুষখোর হিসেবে আট হাতে টাকা কামাতে শুরু করে। পয়সা ছাড়া তাঁর কথা বলার সময় কম। তারপরেও আমি তাঁর স্কুলের বন্ধু বলে পাঁচ/সাত দিন হেন-তেন করল। ওই ছেলেক ফোন দিয়ে হুমকি ধামকি দিলে সে আরো বড় হেডাম দেখাইল। তাঁর আপন ভাই নাকি পুলিশের এস পি! লেও ঠ্যালা এখন আমি যাই কোথায়??
এই দালালদের বিশাল চক্র। তাদের হাতে এইরকম ডিবি পুলিশ র‍্যাব CID বহুত আছে। তবে সে একটু চিপায় পড়ে একবার বলল যে, গাড়ির মালিকের খোঁজ পাইছে। সেইটা এখন ময়মনসিংহ-তে আছে। কিন্তু সমস্যা হইল গাড়িটা এক্সিডেন্ট করায় সেই লোক নাকি গাড়িটা গ্যারেজে ফেলে রাখছে। সেটা নাকি এখন রদ্দি মাল - সের মেপে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।
আমি জানি এটা ডাহা মিথ্যে কথা। তাঁর মানে আমি কি সারাজীবন ওই গাড়ির AIT দিয়ে যাব? কি ভয়ঙ্কর কথা।
আমি সেই লোকের ঠিকানা দিতে বললাম। জানালাম আমি নিজে গিয়ে গাড়ির হাল হকিকত দেখে আসব। দিচ্ছি দেব বলে সে ফের ঘোরানো শুরু করল।
ঝামেলা সুরাহা করতে NBR-এ টাকা দিতে হল একগাদা। ওদিকে দুই গাড়ির ফের এক বছরের AIT।( এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স)।
মাঝে এক জনের পরামর্শে BRTA-তে যোগাযোগ করলাম গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ করে নম্বর মুছে ফেলার জন্য।
তারা জানাল, এটা এখন আর হয় না। TIN-এ যে গাড়ি নিবন্ধন করা আছে সেটা মালিকানা বদলী না হলে নিবন্ধন বাতিল হবে না। তবে আর একটা পদ্ধতি আছে, আপনি পুরাতন গাড়িটা এখানে নিয়ে আসেন- আমরা স্ক্র্যাপ করে নিবন্ধন বাতিল করে দিচ্ছি।
তবে এক দালাল পিছন থেকে চুপি চুপি এসে বলল, বস আমারে পাঁচ হাজার টাকা দেন। আমি নিবন্ধন বন্ধ করে দিচ্ছি- ওই ব্যাটা আর নাম পরিবর্তন করতে পারবে না।
তাইলে আমার লাভ কি? ওই ব্যাটাতো ইহজনমে আর নাম পাল্টাবে না- আর আমার ফি বছর ট্যাক্স গুনতে হবে।



যেখানে দেখিবে ছাই- কুড়াইয়া দেখ তাই, মিলিবেই শুধু ছাই!!
এ নিয়ে আমি আরো খানিক দৌড় ঝাপ করলাম! আমার এক এমপ্লয়ী আছে সে 'বাচ্চা দৈত্য' নামে একটা বাংলা সিনেমায় নামি নাম ভুমিকায় অভিনয় করেছিল। যা হয় হবে ভেবে দালালকে শাসানোর পাঠালাম- কিন্তু তাঁকে গিয়ে আর পায়নি।
একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলে যোগাযোগ করলাম। সেখানকার ক্রাইম রিপোর্টার আমাকে বলল, তপন ভাই এই চক্রটার খবর আমরা জানি, কিন্তু ভুক্তোভুগী কেউ অন ক্যামেরা কথা বলতে চায় না। আপনি যদি আপনার মত আর দু'চারজনকে যোগাড় করতে পারেন যারা কথা বলবে তবে য়ামি পুরো এক পর্বের ক্রাইম রিপোর্ট করব।
আরে ভাই আমি বাকি লোক কই পাব? প্রচন্ড কাজের চাপ- তারপরেও ফাঁকে ফোকড়ে এই কাজে সময় দেই।
অবশেষে আমাকে একটা আশার আলো দেখাল আরেকজন গাড়ির দালাল। যার গ্যারেজে নিয়মিত আমি আমি গাড়ি সার্ভিসিং এ পাঠাই। সে পনের হাজার টাকা চাইল; সার্ভার থেকে পুরা গাড়ির ফাইল গায়েব করার জন্য।
কোন বিকল্প আর নেই আমার হাতে। টাকা পয়াসা কিছু কম করে অবশেষে সেই পথেই হাটলাম।
সে ফোন দিইয়ে বলল, গুরু কাম হয়ে গেছে। মিষ্টি খাওয়ান। কালকে কাউরে ব্যাঙ্কে পাঠাইয়েন ট্যাক্স টোকেনের জন্য। দেখবেন 'ওই নম্বরের গাড়ি খুঁইজাই পাইব না।'
***



মারে আল্লা রাখে কেঃ
দুদিন বাদে আমি দিয়াবাড়ির মেট্রোর নীচ দিয়ে বাঁয়ে মোড় নিলাম -বেড়ি বাঁধ দিয়ে ধৌড় হয়ে আশুলিয়া দিয়ে ফ্যাক্টরি যাব বলে। তুরাগ থানার দিকে মোড় ঘুরতেই দেখি হলুদ পোশাক পড়া দুজন সার্জেন্ট! ওইখানে বিগত দিনে আমি কখনো সার্জেন্ট দেখিনি। আমার গাড়ি দূর থেকে ইশারা করল থামবার জন্য। আমারতো কোন টেনশন নাই। তদাপিও মনের মধ্যে কু ডাকল।
সার্জেন্ট গাড়ির কাগজ পত্র দেখলেন অনেক্ষন খুটিয়ে। সামনে গিয়ে রেজিস্ট্রেশোন নম্বর মেলালেন। গাড়ির বনেট খুলে চেসিস নম্বর চেক করলেন। পয়সা খাবার কোন রাস্তা বের করতে না পেরে সম্ভবত ভদ্রলোকের মুখ গম্ভীর। অবশেষে এ পাশ ঘুরে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, গাড়ির মালিক কে আপনি?
-জ্বী আমি- কোন সমস্যা?
-আপনি গাড়ি রেজিষ্টেশন করছেন কোথা থেকে?
-কেন মিরপুর বি আর টি এ থেকে। ' আমি তাঁর কথা শুনে ভীষণ আবাক।
সার্জেন্ট চিন্তিত মুখে বলল, মেশিনে আপনার গাড়ির নম্বর খুঁজে পাচ্ছি না!!!
লে ঠেলা - আমি যা ভাবছি তাই হয়তো সত্যি হবে। বরাবর আমার ভাগ্যেই এভাবে কয়লার কালিতে এমন কিছু ব্যতিক্রমী দুর্ভাগ্যজনক গল্প লেখা হয়!!

ফের দ্বিগুণ টাকার শ্রাদ্ধ!!
যা ভেবেছিলাম তাই; গাড়ির ডিটেইলস মুছে ফেলার সময়ে দুটো নিবন্ধন নম্বরে গড়মিল করে ফেলেছে। আমার পুরনো গাড়িটা এখন বহাল তবিয়তেই আমার গলায় ঝুলে আছে আর নয়াটার গর্দান কাটা পড়েছে!!! হায় মাবুদ এ কোন গ্যাঁড়াকলে পড়লাম!
দালাল মহাশয় তাঁর ভুল আর স্বীকার করেন না। ওই ভুলটা নাকি আমিই করেছি। তবে তিনি সিরিয়াসলি উদ্যোগ নিলেন বিষয়টা সুরাহা করার জন্য।
কিন্তু খেলা আছে অন্যখানে; এবার টাকা ( আদপে ঘুষ) দিতে হবে দ্বীগুন! এক অংশ আগের গাড়ির নিবন্ধন বাতিলের জন্য- আর এক অংশ আমার নতুন গাড়ির বাতিলকৃত নিবন্ধন ফিরিয়ে আনার জন্য। তবে দালালেরা কোন খরচ-পাতি নিবে না বলে অঙ্গীকার করল।

BRTA-তে ফেরঃ
ঝামেলা এখানে শেষ নয়। সমস্যাটা আমাকেই সশরিরে গিয়ে বি আর টি এর বড় কর্মকর্তাকে বোঝাতে হবে। তিবি যদি দয়াপরবশত হয়ে রাজী হন তবে হইল- নাইলে না।
নির্ধারিত দিনে মিডিয়া(দালালের আধুনিক নাম) নিয়ে গিয়ে বসাল সেখানকার মাঝারিমানের এক কর্মকর্তার রুমে। ইনার হাতেই মুল কাজ। পরিবর্তনটা ইনিই করেন- তবে উপরের অনুমতি লাগে; তাই বড় কর্মকর্তার মাজাজ মর্জি বুঝে মন ভোলানোও তাঁর কাজ।
সেদিন তাঁর রুমে মোট দুঘন্টা বসে ছিলাম। সেই কর্মকর্তা আমাকে শিখিয়ে দিলেন, বড় স্যার জিজ্ঞেস করলে আমি যেন বলি তিনি আমার ভাই এর বন্ধু। তথাস্তু! তিনি একবার বড় কর্তার রুমে নিয়ে আমাকে কোর্টে নিয়ে যেন এজলাসের দাড় করিয়ে আরেকজনের সাথে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত বড় সাহেবের মেজাজ খানিকটা খিঁচরে থাকায় মিনিট দশেক অপেক্ষা করে ফিরে আসলেন।
আমাকে বললেন, এখন বললে উনি হুট করে মানা করে দিতে পারেন। একবার না করলে আপনি ফেঁসে যাবেন।

ব্যাপক এক টেনশনের ধাক্কাঃ
ঘন্টা খেনেক ফের বসে থেকে অধৈর্য হয়ে গেলাম! তবে এই অপেক্ষায় এমন একটা বিষয়ের সাক্ষী হলাম যা কল্পনাতেও ছিল না।
ইনি খুব ব্যাস্ত মানুষ। খানিক ডেস্কে বসে কাজ করেন আর শুধু ব্যস্ত পায়ে ঘর-বাহির করছেন। লাঞ্চের সময়ে সব খালি হয়ে গেল। তিনি আমাকে ইশারা করলেন, চলেন...
ওমা বড় সাহেবের রুমের সামনে গিয়ে দেখি, রুমের বাইরে থেকে তালা ঝোলানো।
আমার বুকে ছ্যাঁত করে উঠল। আজকে পুরা দিনটা বেকার গেল বলে আঁতকে উঠলাম।
মাঝারি কর্মকর্তা গেটের সামনের দারোয়ানকে যেন, ইশারায় কি জিজ্ঞেস করলেন। সে তাঁর টুল থেকে উঠে গিয়ে অন্য রুম থেকে আরেক জনকে ডেকে নিয়ে আসল। সেই লোক এসে পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে দিল। ভিতরে ঢুকে আমার চোখ ছানাবড়া!! বড় কর্তা নিরিবিলিতে কোন এক বড় মাপের কারো সাথে গোপনে শলাপরামর্শ করছেন। একেই মনে হয় বলে সত্যিকারে' রুদ্ধদ্বার বৈঠক'!!
মাঝারি কর্মকর্তা তাঁর কাছে গিয়ে অতি সম্ভ্রমের সাথে আমার ঘটনা সংক্ষেপে জানালেন।
আমি মনে মনে প্রস্তুত হয়ে আছি, যতটা করুণ ও কাঙ্গালভাবে আমার দুরবস্থা বয়ান করা যায় তাঁর সার সংক্ষেপ নিয়ে।
তিনি শুধু আমার দিকে ফিরে বললেন, গাড়ি কি আপনার?
জ্বী বলেই 'বাকি কাহিনী' বলার আগেই তিনি থামিয়ে দিলেন। এরপর কম্পিউটারে খোঁচাখুঁচি করে কি একটা কাগজে লিখে মাঝারি কর্তার হাতে ধরিয়ে দিলেন।
তিনি আমার দিকে চেয়ে মিস্টি হেসে বেরিয়ে যাবার ইশারা করলেন। 'আমার তখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল'।
~গল্প আরেও খানিক আছে- সেটুকু থাক নাহয়...

অবশেষে 'নটে গাছটি মুড়াল আমার গল্প (পুরনো গাড়ি বিক্রির অভিশপ্ত আখ্যান) ফুরাল।'

আগের পর্বঃ জন্ম আমার ধন্য হল- আ হা রে!!
---------------------------------

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৪১
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×