লেখক শেরজার জোকগুলো কেমন লেগেছে, আপনার? আমি বলেছিলাম, সে সৎ নয়; অসৎ লোকেরা কিছুসময় বর্ণচোরা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু লিখতে গেলে উহা বের হয়ে আসতে পারে।~ ব্লগার সোনাগাজী বলেছেন মিরোরডডলকে।(যে কোন মন্তব্য করার আগে ব্লগার সোনাগাজীকে পুরো পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল।)
চমৎকার মন্তব্য! আমি মোটেও দ্বীমত পোষন করছি না। ব্লগের শুধু আমি নই প্রায় কম-বেশী সবাই বর্ণচোরা। আমরা ক'জন কজনকে সত্যিকার অর্থে চিনি জানি, কজনের সত্যিকারের নাম-ধাম ঠিকানা কুষ্ঠি জানি? জানলেও সেটা কতটুকুই বা সঠিকভাবে জানি? নিজেদের লেখায় যেভাবে আমরা নিজেকে প্রকাশ করি আসলে কি আমরা তাই? কতজন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনি যা আসলে সেটাই সেভাবে প্রকাশ করেন? আমরা বন্ধুদের কাছে আমাদের স্বত্ত্বা লুকাই, নিজের পরিবারের কাছে কিছু লুকাই,কিছু প্রেমিকের কাছে, কিছু কলিগদের কাছে,কিছু নতুন পরিচিত মানুষদের কাছে, কিছু বহুদিনপরে দেখা হওয়া বন্ধুদের কাছে। ফের অন্যভাবে উপস্থাপন করি পাওনাদারের কাছে, সেই আমিই পাল্টে যাই আমি যাকে ধার দিয়েছি তার মুখোমুখি হই।
মানুষ বুঝতে শেখে মানে ভন্ডামীর মুখোশ পড়তে শেখে। সহজ সরল অংক।
****
আমার জন্ম সত্তুরের উত্তাল সময়ে। একাত্তুরে যুদ্ধের সময়ে আমি দুধের শিশু। আমার মা আমার নিজের জীবন ও ইজ্জত বাঁচাতে কোলে করে শহর গ্রাম মফস্বলে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বেড়িয়েছেন যখন ঠিক তখন ব্লগার সোনাগাজী ( সেভাবেই জানি) কামাল ভাই, ঠাকুর মাহমুদ ভাই সহ অনেক ব্লগার( যারা তাদের 'মুক্তিযোদ্ধা' পরিচয় গোপন রেখেছেন) তারা জান বাজী রেখে যুদ্ধের ময়দানে বাংলাদেশকে বাংলা ভাষাকে আমদের মাতৃভুমিকে বাঁচাতে লড়ছেন।
আমি এই ভেবে ভীষন গর্ববোধ করি যে, জাতির এইসব সূর্যসন্তানদের সাথে আমরা আমরা আজ ব্লগিং করছি আমাদের অভিজ্ঞতা তাদের সাথে শেয়ার করছি সেই সাথে তাদের বিশাল ব্যাপক অভিজ্ঞতার ক্ষুদ্রতম অংশ আমরা জানতে পারছি।
মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করা খুব কম মানুষই এখন সুস্থ দেহে বেঁচে বর্তে আছেন। যারা আছেন তাদের মধ্যে শিক্ষিতের হার বেজায় কম- এর মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের খুব কম অংশই আধুনিক প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন। আর ব্লগিং করছেন তো নেহায়েত হাতে গোনা কয়েকজন।
আমি আমার প্রত্যেক অগ্রজকে শ্রদ্ধা করার চেষ্টা করি। যেমন ডঃ এম আলী, সোনাবীজ ভাই, জুলভার্ণ বা হুমায়ুন ভাই, আহমেদ জি এস ভাই থেকে শুরু করে, খায়রুল ভাই, কামাল ভাই, আজিজ ভাই সবাইকে। প্রতিটা নারী ব্লগারকে আমি আপু বলে সন্মোদন করার চেষ্টা করি। ছোট বড় সব ব্লগারকে আমি ভাই সন্মোধন করি। এরা আমার কেই অগ্রজ কেউ অনুজ। কেউ আমার আত্মীয় স্বজন পড়শী বন্ধু নয়। এদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যেন অন্য কোন ঝামেলায় না জড়াই সেজন্য আমি ইচ্ছে করেই সবার সাথে মুখোমুখি যোগাযোগটা এড়িয়ে চলি। যে কারণে দু'একজন ব্লগার বেশ মনে কষ্ট পেয়েছেন। এখানে আমি বর্ণচোরা- বেশ ভাল রকমের বর্ণচোরা। আমি নিজের স্বরূপ কাউকে দেখাতে চাইনা। আপনি খারাপ ভাবলে ভাববেন- খারাপ জানবেন তো না!!!
ব্লগার সোনাগাজীকে বলি- আপনি কমবেশী আমার থেকে ২০ বছরের বড় হবেন। পৃথিবী দেখেছেন আমার থেকে ঢের বেশী। নিশ্চিতভাবে বাস্তবিক জানাশোনার বহর আমার থেকে বেশীই হবে। আমাকে অপেক্ষা করতে দিন- আপনার বয়সে যখন পৌছুব (যদি বেঁচে থাকি) তখন জ্ঞান গম্যি আপনার মত হতেও পারে। পৃথিবীর সব মানুষ সব কিছু জানবে এমন তো কোন কথা নেই। আপনি আমাকে কেন বার বার থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন? আপনাকে অসম্মান করে যে আমি কষ্ট পেয়েছি সেটা আপনি বিশ্বাস করেন? যদিও আপনি যে জোকসটাকে অশ্লীল ভাবেন সেটা আমার মান্দদন্ডে মোটেও অশ্লীল নয়। আপনার আর অশ্লীলতার মানদন্ডের হিসাব কিতাবই মিলবে না। আর পার্থক্যটা এখানেই।
আমি বার বার স্বীকার করেছি আমি ফালতু লেখি- গার্বেজ লিখি। তারপরে আপনার কি দায় ঠেকেছে আমাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দেবার?? আপনার স্মমান নিয়ে আপনি থাকতে না পারলে আমার ভেতরের রাক্ষসকে আমি কতক্ষন ঘুম পাড়িয়ে রাখব বলুন।
আমি আগের ক্যাচাল লেখায় রাজীবের মন্তব্যের উত্তরে বলেছিলাম এই পোস্টের জন্য আপনাকে ব্যান করলে আমি ব্লগ ছেড়ে দিব- আপনি মনে করতে পারেন?
আর গত পোস্টে যখন দেখলাম আপনি প্রায় ব্যানের মুখো হওয়ার পরে আমি মন্তব্য বন্ধ করে দিলাম। আমি কখনোই কোনদিন চাইনি আমার জন্য আপনি কেন কেউ একজন জেনারেল হোক। ব্লগার রাজীব নুরের ব্যাপারে আমি বার বার দুঃখ প্রকাশ করেছি- মডারেটরকেও আমি অনুরোধ করেছি তার ব্যান তুলে নেবার জন্য।
***
আমি অসৎ- সিম্পল ব্যাপার!
আমিভেরি স্মল স্কেলের ডাই হার্ট বিজনেসম্যান। বিগ, স্মল, মাইক্রো সব ধররনের ব্যাবসায়ীরাই খানিকটা অসৎ ( চাকুরীজীবীদের কথা আমি বলতে পারছি না, কারন ওটা আমি করিনি কখনো)- সব ক্ষেত্রেই কোন কোন কোন অবস্থায় আপনাকে অসৎ হতেই হবে। আপনি যেভাবেই যত বুক ফুলিয়েই বলেন না কেন- আপনি কিংবা সমাজ ধর্ম বা আইন সেটাকে সিদ্ধ বানিয়েছে সত্য কিন্তু সেটাতে অসততা মিশে আছেই।
***
আমি শেরজা সোনার বা রূপোর চামচ মুখে দিয়ে জন্মাইনি। একটা সময় থেকে স্ট্রাগল করেছি- বেশ বড় ধরনের স্ট্রাগল! নিজের পায়ের নীচের ভিত শক্ত করার জন্য কতই না ছল চাতুরি মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছি। এক এক ইঞ্চি মাটির জন্য লড়াই করেছি। সে লড়াই রক্তক্ষয়ী নয়, সেটা স্বার্থের সেটা অর্থের সেটা নিজের অস্ত্বিত্তের লড়াই। বারবার ঝড়ে ভেঙ্গে গেছি নুইয়ে পড়েছি ফের উঠে দাড়িয়েছি। হার মানিনি। আমি জানি ব্যর্থতার জলুনি! আমি সহজ সরল অতি নমনীয় একজন মানুষ ছিলাম হয়তো একদিন। আমি তো জানি হেরে গিয়ে পড়ে গেলে কিভাবে স্বার্থপর পৃথিবী চারপাশ থেকে চেপে ধরে -নিজের চেনা জানা জন-স্বজনরা মুহুর্তে অচেনা হয়ে যায়। এই আমি বার বার হেরে গিয়ে ফের লড়াই করে, আরেকজনকে ডিঙ্গিয়ে, এক টুকরো মিথ্যেকে সত্য বলে চালিয়ে, অন্য দশজন মানুষষের থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করে, দুর্বল আরেকজনের কাছ থেকে কাজ ছিনিয়ে নিয়েছি। সেই অর্থে আমি তো অসৎ।
আমি বহুবার ট্যাক্স ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছি- সেই অর্থে আমিতো অসৎ। আমি সরকারি দফতরে বহু কাজ সময়মত করতে গিয়ে ঘুষ উৎকোচ দিয়েছি সে অর্থে আমিতো অসৎ।
একবার ব্যর্থ মানুষ হলে তার পরিনাম হয় ভয়াবহ! আমার চারপাশে এমন অগুনতি বন্ধু পরিজন আছে- তারা অসহায় উচ্ছিষ্ঠ। তাদের সবাই দয়া দেখায়, করুনা করে। আমাকে দু'চারজন মানুষ হয়তো ঘৃণা করে আমার মৃত্যু কামনা করে ঠিক তেমনি কিছু মানুষ হয়তো আমাকে দেবতুল্য জ্ঞান করে। কেউ হয়তো আমাকে চামার বলে, হারামী কয়, কুত্তা কয়। কেউ বলে, নির্ভেজাল সৎ এক্কেবারে খাটি মানুষ।
আমি যেখানে বসে আড্ডা দেই এখন তার নব্বুইভাগ সভ্য আমি যে লেখালেখি করি শুনলে দাঁত কপাটি লাগতে পারে। সেখানে আমি একজন বর্ণচোরা মানুষ।
মানুষ আমি পাল্টাই প্রতি মুহুর্তে পাল্টাই। মুড ভাল থাকলে আমি এক রকম- খারাপ থাকলে আমি এক রকম। হঠাৎ করে আমি নিজে এমন ভাবে পালটে যাই যে নিজেকেই নিজে চিনি না।
ব্লগে আমি আমার ভালোমানুষির কথা বলি- আর দশজনও তেমনি হয়তো বলে। তবে সত্যিকারের ভাল মানুষ অবশ্যই আছে কিন্তু আমি তেমন একজন শুধু ভালোমানুষের খোঁজ পাইনি আজ অব্দি সেটা আমার দুর্ভাগ্য।
****
অ।ট। মিরোর আপুকে করা সোনাগজীর মন্তব্যটি আমার সংগ্রহ করা নয় অন্য একজন ব্লগারের! ব্লগের প্রতি ভালবাসাটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিছুদিন একটু দূরে থাকতে চেয়েছিলাম আমি। তিনজন ব্লগার এখানে ফের টেনে আনল- তাদের ভালবাসায় আপ্লুত আমি। পরের পোস্টটা 'হেরে গিয়েও হার না মানা' আমার ব্যাবসায়িক জীবনের শুরুর দিকের গল্প' নিয়ে আসব। উৎস্বর্গ থাকবে এই তিনজনকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




