somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেয়েছিলুম বটে!

২০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতকাল 'বদহজমকারী' এক পোস্ট দিয়ে সেটা ফের মিরোর আপুকে উৎসর্গ দায়ে এক মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হবার হাত থেকে বাঁচার প্রয়াসে দ্রুত ড্রাফটে নিয়ে কোন মতে ব্লগ ছেড়ে পালাই!!
আমার পোস্ট দেখে ভীষন বিরক্ত হয়ে তিনি নিজেই 'স্মৃতি জাগানিয়া রান্না' নামে সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিখানা প্রকাশ করে ব্লগে সাড়া ফেলে দেন। ' দাগ থেকে যে মাঝে মধ্যে ভাল কিছু হয় এই তার হাতে-নাতে প্রমাণ।
****
ছাত্র অবস্থায় বিদেশে গিয়েছে কিন্তু রান্না করেনি এমন বাঙ্গালী ছেলে মেয়ে হাতে গোনা। আমার এক বন্ধুতো বিদেশে বসে নিজে নিজে রান্না শিখে এখন বাংলাদেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমারও রান্না হাতেখড়িটা তেমনি বিদেশে হলেও এর সম্পর্কটা পুরনো।
ছোটয়বেলা থেকেই অন্য ভাইবোনের থেকে আমি একটু বেশী মা ন্যাওটা ছিলাম। মায়ের আশে পাশে বেশী ঘুর ঘুর করতাম- বিশেষ করে মা যখন রান্না করত তখন তার খুব কাছে থেকে লক্ষ্য করতাম আর ফুট ফরমায়েশ খাটতাম। রান্নায় কখনো হাত না লাগালেও তার প্রতি একটা বিশেষ টান বা ঝোঁক অনুভব করতাম। মার রান্নার পুরো স্টাইলটা আমি ফলো করতাম।
***
এবার আসি রাশিয়ার গল্পে; রাশিয়ার খাবারের গল্প নিয়ে আমার বেশ কয়েকটা লেখা আছে। কি এক মরার দেশে গিয়েছিলাম কিচ্ছু মুখে তুলতে পারি না। গন্ধ আর স্বাদ দুটোতেই বমি পায়। আমাদের মধ্যে একমাত্র হুজুর শাহারিয়ার গপাগপ করে খায়। বাকি সবার অবস্থা করুন! রুশ কাপুস্তা খাঁটি বাংলায় যাকে বলা যায় পাতাকপি সিদ্ধ দেখলেই গা গুলায়। ভাতের মাড়ের মধ্যে মাংসের ডেলা ( রাশিয়ান কাটলেট) আর আলু ছ্যানা (পট্যাটো ম্যাশ গুলাইশ) খাইতে গেলে মা মা করে চিৎকার করতে মন চায়- না আছে লবন মশলা না আছে ঝাল। যবের তৈরি কালো রুটিতে কেমন বোটকা গন্ধে নাকে ঝাপটা দেয় -খেতে গেলে টক টক লাগে। বাতন বা সাদা রুটি যদিও খাবার উপোযোগী মাখন আর চিনি মেখে- কিন্তু এই জিভতো ওই স্বাদ নিতে তখন অভ্যাস্ত নয়। সোক বা জুস মানে শুকনো ফল সিদ্ধ করে তার পানি; সে এক মাল মাইরি। চা বলতে যে জিনিস ভারত থেকে যায়; সে এক জিনিস হরি- কফি ও তথৈবচ!
মাইনাস ২৫/৩০ সে. এ কলিজা পর্যন্ত বরফ হয়ে যায়। কোনমতে ধড়াচুড়া পড়ে ক্যান্টিনের খাবারের দুর্গন্ধের ঝাপটা সয়ে ডিম পাউরুটি ওয়েফার আর সোক নিয়ে চলে আসতাম। সিদ্ধ ডিমগুলো সেন্ট্রাল ওয়াটার হিটারের উপরে রাখতাম গরম গরম খাবারের জন্য। সারাদিন ঘ্যাষ ঘ্যাষ করে ওই চাবাইতাম আর মায়ের হাতের হাজারো পদ খাবারের কথা স্মরণ করে রাশিয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে চোখের জল নাকের জলে এক করতাম।
আমার মায়ের হাতের অতি সুস্বাদু রসনা ভার্চুয়ালি আস্বাদনের লোভে চারপাশে ছোটখাট একটা ভীড় হরহামেশাই থাকত। তারা খুটিয়ে খুটিতে প্রতিটা রান্নার তরিকা জিজ্ঞেস করত আর মুল আকর্ষন ছিল স্বাদ কেমন? আমি বলতাম দশগুন বিশগুন বাড়িয়ে- এতে নিজের যেমন তৃপ্তির সাথে আকাঙ্খা বেড়ে যেত বহুগুন ওদের চোখ-মুখের মধ্যেও বিধ্বংসী এক লোভ দেখেতাম। মনে হোত এমন একটা দেশী পদের জন্য দু-দশটা খুন করা মামুলী ব্যাপার!

এভাবে কি চলে? কি করা যায়? এরপরে অংশটুকু আমি আমার আরেক লেখা রুশ কারতুসকা থেকে নিচ্ছি;
চারতলায় রুশ ছেলেমেয়েরা সন্ধে হলেই হল্লা করে রান্না করে আর আমরা উপরে ওঠার সিঁড়ির মুখের দরজা খান দিয়ে জিরাফের মত গলা বাড়িয়ে জুল জুল চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।আহারে আমরা যদি এমন করে রেঁধে খেতে পারতাম? কোথায় বাজার-কোথায় হাট?কিস্যু চিনিনা।এসেছি পনের দিনও হয়নি।হোস্টেল থেকে দু'শ কদম দুরে ভার্সিটি আর দেড়’শ কদম দুরে ক্যান্টিন।আমাদের দৌড় সর্বোচ্চ সামনের ওই রাস্তাখানা পেরিয়ে টেলিফোন একচেঞ্জ পর্যন্ত।মাইনাস তিরিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসে এর থেকে বেশিদূর যাওয়াটা দুঃসাহসিক অভিযানের মত ছিল। অবশেষে কয়েকজন তরুণ একদিন পরিকল্পনা করলাম সেই দুঃসাহসিক অভিযানের।

এরপরে যদি চান রাশিয়ায় প্রথম আলু কেনার হৃদয় বিদারক গল্পটুকু পড়ে নিন এখান থেকে;
রুশ 'কারতুসকা'

আমরা বাজারে পেলাম শুধু আলু, মুরগী, বাতন বা সাদা পাউরুটি, মাসালা বা মাখন, লবন, গোল মরিচ আর পেয়াজ। এই দিয়ে রান্না হবে। সেই রান্নার প্রধান শেফ নির্বাচিত হলাম আমি। আমার অপরাধ ; সারাক্ষন সবাইকে দুনিয়ার যত স্বুসাদু বাঙ্গালীয়ানা খাবারের গল্প করে লোভ ধরানো। আমি যতই চিৎকার চেঁচামেচি করে না না করি হোস্টেলের প্রায় সবারই তত ধারনা বদ্ধমুল হচ্ছিল আমি পাঁকা রাধুনী- এমনিতেই বিনয় দেখাচ্ছি। সবার সেদিন সে কি উৎসাহ উদ্দীপনা রান্না নিয়ে- শ্রীলঙ্কান 'দিমিত' পর্যন্ত অকারনে খিল খিল করে হাসছে আর লাফাচ্ছে! আমকে বার বার হেসে হেসে বলছে ' আই নো ইউ আর গুড শেফ'।

সব সরঞ্জাম নিয়ে আমরা প্রায় জনা বিশেক আদম চার তলায় যাবার পরে পুরো হোস্টেলের রুশীয়, কাজাক, তা্জাক জর্জীয়, আজেরী ,আর্মেনীয়, বেলোরুশীয়, উক্রেনীয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে হুলস্থুল শুরু হয়ে গেল! বিশাল রান্নাঘর যেন তখন কোন জাদুকরের আখড়া!
****
আজ এইটুকুন থাক- আমার স্মৃতি জাগানিয়া রান্নার বাকি অংশটুকু দিব কালকে। বড় লেখা ব্লগারেরা পড়তে চায় না তাই খন্ডে খন্ডে এভাবেই দিব ভাবছি।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২৪
৪৭টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×