somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওয়া ঘাটে ইলিশ খাওয়া

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হু বছর ধরেই মাওয়া ঘাটে ইলিশ খাবার গল্প শুনি! করোনার আগে থেকেই শুরু কিন্তু করোনার পরেই বাংলাদেশে ফুড ভ্লগারদের চরম উত্থান। ওরা সারা দেশের আনাচে কানাচে দাবড়ে বেড়াচ্ছে আর নিত্য নতুন ফুডের ভিডিও করে মারাত্মক সব রিভিউ দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে ইউটিউব ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামে। কিছু ছেলে মেয়ে বুড়ো তাই দেখে বুনো ষাড়ের মত ছুটছে সেইসব খাবারের স্বাদ চাখতে। ঢাকা এবং তার আশেপাশে যে হারে নিত্য নতুন রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে স্ট্রিট ফুড আর বুফে নিয়ে তেলেসমাতি কান্ড চলছে তা দেখে আর চেখে আমি ব্যাপক হতাশ। ছোট ছোট সখের খাবার কারবারিরা নিজেরা রন্ধনশিল্পী নয় বটে কিন্তু ইউটিউব দেখে তারা নামে পাঁকা রাধুনী হয়ে উঠছে।
উরাধুরা একটা নাম দিয়ে চমৎকার লোভনীয় সব ছবি ফেসবুকে ফেসবুকে একটা পেজ খুলে আপডেট দিয়েই কাম তামাম। এরপরে কাজ হল ফুড ভ্লগার আর ফুড পান্ডার! নব্বুইভাগ খাবার অর্ডার দিয়ে প্রায়ই হতাশ হতে হয়- মুল্য, পরিমান, কোয়ালিটি আর পরিচ্ছন্নতা সবখানেই শুভঙ্করের ফাঁকি!
ফুড কোর্ট আর বুফের চক্করে আটকে যাচ্ছে বাঙ্গালী! ৯৫০ টাকায় ১৫০ পদের খাবারের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে হাজারো ভোজন রসিক কিংবা খাদক মানুষ! যারা খাওয়াচ্ছে তারা কি খাওয়াচ্ছে সেটা বুঝলেও-কি খাচ্ছে সেটা যারা খায় তারা জানে বোঝে কম নিঃসন্দেহে!
মাটির হাড়িতে লাকড়ির চুলায় হাস ভুনা, ছিটানো রুটি কিংবা চিতই পিঠা কিংবা রাজশাহীর বিখ্যাত কালাইয়ের ডালের রুটি আর গরুর বট কিংবা ভর্তা এই গল্পে সবাই উন্মাদ হয়ে গেল। যে কোন মুল্যে আমাকে এই খাবার খেতে হবে না হলে জীবন বৃথা! এইসব খাবারের প্রথম দিককার খদ্দের বাইকার গ্রুপ- ব্যাকপ্যাকের মত পেছনে এক ললনাকে ঝুলিয়ে তারা ঝুনো মাতালের মত লাট খেতে খেতে দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে ছোটে নিতি নতুন নতুন খাবারের সন্ধানে।
****
মাওয়া ঘাটে ইলিশের খাওয়ার গল্পটাও এর ব্যতিক্রম কিছু বলে মনে হয়নি। মাওয়ার ইলিশ নিয়ে হুলস্থুল শুরু হয়েছিল প্রজেক্ট হিলসা নামে ইলিশের আদলে নান্দনিক ডিজাইনের এক রেস্টুরেন্ট হবার পরে। সব ফুড ভ্লগারেরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল ওখানে- একদিকে পদ্মা ব্রিজ আর দুর্দান্ত এক এক্সপ্রেসওয়ে অন্যদিকে পদ্মার পাড়ে বসে ইলিশের স্বাদে মাতোয়ারা হলেন সবাই।
আমি এতদিনে পাত্তা দেই না। কিন্তু কয়েকমাস আগে আমার পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ওখানের এক হোটেলে ইলিশ খেয়ে বেশ প্রসংশা করার পরে একটু ভরসা হোল।
তবুও আমার এক্সপেকটেশান বেজায় কম ছিল। ইলিশ ও বেগুন ভাজা আর ল্যাজা ভর্তা এ আর কি আহামরি ব্যাপার হবে?
যদিও সদরেই তাদের রেস্টুরেন্ট কিন্তু ব্রিজের আশেপাশের রাস্তার এত গোলচক্কর তাতে গুগোলেরও খানিকটা মাথায় চক্কর দেয়!

এক সারিতে বেশ অনেকগুলো বড় বড় হোটেল। আমাদের গন্তব্য ছিল ' শখের হাড়ি'। বেশ বড় খাবার হোটেল। ভেতরে ৩/৪শ মানুষ একবারে খেতে পারে। ছুটির দিন ছিল বলে বেজায় ভিড়। এখানে এত মানুষ দেখে মনে হল ইলিশের খাবারে এদের বেশ সুনাম আছে। আমার ধারনা ছিল প্রায় সবার টার্গেট থাকে প্রজেক্ট হিলশায় কিন্তু এখানে এসে ভুল ভাঙল।
থরের থরে ইলিশ সাজিয়ে রাখা। লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কাঁচা মাছ কিনছে। মাছ পছন্দ করে দিলে মেপে একটা বড় থালায় আরেকজনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তার সামনে আবার বড় প্লেটে সাজানো কাঁচা কিং সাইজের গলদা চিংড়ি আর ২/৩শ গ্রাম সাইজের রূপচাদা। চাইলে অন্য মাছও আছে যেটা খুশী নেয়া যায়। তিনি মাছ অনুযায়ী ২৫০ গ্রাম আধা কেজি বা এক কেজির সরিষার তেলের বোতল ধরিয়ে দিচ্ছেন মাছের সাথে। অনেকে এত তেল কেন বলে খানিকটা প্রতিবাদ করতে চাইলেই; তিনি বলছেন, লাগবে নিয়ে যান।


এত তেল দেখে আমিও একটু অবাক হলাম। তিনি দামের একটা টোকেন ধরিয়ে দিয়ে ইঙ্গিতে দেখালেন মাছ কাটতে নিয়ে যান।



কদম হোটেলের মুখের বায়ে এক পাশ খোলা এক পাকা ঘরে দুজনে মাছ কাটছে। তার পাশে বেশ বড় লাইন। তবে একটা ইলিশ আঁশ ছাড়িয়ে, পছন্দের সাইজে কেটে ভাল করে ধুয়ে দিতে পাঁচ মিনিটের বেশী লাগে না- তারপরেও অনেকের থালায় দু চার ছ'খানা মাছ থাকায় বেশ খানিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হল ওখানে।
এর পরে মাছ ভাজার লাইন। হোটেলের দু'পাশেই মাছ ভাজছে। বিশালাকার তাওয়ায় করে দু'জন করে চারজন। এখানে তেলের অপচয় দেখে আঁতকে উঠলাম! প্রতিবার মাছ আর বেগুন ভাজা শেষে তাওয়ার পুরো তেলটা তারা ফেলে দিচ্ছে। এরপর হালকা ধুয়ে মুছে পরেরজনের বোতল খুলে তেল ঢালছে। সব কিছুতে টিস্যুর ব্যাবহার হচ্ছে অপরিমিত।
ল্যাজা যে ভর্তা করছে তার কর্মকান্ড দেখার মত! প্লাস্টিকের কোল্ড ড্রিংক্সের বোতল আর স্টিলের প্যান এই তার মেশিন।



প্রথমেই ভাজা ল্যাজটা ছেঁচে নিয়ে মাঝের কাটাটা ফেলে দিচ্ছে। এরপরে ফের ভাল করে থেঁতলে দ্রুত হাতে কাটাগুলো বেছে ফেলছে। পরে মাছ ভাজা সরিষার তেল শুকনো মরিচ ভাজা, পছন্দমত পেঁয়াজ আর ধনেপাতা দিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ভর্তা রেডি। মাছ আর বেগুন ভেজে সাজিয়ে উপরে বেরেস্তা আর ইচ্ছেমত শুকনো মরিচ দিয়ে পরিবেশন করতে ১৫ মিনিটের মত সময় লাগে।
টেবিলে জায়গা পাওয়াটা বেশ সময় সাপেক্ষ ছিল। মাছ আর ভর্তা টেবিলে নিয়ে গেলে ভাত ডাল সালাত দেয়। এগুলোর মুল্য আলাদা। চাইলে কেউ অন্য তরকারি এমনকি বিরিয়ানি পোলাও ও খেতে পারে।
এবার বলছি খাবারের মান;
ইলিশ বিভিন্ন জাতের আছে। দেখে কিনতে হবে। মাছ ভাজাটা একেবারেই ফ্রেশ। ভর্তাটাও চমৎকার স্বাদের- মাছ ভর্তার এমন স্বাদ বাসায় হয় কম। মনে হল পরিবেশ আর অপেক্ষার জন্য স্বাদটা ভিন্নরকম মনে হয়। এমন ফ্রেশ রুপচাদা আমি ঢাকা কুমিল্লা চিটাগাং থেকে কক্সবাজারেও খাইনি। ভাল মানের চালের ভাত। কিন্তু ডালটা মোটামুটি অখাদ্য! এটা বলায়; ডালের দাম অর্ধেক নিল!

লিশ ২০০০ টাকা কেজি (তেলের দাম আলাদা - তবে বড় ইলিশের দাম বেশী) একেবারে কাটা ভাজা থেকে পরিবেশন পর্যন্ত! রূপচাদা ৫০০ টাকা, বড় সাইজ গলদা ৪০০ টাকা। বাকিগুলোর দাম জানিনা। হোটেলের বয় বেয়ারাদের ব্যাভার ভালই বলতে হয়। সব কিছুতে তাড়াহুড়ো আছে কিন্তু গছিয়ে দেবার ব্যাপারটা নেই। মাছ যে কাটছে, ধুচ্ছে কিংবা ভাজছে সে তার কাজগুলো পুরোপুরি প্রফেশনাল ভাবেই করছে- ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছে না।

আমার ধারনা এমন হোটেলে ছুটির দিনে ২০ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হয়। ভাবা যায়!!!
****



তুন প্রজন্মের কেউ আর 'নাবিস্কো' চেনে না। গত কয়েক বছরে বিস্কুট শিল্পে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেছে। ড্যান, বিস্ক ক্লাব, গোল্ডমার্ক, ইফাদ, ওয়েল ফুড, ড্যানিশ সহ অনেক নতুন নতুন ব্রান্ডের বিস্কুট হাজারো রকমের প্যাকেটজাত বিস্কুট, কুকিজ, ওয়েফার, কেক জাতীয় আইটেম দিয়ে বাজার ছেয়ে ফেলেছে।

যারা সুদীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকেন তাদের কাছে একটা প্রশ্ন; ছবিতে প্রায় ৩০ প্যাকেট বিস্কুট আছে। বলতে পারবেন এই দুর্মুল্যার বাজারে সবগুলো বিস্কুট মিলিয়ে দাম কত হতে পারে?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০১
৫০টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×