somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি করবি দোস্ত-এইভাবেই চলতেছে দেশ!

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~ নবমীর সন্ধ্যেয় জনশূন্য একটি মণ্ডপ!
স্থান; আমার সেই বিক্রমপুরী ‘সবদার’ ডাক্তার বন্ধু রিন্টুর দোকান। রিন্টু দীর্ঘ সময় ধরে চুলে কলপ নেয়। এবার তার টাকের দুপাশের দীর্ঘ শুভ্র এলোমেলো কেশগুচ্ছ দেখে বেশ অবাক হলাম! কি রিন্টু মিয়া, কাহিনী কি?
চিরকুমার রিন্টুর বিশাল পরিবারের সকল দেখভাল করে ওর বিধবা বড় বোন। সে মাঝে ভীষন অসুস্থ থাকায় পুরো পরিবারের হাল-বৈঠা সব ভেঙ্গে গেছে! সে গত দুইমাস ধরে নিজের সুরত আয়নায় দেখার ফুসরত পায়নি। তার চেয়ারের এক হাতল ভাঙ্গা লম্বা ডান্ডির উপরে অলসভাবে হাতটা রেখে, চোখে এক ডান্ডি খুলে পড়া চশমাটা কায়দা করে ঝুলিয়ে হাতে সেই বিখ্যাত কেচিখানা দিয়ে কিছু একটা কাটতে কাটতে নিজের ‘দুখ ভরা কাহানি’ বলছিল।
এর মধ্যে ‘নিশিথ’ এসে উপস্থিত! ও এমনিতে পেটে ব্যোম মারলেও কথা বলে না কিন্তু একবার শুরু করলে লাইন বেলাইনে বকবক করতেই থাকে।
-কিরে নিশিথ কবে আসলি?
-নিশিথ ভীষন বিরক্তি নিয়ে বলল ‘এইতো আজকে’ (অষ্টমীর সন্ধ্যেয়)
-ক্যান ছুটি পাইস নাই?
-নারে ভাই আমাগের কি আর ওইরকম সুখের কপাল আছে।
-বোনাস দিছে তো- নাকি?
ও ক্ষেপে গিয়ে গালি দিয়ে বলল, ‘কিসের বালের বোনাস! ছুটিই দেয় না।‘
শফি মিটিমিটি হেসে বলল, ‘তা বৌদিরে নিয়ে মায়ের দর্শন করছিস তো?’
নিশিথ চুপ। ভীষন রাগ!
আমি বললাম, যে কয়টা মণ্ডপে ঘুরলাম- দেখি শুধু ভিডিপি আনসার আর পুলিশ। তোরা দেখি 'মায়েরে' একলা ফেলায় রাইখ্যা সবাই ভাগছিস। তোগেরে ভিতরে ঢুকতে দেয় তো নাকি?
নিশিথ এবার ভীষন রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘মায়ের কপাল খামচাই। ওরা পাহাড়া দেয় ক্যা? আমরা পাহাড়া দিতে কইছি নাকি?’ কথাটা বলেই সে ‘যাইগা’ বলে উঠে গেল….
এর মধ্যে ‘কমল সাহা’ দোকানে ঢুকল ঔষধ নিতে – সে আমার বড় ভাই এর বন্ধু, তাই দাদা কেমন আছেন? বলে চুপসে গেলাম। ওদিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক লীগের মাঝারি দরের নেতা। এরা সবখানেই সুযোগ বুঝে ‘খোচাচ্ছে
-'কি হে কমল দা, কোন ঢোল-ডুগীর আওয়াজ তো শুনিনা –সরকার সব বন্ধ কইর‍্যা দিল নাকি?’ বলেই তিনি একটা ফিচেল হাসি দিলেন।
কমল সাহা হাসতে হাসতেই বলল, ‘দাদা কি কানে কম শুনেন নাকি? ঢোল ডুগী কি সবসময় বাজাই আমরা- লগ্ন তিথি অর্চনার ব্যাপার আছে। সময় হইলে ঠিকই বাজবে।
লীগ নেতা বেশ হতাশ ও মনঃক্ষুন্ন হয়ে উল্টোপথে হাটা দিলেন।
***
রাত তখন দশটার ঘর পেরিয়েছে। আমাদের গল্প-গুজব চলছে। এর মধ্যে মটর সাইকেলে এক সাব- ইন্সপেক্টর রিন্টুর দোকানের সামনে ব্রেক কষে ওর 'কুশল' জিজ্ঞেস করল।
রিন্টু, এইতো ভাল- আপনি ভাল আছেন বলে, জিজ্ঞেস করল, যাচ্ছেন কোথায়?
পুলিশ কর্মকর্তার চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি। ‘এই আর কই যাব- সন্ধ্যায় বেরোইছি। ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত মণ্ডপে মণ্ডপে ডিউটি। এইভাবে শরির টেকে কন?’
***
বমীতে হিন্দু সহপাঠী বন্ধু অনেকের সাথে দেখা হল। সন্ধ্যে রাতেই মণ্ডপগুলো চুপচাপ প্রায় মনুষ্যবিহীন। একটু অবাক হলাম; ৫০০ মিটারের মধ্যে চারখানা পুজা মণ্ডপ। সবগুলোই প্রায় জনশুন্য।
দেখা হল গোবিন্দ আর সুশীলের সাথে। গোবিন্দ বড় সরকারী কর্মকর্তা- একসময় সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত ছিল, হিন্দুদের মধ্যে বেশ প্রভাবশালী। আর সুশীল স্থাণীয় এক হাইস্কুলের হেডমাস্টার। ওরাদু’জনে আমাদের জোর করে ধরে নিয়ে গেল বিধানদার মিষ্টির দোকানে। গোবিন্দ যার যা খুশী যত খুশী খাবে বলে এহলান করল। কামরুলের উচ্চ সুগার, সে কোন মতেই মিষ্টি খাবে না। আমার মিষ্টি মোটামুটি অপছন্দ। তবুও জোরাজুরিতে একটুখানি ছানার জিলাপি আর এক চামচ রাজভোগ খেলাম। বসে বসে সুশীলের সাথে গল্প করছিলাম নিমাই ঘোষের লবঙ্গ লতিকা মিস্টির। আহা কি স্বাদ ছিল! আমার ধারনা বাংলাদেশ থেকেই এই মিষ্টির আসল রূপ হারিয়ে গেছে।
*চিনির সিরা বা রসে জাফরান দেয়া থাকত। লবঙ্গ লতিকার রঙ হত জাফরানী- ভিতরে থাকত খাটি দুধের খিস্সা। ভিতরে খিস্সার পুর দিয়ে পরোটার মত চার ভাজ করে মুখটা সেঁটে দিত আস্ত একটা লবঙ্গ দিয়ে। খাটি ঘিয়ে ভেঁজে যখন চিনির সিরায় চুবিয়ে সেই মিষ্টি ছাকনির উপর রাখত; চারিদিকে ঘ্রানে মৌ মৌ করত। আহা সে কি স্বাদ! কুরমুড়ে সেই লবঙ্গ লতিকায় কামড় দিলে মুখ ভরে যেত রসে!*
নিমাই ঘোষ গত হয়েছেন বহু আগে- তার সাথে চলে গেছে সেই বিখ্যাত, লবঙ্গ লতিকা, গজা আর বুঁদিয়া। তার সন্তানেরা কিছুদিন ব্যাবসা করে জুত করতে না পেরে চম্পট দিয়েছে। মিষ্টির এই দোকানে বিধানদার ছবিটা ঝুলছে। আমি কখনো মিষ্টি খেলে টাকা রাখতে চাইতেন না- খুব আদর করতেন।
***
ণ্ডপের এই হাল কেন জানতে চাইলে গোবন্দ জানাল, পুজাতো শেষরে ভাই।
-মানে?
গোবিন্দ হেসে বলল, এবার নবমী আর দশমীর তিথি একই দিনে পড়ছে। ঠাকুর ডোবানোর দিন ছিল আজকে। সব পুজা অর্চনা শেষ হয়ে গেছে। এমনি এমনিতেই আমরা একদিন পিছিয়ে ডোবাচ্ছি – কালকের জন্য ‘সধবা’ নারীদের সিঁদুর খেলাটা রেখে দেয়া হয়েছে।
আমি গোবিন্দকে বললাম, এই একদিন ইচ্ছাকৃতভাবে ছুটি বাড়ানোর জন্য প্রতিমাকে ফেলে রাখা হয়েছে- কেউ এই নিয়ে একটা কথাও বলল না, আশ্চর্য! তুই না বললে তো জানতাম-ই না! একদিন ছুটির পাশাপাশি এই যে সারা দেশের মানুষকে টেনশনে রেখে অর্ধ লক্ষাধিক মণ্ডপের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কোটি কোটি টাকা নষ্ট হল এর দায়ভার নিবে কে? তোরা তো পুরা সরকাররে বোকাচোদা বানায় দিলি রে!!
গোবিন্দ হেসে বলল, কি করবি দোস্ত, এইভাবেই চলতেছে দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তর মানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের জীবনের ল্যান্ডমার্ক, ৩৬ জুলাই আমাদের চেতনা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪২




এই ছবিটার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন জানেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলের ব্লু প্রিন্ট রচনার দায় তাদের কাধে। এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাকামীদের এক করে ফেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদের দ্বিকক্ষবিশিষ্টকরণ: বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩০

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদীয় পদ্ধতির বৈচিত্র্য এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে এর তুলনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-আফগানিস্তান কূটনীতি, ক্রিকেট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০


কথায় আছে শত্রুর শত্রুকে বানাতে হয় বন্ধু- এই প্রবাদ ভারত ও আফগানিস্তানের সমসাময়িক কূটনীতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই মাসে কোন আন্দোলন বা বিপ্লব হয়নি, ইহা ছিলো আমেরিকান এম্বেসীর আরেকটি ক্যু

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট'এর পর আমেরিকান এম্বসী আরেকটি বড় ক্যু করেছিলো এরশাদকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে; এরপর আরেকটি বড় ক্যু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধানসিঁড়িটির তীরে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫



ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×