somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত ১২.০১

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি আমার বন্ধু অনিক কে উৎসর্গ করলাম, ওর কাছে রাত আমার মতই অদ্ভুত সুন্দর সময়



রাত ১২.০১

এখন রাত ১২.০১ আমার ঘুম থেকে উঠার সময়৷ যেমনটি গত কাল ও ছিল৷ গত কাল ১২.১০ এর দিকে বারান্দায় যেয়ে বসে ছিলাম৷ একটা গান শুনছিলাম৷ গানটা স্বপ্ন নিয়ে৷ গান শুনছিলাম আর মাঝে মাঝে কয়েকটা সাইট রি ফ্রেশ দিচ্ছিলাম৷ মাঝে মধ্যে বাইরে ও তাকাচ্ছিলাম৷ ১২.০১ ঢাকা শহরে তেমন রাত না হলেও আবার অনেক রাত৷ অল্প কিছু মানুষ যাচ্ছিল মাঝে মধ্যে৷ হঠাৎ দেখলাম একটা ছেলে ! আমার মত বয়স ই হবে কি যেন ভাবলাম … দৌরে বাইরে নিচে নামলাম৷ ৫ তলা থেকে নামতে ৩ মিনিট এর মত লাগে৷ কিন্তু সেই তিন মিনিট এর সিড়ি ১ মিনিট এর ও কম এ নামলাম৷ ৩৪ সেকেন্ড ঘড়ি ধরে ৷ বেরিয়েই চিৎকার করে দারোয়ান কে বল্লাম জলদি খুলেন৷ দারোয়ান আর গেট তখন অনেক দুরে দৌরে বেরুলাম আরো ৫ সেকেন্ড৷ বেরিয়ে যেদিকেই ছেলেটাকে যেতে দেখেছিলাম৷ সেদিকে তাকিয়ে দেখি কেউ নাই৷ সামনে বিশাল রাস্তা পুরো ফাকা৷ ভাবলাম শিল্পকলার গলি দিয়ে গেছে হয়তো৷ অথবা জি টিভি এর গলি দিয়ে৷ দৌর….
শিল্পকলার গলি দিয়ে দৌরে যেয়ে দেখি একটা ছায়া মত ৷ আরো জোরে দৌরালাম৷ আমার দৌরের শব্দ হয়তো লোকটা পেয়েছিল সে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল আমাকে৷ আমি দৌর থামিয়ে দিলাম৷ হাপাতে হাপাতে আবার উল্টদিকে দৌর ৷ এবার গেলাম জি টিভি এর গলির দিকে ৷ গলিতে ঢুকে তিনটা রাস্তা গেছে ৷ একটা খুবই ছোটো৷ ঐ দিকে কেউ যাওয়ার কথা না৷ হয় ডানে না হয় সোজা যেয়ে ডানে গেছে৷ চোখ বন্ধ করে এক দিকে দৌরালাম৷ হঠাৎ দেখতে পেলাম … ঐ তো এটাই সেই ছেলে টা না? excuse me.. বলে ছেলেটাকে ডাকলাম৷ ছেলেটা চা এর দোকান থেকে একটা সিগারেট নিচ্ছিল৷ আমার দিকে তাকাল৷ ছেলেটা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল ৷ আমি হাতটা
বাড়িয়ে দিলাম৷
-আমি শেষ প্রান্তর
ছেলেটা কিছুটা অবাক হয়ে…
— শান্ত… আপনাকে আমি চিনি?
ছেলেটার চুল প্রায় চোখ ঢেকেছে৷ মাথা থেকে চুল গুলো সরিয়ে … একটা জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল৷
আমি একটু হেসে
– নাহ! আমার অন্তত তা মনে হয় না৷
ছেলেটা একটু হেসে, তখন আমার অবাক হওয়ার পালা৷
– আমি বল্লাম চা খেতে এলাম , একটু হেসে…
— তো শেষ প্রান্তর টা কোথায়?
আমি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে…
– যখন আপনি চাইবেন তখন ই শেষ,
ছেলেটা কি বুঝল কি জানি… মাথা টা একটু নেরে যেন বুঝেছে… যেখানে আমি নিজেই বুঝি নাই কি বল্লাম…
— শেষ প্রান্তরে কি পৌছানো যায়? যেখানে দিগন্ত জোড়া মিলে যায়, সাগর আর আকাশ মিলে যায়, সবুজ মাঠ আর নীল আকাশ মিশে যায়?
একটু দার্শনিকের হাসি দিয়ে,
– যায় ,
— কি ভাবে? যতই এগুবে ততই তো শেষ প্রান্তর দূরে চলে যাবে মরিচিকার মত

ঐ যে বল্লাম না , যায়! ফার্মগেট এর ওভার ব্রীজ এ দাড়িয়ে থেক দেখবে কত
একা মনে হবে! আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চাদে যাওয়ার কথা ভেব দেখবে ততই দুরে
মনে হবে৷
— তাহলে? কিভাবে? তুমি তো বল্লে যায়…
আমি একটু হেসে… হাটা শুরু করলাম…
দোকানি চাৎকার করে… মামা চা খাবেন না…
– নাহ মামা তুমি খেয়ে নাও… আমি কাল টাকা টা দিয়ে দেব…
— কি ভাবে যায়? তুমি বল্লে না তো, তুমি যে বল্লে যায়! যায় না কি? তাহলে বল্লে কেন? বলে যাও…
আমি ছেলেটার দিকে তাকি উল্টো হাটতে হাটতে…
আকাশের দিকে তাকাও… ছেলেটা তাকাল…
– এবার চোখটা বন্ধ করতো দেখি…
এখন রাত ১:৩১
আমি হাটছি, ছেলেটার সাথে কথা বলে ভালই লাগল৷ জি টিভি এর গলি দিয়ে বেরিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু কোথায় যেন, অনেক দূরে৷ বাতাসে ভেষে একটা কান্না শব্দ পাচ্ছি৷ মনটা যেন কেমন করে উঠল৷ একটা ছোট্ট বাচ্চার কান্নার শব্দ৷ বাইরে ভিষণ বাতাস বইছে৷ বৃষ্টি আসবে৷ বৃষ্টির জল মেশানো আর্দ
বাতাশের সাথে ঐ কান্নাটা যেন আমার যান্ত্রিক হার্ট এ এক একটা কামান দাগার মত৷
আমি দ্রুত পা চালালাম৷ না! বাসার দিকে না৷ আমি পা
চালালাম কান্নার শব্দটির দিকে৷ আমার বাড়ি টা পার করে ডানে ঘুরলাম কাকরাইল
এর দিকে৷ পুরো রাস্তা ফাকা ১২ অনেক রাত না হলেও ১ টা অনেক রাত৷
এখন বাজে ১:৪৩
কান্নার আওয়াজ টা বাড়ছে, শব্দের তিব্রতা যতই বাড়ছে যেন মনে হচ্ছে আমার হার্টে গুলি করার পরিমান ও বাড়ছে৷ এতক্ষন যেন সাধারন রিভলবার এর পরিবর্তে একটা এলএমজি চলছে৷ এবার আমি দৌরালাম৷ কারন এন্টি এয়ারক্রাফট চল্লে আর বাচার কোনো আসা নাই৷
কাকরাইল এর মেইন রাস্তায় এসে পড়লাম, দৌরোচ্ছি, পার হলাম মেইন রোড ৷ উইল্স এর ফুটপাথ থেকে কান্নার শব্দটা আসছিল৷ শব্দটা যেন হঠাৎ ই থেমে গেল৷ আমার কি খুশি হওয়ার কথা? কান্না থামলে তো আমার খুশিই হওয়ার কথা, তাই না? কিন্তু আমি খুশি হলাম না৷ একটু থেমে ভাবলাম এই অনুভুতি টা কি? কান্না থামার পর ও আমি কেন শুশি হলাম না?
আমি কেন অখুশি হলাম? শিশুটা কাঁদুক এটাই কি আমি চাই? নাহ! কান্না থামাতেই তো এলাম ! তাই না? নাকি কেন কাঁদছে সেই আগ্রহ মেটাতে এসেছি? নাকি আমি কান্না টা থামাতে পারিনি বলে আমি হতাশ?
সত্যি মানুষ কত বিচিত্র, ভাল করে বল্লে সত্যি আমি কত বিচিত্র! আমি কাছে গেলাম৷ একটা মা তর শিশুটাকে ঘুম পারাচ্ছে৷ ফুট পাথ এ বসে ছিল মহিলাটি, আর ছোট্ট ছেলেটা৷ কাছে যেয়ে বসলাম৷
-কাঁদছিল কেন খালাম্মা
মহিলাটা আমি ফুটপাথ এ বসে গেছি দেখে বিশ্বিত৷ আরো বিশ্বিত দেখে আমি উনার সাথে কথা বলছি দেখে৷
— তা জাইনা আফনের কাম কি? আফনার মতলব টা কি? যান যান.. বড় লোকের ছাও… মাথা ঠীক নাই? এইহানে কি করেন? বাড়িত যান..
– আমি একটু হেসে৷ যাব, কাঁদছিল কেন বাবু টা? আমাকে একটু কোলে নিতে দিবেন?
আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল মহিলাটা, আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমকে ধমক দিবে এমন কিছু একটা করবে৷ কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কোলে তুলে দিল বাবুটাকে৷ কি সুন্দর বাবুটা৷ বয়স ৮ মাস এর ও কম হবে৷ নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে৷
উচু উচু দালানের ভীরে এই একটা বাবা হিন ছোট্ট ছেলেটা বড় হবে? এক বেলা খাবে আর দু বেলা খাবে না? রাস্তায় বড় হবে এই ফুটফুটে বাচ্চা টা? ভাবতেই বিষিয়ে উঠল মন৷ মা কে জিজ্ঞেস করলাম না ওর বাবা কই৷ বরং জিজ্ঞেস করলাম৷
-ঢাকায় কেন? শিকড় ছাড়া কি ঠিক হয়েছে?
— কি করবু বাবা ঐ খানে তো কিছু খাওনের নাই৷ বাধ্য হয়া ঢাহা আইসি, বাচ্চাটাকে মা এর কোলে ফিরিয়ে দিয়ে বল্লাম
-একটা প্রশ্ন করি?
— কি ফ্রশ্ন বাবা? আমি মূর্খ শুর্খ মানুষ আমারে কি জিগাইবেন?
আমি একটু হেসে
– আপনার ছেলেটাকে বড় হলে কিরকম দেখতে চান?
একটু হাসল মা,
— অন্তত আফনের মতন পাগল না৷ আমার ছেলে শিক্ষিত হবে৷ জজ্ঞানী হবে৷ দেশ আলো করবে… হেহে দেইহেন…
আমি
ভাবলাম মা আপনি মূর্খ হতে পারেন কিন্তু আমাদের বাবা মা এর থেকে অনেক
শিক্ষিত৷ আমাদের বাবা মা চায় ছেলে বড় হয়ে চাকুরি করবে৷ আমি মনে মনে ভাবি
চাকর গিরি করবে৷ পার্থক্য হল বিদেশিদের চাকর গিরি… হাহহাআআআ
আমাদের বাবা মা ভাবে আমরা শিক্ষিত হচ্ছি৷ যতই সার্টিফিকেট পাচ্ছি ততই শিক্ষিত৷ একটা কবিতা খুব মনে পড়ল৷
লাইন গুলো খুব আবছা মনে পড়ছে…
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-
দিল-খোলা হই তাই রে।
সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
…….
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়

নাহ কবির নাম টা কিছুতেই মনে পড়ছে না৷ মা এর দিকে তাকি বল্লাম৷ মা ! মা এর চোখে পানি৷
আমার ভাইটাকে ভিটে মাটিতে নিয়ে যান৷ এই বিশাক্ত নগরীতে আর যাই হোক তাকে জ্ঞানী আর মহান করতে পারবেন না৷ জ্ঞান? সে তো জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হয় বইয়ের পাতা থেকে না৷ মা আমার দিকে তাকিয়েই থাকল৷ পকেটে কিছু টাকা ছিল৷ বের করে দিলাম মা কে৷ মা আমাকে বল্ল
— বাবা ঠীকই বলচ , এই শহর বিশাক্ত৷ টাহা লাগব না৷ আমি ভিক্ষুক না৷ অনেক ভিক্ষুক আচে তাদের দেন গিয়া৷ আমারে না… ছেলেটাকে নিয়ে মা হাটা শুরু করল৷ আমি বসে বসে ভাবছি মা কোথায় যাবে? ভিটে মাটিতে? কিভাবে যাবে? উনি যেতে পারবে? এত পথ কিভাবে পার করবে? উনার কাছে টাকা পয়সা যে কিছু নেই তা নিশ্চিত! কিভাবে যাবে? বুকের মধ্যে একটা ব্যাথা অনুভব করলাম৷
হঠাৎ একটু হাসলাম৷ নিজের কথা গুলোই আবার মনে পড়ল
“এই বিশাক্ত নগরীতে আর যাই হোক তাকে জ্ঞানী আর মহান করতে পারবেন না৷ জ্ঞান? সে তো জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হয় বইয়ের পাতা থেকে না৷”
অনেক জোরে হাসলাম এবার৷ ঐ মহিলাটির চোখ দুটো ভেসে আসল আমার চোখের সামনে৷ একটা কথাই নিজের অজান্তে বল্লাম৷ দৃড়তা! দৃড়তা এর ডেফিনেশন কি এটাই?

জীবন থেকে শিক্ষা? সেটা কি ঐ মহিলাটি থেকে কেউ বেশি নিয়েছে? ঐ পথ টুকু উনার কাছে কিছুই না৷ সারা জীবন যে স্ট্রাগল করেছে এতটুকু পথ উনার কাছে খুবই সামান্য৷ কিন্তু আমার কাছে? আমার কাছে ঐ পথ বিশাল৷ কারন আমি জীবন থেকে শিক্ষা নেই নি৷ আমি সব কিছু টাকা দিয়ে কিনি৷ জীবন মানে আমার কাছে বই এর পাতা আর শ্রেণী কক্ষে শিক্ষকের লিখে দেওয়া বুলি… হাহাহাআআ
অনেকক্ষন একা একা হাসলাম৷ উঠে বাসার দিকে রওনা দিলাম৷ পৌছুতে কি পারব বাসায়? নাকি আবার অন্য কোনো দিকে কান্নার শব্দ শুনতে পাব?

রাত ৩.৩২
নাহ! বাসায় যাওয়া হলো না …
কাকরাইল এর মোড় টা পার করতে যেতেই এক দল ছোকরা আমার পথ রোধ করে দাড়াল ৷
একজন আমার পেছন থেকে হাত দুটো শক্ত করে ধরে ফেল্ল ৷ আমি মনে মনে হাসলাম ৷ সালারা কি আমার কাপড় চোপড় খুলে নিবে নাকি ? কারন কয়েকটা টাকা আর এই কাপড় চোপড় ছাড়া তো সাথে কিছুই নাই ৷
আমার সামনে তিন জন এসে দাড়াল, এক জন এর হাতে বিশাল একটা ছুড়ি… ছুড়ি বল্লে ভুল হবে , কোরবানির সময় এই টাইপ ছুড়ি দিয়ে গরু জবাই করে ৷ আরেক জনের হাতে একটা ডিজাইন ওয়ালা ছুড়ি ৷ এই ছুড়ি টা পরিচিত৷ নিউমার্কেট এর ২ নাম্বার গেট এ এই ছুড়ি গুলো পাওয়া যায়৷ এক একটা ৬০০ টাকার মত চায় ৷
মনে মনে ভাবলাম ভাবল ইনভেষ্টমেন্ট তো ভালই ৷ রিটার্ন আজকে খারাপ হবে৷ যার হাতে কিছু নাই মনে হয় সে নেতা ফেতা টাইপ কিছু একটা হবে ৷ সে বল্ল কোনো গেঞ্জাম করবি না, করলে …. করলে কি আর বল্ল না ৷
আমি কিছুই করলাম না ৷ আমার কাছে কিছুই নাই যে নিবে ৷ একজন আমার পকেট এ হাত দিল ২০০ টাকার মত পেল ৷
আর কিছুই না ৷ একজনের চোখ যেন জ্বল জ্বল করছে ৷ নেতে ফেতা টাইপ লোক টা বল্ল, সালা কিছু নাই , পেছন থেকে একটা গলা বলে উঠল বস ধইরা দেই ? আমি কিছুই করছি না ৷ একটু হাসছি ৷ নেতা ফেতা টাই টা আমার গেঞ্জির কলার ধরে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল ৷ দিয়ে বল্ল যা শালা ভাগ, শালা ফকির এর বাচ্চা …
আমি দেখলাম এই কথা বলে আমার দুইশ টাকা পকেটে ভরল ৷ আমি মনে মনে ভাবলাম এভাবে অপমান তো সহ্য করা যায় না ৷ একবার ভাবলাম কিছু করার প্রয়োজন নাই শেষে প্রান টাই হারাব ৷ কিন্তু হঠাৎ মাথায় রক্ত উঠে গেল৷
হঠাৎ মনে হলো কিছুতেই কিছু যায় আসে না ৷ হঠাৎ ই যেন সব ভয় উড়ে গেল৷
যেন এ্‌ই জীবনের কোনো প্রয়োজন নাই ৷ জীবনে একটাই লক্ষ আজ হয় ওরা মরবে না
হয় আমি ৷ মানুষের মস্তিষ্ক সত্যি অদ্ভুত, মানুষ নিজেকে এত ভাল মটিভেট করতে পারে না উপলব্ধি করলে বোঝানো খুবই মুশকিল ৷ এই মূহুর্তে হয়তো একটা জিনিস ছাড়া আপনার জীবন অচল ৷ অথচ পরবর্তি মূহুর্তে সেটার
হয়তো কোনো প্রয়োজন ই নাই ৷
এদের একটু অপমান করি মনে মনে ভাবলাম, আবার ভাবলাম আজকে মেরেই ফেলব সবগুলোকে ৷ ওরা কয়েক কদম এগুলো পেছনে ফিরে একজন আবার আমাকে দেখল ৷ আমি উঠে ওদের পেছনে হাটা শুরু করলাম৷ একজন কি যেন ফিস ফাস করে কি বল্ল নেতার কানে কানে ৷ নেতা টাইপ লোকটা আমার দিকে তাকাল ৷ তাকিয়ে থামল ৷ আমাকে একটা অশ্রব্য ভাষায় গালি দিয়ে আঙ্গুল তুলে বল্ল ভাগতে বল্ল নাইলে নাকি আমাকে রাস্তায় কেটে কয়েক টুকরা করে ফেলে যাবে ৷ আমি কথাটা শুনে মনে মনে হাসলাম ৷ এগুতে থাকলাম আমি ৷ চার জন ই এখনবিভ্রান্ত ৷ কি করবে বুঝতে পারছেনা যেন ৷
কত শক্তিশালি ওরা , হাতে অস্ত্র আছে, আমি ভাবলাম তবুও আমাকে ভয় পাচ্ছে ? এতক্ষনে আমার দিকে ছুড়ি বাগিয়ে তেড়ে আসার কথা না ? কেন আসছে না ? আমি কিসের নেশায় এগিয়ে যাচ্ছি ? আমার মাথায় রক্তের নেশা ছলাক দিয়ে উঠল ৷ আমি পরিষ্কার দেখতে পারছি আজ মৃত্যু নিশ্চিত ৷
চার জনের সাথে একজন মানুষের পেরে উঠার কোনো কারন নাই ৷ তার মাঝে আমি এমন কোনো ব্যক্তি না যে তাদের কুপকাত করে বীর দর্পে দাড়িয়ে থাকব৷ আমি অতি সাধারন মানুষ ৷ ৪ জন কেন ২ জন এর সাথেই পারার কথা না ৷ আবার যেখানে ওদের মোটা মোটি সবার কাছেই ছুড়ি চাকু আছে ৷
আমি অতকিছু ভাবলাম না আসলে, এগুতে থাকলাম , মনে একটা কথাই বার বার ভাসতে লাগল রক্ত, রক্তের নেশা আজ আমাকে পেয়ে বসেছে ৷ হঠাৎ মনে হল সব কিছু যেন লাল লাল মনে হচ্ছে ৷
হঠাৎ একটা শব্দ শুনরাম, শব্দটা পরিষ্কার ভাবে এল না আমার কানে ৷ কিন্তু পরক্ষনে দেখলাম চার জোড়া , নাহ পাচ জোড়া পা দৌরোনো শুরু করেছে ৷ পালাচ্ছে ওরা ধরতে হবে ৷ হঠাৎ বুঝলাম আর তাড়া করে লাভ নাই ৷ চার জন চার দিকে দৌরে পালিয়েছে ৷ মনে মনে হাসলাম ৷ যেন নিজেকে নতুন করে
আবিষ্কার করলাম ৷ হাহাহাআআআআআ
হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়লাম ৷ কি অদ্ভুত মানুষের চিন্তা ভাবনা ৷ ঐ চার জন এর হাত থেকে নিশ্চিত ধোলাই খাওয়া থেকে ধোলাই বল্লে ভুল হবে ৷ নিশ্চিত ছিন্ন ভিন্ন করে কয়েক টুকরা হয়ে যাওয়ার কথা যেখানে সেখানে আজ ওরাই পালিয়েছে ৷ আচ্ছা ওরা পালিয়ে গেল কেন ? আমার মত একটা মানুষকে দেখে পালানোর কি কিছু আছে ? ইচ্ছা করলেই মেরে কয়েক টুকরো করে ফেলতে পারতো না আমাকে ? কিন্তু কেন পালাল ?
যেন পরক্ষনেই একটা দৈব শব্দ শুনতে পেলাম, আসলে শব্দ টব্দ কিছু না ৷ আমার মস্তিষ্কের ই কারসাজি , শুনতে পেলাম আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর… আর সত্যের চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু কি আছে ?
রাস্তায় এবার শুয়ে পড়লাম ৷ খুবই ক্লান্ত লাগছে ৷ এভাবে দৌরা দৌরি আসলে আমার সাঝে না ৷ হার্টে এ সমস্যা ৷ হাতে মাত্র কদিন সময় জীবনটা কি তাই জানা হল না ৷ কিন্তু সময় ফুরিয়ে গেছে ৷ কি ভাবে যে ফুরিয়ে গেল বুঝতেই পারি নাই ৷ হঠাৎ লক্ষ করলাম আমার টি শার্ট টি ভিজা লাগছে , নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার সাদা টি শার্ট টা কেমন যেন হলুদ লাগছে , হলুদ ও না আবার কাল ও না…
সোডিয়াম এর লাইট এ ওটা রক্তা না ঘামে ভিজে গেছি বুঝলাম না , কিন্তু যখন
মাথাটা ঝিম ঝিম শুরু করল, চোখে সাদা সাদা দেখতে শুরু করলাম তখন বুঝলাম… ওটা সম্ভবত রক্তই হবে… নাক দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে… আমি একটু হাসলাম… আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠছে যেন …. আচ্ছা অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কথা না ? তার পর জ্ঞান হারানোর কথা না ? নাকি মারা যাওয়ার কথা ?
একটু হাসলাম… ওরা কেন দৌরে পালিয়েছে এবার বুঝলাম… হাহাহাহাআআ রক্ত, সবাই ভয় পায় রক্ত ? নাহ বোধয়…
এবার হঠাৎ সব অন্ধকার….
অক্টবর, ২০১৩
মাহবুব জামান আশরাফী
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×