somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মীর জাফর (বিশ্বসাঘাতকদের সর্দার) ও পরাধীন নবাবদের সমাধিক্ষেত্র

১৩ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মীর জাফর (বিশ্বসাঘাতকদের সর্দার) ও পরাধীন নবাবদের সমাধিক্ষেত্র



লোকমান হোসেন পলা

মীর জাফর বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণিত নাম। শুধু বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাই নয়, পুরো ভারতবর্ষে মীর জাফর এক বিশ্বাসঘাতকের নাম। এমনকি বিশ্ব-ইতিহাসে যুদ্ধ-বিশ্বাসঘাতকদের (war traitors) নামের তালিকায় মীর জাফরের নাম চিরদিন লেখা থাকবে।

তার বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমেই ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসন শুরু হয় এবং তার মাধ্যমেই এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়। সর্বোপরি একটি জাতি দুশ’ বছরের জন্য পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী হয়।এ ইতিহাস আমাদের কারোরই অজানা নয় যে, সিরাজ-উদ-দৌলা তার প্রধান সেনাপতি মীর জাফরকেই পলাশী যুদ্ধের প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেন। কিন্তু এই দায়িত্ব অর্পণের মধ্য দিয়েই মূলত পলাশী যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যায়।
মীর জাফর ছিলেন আলীবর্দী খাঁর ভগ্নিপতি। তার বাবার নাম আহম্মদ নাজাফি। পিতামহ হুসেন নাজাফি ছিলেন আরবের অধিবাসী। হুসেন নাজাফি ছিলেন ইব্রাহিম তাবাতাইয়ের ২২তম বংশধর।

আহমদ নাজাফির দ্বিতীয় পুত্র মীর জাফর কৈশোরে সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে অসিখেলায় বিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শন করে দিল্লি থেক মুর্শিদাবাদ আসার হুকুমনামা প্রাপ্ত হন। তার কূটনীতির জ্ঞান ভালো ছিল এবং ছলে-বলে কৌশলে দু’বার বাংলার নবাব হয়েছিলেন। বাংলার স্বাধীনতা হরণের প্রধান কারিগর ছিলেন এই মীর জাফর।ফার্সি শব্দ ‘মীর’ অর্থ সর্দার। সম্রাট আকবরের আমলে বহু সম্মানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা প্রচুর ধনদৌলত ও উপঢৌকন দিয়ে সম্রাটকে খুশি করে এই মীর খেতাব অর্জন করতেন। নিয়তির কী পরিহাস! বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে তিনি ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকদের সর্দারে পরিণত হলেন।

মীর জাফর অত্যন্ত বিলাস ও আড়ম্বপূর্ণ জীবন যাপন করতেন। তিনি বহু মূল্যবান পোশাক পরিচ্ছদ ও হীরা জহরত খচিত গলার হার পরিধান করে থাকতেন। স্বার্থপর ও লোভী হলেও মীর জাফরের ছিল না কোনো দূরদর্শিতা। ফলে সাময়িক কূটনীতি জ্ঞানে দু’বার নবাবি পেলেও তিনি তা ধরে রাখতে পারেননি।পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পক্ষ অবলম্বন না করে মীর জাফর পরোক্ষভাবে ইংরেজদের সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু তিনি মসনদে বসে ইংরেজদের অবিরত অর্থের দাবি মেটাতে অপারগ হন, আর সেজন্য অবিলম্বে তাকে সিংহাসনচ্যুত হতে হয়। মীর জাফর ৭৪ বছর বয়সে ১৭৬৫ সালে ১৭ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন।

তার নাম অনুসারে জায়গাটির নাম করা হয়েছে জাফরাগঞ্জ। জাফরাগঞ্জেই রয়েছে মীর জাফরের সমাধি। এখানে তার বংশধরদের এগারশ’ কবর রয়েছে। মীর জাফর নাজাফি বংশের ছিলেন। তার মাধ্যমে বাংলায় নাজাফি রাজবংশের শুরু। এরা সবাই ব্রিটিশদের অধীনস্ত নবাব ছিলেন। তবে মীর জাফরের জামাতা মীর কাসিম স্বাধীনচেতা নবাব ছিলেন। সেজন্য ব্রিটিশদের সঙ্গে তারও দন্দ্ব হয় এবং তাকে সরিয়ে দিয়ে আবার মীর জাফরকে নবাব করা হয়।জাফরাগঞ্জ বা মাকবারায় মীর জাফর ও তার পরবর্তী বংশধর ও নবাবদের যে সমাধিক্ষেত্র, তাতে সমাহিতদের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নবাব হলেন নবাব হুমায়ুন ঝাঁ, তিনি মীর জাফরেরর পঞ্চম বংশধর। তিনি হাজার দুয়ারী প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এছাড়া আছে হুমায়ুন ঝাঁর বাবা ওয়াল্লা ঝাঁর সমাধি, তিনি ১৪ বছর নবাব ছিলেন। হুমায়ুন ঝাঁর চাচা আলী ঝাঁর সমাধিও আছে এখানে। তিনি ১১ বছর নবাব ছিলেন। পাশে আছ ফেরাদুন ঝাঁর সমাধি। তিনি ৪৩ (১৮৩৮-১৮৮০) বছর বাংলার নবাব ছিলেন। ফেরাদুন ঝাঁ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ নবাব ছিলেন। এরপর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব পদ বিলুপ্ত করে শুধু মুর্শিদাবাদের নবাব রাখা হয়।মীর জাফরের ছিল পাঁচ ছেলে। জাফরাগঞ্জে তার চার ছেলের সমাধি আছে। মীরনের সমাধি আছে বিহারে। বাকি চার ছেলে মোবারক-উদ-দৌলা, সাইফ-উদ-দৌলা, আশরাফ-উদ-দৌলা ও নাজিম-উদ-দৌলার সমাধি এখানেই। মীরজাফরের বাবার সমাধিও এখানে।

মীর জাফরের ছিল তিন স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ছিলেন শাহ খানম। তিনি আলীবর্দীর বোন ছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন বাবু বেগম ও তৃতীয় স্ত্রী মুন্নী বেগম। মুন্নী বেগম ছিলেন ওই সময়ের ভারতবর্ষের সেরা বাইজী। মুন্নী’র রূপ-যৌবনের প্রেমে পড়ে যান মীর জাফর। তার সব স্ত্রীর সমাধিই আছে জাফরাগঞ্জের এই সমাধিক্ষেত্রে।মীর জাফর ও ব্রিটিশ অধীনত অন্যান্য নবাবদের এই সমাধিক্ষত্র আমাদের ইতিহাসের গ্লানিময় অধ্যায়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×