somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটি মসজিদ --------------------- অবহেলিত ইতিহাসের নিরব স্বাক্ষী নির্মাণের অপেক্ষায় ৩শ বছর

২৩ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
লোকমান হোসেন পলা।।






মুর্শিদাবাদ ঘুরে: মুর্শিদকুলি খাঁর জামাতা সুজা-উদ-দৌলা আর পৌত্র সারফরাজ খাঁ। মুর্শিদকুলির খাঁর পরে বাংলার মসনদে বসেন জামাতা সুজা-উদ-দৌলা বা সুজাউদ্দিন।
এরপর মসনদে বসেন সরফরাজ খাঁ। মুর্শিদকুলি খাঁর ইচ্ছা ছিলো সুজা-উদ-দৌলা নয়, সরফরাজ খাঁই হবেন তার মসনদের উত্তরাধিকার; বাংলার পরবর্তী নবাব। দিল্লির সম্রাট ও মুর্শিদকুলি পরিবারের হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত মুর্শিদকুলি, সুজা ও সরফরাজের মধ্যে এ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিরসন হয়। সে কাহিনী আরও দীর্ঘ।
পিতার পরে সরফরাজ খাঁ নবাব হলেও নবাবি নিয়ে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হলো আলীবর্দির সঙ্গে। ক্ষমতা নিয়ে সরফরাজ খাঁ ও আলীবর্দি খাঁর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল বহুদিন ধরেই। সেই দ্বন্দ্বের ফয়সালা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানেই হয়। সরফরাজ খাঁ ও আলীবর্দি খাঁর মধ্যে গিরিয়ার যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আলীবর্দি খাঁ-ই জয়ী হন। আর যুদ্ধের ময়দানেই নিহত হন নবাব সরফরাজ খাঁ।
মৃত্যুর আগে সরফরাজ খাঁ মুর্শিদাবাদে একটি মসজিদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। নবাবের ইচ্ছানুযায়ী মসজিদের নির্মাণ কাজও শুরু হয়। কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছা পুরণ হয় না- তা তিনি নবাবই হোন অথবা ফকির। কথায় বলে জন্ম-মৃত্যু উপরওয়ালার হাতে। ক্ষমতাও তাই। আজ যে রাজা, কাল সে ফকির। রাজা-বাদশা-নবাবি আমলে এ প্রবাদকে আরও বেশি সত্য বলে মনে হয়।
হাকিম নড়লে হুকুমও বুঝি নড়ে যায়! সরফরাজ খাঁর ইচ্ছানুযায়ী মসজিদের নির্মাণ কাজ আর সম্পন্ন হলো না। থমকে গেলো মসজিদের নির্মাণ কাজ।
মসজিদের মূল কাজের প্রায় শতভাগই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিলো শুধু একটি গম্বুজের কাজ। দুইটি গম্বুজ সম্পন্ন হলেও তৃতীয় গম্বুজটি আর তৈরি হয়নি। নির্মিত দুইটি গম্বুজও আজ ভেঙে পড়েছে।
সরফরাজ খাঁর পর আরও অন্তত ১৬ জন নবাব বাংলা মসনদে বসলেও সরফরাজ খাঁর স্বপ্নের মসজিদটির শেষ গম্বুজটি আর নির্মিত হয়নি। সরফরাজ খাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হলো তার ইচ্ছার।
মসজিদটি অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়ার কারণেই এটি ফৌতি মসজিদ বা ফুটি মসজিদ বলে পরিচিতি পায়। মসজিদটি যেহেতু সম্পন্ন হয়নি তাই এর রক্ষণাবেক্ষণও ঠিক মতো হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদটি আজ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
সরফরাজ খাঁ মসনদে ছিলেন মাত্র পাঁচ বছর। পিতার মৃত্যুর পর ১৭৩৯ সালে তিনি নবাব ও ১৭৪০ সালে আলীবর্দি খাঁর সঙ্গে যুদ্ধে মারা নিহত হন।
মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধিতে যেতে লালগোলা-শিয়ালদহ রেলক্রসিংটি পার হলেই মূল সড়ক থেকে হাতের বা দিকেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। রাস্তা থেকে নেমে নিচু পথ ধরে যেতে হয় মসজিদটিতে। মসজিদটি অনেক উ‍ঁচু ঢিবির উপর অবস্থিত। মসজিদে ওঠার কোনো সিঁড়ি নেই। বেশ কষ্ট করেই মসজিদে উঠতে হয়। চারদিকে ইট-সুরকির দেয়াল, অসম্পূর্ণ ছাদ, মাটির মেঝে। বয়সের ভারে পড়ো পড়ো অবস্থা। শেওলা, আগাছা, পরগাছায় ছেয়ে গেছে অনেক জায়গা।
মসজিদ সংলগ্ন জায়গা অনেক আগেই বেদখল হয়ে গেছে। তবু মসজিদের দেওয়ালে কিছু কারুকাজ আজও চোখে পড়ে।
অবহেলিত ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে নির্জন অন্ধকারে প্রহর গুনছে যেনো এ মসজিদটি। এভাবে প্রায় ৩শ বছর নির্মাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সরফরাজ খাঁর নবাবি মসজিদ।

---------------------
কিভাবে যাবেন:---

শিয়ালদা থেকে লালগোলাগামী যে কোনও ট্রেনই মুর্শিদাবাদ যায়। দূরত্ব ১৯৫ কিলোমিটার। ভাড়া ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, সময় লাগে ৫ঘন্ট। ভাগীরথী,
হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস, লালগোলা লোকাল সহ আরো অনেক ট্রেন রয়েছে শিয়ালদা থেকে মুর্শিদাবাদ য়ায়। এছাড়া
ও কলকাতা টার্মিনাল ষ্টেশন বাস ছেড়ে।
গঙ্গার ওপারে আজিমগঞ্জ জংশন এ নেমে নৌকায় এপারে আসা যাবে. কলকাতার শহিদমিনার থেকে প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি বাস যাচ্ছে বহরমপুর। সকাল থেকে ১ঘন্টা অন্তর । সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। বহরমপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদের লালবাগ। মুর্শিদাবাদে ষ্টেশন থেকে লালবাগ ও হাজারদুয়ারি আসতে হবে রিকশায় ভাড়া ৬০ টাকা টাঙা ৮০ টাকা।মুর্শিবাদ রেল স্টেশন থেকে অটো রিকসা বা ঘোড়ার গাড়ি করে মুর্সিবাদের ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় হয়ে যাবে।

কোথায় থাকবেন:---

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যটক উন্নয়ন নিগমের বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজ ভাড়া ১,৫০০ টাকা।এছাড়া অনেক হোটেল আছে, হোটেল রেমন্ড,ফেন্টাসি হোটেল,ভাই ভাই হোটেল,ফ্রেন্ড হোটেল,হোটেল মঞ্জুসা,হোটেল রাজলক্ষ্মী,হোটেল যাত্রীক,হোটেল অনুরাগ,প্রিয়ঙ্কা হোটেল রেস্টুরেন্ট,হোটেল আপায়ান, ইতাদি .সব হোটেল মোটামুটি ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০টাকা পর্যন্ত।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×