somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উজ্জয়ন্ত রাজপ্রাসাদ (আগারতলা রাজবাড়ি যাদুঘর) অন্যরকম এক শুভ্রতার প্রতীক।

২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লোকমান হোসেন পলা

ত্রিপুরায় রয়েছে মাণিক্য রাজবংশের ছয়শ বছরের ইতিহাস। সমৃদ্ধশালী এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য সারা বিশ্বকে জানাতে আগরতলার উজ্জয়ন্ত রাজপ্রাসাদে নবরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ত্রিপুরা রাজ্য মিউজিয়াম। প্রসাদের সম্মুখভাগে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভাস্কর্যসহ মনোরম স্থাপত্য নকশায় চোখ জুড়িয়ে যায়।
শতবছর পূর্বে আঁকা রাজাদের ছবিতেও রয়েছে ধাঁধা। ত্রিপুরার রাজাদের সঙ্গে বিশ্ব কবির গভীর সম্পর্কের কথা অনেকেরই জানা। মহারাজা বীর চন্দ্র মানিক্য বাহাদুর প্রথম ব্যক্তি যিনি একজন অখ্যাত রবীন্দ্রনাথকে শ্রেষ্ঠ কবির স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। পরে রবীন্দ্রনাথ সাত বার ত্রিপুরায় আসেন। রাজবাড়িতে থাকতে তার জন্য নির্মাণ করা হয় আলাদা ঘরও। জনশ্রæতি রয়েছে এই প্রাসাদের নামকরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই মিউজিয়ামের ২০টি গ্যালারির মধ্যে আলাদা আকর্ষণ রবীন্দ্র গ্যালারি। বাইরে লোকজ সংগীত বাজলেও প্রাসাদের ভেতর বাজে শুধুই রবীন্দ্রনাথের গান। মহারাজা ঈশন চন্দ্র মানিক্যের নাতি উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সচিন দেব বর্মনের চিত্রকর্মও রয়েছে জাদুঘরে।
এক হাজার বছর আগের বিষ্ণু মূর্তি, শহরের বিখ্যাত মসজিদ, মন্দির এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চিত্রের মাধ্যমে। তাছাড়া ত্রিপুরার জনগোষ্ঠির উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু থেকে শুরু করে পুরো জীবন ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যাবে জাদুঘরটিতে। প্রাসাদের ২য় তলায় রয়েছে বীর চন্দ্র মানিক্য বাহাদুরের (১৮৬২-১৮৯৬) প্রায় ৫ ফুটের মতো লম্বা একটি ছবি। শত বছর আগে আঁকা এই ছবিটির সঙ্গে অন্য ছবির ফারাক হলো এটা মাল্টি ডাইমেনশন ছবি। আপনি যেদিকে ঘুরেই ছবির দিকে তাকান না কেন, মনে হবে মহারাজা আপনার দিকেই ঘুরে তাকিয়ে আছেন। বিষয়টি ধাঁধায় ফেলে দর্শনার্থীদের। জাদুঘর সূত্র জানায়, বীর চন্দ্র মানিক্য বাহাদুর ত্রিপুরার প্রথম আধুনিক রাজা হিসেবে পরিচিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে উন্নত নাগরিক সেবা রাজ্যবাসী তখন থেকেই পেতে শুরু করেন। ১৯০১ লন্ডনের মিসেন মার্টিন বার্ন কোম্পানি ৮ শ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ করেন অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রাসাদ। তখন রাজা ছিলেন শ্রী রাধাকৃষ্ণ মানিক্য বাহাদুর। রাজদরবার, নাচের ঘর, পাশা খেলার ঘর, কাচারিসহ অন্তত ৬০ টির মতো ঘর রয়েছে প্রাসাদে। এর বাইরে রয়েছে রাজপরিবারের আবাসিক ব্যবস্থা। এখন থাকেন রাজ মাতাসহ রাজপরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারি প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মা। যিনি ব্যবসার পাশাপাশি কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িত। একসময় গভর্ণর হাউজ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরে ২০১৩ সালে রাজ্য জাদুঘরটি পোষ্ট অফিস চৌমুহনী থেকে এই প্রাসাদে স্থানান্তর করা হয়। রাজপরিবারের কাছ থেকে প্রাসাদটি কিনে নেন রাজ্য সরকার। কলকাতা থেকে জাদুঘর দেখতে আসা কবি শিশির দাশগুপ্ত জানান, গত তিন বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলেন। কিন্তু তখন এখানে গভর্ণর হাউজ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারেননি। আজ ঘুরে দেখে মনটা ভরে গেছে। তার ভাষায়, বহুত পেয়ারা প্যালেস হে। বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ূম বলেন, প ত্রিপুরায় আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই প্রাসাদ দেখা। মনে হয়েছে ত্রিপুরার বুকে এ যেন এক হোয়াইট হাউজ। জাদুঘরের হেড অব অফিস প্রতিব্রত ভট্টাচার্য্য জানান, প্রতিদিন হাজারের বেশি মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। এর বাইরে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীতো আছেই। যাদের বিনা টিকেটে জাদুঘর দেখার ব্যবস্থা থাকে। তিনি জানান গত তিন বছরে এখানে মোট পর্যটকের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হচ্ছে আলাদা গ্যালারি: জাদুঘরের হেড অব অফিস প্রতিব্রত ভট্টাচার্য্য জানান, জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার ভূমিকা শীর্ষক একটি গ্যালারি দ্রুতসময়ের মধ্যেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। গ্যালারিটিতে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। তা ছাড়া শতাধিক ছবির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত ক্যামেরাও রয়েছে। এছাড়া যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অন্যান্য জিনিস সংগ্রহেও কাজ চলছে। তিনি জানান, গ্যালারিটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শরণার্থীদের ঢল কীভাবে ত্রিপুরায় ঢুকেছিল। কীভাবে তারা এখানে অবস্থান নিয়েছিল, শরণার্থী শিবিরে বিভিন্ন দেশের প্রধানদের আগমন, ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবিসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ছবিগুলো মূলত এখানকার প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু সম্মাননা প্রাপ্ত রবিন সেন গুপ্তের তোলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রনাঙ্গণে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং যুদ্ধের ছবি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

যেভাবে যাবেন: আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে অটোরিকশা কিংবা রিকশাযোগে আপনি পৌঁছতে পারেন রাজপ্রাসাদ বা রাজ্য জাদুঘরে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×