somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষ্ণ নগরে কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুক্ষুধা ও নদী নাম সই অঞ্জনা

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
লোকমান হোসেন পলা


রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ও হাসির রাজা গোপালভাঁড়ের রাজ্য
কৃষ্ণ নগর। বেড়াতে এসেছি কৃষ্ণ নগরের বন্ধু চিত্র পরিচলক শ্রী উত্তর এর নিমন্ত্রনে। উত্তমের কাছে কি কি দেখবো জানতে চাইলে সে আমাকে কাজী নজরুল ইসলামর সেখানে অবস্থানের কথা বলো যা আমার জানা ছিল না। সকালে আমাদের যাত্রা শুরু গ্রেস কটেজ দিয়ে।

কৃষ্ণ নগর ছোট শহর, কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম পাওয়ার হাউজের । সেই বাগিটিতে নাম ” গ্রেস কটেজ”। যেখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালের ৩রা জানুয়ারী স্ত্রী প্রমীলাকে নিয়ে উঠেন। সেই সময় গ্রেস কটেজের পাশ দিয়ে স্রোতস্বনী অঞ্জনা নদী বয়ে যেত, তাই দেখে তিনি লিখলেন–নদীর নাম সই অঞ্জনা / ডাকে তীরে খঞ্জনা।

গ্রেস কটেজ এখন বর্তমান কবি নামে লাইব্রেরি আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি মূর্তি আছে আছে কবির কিছু ছবি । বাংলো প্যাটানের বাড়ি। এই গ্রেস কটেজের পাশে ছিল মেহেদি গাছের বেড়া আর ঝুমকো জবার অনেকগুলো গাছ। প্রায়দিন সেই গাছে বেশ কয়েকটি বুলবুলি পাখি এসে বসেত, দোল খেত। তাই দেখে একদিন কবি গেয়ে উঠলেন,–”বাগিচায়-বুলবুলি তুই, ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল’’।

নজরুলের ”মৃত্যু ক্ষুধা” উপন্যাসে এই বাড়ি ও তাঁর আশে পাশের দরিদ্র খ্রিষ্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়েকথা হুবহু উঠে এসেছে।

কৃষ্ণনগরে থাকাকালীন কবি খুব অর্থ কষ্টের মধ্যে পড়েন। ”দারিদ্র্য” কবিতাটি এই সময় রচিত। ১৯২৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তারিখে নজরুলের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় এই গ্রেস কটেজে। কবি নাম দেন–”বুলবুল”। বুলবুল শিশুবয়সেই বসন্ত রোগে মারা যায়। কবি খুব মুষড়ে পড়েন। তখনি তাঁর লেখনিতে প্রকাশ পায়–” শূন্য এ বুকে পাখি মোর / ফিরে আয় ফিরে আয়”। কৃষ্ণ নগরে কবির অবস্থান কাল ১৯২৪ থেকে ১৯২৮ সাল। এক সময় নজরুলকে বহরমপুর জেল থেকে কৃষ্ণ নগর জেলে আনা হয়। এই জেলে থাকা কালীন সময়ে নজরুল ইটের টুকরো দিয়ে জেলখানার মেঝেতে লিখেন সেই বিখ্যাত গানটি–এই শিকল পড়া ছল মোদের এই শিকল পড়া ছল।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপুর্ন সময় কৃষ্ণ নগরে বাস করেন। সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক নির্ভিক কর্মী রুপে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি একমাত্র কবি যিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে র প্রতিবাদ করে জেল খেটেছেন। কিন্তু নত হননি। ” শির নেহারী” আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির”—বিদ্রোহীর এই দৃপ্ত ঘোষণা কেবল শাসকদেরই কাপিয়ে দেয়নি, পালাবদল ঘটিয়ে দিয়েছিল বাংলা কবিতারও। নজরুল ছিলেন সাম্যের কবি। তিনি কোন গোড়ামী, রক্ষনশীলতা, ধর্মন্ধতাকে কখনই প্রশ্রয় দেননি, বলেছেন-” হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র”। এই অকপট স্পষ্ট দুর্বার নজরুল মানুষকে জাগিয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধ্যে, অবিচারের বিরুদ্ধে, শোষনের শৃংখল ভাঙ্গার আন্দোলনে।

মানুষকে ভালবেসে তিনি অসাম্যের বিরুদ্ধ্যে কলম ধরে বলেছিলেন- ‘মিথ্যা শুনিনি ভাই/ এই হৃদয়েচেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।” পুঁথি সর্বস্ব যেসব মানুষ, সেই সব মানুষকে ঘৃনা করে তিনি তাদের জন্য লিখেছেন- পুজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল মুর্খরা সবস শোন/ মানুষ এনেছে গ্রন্থ,- গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন।” মানব আত্মার যে কোন অপমানে গর্জে উঠেছেন- ‘শোন মানুষের বানী/ জন্মের পর মানব জাতীর থাকে না কোন গ্লানি।” নারী জাতির অসন্মানে লিখেছেন–” বিশ্বে যা কিছু মহান সৃস্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধ্যেক তাঁর করিয়াছে নারী, অর্ধ্যেক তাঁর নর।

এখানে কাজী নজরুল ইসলামের নামে যাদুঘর কিংবা নজরুল ইন্সটিটিউট করা যেতে পারে। মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, কৃষ্ণনগরে নজরুল যে বিপ্লবী জীবন কাটিয়েছেন-তা তাঁর সাহিত্যে, কাব্যে কিংবদন্তি হয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:৫৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×