somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমাম হুসাইনের সংক্ষিপ্ত জীবনী

১০ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহীদকূল শিরোমণি হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন হযরত ইমাম আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (আ.)-এর দ্বিতীয় সন্তান। তিনি চতুর্থ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। বড় ভাই হযরত ইমাম হাসানের শাহাদতের পর তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে এবং ইমাম হাসান (আ.)-এর ওসিয়ত ক্রমে ৩য় ইমাম হিসেবে মনোনীত হন।[1] হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ইমামতকাল ছিল দশ বছর।
অন্যান্য মহান ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
তাঁর ইমামতের শেষ ৬মাস ছাড়া বাকী সমগ্র ইমামতকালই মুয়াবিয়ার খেলাফতের যুগেই কেটেছিল। তাঁর ইমামতের পুরো সময়টাতেই তিনি অত্যন্ত কঠিন দূর্যোগপূর্ণ ও শ্বাসরূদ্ধকর পরিবেশে জীবন যাপন করেন। কারণ, ঐযুগে ইসলামী আইন-কানুন মর্যাদাহীন হয়ে পড়েছিল। তখন খলিফার ব্যক্তিগত ইচ্ছাই আল্লাহ্‌ ও তার রাসুল (সা.)-এর ইচ্ছার স্থলাভিষিক্ত হয়ে পড়ে। মুয়াবিয়া ও তার সঙ্গীসাথীরা পবিত্র আহলে বাইতগণ (আ.) ও শীয়াদের ধ্বংস করা এবং ইমাম আলী (আ.) ও তাঁর বংশের নাম নিশ্চিহ্ন করার জন্যে এমন কোন প্রকার কর্মসূচী নেই যা অবলম্বন করেনি। শুধু তাই নয় মুয়াবিয়া স্বীয় পুত্র ইয়াযিদকে তার পরবর্তী খলিফা হিসেবে মনোনীত করার মাধ্যমে স্বীয় ক্ষমতার ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু ইয়াযিদের চরিত্রহীনতার কারণে একদল লোক তার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিল। তাই মুয়াবিয়া এ ধরণের বিরোধীতা রোধের জন্যে অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইচ্ছাকৃতভাবে হোক আর অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে এক অন্ধকারাচ্ছান্ন দূর্দিন কাটাতে হয়েছে। মুয়াবিয়া ও তার অনুচরদের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার মানসিক অত্যাচার তাঁকে নিরবে সহ্য করতে হয়েছিল। অবশেষে হিজরী ৬০ সনের মাঝামাঝি সময়ে মুয়াবিয়া মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যুর পর তদীয় পুত্র ইয়াযিদ তার স্থলাভিষিক্ত হয়।[1] সে যুগে বাইয়াত (আনুগত্য প্রকাশের শপথ গ্রহণ) ব্যবস্থা আরবদের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথা হিসেবে প্রচলিত ছিল। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয়কার্য পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বাইয়াত গ্রহণ করা হত। বিশেষ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের পক্ষ থেকে রাজা বাদশা বা খলিফার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশের জন্যে অবশ্যই বাইয়াত গ্রহণ করা হত। বাইয়াত প্রদানের পর তার বিরোধীতা করা বিরোধী ব্যক্তির জাতির জন্যে অত্যন্ত লজ্জাকর ও কলঙ্কের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হত। এমনকি মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শে ও স্বাধীন ও ঐচ্ছিকভাবে প্রদত্ত বাইয়াতের নির্ভরযোগ্যতার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। মুয়াবিয়াও তার জাতীয় প্রথা অনুযায়ী তার পরবর্তী খলিফা হিসেবে জনগণের কাছ থেকে স্বীয়পুত্র ইয়াযিদের জন্যে বাইয়াত সংগ্রহ করে। কিন্তু মুয়াবিয়া এ ব্যাপারে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বাইয়াত গ্রহণের ব্যাপারে তাঁকে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করেনি। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পূর্বে সে ইয়াযিদকে বিশেষভাবে ওসিয়াত করে গিয়েছিল[2] যে, ইমাম হুসাইন (আ.) যদি তার (ইয়াযিদ) আনুগত্য স্বীকার (বাইয়াত) না করে, তাহলে সে (ইয়াযিদ) যেন এ নিয়ে আর বেশী বাড়াবাড়ি না করে। বরং নীরব থেকে এ ব্যাপারটা যেন সে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। কারণঃ মুয়াবিয়া এ ব্যাপারে অদ্যোপান্ত চিন্তা করে এর দুঃসহ পরিণাম সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পেরেছিল।

কিন্তু ইয়াযিদ তার চরম অহংকার ও দুঃসাহসের ফলে পিতার ওসিয়তের কথা ভুলে বসল। তাই পিতার মৃত্যুর পর পরই সে মদীনার গর্ভণরকে তার (ইয়াযিদ) পক্ষ থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণের নির্দেশ দিল। শুধু তাই নয়, ইমাম হুসাইন (আ.) যদি বাইয়াত প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাঁর কর্তিত মস্তক দামেস্কে পাঠানোর জন্যেও মদীনার গর্ভণরের কাছে কড়া নির্দেশ পাঠানো হয়।[3]

মদীনার প্রশাসক হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে যথা সময়ে ইয়াযিদের নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করেন। ইমাম হুসাইন (আ.) ঐ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখার জন্যে কিছু অবসর চেয়ে নিলেন। আর ঐ রাতেই তিনি স্বপরিবারে মক্কার উদ্দেশ্যে মদীনা নগরী ত্যাগ করেন।

মহান আল্লাহ্‌ ঘোষিত মক্কার হারাম শরীফের নিরাপত্তার বিধান অনুযায়ী তিনি সেখানে আশ্রয় নেন। সময়টা ছিল হিজরী ৬০ সনে রজব মাসের শেষ ও শাবান মাসের প্রথম দিকে। ইমাম হুসাইন (আ.) প্রায় চার মাস যাবৎ মক্কায় আশ্রিত অবস্থায় কাটান। আর ধীরে ধীরে এ সংবাদ তদানিন্তন ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। মুয়াবিয়ার অত্যাচারমূলক ও অবৈধ শাসনে ক্ষিপ্ত অসংখ্য মুসলমান ইয়াযিদের এহেন কার্যকলাপে আরও অসন্তুষ্ট ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তারা সবাই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি নিজেদের সহমর্মিতা প্রকাশ করল। পাশাপাশি ইরাকের বিভিন্ন শহর থেকে, বিশেষ করে ইরাকের কুফা শহর থেকে সেখানে গমনের আমন্ত্রনমূলক চিঠির বন্যা মক্কায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কাছে প্রবাহিত হতে লাগল। ঐসব চিঠির বক্তব্য ছিল একটাই আর তা হল, ইমাম হুসাইন (আ.) যেন অনুগ্রহপূর্বক ইরাকে গিয়ে সেখানকার জনগণের নেতৃত্বের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ব্যাপারে যেন তাদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। এ বিষয়টি ইয়াযিদের জন্যে অবশ্যই অত্যন্ত বিপদজনক ব্যাপার ছিল। মক্কায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর অবস্থান হজ্জ মৌসুম শুরু হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলমানরা দলে দলে হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় সমবেত হতে লাগল। হাজীরা সবাই হজ্জপর্ব সম্পন্নের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ইতিমধ্যে গোপন সূত্রে ইমাম হুসাইন (আ.) অবগত হলেন যে, ইয়াযিদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু অনুচর হাজীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করেছে। ইহ্‌রামের কাপড়ের ভেতর তারা অস্ত্র বহন করছে। তারা হজ্জ চলাকালীন সময়ে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে তাদের ইহ্‌রামের কাপড়ের ভেতর লুকানো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করবে।[4]

ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াযিদের গোপন ষড়যন্ত্রের ব্যাপার টের পেয়ে স্বীয় কর্মসূচী সংক্ষিপ্ত করে মক্কা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন। এ সিদ্ধান্তের পর হজ্জ উপলক্ষে আগত বিশাল জনগোষ্ঠীর সামনে তিনি সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্য পেশ করেন।[5] ঐ বক্তব্যে তিনি ইরাকের পথে যাত্রা করার ব্যাপারে নিজ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। একই সাথে তাঁর আসন্ন শাহাদত প্রাপ্তির কথাও তিনি ঐ জনসভায় ব্যক্ত করেন। আর তাঁকে ঐ মহান লক্ষ্যে (অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ) সহযোগিতা করার জন্যে উপস্থিত মুসলমানদেরকে আহ্‌বান জানান। উক্ত বক্তব্যের পরপরই তিনি কিছু সংখ্যক সহযোগীসহ স্বপরিবারে ইরাকের পথে যাত্রা করেন।

হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) কোন ক্রমেই ইয়াযিদের কাছে ‘বাইয়াত’ প্রদান না করার জন্যে সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভাল করেই জানতেন যে, এ জন্যে তাকে প্রাণ বিষর্জন দিতে হবে। তিনি এটাও জানতেন যে, বনি উমাইয়াদের বিশাল ও ভয়ংকার যোদ্ধা বাহিনীর দ্বারা তাঁকে সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন করা হবে। অথচ, ইয়াযিদের ঐ বাহিনী ছিল সাধারণ মুসলমানদের, বিশেষ করে ইরাকী জনগণেরই সর্মথনপুষ্ট। কেননা, সে যুগের সাধারণ মুসলমানদের বেশীর ভাগই গণদূর্নীতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূর্বলতা এবং চিন্তা ও চেতনাগত অধঃপতনে নিমজ্জিত ছিল।

শুধুমাত্র সে যুগের অল্প ক’জন গণ্যমান্য ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শুভাকাংখী হিসাবে ইরাক অভিমুখে যাত্রার ব্যাপারে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তারা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ঐ যাত্রা ও আন্দোলনের বিপজ্জনক পরিণতির কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদের উত্তরে ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন, আমি কোন অবস্থাতেই ইয়াযিদের বশ্যতা শিকার করব না। অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে আমি কোন ক্রমেই সমর্থন করব না। আমি যেখানেই যাই না কেন, অথবা যেখানেই থাকি না কেন, তারা আমাকে হত্যা করবেই। আমি এ মূহুর্তে মক্কা নগরী এ কারণেই ত্যাগ করছি যে, রক্তপাত ঘটার মাধ্যমে আল্লাহ ঘরের পবিত্রতা যেন ক্ষুন্ন না হয়।”[6]

অতঃপর ইমাম হুসাইন (আ.) ইরাকের কুফা শহরের অভিমুখে রওনা হন। কুফা শহরে পৌঁছাতে তখনও বেশ ক’দিনের পথ বাকী ছিল। এমন সময় পথিমধ্যে তাঁর কাছে খবর পৌঁছাল যে, ইয়াযিদের পক্ষ থেকে নিযুক্ত কুফার প্রশাসক ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রেরিত বিশেষ প্রতিনিধিকে হত্যা করেছে। একই সাথে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জনৈক জোরালো সর্মথক এবং কুফা শহরের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকেও হত্যা করা হয়েছে। এমনকি হত্যার পর তাদের পায়ে রশি বেঁধে কুফা শহরের সকল বাজার এবং অলি গলিতে টেনে হিছড়ে বেড়ানো হয়েছে।[7] এছাড়াও সমগ্র কুফা শহর ও তার পার্শ্বস্থ এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। অসংখ্য শত্রু সৈন্য ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আগমনের প্রতিক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। সুতরাং শত্রু হস্তে নিহত হওয়া ছাড়া ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জন্যে আর কোন পথই বাকী রইল না। তখন সবকিছু জানার পর ইমাম সুদৃঢ় ও দ্বিধাহীনভাবে শাহাদত বরণের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং কুফার পথে যাত্রা অব্যাহত রাখলেন।[8]

কুফা পৌঁছার প্রায় ৭০ কিঃ মিঃ পূর্বে কারবালা নামক মরুভুমিতে ইমাম পৌঁছলেন। তখনই ইয়াযিদের সেনাবাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.)-কে ঐ মরু প্রান্তরে ঘেরাও করে ফেললো। ইয়াযিদ বাহিনী আটদিন পর্যন্ত ইমাম হুসাইন (আ.) ও তার সহচরদের সেখানে ঘেরাও করে রাখল। প্রতিদিনই তাদের ঘেরাওকৃত বৃত্তের পরিসীমা সংকীর্ণ হতে থাকে। আর শত্রু সৈন্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে লাগল। অবশেষে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর স্বীয় পরিবারবর্গ ও অতি নগণ্য সংখ্যক সহচরসহ তিরিশ হাজার যুদ্ধাংদেহী সেনাবাহিনীর মাঝে ঘেরাও হলেন।[9] হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) আটকাবস্থায় ঐ দিনগুলোতে স্বীয় অবস্থান সুদৃঢ় করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। নিজের সহচরদের মধ্যে শুদ্ধিঅভিযান চালান। রাতের বেলা তাঁর সকল সঙ্গীদেরকে বৈঠকে সমবেত করেন। ঐ বৈঠকে সমবেতদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি বলেনঃ মৃত্যু ও শাহাদত বরণ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ নেই। আমি ছাড়া আর অন্য কারো সাথেই এদের (ইয়াযিদ বাহিনী) কোন কাজ নেই। আমি তোমাদের কাছ থেকে গৃহীত আমার প্রতি বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) এ মূহুর্ত থেকে বাতিল বলে ঘোষণা করছি। তোমাদের যে কেউই ইচ্ছে করলে রাতের এ আঁধারে এ স্থান ত্যাগ করার মাধ্যমে এই ভয়ংকার মৃত্যুকূপ থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারে। ইমামের ঐ বক্তৃতার পর শিবিরের বাতি নিভিয়ে দেয়া হল। তখন পার্থিব উদ্দেশ্যে আগত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর অধিকাংশ সঙ্গীরাই রাতের আধাঁরে ইমামের শিবির ছেড়ে পালিয়ে গেল। যার ফলে হাতে গোনা ইমামের অল্পকিছু অনুরাগী এবং বনি হাশেম গোত্রের অল্প ক’জন ছাড়া ইমামের আর কোন সঙ্গী বাকী রইল না। ইমামের ঐসব অবশিষ্ট সঙ্গীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ জন। অতঃপর ইমাম হুসাইন (আ.) পুনরায় তাঁর অবশিষ্ট সঙ্গীদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে সমবেত করেন। সমবেত সঙ্গী ও হাশেমীয় গোত্রের আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) বলেনঃ আমি ছাড়া তোমাদের কারো সাথে এদের কোন কাজ নেই। তোমাদের যে কেউ ইচ্ছে করলে রাতের আধাঁরে আশ্রয় গ্রহণের (পালিয়ে যাওয়া) মাধ্যমে নিজেকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পার।”

কিন্তু এবার ইমামের অনুরাগী ভক্তরা একে একে সবাই দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিল। তারা বললো, “আমরা অবশ্যই সে সত্যের পথ থেকে বিমুখ হব না, যে পথের নেতা আপনি। আমরা কখনোই আপনার পবিত্র সাহচর্য ত্যাগ করবো না। আমাদের হাতে যদি তলোয়ার থাকে, তাহলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ পর্যন্ত আপনার স্বার্থ রক্ষার্থে যুদ্ধ করে যাব।”[10]

ইমাম (আ.)-কে প্রদত্ত অবকাশের শেষ দিন ছিল মহররম মাসের ৯ তারিখ। আজ ইমাম হুসাইন (আ.) কে ইয়াযিদের বশ্যতা স্বীকারের (বাইয়াত) ঘোষণা প্রদান করতে হবে অথবা ইয়াযিদ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে। শত্রু বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইমামের জবাব চেয়ে পাঠানো হল। প্রত্যুত্তরে ইমাম (আ.) ঐ রাতে (৯ই মহরমের দিবাগত রাত) সময় টুকু শেষ বারের মত ইবাদত করার জন্যে অবসর প্রদানের আবেদন করলেন। আর পর দিন ইয়াযিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবর্তীণ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।[11]

হিজরী ৬১ সনের ১০ই মহররম আশুরার দিন, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বাহিনীর সদশ্য সংখ্যা ৯০ জনের চেয়েও কম। যাদের মধ্যে ৪০ জনই ইমামের পুরানো সঙ্গী। আর আনুমানিক ৩০ জনেরও কিছু বেশী সৈন্য এক’দিনে (১লা মহররম থেকে ১০ই মহররম পর্যন্ত) ইয়াযিদের বাহিনী ত্যাগ করে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বাহিনীতে যোগদান করেছেন। আর অবশিষ্টরা ইমামের হাশেমী বংশীয় আত্মীয় স্বজন, ইমামের ভাই বোনেরা ও তাদের সন্তানগণ, চাচাদের সন্তানগণ এবং তাঁর নিজের পরিবারবর্গ। ইয়াযিদের বিশাল বাহিনীর মোকাবিলায় ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর ঐ অতি নগন্য সংখ্যক সদস্যের ক্ষুদ্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্যে বিন্যস্ত করলেন। অতঃপর যুদ্ধ শুরু হল। সেদিন আশুরার সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন যুদ্ধ চললো। ইমামের হাশেমী বংশীয় সকল যুবকই একের পর এক শাহাদত বরণ করলেন। ইমামের অন্যান্য সাথীরা একের পর এক সবাই শহীদ হয়ে গেলেন। ঐ সকল শাহাদত প্রাপ্তদের মাঝে ইমাম হাসান (আ.)-এর দু’জন কিশোর পুত্র এবং স্বীয় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর একজন নাবালক পুত্র ও একটি দুগ্ধ পোষ্য শিশু ছিলেন।[12] যুদ্ধ শেষে ইয়াযিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারের মহিলাদের শিবির লুটপাট করার পর তাঁদের তাবুগুলোতে অগ্নি সংযোগ করে তা জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়। তারা ইমামের বাহিনীর শহীদদের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শহীদদের লাশগুলোকে তারা বিবস্ত্র করে। দাফন না করেই তারা লাশগুলোকে বিবস্ত্র অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখে। এরপর ইয়াযিদ বাহিনী শহীদদের কর্তিত মস্তকসহ ইমাম পরিবারের বন্দী অসহায় নারী ও কন্যাদের সাথে নিয়ে কুফা শহরের দিকে রওনা হল। ঐসব বন্দীদের মাঝে ইমাম পরিবারের পুরুষ সদস্যের সংখ্যা ছিল মাত্র অল্প ক’জন। এদের একজন ছিলেন চরমভাবে অসুস্থ তিনি হলেন, হযরত ইমাম হুসাইনের ২২ বছর বয়স্ক পুত্র হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)। ইনিই সেই চর্তুথ ইমাম। অন্য একজন ছিলেন ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)-এর ৪ বছর বয়স্ক পুত্র মুহাম্মদ বিন আলী। ইনিই হলেন পঞ্চম ইমাম হযরত বাকের (আ.)। আর তৃতীয় জন হলেন, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জামাতা এবং হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর পুত্র হযরত হাসান মুসান্না (রহঃ)। তিনি চরমভাবে আহত অবস্থায় শহীদের লাশের মাঝে পড়ে ছিলেন। তখনও তাঁর শ্বাসক্রিয়া চলছিল। শহীদদের মাথা কাটার সময় ইয়াযিদ বাহিনীর জনৈক সেনাপতির নির্দেশে তাঁর মাথা আর কাটা হয়নি। অতঃপর তাঁকেও সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে বন্দীদের সাথে কুফার দিকে নিয়ে যাওয়া হল। তারপর কুফা থেকে সকল বন্দীকে দামেস্কে ইয়াযিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইমাম পরিবারের নারী ও কন্যাদেরকে বন্দী অবস্থায় এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরিয়ে বেড়ানো হয়। পথিমধ্যে আমিরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.)-এর কন্যা হযরত জয়নাব (আ.) ও ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) জনগণের উদ্দেশ্যে কারবালার ঐ মর্মান্তিক ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা সম্বলিত মর্মস্পর্শী বক্তব্য রাখেন।

কুফা ও দামেস্কে তাঁদের প্রদত্ত ঐ হৃদয়বিদারক গণভাষণ উমাইয়াদেরকে জনসমক্ষে যথেষ্ট অপদস্থ করে। যার ফলে মুয়াবিয়ার বহু বছরের অপপ্রচারের পাহাড় মূহুর্তেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। এমনকি শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ালো যে, ইয়াযিদ তার অধীনস্থদের এহেন ন্যক্কারজনক কার্যকলাপের জন্যে বাহ্যিকভাবে জনসমক্ষে অসন্তুষ্টি প্রকাশে বাধ্য হয়েছিল। কারবালার ঐ ঐতিহাসিক মর্মান্তিক ঘটনা এতই শক্তিশালী ছিল যে, অদূর ভবিষ্যতে তারই প্রভাবে উমাইয়া গোষ্ঠী তাদের শাসনক্ষমতা থেকে চিরতরে উৎখাত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক কারবালার ঘটনাই শীয়া সমপ্রদায়ের মূলকে অধিকতর শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু তাই নয়, কারবালার ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিদ্রোহ, বিপ−ব এবং ছোট বড় অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘাত ঘটতে থাকে। এ অবস্থা প্রায় বার বছর যাবৎ অব্যাহত ছিল। শেষ পর্যন্ত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যা করার সাথে জড়িত একটি ব্যক্তিও জনগণের প্রতিশোধের হাত থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়নি।

হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবন ইতিহাস, ইয়াযিদ এবং তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জ্ঞান রয়েছে, তিনি নিঃসন্দেহে জানেন যে, সে দিন হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সামনে শুধুমাত্র একটা পথই খোলা ছিল। আর তা ছিল শাহাদত বরণ। কেননা, ইয়াযিদের কাছে বাইয়াত প্রদান, প্রকাশ্যভাবে ইসলামকে পদদলিত করারই নামান্তর। তাই ঐ কাজটি ইমামের জন্যে আদৌ সম্ভব ছিল না। কারণ, ইয়াযিদ যে শুধুমাত্র ইসলামী আর্দশ ও ইসলামী আইন কানুনকে সম্মান করত না, তাই নয়; বরং সে ছিল উচ্ছৃংখল চরিত্রের অধিকারী। এমনকি ইসলামের পবিত্র বিষয়গুলো এবং ইসলামী বিধানকে প্রকাশ্যে পদদলিত করার মত স্পর্ধাও সে প্রদর্শন করত। অথচ, ইয়াযিদের পূর্ব পুরুষরা ইসলামের বিরোধী থাকলেও তারা ইসলামী পরিচ্ছদের অন্তরালে ইসলামের বিরোধীতা করত। কিন্তু প্রকাশ্যভাবে তারা ইসলামকে সম্মান করত। তারা প্রকাশ্যে মহানবী (সা.)-কে সহযোগিতা করত এবং ইসলামের গণ্যমান্য ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে বাহ্যত গর্ববোধ করত। কারবালার ইতিহাসের অনেক বিশ্লেষকই বলে থাকেন যে, ঐ দুই ইমামের [ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)] মতাদর্শ ছিল দু’ধরণের যেমনঃ ইমাম হাসান (আ.) প্রায় ৪০ হাজার সেনাবাহিনীর অধিকারী হয়েও মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করেন। আর ইমাম হুসাইন (আ.) মাত্র ৪০ জন অনুসারী নিয়েই ইয়াযিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবর্তীণ হন। কিন্তু ইতোপূর্বের আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, এ ধরণের মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, ইমাম হুসাইন (আ.), যিনি মাত্র একটি দিনের জন্যেও ইয়াযিদের বশ্যতা স্বীকার করেননি, সেই তিনিই ইমাম হাসান (আ.)-এর পরপর র্দীঘ দশ বছর যাবৎ মুয়াবিয়ার শাসনাধীনে সন্ধিকালীন জীবন যাপন করেন। ঐ সময় তিনি প্রকাশ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হুসাইন (আ.) যদি সেদিন মুয়াবিয়ার সংগে যুদ্ধে অবর্তীণ হতেন, তাহলে অবশ্যই তাঁরা নিহত হতেন। আর এর ফলে ইসলামের এক বিন্দু মাত্র উপকারও হত না। কেননা, মুয়াবিয়ার কপটতাপূর্ণ রাজনীতির কারণে, বাহ্যত তাকেই সত্য পথের অনুসারী বলে মনে হত। এছাড়া মুয়াবিয়া নিজেকে রাসুল (সা.)-এর সাহাবী, ওহী’ লেখক এবং মু’মিনদের মামা (মুয়াবিয়ার জনৈকা বোন রাসুলের স্ত্রী ছিলেন) হিসেবে জনসমক্ষে প্রচার করে বেড়াত। আপন স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজনে এমন কোন চক্রান্ত নেই যা সে অবলম্বন করেনি। এমতাবস্থায় মুয়াবিয়ার এহেন প্রতারণামূলক রাজনীতির মোকাবিলায় ইমাম হাসান (আ.) বা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কোন কর্মসূচীই ফলপ্রসু হত না।
মুয়াবিয়া এতই চতুর ছিল যে, সে অতি সহজেই লোক লাগিয়ে ইমামদের হত্যা করত। আর সে নিজেই নিহত ইমামদের জন্যে প্রকাশ্যে শোক অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিত। কেননা, একই কর্মসূচী সে তৃতীয় খলিফার ক্ষেত্রেও বাস্তবায়িত করেছিল।


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×