সৌখিন এ জমিদার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্লভ প্রজাতীর গাছপালা এনে বাগানটিকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছেন কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর বাগানের উন্নয়ন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বাগানের ভগ্ন দশায় ব্যাথিত হয়ে তৎকালিন পূর্বপাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালে এর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নেয় এবং বন বিভাগের সার্বিক ব্যাবস্থাপনায় আসে। দেশ স্বাধীন হবার পর বন-বিভাগ আবার নতুন করে বাগান উন্নয়নের উদ্যম পায় ফলে উদ্যানের হারানো ঐতিহ্য কিছুটা হলেও আবার ফিরে আসে। অনেক জঞ্জাল পরিষ্কার করে এটিকে আবার গোছানো হয়, শ্যাওলা পড়ে থাকা 'শঙ্খনিধি' কেও চকচকে করে তোলার প্রয়াস চালানো হয়।
বিশ্ববিখ্যাত আমাজন লিলিও এই শঙ্খনিধিতে ভাসতো, এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে। সব মিলিয়ে এখান আছে প্রায় ৭৭২ টি প্রজাতীর ১৫০০০ এরও বেশি নমুনা। বেশিরভাগই বিদেশী ও দুষ্প্রাপ্য। শতবর্ষে একবার ফোটা সেঞ্চুরী প্ল্যান্টও এই বাগানে রয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে একবার ফুটেছিলো। মধ্য আফ্রিকার অধিবাসিরা মিশরের মমি বানানোর অনেক আগে থেকেই মৃতদেহ সংরক্ষনের জন্য যা ব্যাবহার করত তা হোলো, বাওবাব (Adansonia digitata)নামের একপ্রকার বৃক্ষ। এর খোলে রেখে তারা মৃতদেহ সংরক্ষন করত, সেই বৃক্ষও আমাদের অবহেলিত এই বলধায় রয়েছে। রয়েছে বৃহৎ সূর্য্য ঘড়ি যা এখনও রৌদ্রজ্জল দিনে সঠিক সময় নির্দেশ করে!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একসময় এখানে এসেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত 'ক্যামেলিয়া' কবিতাটিও এই উদ্যানের আনন্দকুঠিতে বসে লেখা,
যেদিন নেমে আসব তার দুদিন আগে তনুকা বললে,
'একটি জিনিস দেব আপনাকে, যাতে মনে থাকবে আমাদের কথা-
একটি ফুলের গাছ।'
এ এক উৎপাত। চুপ করে রইলেম।
তনুকা বললে, 'দামি দুর্লভ গাছ,
এদেশের মাটিতে অনেক যত্নে বাঁচে।'
জিগেস করলাম,'নামটা কি?'
সে বলল, 'ক্যামেলিয়া।'
চমক লাগল--
আর একটা নাম ঝিলিক দিয়ে উঠল মনের অন্ধকারে।
হেসে বললেম, 'ক্যামেলিয়া,
সহজে বুঝি এর মন মেলে না?'
আজ আর নেই তনুকা, নেই রবীঠাকুর কেবল রয়ে গেছে তাঁর ক্যামেলিয়া। দেশের বাইরে থেকে ফিরে এসে শঙ্খনিধির সামনে দাঁড়িয়ে কেবল মনে হতে লাগল, দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া...........
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ২:১৮