somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবনের টারজান (পর্ব-২)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদম ছোটবেলা থেকেই আমি একটু প্রকৃতি প্রেমিক। স্কুল থেকে ফিরে সব ছেলেরা যখন গ্রামের মাঠে খেলায় মেতে উঠতো আমি তখন “গাব” গাছের মগ ডালে শুয়ে আকাশের গায়ে মেঘের চলাচল দেখতাম। আমার মা এবং নানী বলতেন আমার সাথে নাকি পরী আছে। তাই আমি বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াই, গাছে গাছে থাকি। সেই ছোটবেলায়ই আমি প্রকৃতির রূপ ও গন্ধে মাতাল হয়েছিলাম। শৈশবেই আমি প্রতিটি ঋতুর আলাদা আলাদা গন্ধ চিনেছিলাম। বর্তমানে যান্ত্রিক জীবনের অতল গহীনে থেকেও বাতাসে ভেসে আসা গন্ধ আমাকে বলে দেয় যে ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে। আসছে হেমন্ত, শরৎ, বসন্ত বা বরষা অথবা গ্রষ্মের দাবদাহে পেড়া মাটির কান্না কিম্বা শীতে শিশিরের কানাকানি।

জীবনের নানা প্রলোভন যখন নগর নরকে বিষ বাষ্প হয়ে শরীর ও মনকে বিষিয়ে তোলে, বাতাসের কোলাহল যখন বিকৃত যন্ত্রের বিভৎস দুষণে ঢেকে যায়, প্রকৃতির গন্ধ যখন তেল-ময়লা আর পারফিউমের আড়ালে হারিয়ে যায় আমি তখন উড়ে চলা প্রাণহীন এক খন্ড ছেড়া কাগজ হয়ে যাই। শহরের নোংরা বাতাসে উড়ে চলি নাটাই ছেড়া ঘুড়ির মতো দিকহীন, গন্তব্যহীন। অবশ্য কখনো সখনো স্বতেজ হওয়ার সুযোগ মিলে যায়। যেমন মিলেছিল ১৪ই আগষ্ট। ১৪ই আগষ্ট রাত ১১টায় রওনা হোলাম খুলনার উদ্দেশ্যে। স্বপরিবারে সুন্দরবন যাবো। সেখানে আমাদের জন্য অপক্ষো করে আছে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি নাহিদ আঞ্জুমান নয়ন এবং তার সাথে সুন্দরবনের টারজান। সুন্দরবনের টারজানের সাথে আগেই আপনাদের পরিচয় করিয়েছি। তাই তার বর্ণনায় আর গেলাম না।

১৫ তারিখ ভোরে গিয়ে আমরা খুলনায় পৌঁছলাম। রূপসা নদীতে আমাদের শীপ অপেক্ষা করছিল। বাস থেকে নেমে সোজা সেখানে। আমরা শীপে উঠতেই শীপ ছেড়ে দিলো। ক্যাবিনে ঢুকে গোছগাছ করতে না করতেই ক্যাবিনের ভেতরে থাকা মাইকে ভেসে এলো আমাদের শীপের ক্যাপটেন টারজানের কণ্ঠ, “আমি আপনাদের ক্যাপটেন বলছি, সবাইকে ফ্রেশ হয়ে ১০ মিনিটের ভিতর জাহাজের ডেকে আসতে অনুরোধ করা যাচ্ছে”। আমরা তার কথা মতো দশ মিনিটেই রেডি হয়ে ডেকে চলে এলাম। ডেকের টেবিলে সাজানো বাহারী ব্রেকফাস্ট। দু’তিন রকমের ফল, তাজা ফলের জুস, একটি সিদ্ধ ডিম, টিস্যুতে মোড়ানো তিন স্লাইস পা’রুটি সাথে মাখন ও জেলি। এগুলোর সাথে সুন্দরবনের খটি মধু। ব্রেকফাস্টের পর চা বা কফি পছন্দ মাতো।

সকালের নাস্তার পর নদীর দু’পারের দৃশ্য, ফটোসেশন, গল্প, গান আর আড্ডার ভেতর দিয়ে শেষ বিকেলে আমরা পৌঁছে গেলাম সুন্দরবনের কোলে। টারজান আমাদের জানালো আপনারা যদি ভয় না পান তবে সন্ধার পর আমি শীপ নিয়ে একদম সরু একটি চ্যানেলের ভিতর দিয়ে যাবে। এমনও হতে পারে চ্যানেলের ভিতর গাছ পড়ে থাকতে পারে এবং সেই গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করে আমাদের সামনে অগ্রসর হওয়া লাগতে পারে। তবে আমরা যদি এই চ্যানেলের ভিতর দিয়ে যাই তবে রাতের সুন্দরবন খুব কাছ থেকে দেখতে পারবো এবং আমাদের প্রায় ৪ ঘন্টা সময সেভ হবে। আমরা বললাম আমাদের কোন সমস্যা নেই। টারজান যখন আমাদের এ প্রস্তাবটি দিলেন তখন আমাদের কোন ধারনাই ছিলনা যে, রাতের আঁধারে সরু চ্যনেলের ভিতর দিয়ে যাওয়াটা কতো এক্সাইটিং হবে। শীপ যখন চ্যানেলের ভেতর প্রবেশ করলো তখন শীপের ক্রুরা বিশেষ ভাবে সতর্ক হয়ে উঠলো। আমরা ভাবলাম হয়তো বন্য প্রাণীরা যাতে শীপে উঠে আসতে না পারে সে জন্য হয়তো এই বিশেষ সতর্কতা। আসলে বিষয়টি তা না, কারন কিছুক্ষণ পরেই একটি বানর শীপের উপর লাফিয়ে পড়লো কিন্তু ক্রুরা কেউ তাকে কিছুই বললনা বরং রাতের বন্য জীবন দেখানোর জন্য টারজান তার রুমের ভেতর থেকে একটি হাইবীম লাইট বের করে আনলেন এবং আমি সহ আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে জাহাজের ডেকে চলে এলেন। টারজান আমার স্ত্রীকে বললেন, “ভাবী! ভাল করে বনের ভিতরে তাকান দেখবেন হরিণ আর বাঘের চোখে লাইট পড়লে জ্বলজ্বল করবে।” আমার মেয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে বনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমরা অনেক বানর ও হরিণ দেখলাম তবে কোন বাঘ দেখতে পেলাম না। টারজান জানালো যে, এই চ্যানেলের পাশের গাছ গুলোতে মাঝে মাঝে অজগর সাপ দেখা যায়। সাপের কথা শুনে আমরা একটু ভয়ই পেলাম। বিশেষ করে আমার মেয়ে। অজগরের কথা শুনে তার এ্যানাকোন্ডা সিনেমার কথা মনে পড়াতে সে একটু বেশি ভয় পেয়েছিল।

চলবে - - -
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×