পাশের গ্রামের লোকটা হাঁক দিয়ে বলেছিল, আবু মিয়া, একটা কাক তোর কান নিয়ে গেছে। আবু মিয়া ডুকরে কাঁদতে শুরু করল, ওমা আমার কী হবে গো, কাকে আমার কান নিয়ে গেছে। একবারও কানে হাত দিয়ে দেখল না সত্যি সত্যি তার কান খোয়া গেছে কি-না। গ্রামজুড়ে ‘মার মার’ চিত্কার শুরু হয়ে গেল, লাঠিসোটা নিয়ে সবাই কাক মারতে ছুটল।
ভারতের একজন সাংবাদিক, তার নাম দীপাঞ্জন রায়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম আলো, দুবাইয়ের দৈনিক খালিজ টাইমস আর ডেইলি মেইল অনলাইনের ভারতীয় সংস্করণের সংবাদদাতা। গত ৩ মার্চ খালিজ টাইমসে তার পাঠানো খবরে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সাবেক অধিনায়ক লে. জে. মোহাম্মদ আসাদ দুররানি সম্প্রতি আদালতে বলেছেন, ১৯৯১ সালে আইএসআই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে পাঁচ কোটি রুপি দিয়েছিল।
স্মরণীয় যে, আগের বছরের ডিসেম্বরে লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর সে বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন হয়। নয় বছর ধরে এরশাদবিরোধী গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া; অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা অধিকাংশ সময়েই এরশাদকে সমর্থন করেছিলেন। বহু ভোটদাতা সে নির্বাচনের দিন আমাকে বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্যই তারা বহুদূর থেকে পায়ে হেঁটে ভোট দিতে এসেছেন। দীপাঞ্জন রায়ের তৈরি খবরটিতে এ ধারণা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে যে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থসাহায্যেই বিএনপি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল।
গত বছর উইকিলিকস ব্লগ অন্যান্য দলিলের সঙ্গে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পরিস্থিতি এং সে বছরের সাধারণ নির্বাচন সংক্রান্ত বহু কূটনৈতিক দলিল ফাঁস করে দেয়। আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট পত্রিকা খবর দিয়েছিল, ভারতের ‘বস্তা বস্তা টাকা আর পরামর্শেই আওয়ামী লীগের বিরাট জয় হয়েছিল এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন; ভারতের সব দাবি মেনে নিয়ে শেখ হাসিনা সে ঋণ পরিশোধ করছেন।’ ইকোনমিস্টের খবরকে অসত্য প্রমাণ করা কিংবা সে খবরের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হালকা করে দেখাতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ ভয়ানক বিব্রতবোধ করছিল। দীপাঞ্জন রায় সৃষ্ট খবরটিকে সে আলোকেই দেখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আরও বিবেচ্য যে, ভারতের বিদেশ বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ অপপ্রচার ও চরিত্র হননে বিশেষ পারদর্শী। বস্তুত সেটা তাদের প্রধান অস্ত্র। ভারতের কয়েকটি প্রভাবশালী পত্রিকার সঙ্গে ‘র’-এর বিশেষ বন্দোবস্ত আছে। সেসব পত্রিকার দু’চারজন করে সাংবাদিক ‘র’-এর নির্দেশ অনুযায়ী অপপ্রচারের সামগ্রীর কাঠামো তৈরি করেন। ভারতের বহু সাংবাদিক (শুনেছি বাংলাদেশেও আছেন) সেসব সামগ্রীর ভিত্তিতে খবর, মন্তব্য ইত্যাদি তৈরি করে নিজ নিজ নামে দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। আরও শুনেছি, বাংলাদেশের মিডিয়ার কোনো কোনো অংশও ‘র’-এর কাছ থেকে মোটা রকম অর্থসাহায্য পেয়ে থাকে।
দীপাঞ্জন রায় সেরকম ‘র’-এর পোষা সাংবাদিক কি-না জানি না; কিন্তু সন্দেহ নেই যে, তাঁর তৈরি এবং খালিজ টাইমসে প্রচারিত সংবাদটিকে ইকোনমিস্টের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে অপযশ দেয়ার চেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছে। ডেইলি মেইল অনলাইনের ভারতীয় সংস্করণ, ইন্ডিয়া টুডে সাময়িকী, বাংলাদেশের প্রথম আলো ইত্যাদি ঘুরে খবরটি যখন সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস দ্বারা পরিবেশিত হয়, তখন পাঁচ কোটি রুপির অঙ্ক ফুলেফেঁপে ৫০ কোটি রুপি হয়ে গেছে।
দেশটা কার বাপের সম্পত্তি?
খবরটি পাকিস্তানের কোনো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কি-না আওয়ামী লীগ কিংবা বাংলাদেশ সরকার খোঁজখবর করার প্রয়োজন বিবেচনা করেনি। সেটা তাদের উচিত ছিল, কেননা এটা জানা কথা যে, পাকিস্তানের খবরাদি প্রায়ই বিকৃত হয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। আওয়ামী লীগের ভাঙা ঢোলগুলো দীপাঞ্জন রায়ের তৈরি খবরটি নিয়ে বেসুরো নিনাদ শুরু করে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সংগ্রামী জননায়ক এবং তিন-তিনবার বাংলাদেশের মানুষ দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলে আরও একবার প্রমাণ দেন যে, এই দেশটাকে তিনি শেখ পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে বিবেচনা করেন। শেষে দেশে-বিদেশে যখন বলাবলি শুরু হয় যে, আইএসআইর সাবেক প্রধান লে. জে. মোহাম্মদ আসাদ দুররানি আদৌ আদালতে তেমন কোনো কথা বলেননি, মাত্র তখনই অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের টনক নড়ল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বললেন, তারা পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের ওই শুনানির অনুলিপি পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের ‘ফাজিল’ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ নেত্রীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিএনপি নেত্রীকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন।
আদালতের চাকা কেমন ধীরগতিতে চলে, তা সবারই জানা আছে। ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিল বিভাগের বিস্তারিত রায় প্রায় এক বছর পরে এখনও প্রকাশ হয়নি। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট বাংলাদেশকে তাদের শুনানির অনুলিপি দিতে বাধ্য নন, দিলেও কত মাস কিংবা কত বছর পরে দেবেন কে জানে? ততদিন বুঝি আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে ডাহা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাবেন? ইংরেজি প্রবাদ অনুযায়ী বহু ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর অনেক বিলম্বে ব্যবস্থা নেয়াকে বলা হয়, ‘ঘোড়া পালিয়ে যাওয়ার পর আস্তাবলের দরজা তালাবদ্ধ করা।’ এক্ষেত্রে উপমাটি হতে পারে যে, ঘোড়া পালিয়ে গেছে, যাওয়ার সময় আস্তাবলটি ভেঙে দিয়ে গেছে, তারপরই শুধু সে আস্তাবলের দরজায় তালা লাগানো হলো। সতর্ক হয়ে কথা বলা কিংবা কাজ করা শেখ হাসিনার স্বভাবেই নেই। হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলে তিনি অবাস্তব কিংবা বানোয়াট কোনো একটি ইস্যু নিয়ে তর্জন-গর্জন করে জনসাধারণের মনোযোগ ভিন্নমুখী করার প্রয়াস পান। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
দৈনিক নয়া দিগন্ত কৃতিত্বপূর্ণ একটা কাজ করেছে। তারা আইএসআইর সাবেক প্রধান লে. জেনারেল মোহাম্মদ আসাদ দুররানির একটি ‘এক্সক্লুসিভ’ সাক্ষাত্কার প্রকাশ করেছে। জেনারেল দুররানি তাতে বলেছেন, সুপ্রিমকোর্টে কিংবা অন্য কোথাও তিনি বিএনপিকে অর্থসাহায্য দেয়া দূরের কথা, তিনি বিএনপি কিংবা বাংলাদেশের নামও উচ্চারণ করেননি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর গোপনে দীপু মনির চিঠির জবাব দিয়েছে কি-না জানি না; কিন্তু পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল বাসিত বলেছেন, বিএনপিকে আইএসআই অর্থ দিয়েছে বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতারা যে অভিযোগ করেছেন তা একেবারেই ভিত্তিহীন। তারপর জেনারেল দুররানি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাত্কারেও বলেছেন, বিএনপিকে অর্থসাহায্য দেয়ার কথা তিনি কখনও বলেননি।
অর্থাত্ প্রথম আলো পত্রিকা এবং আওয়ামী লীগ নেতারা যে খবর নিয়ে হৈচৈ করেছেন এবং যে ‘খবরের’ ভিত্তিতে শেখ হাসিনা ও মাহবুব-উল-আলম হানিফ সর্ববরেণ্য নেত্রী খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন, সে খবর ষোলআনা মিথ্যা। শেখ হাসিনার এখন অবশ্যকর্তব্য হবে খালেদা জিয়া এবং বিএনপির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করা। নতুবা এ ধারণা বাংলাদেশীদের এবং বিশ্ববাসীর মনে বদ্ধমূল হয়ে থাকবে যে, আওয়ামী লীগ নেতাদের লজ্জা-শরম বলে কিছু নেই এবং তারা জেনেশুনে মিথ্যা কথা বলেন।
অন্ধ ও একদেশদর্শী বিচার
আগেই বলেছি, মিথ্যা উক্তি এবং অপকর্ম ধরা পড়ে গেলে শেখ হাসিনা অপ্রাসঙ্গিক সত্য কিংবা মিথ্যা অভিযোগ তুলে রণহুঙ্কার ছাড়তে থাকেন। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মিথ্যা অভিযোগ করে ধরা পড়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা আবারও অভিযোগ তুলেছেন, খালেদা জিয়া দেশজোড়া আন্দোলন করছেন ‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচার ভণ্ডুল করার জন্য। শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ইত্যাদি সবকিছুর পর ‘বিচার’ কথাটাকেই দলীয়করণ করে ফেলেছেন। একাত্তরে এমন কোনো অপরাধ নেই, যা পাকিস্তানি সেনারা করেনি। তাদের মধ্যে বেছে বেছে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনাকে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল; কিন্তু তাদের বিচার করা হয়নি। শেখ হাসিনার পিতা স্বয়ং তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা তার পিতার হত্যার সাড়ম্বর বিচার করেছিলেন। তার নিজের সরকারের দুই দফায় বাংলাদেশে হাজার হাজার হত্যা হয়েছে। অধিকাংশ হত্যার জন্যই দায়ী তার সৃষ্ট সশস্ত্র ক্যাডার আর তার আদরের দুলাল ছাত্রলীগ-যুবলীগ। যারা খুন হয়েছেন (তাদের মধ্যে সাংবাদিকও আছেন কয়েকজন), প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা বিচার পাননি। বাংলাদেশে বিচার পেতে হলে কি শেখ হাসিনার পিতা কিংবা তার পরিবারের সদস্য হতেই হবে? অন্যদের কি মাতা-পিতা কিংবা সন্তান নেই? বিচার কি এতই অন্ধ কিংবা একদেশদর্শী?
কিন্তু কী বিচার, কেমন বিচার হচ্ছে এই ‘যুদ্ধাপরাধীদের’? এবং কারা সেসব যুদ্ধাপরাধী? এই তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় এমন লোকও আছে—একাত্তর সালে যাদের জন্ম হয়েছিল কিংবা হয়নি। শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট পদ্ধতির স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান, আজীবন তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট থাকতে চান। তার এই খেলার যারাই বিরোধিতা করছে, তাদেরই যুদ্ধাপরাধী অপবাদ দিয়ে ধরে ধরে জেলে পোরা হচ্ছে। জেলে তাদের স্থান করার জন্য খুনের দায়ে প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদেরও ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলাম সমর্থকরা ভারতবিরোধী। আর যায় কোথায়! চোয়ালে যারা দাড়ি আর মাথায় টুপি পরছে, তাদেরই যুদ্ধাপরাধী কিংবা সন্ত্রাসী বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
‘আন্তর্জাতিক’ যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। কোনো বিদেশি বিচারপতিকে সে আদালতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কোনো অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিদেশ থেকে আইনজীবী আনতে দেয়া হয়নি। বিশ্বসমাজ (সম্ভবত ভারত ছাড়া) বলে দিয়েছে, এ আদালত আন্তর্জাতিক আইনের তো বটেই; বাংলাদেশের আইনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ আদালত কিসের আন্তর্জাতিক, সে প্রশ্নের কোনো জবাব নেই এই সরকারের কাছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে রাষ্ট্রপক্ষ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। সরকারের অভিযোগপত্রে কুড়িতে কুড়িতে সাক্ষী দেখানো হলেও তাদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। সরকারের বিরাগভাজন ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে বিলম্ব হচ্ছে। আরও একটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে এখন। শিগগিরই হয়তো আরও ট্রাইব্যুনাল বসানো হবে। এগুলোও কি ‘আন্তর্জাতিক’ হবে? আমার ভাসাভাসা মনে পড়ছে, আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ কিছুকাল আগে বলেছিলেন, এ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক নয়—বাংলাদেশী। তা-ই যদি হবে, তাহলে ‘আন্তর্জাতিক’ কথাটা জুড়ে দিয়ে তাকে অহেতুক গৌরবদানের হাস্যকর চেষ্টা কেন? পদ্মলোচন নাম দিলে কি কানা ছেলের দৃষ্টিশক্তি বেড়ে যায়?
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার
যতই ট্রাইব্যুনাল বসানো হবে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা ততই বেড়ে যাবে। নিউইয়র্কে ম্যানহাটনের এক হোটেলে গত শুক্রবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশীদের এক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, এ ট্রাইব্যুনাল ব্যতিক্রমী ও স্পেশালাইজড (দলীয়কৃত?) আদালত। তিনি বলেছেন, এ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক আইন কিংবা বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি আইন অনুযায়ী বিচার হচ্ছে না— বিচার হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন আইন দ্বারা, যা বাংলাদেশের সংবিধান এমনকি ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব বিধিমালার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
নব্বইয়ের দশকে বসনিয়ায় সার্বদের গণহত্যায় হাজার হাজার মুসলমান নিহত হয়েছিল। একমাত্র সেব্রেনিত্সা শহরেই মারা গেছে আট হাজার পুরুষ ও বালক। সেখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনালে বাদীপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন টবি ক্যাডম্যান। সে বিচার চলেছিল আট বছর ধরে। মি. ক্যাডম্যান বলেন, ‘সেসব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি বলতে পারি, যেহেতু বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন আইন ও নীতি অনুসরণ করে বিচার চালাচ্ছে, তাতে কেউ যদি এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে তাহলে তাকে দোষ দেয়া যায় না।’
বাংলাদেশে প্রায় সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, এ বিচার প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের বিচার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে হাসিনার গদি চিরস্থায়ী করাই এর উদ্দেশ্য। সরকারের বিবেচনার দূরদৃষ্টি নেই। বিচারের নামে বাংলাদেশে সামাজিক ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতিকে খান খান করে ফেলা হয়েছে। এই বিভক্ত সমাজকে জোড়া দিতে দীর্ঘকালের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।
শুরুতেই বলেছিলাম, একজন ভারতীয় (খুব সম্ভবত ‘র’-এর অর্থসাহায্যে অনুপ্রাণিত) সাংবাদিকের অসত্য খবরের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তার সহকর্মীরা গণতন্ত্রের মানসকন্যা খালেদা জিয়াকে যেভাবে অপমানিত করার চেষ্টা করেছেন, সেজন্য তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত। নইলে দেশে এবং বিদেশে তারা নির্লজ্জ এবং বেশরম বলে বিবেচিত থাকবেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্যথায় তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন। সেটা খুবই ভালো কাজ হবে। দেখা যাবে, যে আইনে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও অন্যদের বিচার হয়েছে, আদালত সে আইনকে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেলায় প্রযোজ্য বিবেচনা করেন কি-না।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




