হাটঁতে হাটঁতে একসময় ক্লান্ত হয়ে এসে এই গাছটার নীচে বসতাম। হয়ত তখন ক্লান্তিতে নয় আনন্দেই সময়টা পার করতাম।
দশ-বারো জন ছিলাম ফার্স্ট ইয়ারে, সেটা কমতে কমতে মাস্টার্স এ এসে দুই থেকে তিনজন হয়ে গেলো।
কারো তখন বিয়ে হয়ে যাওয়া আর কারো হয়তো বা পার্ট টাইম জব নিয়ে ব্যস্ততা। আর কারো প্রেম সংক্রান্ত ব্যস্ততা সময় দেয়ার সময় নেই।
এখন সে সব সময় তাও অনেক দূরে।
ব্যস্ত জীবনের সময় না পাওয়ার সময় একটা সময় কেন কিভাবে একা হয়ে গেলাম নিজেও টের পেলাম না।
যে করিডোরে গেলে প্রতিদিন হাযারো চেহারা চোখে পড়তে জুনিয়র সিনিয়র, কেমন আছেন ভাইয়া কেমন আছে ছোট ভাই আজ সেসব কিছুই নেই কোন সিনিয়রের দেখা পাবার কথা হয় না আর জুনিয়র সে সব অনেক অনেক পরের ব্যাচ যারা কেউ চিনে না।
যে সময়ে সেই করিডোরে প্রাণ ছিলাম আমরা বন্ধুরা আজ সে পরিচিত পরিসরে এসেছে নতুন মুখ নতুন প্রাণ তবে সেখানে দেখি নিজের ফেলে আসা অতীত, আমি আর আজ সেভাবে হেসে উঠি না হাসি-ঠাট্টার ছলে কাউকে নিয়ে মেতে উঠি না।
এই কয়টা বছরে কি আমার অতীত আজ এত অচেনা হয়ে গেলো আমার কাছে? ক্লাসে সবসময় পেছনে গিয়ে বসতাম, আবার কোন ক্লাসে সামনে বসতাম টিচারের কথায় রেসপন্স করার জন্য। কত ক্লাসে বসে লেকচার না লিখে নিজের মধ্যে কথা বলেছি। আজ সব সুদূর অনাহুত দিনের কথা।
গ্র্যাজুয়েশনের পর অনেকে চলে গেছে বিভিন্ন জায়গায়, যারা ছিলাম তারাও মাস্টার্স এর পর একে একে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
জীবনর হারিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কেবল বাড়তে থাকে, স্মৃতিতে জমা হতে থাকে এক এক করে ডজন ডজন মানুষের স্মৃতি সময়। মধুর সময় গুলো আজ স্মৃতিবন্দি।
মনে পড়ে কত সময় বন্ধুদের জরুরী সভায় তড়িঘড়ি করে উপস্থিত হয়ে গিয়ে দেখা যে কিছুই না। এমন কত অ-জরুরি কাজে দায়িত্ব নিয়ে যাওয়া।
আজ শত প্ল্যান করেও শেষ মুহূর্তে হয় না সময় দেখা করার।
রিমির প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা হাসি-মাখা মুখটা যেদিন থেকে একটু একটু করে ম্লান হয়ে যেতে লাগল মনে হলো সেদিন থেকে বুঝি বন্ধুত্বের সূর্যটাও ডুবতে শুরু করলো। ভালোবেসেছিলো কোন একজনকে যে তাকে ছেড়ে চলে গেল, কিছুই করার ছিলো না শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম রিমির কষ্টময় দিনগুলো। একটা সময় ঠিক হয়ে গেলও রিমি, আর কোন কষ্ট দেখিনি তার চেহারায়, কিন্তু কষ্টের বদলে দেখেছি ভীষণ কাঠিণ্য, মনে হতো পাহাড়ের মতো অটল, কিছুতেই তাকে আর রাজী করানো যায়নি বিয়ের জন্য, চলে গেছে চাকরী নিয়ে।
এক সময় ফেসবুকে তার স্ট্যাটাস দেখে খোঁজ খবর জানতে পারতাম তাও দিল বন্ধ করে, অত অভিমানী একটা মানুষ হতে পারে!!
একজনের উপর রাগ করে গোটা জীবনটাই একলা পার করে দেয়া, সবার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া।
আজ সেসব না বলা কথা ব্যথার মতো লাগে, মনে হয় আমি যদি তখন কিছু করতে পারতাম তাহলে হ্য়তো ওর জীবনটা আজ অন্য রকম হতো।
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার ফাঁকে কখন যে একা হয়ে গেলাম!!!
আজ বন্ধুরা সব সুন্দর ফ্রেমে বাধাঁনো ছবিটার মতোই আছে। দেখা যায় স্পর্শ না পাওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩৯