somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ভাই আমাদের যাবার সময় হয়ে গেছে খেয়াল রাখবেন যেন ফেঁসে না যাই

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরাবরের মতো এবারও সচিবালয়ে ঈদ ছুটি পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসটি ছিল কোলাকুলির। সরকারের দাপুটে এক মন্ত্রীর কক্ষে কোলাকুলি হচ্ছিল ওই মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে। কোলাকুলির মাঝেই হাস্যরস করে মন্ত্রী তার সচিবকে বললেন, ভাই আমাদের যাবার সময়তো হয়ে গেছে। আর মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা। এরপরই ২৪ অক্টোবর। খেয়াল রাখবেন-যেন ফেঁসে না যাই। যখন যেভাবে বলেছেন, সেভাবেইতো ফাইলপত্র সই করেছি। মন্ত্রীর এমন কথায় সচিব একটু বিব্রত মনে হলো। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, স্যার চিন্তা করবেন না-আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। এমন বক্তব্যে ওই মন্ত্রী যে খুব একটা খুশি হতে পারেননি-এটা আঁচ করতে পেরেছেন ওই সচিব নিজেও। মন্ত্রী রুম থেকে চলে যাওয়ার পর ওই সচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সত্যিই কি আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে? কিম্বা এমন কোনো জরিপ বা তথ্য তাদের কাছে রয়েছে কিনা? খুব নরম কণ্ঠে সচিব বললেন, আমি কবে ওএসডি’র তালিকায় পড়তে যাচ্ছি সে ভাবনাতেই তো সময় পার। মন্ত্রীর কি হলো-তা নিয়ে ভাববার অত সময় কোথায়! ওনারা রাজনীতি করেন, একে অপরকে ঠিকই ম্যানেজ করে নেবেন। যত দোষ সব বর্তাবে আমাদের ঘাড়ে।
ডেডলাইন ২৫ অক্টোবর নিয়ে গোটা মন্ত্রণালয়জুড়েই বিরাজ করছিল এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সকলেরই প্রশ-কি ঘটবে এদিন! এই শঙ্কা ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, ‘২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সচিবালয় থেকেই এই সরকার বিদায়ের আন্দোলন শুরু হবে।’ আর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘২৪ অক্টোবরের পর এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর নৈতিক কোনো অধিকার থাকবে না।’ এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেকায়দায় রয়েছেন বর্তমান সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্যরা। তাদের হাতে একদম সময় নেই। দিনক্ষণ গুনলে সময় মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ মন্ত্রীর ফাইলপত্র গোছগাছ শেষ হয়ে গেছে। যারা করতে পারেননি-তারাও আজকালের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে ফেলবেন। মন্ত্রীদের এহেন দুরাবস্থায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই বাঁকা হাসি হাসছেন। সচিবালয়ের এই দৃশ্য দেখে কয়েকজন মন্ত্রীর পিএস করুণ সুরে জানালেন, গোটা সচিবালয় এখন ভাঙা হাট। আর দাপুটে এক প্রতিমন্ত্রীর এপিএস জানালেন, স্যারের ফাইলপত্র গোছানো এখন শেষ হয়নি। স্যার বার বার বলছেন, কিছু রেখে গেলাম কিনা মনে করে দিও। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর থেকে গত পৌনে পাঁচ বছরে স্যারকে এতটা নরম সুরে কথা বলতে দেখিনি। স্যার নিজেই আমাদের কাছে জানতে চান-২৪ অক্টোবরের পর কি ঘটবে কিছু জানো নাকি? এর কোনো উত্তর আমরা স্যারকে জানাতে পারিনি।
এই উৎকণ্ঠা শুধু মন্ত্রিসভার সদস্যদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। গত পৌনে পাঁচ বছর যেসব আমলারা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন, তাদের সুরও এখন ভিন্ন। এরা এখন নিজেদেরকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দেখছেন। বেসুরে কণ্ঠে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলার চেষ্টা করছেন, সরকারে কে আসলো এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। যে দল ক্ষমতায় আসবে-আমরা তাদের সাথেই কাজ করব। এজন্যই তো আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে সুবিধাভোগী এরকম দু’একজন আমলার অগোছালো এমন সব কথায় এই সরকারের পুরো সময়টা বঞ্চিত ছিলেন এমন এক আমলা উপহাসের সুরেই বলেছেন, বিচিত্র সেলুকাস। আহা বেশ বেশ বেশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বঞ্চিত কর্মকর্তার মতে, মহাজোট সরকারের পৌনে পাঁচ বছরে নিস্পিষ্ট হতে হয়েছে জনপ্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে। সবচেয়ে বেপরোয়া ছিল দলকানা কর্মকর্তারা। একটানা পৌনে পাঁচ বছর শাস্তিমূলক ওএসডি রাখা যেমন হয়েছে, তেমনি দেড় বছরের মাথায় সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে সচিব পদোন্নতি পাওয়ার মতো তুঘলকি কা-ও ঘটেছে। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দলীয়করণমুক্ত, অরাজনৈতিক ও গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল-যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা এবং মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু সরকারের মেয়াদকালে এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই রক্ষা হয়নি। বরং জনপ্রশাসনের দলীয়করণ ও পদোন্নতি বঞ্চনা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। হতাশায় ভুগা এসব কর্মকর্তার আনাগোনা এখন সচিবালয়ে বেড়ে গেছে। এদের অনেককেই গতকাল (রোববার) বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেলেও সুবধাভোগী আমলাদের মাঝে ছিল হতাশার সুর।
এদিকে, আগামী ২৪ অক্টোবর সচিবালয়ে কি ধরনের আন্দোলন হবে; কোন সব আমলারা এই আন্দোলন করবে-এ নিয়েই গোটা সচিবালয়জুড়ে ছিল চাপা গুঞ্জন। পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে অন্যান্য বছর যেখানে গরু-না খাসি এ নিয়ে আলোচনা চলতো; এবছরের আলোচনায় ছিল ২৪ অক্টোবর নিয়ে অজানা ভীতি আর আতঙ্কের নানা ধরনের গল্প।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে এবার প্রথম দিনেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার ছিল উল্লেখ করার মতো। সভা-সমাবেশের ওপর পুলিশের অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞায় বড় ধরনের আন্দোলনের ফাঁদে পড়তে পারে দেশ-এমন শঙ্কা থেকেই অনেকে দ্রুত গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন। তদুপরি, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে ২৫ অক্টোবরের পর দেশ কোনদিকে যাবে-তা নিয়ে অজানা আতঙ্ক তো রয়েই গেছে। মন্ত্রীরাও যে যার মতো নিজ এলাকায় ঈদশেষে প্রথম কার্যদিবসেরই মন্ত্রণালয়ে এসে অফিস করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ কোলাকুলি সেরে দিনভর ফাইলপত্র গোছগাছে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।


Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×