সম্প্রতি দেশব্যাপী অধিকাংশ প্রক্ষাগৃহে মহাসমারোহে চলছে 'আয়নাবাজি'। রংপুরের শাপলা টকিজে বসে সিনেমাটি ইতোমধ্যে দেখেছি আমি। সাধারণত প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না আমার। বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া, সর্বত্র প্রচারণা, অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনে গতানুগতিক নিয়ম ভাঙা এবং দর্শকদের বিপুল আগ্রহের কারণ খুঁজতেই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলাম সিনেমাটি দেখতে। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে রীতিমতো যুদ্ধ করে টিকেট কিনতে হয়েছিল।
রাত ৯টা। প্রথমেই উড়ন্ত জাতীয় পতাকা, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে জাতীয় সঙ্গীত। দাঁড়ালাম। সামনের সারিতে পাঁচ-ছয়জন নারী, তারাও দাঁড়ালেন। বাকিরা বসেই রইলো, চেঁচামেচি চলছেই। পিছনের সারির দু-একজনকে বলতে শুনলাম, 'ভাই, বসেন।' ভাবলাম, দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধটুকু শুধুমাত্র দিবস ও ক্রিকেট সর্বস্ব হয়ে গেছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস সমূহে জাতীয় পতাকা কিংবা শহীদ মিনার ঘিরে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্রিকেট খেলতে নামা দলকে যতটা সম্ভব অবজ্ঞা ভরে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াতেই আমাদের দেশপ্রেম সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আমররা তরুণরাই এর জন্য দায়ী। আমরা চাইলেই দেশের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধকে স্থান-কালের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারি। এটা শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তি ও কাণ্ডজ্ঞানের অভাব।
মূল প্রসঙ্গ হতে কিছুটা দূরে সরে পড়েছি। আয়নাবাজি। পুরো সিনেমার লোকেশন রাজধানী ঢাকা। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী 'আয়না' চরিত্রকে ধারণ করে দর্শকদের দিয়ে যান একের পর এক চমক। অসাধারণ একজন অভিনেতার স্বাক্ষর পুরো সিনেমায় তিনি রেখেছেন। তার নায়িকা নাবিলা এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পার্থ বড়ুয়া ভালো অভিনয় উপহার দিয়েছেন। পুরো সিনেমাটি কমেডি। কমেডিকে ঘিরে উঠে এসেছে একটি বিশেষ অপরাধ জগৎ, নৈপথ্য দুঃখ, চলমান জীবনের সুখ-সংঘাত, নায়িকার হিসেবি রোমান্টিসিজম ও সাময়িক বিরহ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের সিনেমাটি দেখা শেষে সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের ধন্যবাদ দিতেই হয়েছে। যদিও পুরো সিনেমাজুড়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রকে ঘিরে একজন অপরাধীর জয়গান গাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বলবো, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তাঁর ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ অভিনয়টাই হয়তো উপহার দিয়েছেন। সৈয়দ গাউসুল আলমের ছোট্ট কাহিনীটিকে চলচ্চিত্র রূপ দিয়ে একজন সফল নির্মাতার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী। যদিও 'আয়নাবাজি'কে আমি সেরা দশ বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে রাখবো না। তবে নিঃসন্দেহে একটি সফল নির্মাণ। 'আয়নাবাজি'র বাজিমাত সফল-ই বলতে হবে।