কলিগের সাথে কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য উশখুশ করছিলাম সকাল থেকে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দুপুরের পর তিনি নিজেই হাজির হলেন আমার ডেস্কে। বললেন, "কী অবস্থা? রাজনীতি নিয়ে খুব পেরেশান হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে!"
আমি মাথা চুলকাই। কলিগ জিনিয়াস লোক। চেহারা দেখেই মনের খবর বলে দিতে পারেন। "নির্বাচন কমিশন নিয়ে খুব অস্বস্তিতে আছি। বিএনএফের নিবন্ধন বিবেচনার চেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীসহ বিশজন মন্ত্রীর সারা দেশে নির্বাচন ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়ার সুযোগ রেখে বিধিমালা সংশোধন, জামায়াত নেতাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন ইত্যাদি কীর্তিকলাপের মাধ্যমে এই শেষ সময়ে এসে নিজের নিরপেক্ষতা খোয়াতে চাচ্ছে কেন ইসি?"
কলিগ বললেন, "ইসি যে সরকারের অনুগত এটা সবাই জানে, তবু চক্ষুলজ্জার জন্য ইসি এতদিন চেষ্টা করেছে নিরপেক্ষ থাকার। কিন্তু পাঁচ সিটিতে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে উঠেছে আগামি নির্বাচনকে ম্যানুপুলেট করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে। তাই এখন আর চক্ষুলজ্জার ভয় করছেন না হাসিনা। ইসিকে বলে দিয়েছেন যেমন করে হোক বিজয়ের ফুলের মালা তাদের গলায় পরাতে হবে। এজন্য যা করা দরকার, তা করতে হবে, লজ্জা পেলে চলবে না।"
আমি বললাম, "তাহলে ঈদের পর খালেদার ঘোষণা মোতাবেক ইসির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করতে যাচ্ছে বিএনপি, সেটা বোধ হয় ঠিকই আছে।"
কলিগ হাসলেন। "ওটা বিএনপির জন্য হাসিনার তৈরি করা আর একটা ফাঁদ। হাসিনা চাচ্ছেন, ঈদের পর বিএনপি-জামায়াত সহিংস আন্দোলনে নামুক। প্র্যানটা হলো অন্দোলন শুরুর প্রথম সপ্তাহে হরতালের কোন একটা ঘটনায় বিএনপির সব টপ নেতা গ্রেফতার হয়ে জেলে যাবেন এবং অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত জেলে পচবেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আর ছাড়া হবে না তাদের।"
আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। "কিন্তু এভাবে কি আন্দোলন দমাতে পারবে আওয়ামী লীগ?"
কলিগ বললেন, "পারবে তো অবশ্যই। যদি আপনি লাশের ভয় না করেন, তাহলে পৃথিবীর সব আন্দোলনই আপনার পক্ষে দমানো সম্ভব। আওয়ামী লীগ গুলি করে লাশ ফেলে টিভিতে এসে সগৌরবে ঘোষণা দেবে, বিশৃঙ্খলাকে দমন করা হয়েছে।"
আমি বললাম, "তাহলে আপনি বিএনপি-জামায়াতকে কী করতে বলেন?"
কলিগ মাথা চুলকে বললেন, "এই তিন মাসে খুব সতর্কভাবেই খেলবে উভয় জোট। পাঁ একটু এদিক সেদিক হলেই বিপদ আছে সবার। বিএনপি-জামায়াতকেও খুব সাবধানে খেলতে হবে। আমার মতে ঈদের পরই খুব মারমুখি কর্মসূচি দেয়া ঠিক হবে না তাদের। বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে জনসভা টাইপের কর্মসূচি দিয়ে টাইম পাস করে অক্টোবরের শুরুতে হার্ডলাইনে যেতে হবে তাদের। তখন সরকারের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে অনেকখানি। ঐ দুর্বল মুহুর্তে হানতে হবে শেষ আঘাত। এভাবেই হয়তো তারা সফল হতে পারবে।"
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম। "আপনার সাখে একমত হতে পারলাম না ভাই।"
কলিগ উঠলেন। যাবার সময় বললেন, "একমত হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। বেস্ট অব লাক ব্রাদার।
লিখেছেন Optimistic Rokon