এক সময় সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালীরা ৫ জন কমে এখন ৭ জন। আরও কমবে নিশ্চয়! কান্দাহারে সড়ক-দূর্ঘটনায় নাজমুলের হাত ভেঙে গেল গত শুক্রবার। সেও কি আর থাকতে চাইবে? আমিও হয়ত বেশি দিন নাই।
ডিপার্টমেন্টে কাজ নাই। বসে বসে বেতন গুনা আর কত দিন? আরো ১/২ জন সারা দিন জব খুজে যাচ্ছে!
আমারও কাজ নাই বেশ কিছু দিন। তাই অপারেশন এন্ড মেনটিনেন্স টিমের সাথে কাবুলের আশে পাশের বেশ কিছু সাইটের কাজ করলাম। আসলে ঘুরাই হল সার! ভাল লাগল কাপিসা প্রভিন্স গিয়ে। উচু-নিচু পাহাডি পথ ধরে ২/৩ ঘন্টার পথ শেষে পাহাডের মাঝে বিস্তির্ণ প্রান্তর। অনেক দূরে গুষফাম (দুম্বা) আর ভূজের (ছাগল) পাল চরিয়ে বেডাচ্ছে কাবলী পরা রাখাল। মাঝে মাঝে দলছুট কোন ছাগলের বাচ্চাকে তাডিয়ে নিয়ে আসে পাহারাদার কুকুর। টাওয়ারের উপর থেকে দূরবীনে চোখ লাগিয়ে পাহাডি ফাঁক-ফোকরে তালেবান খুজে ফেরা! যদিও জানি, এই এলাকায় তালেবানের কোন নাম নিশানা নাই।
মাজার-এ-শরিফের পথ হিন্দুকুশ পর্বতমালা ফাক-ফোকর দিয়ে। এই পথ ধরেই সালাং-এর পর্বত চুডা। পথের পাশে পাশে পাহাড়ী নদী। অনেকগুলো অন্ধকার টানেল পেরিয়ে একটা মহা-টানেলে ঢুকার পর কবির ভাই জানালেন এটা ৫ কিমি লম্বা। কিন্তু আমরা অল্পদূর পরই টানেলের ফাঁক গলে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়ি থামল গার্ড় রুমের সামনে, বরফের খবর জানার জন্য। সেদিন বরফ কম, মনে চাকায় চেন লাগাতে হল না। ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় উঠতে গিয়ে জীবনের প্রথম তুষার দেখলাম। হাড-কনকনে ঠান্ডা। বিটিএস রুমের ৩ লেয়ার দরজা ঠেলে হিটারের উপর হুমডি খেয়ে পড়লাম। নরম তুষারের মঝে জুতা দাবিয়ে হেটে বেডানোর স্মৃতি ভুলার নয়।
আরও কত কি? কত মজার স্মৃতি। ঈদ, পহেলা বৈশাখ, কেলভিন, হাসিব ভাই, তৌফিক ভাইয়ের বিদায়ে কিংবা কোন কারণ ছাড়াই পার্টি। মাঝ রাতে নুড়ুলস পাকানো বা স্যান্ডউইচ করা। কত আড্ডা, হাসি ঠাট্টা।
এই ঈদে দেশে যাব। আরো ৪/৫ জন পাকিস্তানিও আসবে এই ফাঁকে। আমাদের সবার যাওয়া হয়ত আরো তরান্বিত হবে। অবশ্য ভাল খবরও আছে। ২ জন বাঙালী প্রমোশন পেয়েছেন। ১ জনের বেতন-ত দ্বিগুনই বেডে গেছে!
পাকিস্তানিদের যন্ত্রণা আর বেশি নিরাপত্তার বন্দিত্বের কথা বাদ দিলে
জীবন ভালই বলা চলে। ছ্যাকরার ঠুক-ঠাকের মত নিরামিশ নিস্তরন্গ বেঁচে থাকা। তবুও মনে পড়ে জিইসী'র মোড়ের আড্ডা, ফয়েজ লেকের পাহাড়, পতেঙ্গা-নেভালের বিকেল কিংবা কর্ণফুলির ঢেউ-ভাঙা নৌকা ভ্রমনের কথা। এই সব স্মৃতির জাবর কেটে আর দিন দশেক পার করা! শিতের পিঠা-পুলি, খেজুর রস, নেহরি, চাপ, শিতের সবুজ সবজি, ফল আর সেন্ট-মর্টিনের তারা জ্বলা আকাশের নিচে মাছের বার-বি-কিউ, স্বপ্নের জ্বালায় ঘুমানো দায়।
... তবুও জীবন থেমে থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৫১