[মঈপার!]
[একে বারে চুড়া থেকে]
জাললাবাদ শ্যামল সতেজ, এখানে নাকি অনেক বৃষ্টি বাদল হয়। এখানকার হিউমিডিটিও তাই তুলনামুলক বেশি। মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে'তে এই ভয়ঙ্কর পাহাড়ি রাস্তার কিছুটা বর্ণনা ছিল। কারন, স্থলপথে পাকিস্তান হয়ে কাবুল আসার এ-ই একপথ।
সেই ১৯৩০'য়ে যা, আজও তা'ই।
[সুরভীর পর জালালাবাদের দিকে]
এই পাহাড়েই নকি অন্য একটা রাস্তা আছে, কিন্তু মোটেও নিরাপদ না। পেশাওয়ার থেকে তোরখাম বর্ডার হয়ে জালালাবাদ শহর, তারপর মহীপার হয়ে (মাৎস পারাপার!!) কাবুল। আমাদের যেমন টাইগার পাস, এদের ফিস পাস!!
এই রাস্তা পুরুটাই বাক আর বাক, পাশেই গভীর খাঁদ। আফগানিস্তানের পাহাড়ি রাস্তাগুলোর মাঝেই এটা সবচেয়ে বিপদসংকুল। মঈপারের খাড়া পাহাড় দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটা সিড়ি বুঝি বা। রাস্তাটা ক্রমাগত ধাপে ধাপে নেমেছে, সাপের মত প্যাচিয়ে।
মহীপারের (বা মঈপার, ফার্সি আর পশতুভাষীদের উচ্চারন মনে হয় একটু আলাদা) নাম শুনেই ভেবেছিলাম মাছের কোন ব্যপার থাকতে পারে। কিন্তু মাথায় আসল না ৮০০০/৯০০০ ফুট উচু শুকনো পাথুরে পাহাড়ে মাছ নিয়ে কি মিথ থাকতে পারে? খাড়া পাহাড়ের মাঝের খরস্রোতা এই ঝর্ণায় মাছ? পরে জানা গেল এই পাহাড়ি ঝর্ণা নকি আগে অনেক বড় ছিল, পানিও বেশি থাকত, সারা বছর। পাহাড়ি নদীর মাছ (!) নকি এই ভয়ংকর উল্টা স্রোতে উঠে যেত উপরে (এখনও যায় নিশ্চয়, কিন্তু শীতের পর যখন বরফ গলা পানি থাকে, তখন)। বিবিসির প্লানেট আর্থ সিরিজে দেখেছিলাম স্যামনরা ড়িমপাড়ার সময় এলে জাপানী উপকুলের কোন একটা স্ট্রিম ধরে উপরে চলে যেত যেখানে নিরাপদে ডিমপাড়া যাবে। এটাও নিশ্চয় এমন কিছু। মাছরা এভাবে বিশাল পাহাড় পাড়ি দেয়ায় নামই হয়ে গেছে মঈপার।
তখন খুব গরম। জালালাবদের একটু আগে দুরন্তে'র পাহাড়ে আমাদের সাইট। যাচ্ছিলাম ওখানে। মহীপার যতটা ভয়ঙ্কর ভেবেছিলাম ততটা ঘাবড়ানোর কিছু নাই আসলে। আধুনিক প্রযুক্তি ভয়ন্কর পাহাড়ি রাস্তাকে মসৃণ, নমনীয় করে দিয়েছে। যদিও ঘন্টায় ২৫/৩০ এর বেশি বেগে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিপদ হতে পারে। আর আছে কিছু বিপদজনক বাঁক, খাড়া রাস্তা। দুটো গাড়ি পাশা-পাশি সহজেই যায়। কিন্তু ৩০/৪০ টন মাল বোঝাই ২৪ চাকার বিশাল লরি বা ভ্যানগুলো যখন ইন্জিন বিকল হয়ে দাড়িয়ে থাকে, পরিস্থিতি জটিল হতে বাধ্য। আমি যতবার গিয়েছি ততবারই এই ঘটনা দেখেছি, নিত্ত্বনৈমিত্তিক ব্যপার। দেখেছি দুটো লরি অ্যাক্সিডেন্ট করে, দুমড়ে আছে। একটা আড়াআড়ি হয়ে ঝুলে আছে, সামনের অর্ধেক রাস্তা থেকে বাইরে, খাদের উপরে।
ভাল কোন ছবি তুলতে পারিনি, কারন গাড়ির বাইরে মাথা হাত বার করলেই ড্রইভার আর বিকাশ'দা চিৎকার শুরু করে। বিকাশদাও খুব ভয় পায় এই জায়গাটা!
পথে সুরভী নামে এখটা বাজার আছে। এর পর পাহাড়ি জলধারাটা আস্তে আস্তে একটা লেকে রূপ নিতে শুরু করল। মাঝেই কিছুদুর পর পর ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। দূরন্ত'র টা বেশ একটু বড়।
ড্যামের ঊপর দিয়ে পাহাড়ের গভীরে আমাদের সাইট। পাথরের পাহাড়। ছোট বড় মাঝারি হরেক রকম আকার। এই পাহাড়গুলোয় ছোট ছোট পাথর আর মাটির আবরন। খুড়ে তুলেই হল। ক্রমাগত যেতে যেতে হারিয়ে গেলাম যেন। মনেহয় পথ বুঝি আর শেষ হবে না। অবশেষে দেখা গেল টাওয়ার। পাহাড়ের ফাঁকে মাথা তুলে উকি দিচ্ছে।
[এই টানেল গুলায় ঢুকলে মনে হয় আর বের হতে পারব না!]
[পিচকি পিচকি গড়ি, অনেক নিচে]
[পাশের পাহাড়ে রাস্তা]
[পাশের পাহড়ে রাস্তা]
[পিচকি পিচকি গড়ি, নিচে রাস্তা]
[অবশেষে দেখা গেল টাওয়ার। পাহাড়ের ফাঁকে মাথা তুলে উকি দিচ্ছে।]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৪