মাদারিপুরে ঘটল এক হৃদয় বিদারক ঘটনা । প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।
এনজিও'র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে
না পারায় নাছিমা বেগম নামের এক দিনমজুরির
বসতঘর ভেঙে এনজিও কর্মকর্তারা সবকিছু নিয়ে গেছে । বসতঘর ভেঙে
নেয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে অসহায় পরিবারটি । যারা কিনা দিনে আনে আর দিনে খায় ।
আজ শনিবার দুপুরে মাদারীপুর জেলার কালকিনি
উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের কাচারিকান্দি
গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে ।
ভুক্তভোগী পরিবার ও গ্রামবাসী জানায়, চলতি
বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আশা নামের একটি এনজিও'র
কালকিনি উপজেলার সমিতিরহাট ব্রাঞ্চ থেকে ১৫
হাজার টাকা লোন নেয় উপজেলার কাচারিকান্দি
গ্রামের দিনমজুর আলি খার স্ত্রী নাছিমা বেগম ।
কিন্তু চার কিস্তি পরিশোধের পর দরিদ্র
পরিবারটি আর কিস্তি দিতে ব্যর্থ হতে থাকলে এনজিও
কর্মকর্তারা পরিবারটির ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে ।
এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে ঋণগ্রস্ত পরিবারটি । এমন
পরিস্থিতিতে আজ শনিবার দুপুরে এনজিও'র
কর্মকর্তারা হঠাত্ এসে দিনমজুরির ঘর ভেঙে নিয়ে যায় ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনজিও আশা'র
সমিতিরহাট ব্রাঞ্চের ম্যানেজার আ. রউফ ও
সহকারী ম্যানেজার নাজমুল হোসেন বলেন, ঋণের
কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সেই
পরিবারটিই ঘর বিক্রি করেছে। আমরা শুধু ক্রেতা
ঠিক করে দিয়েছি ।
কিন্তু অন্যদিকে ঋণগ্রহিতা নাছিমা বেগম একথা মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন ।
ঋণগ্রস্ত নাছিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এনজিওর লোকজন
কোথা থেকে একজন লোক এনে বলে তোমাদের
থাকার ঘর ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে ।
এ কথা বলেই তারা ঘর ভেঙে নিয়ে যায় । আর আমরা অসহায়
হয়ে চোখের সামনেই নিজেদের শেষ আশ্রয় মাথা
গোজার একমাত্র ঠাঁই ঘরটাকে ভেঙে নিয়ে যেতে দেখি । এখন কোথায়
গিয়ে মাথা গুজব ? কোথায় থাকবো ? কি করব ? তার কিছুই জানি না ।
এখন কথা হলো শুধু কি আশা এনজিও ? দেশে এরকম হাজার হাজার এনজিও বা সমিতি রয়েছে । যারা দুস্থ এবং অসহায়দের ঋণ দিয়ে থাকেন । কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি । দুস্থদের সাথে ঋণের টাকা দিতে বাধ্য করতে কি করছে ঐ সকল এনজিওগুলো ? হয়তোবা খবরটি কোন এক সাংবাদিকের এলাকায় ঘটেছে বিধায় তা আমাদের কাছে এসেছে । কিন্তু না , দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় , প্রতিটি থানায় , প্রতিটি মহল্লায় এনজিও সংস্থাগুলোর এরকম ন্যাক্যারজনক ঘটনা প্রমাণ পাওয়া গেছে । যার কতোকগুলো সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে আবার কতকগুলো নিরবই থেকে যায় । এতে কি প্রমাণিত হচ্ছে ? ঐ সকল ঋণ প্রদানকারীর লক্ষ্য কি বোঝা যাচ্ছে ? তাঁরা কি দুস্থদের জন্যই এনজিও খুলেছেন নাকি নিজেদের প্রফিটের জন্যই ? দিনমজুররা খেঁটে খুটে যা আয় করেন তা দিয়ে অন্তত কোনমতে সংসার চালান । তাঁর উপর আবার কিস্তি ! হ্যাঁ সেটাও সময়মতনই সপ্তাহে সপ্তাহে পরিশোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালান । না খেয়ে হলেও গ্রামের অনেক পরিবার একাজ করে থাকেন । নয়তো তাঁদের আর কখনও ঋণ দেবে না ঐ সকল এনজিও বা সমিতিগুলো । এখানে নাছিমা বেগম এবং তাঁর স্বামী একজন দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন । ভাবা দরকার একজন দিনমজুর কিভাবে সংসারের খরচ চালিয়ে আবার কিস্তিও কিভাবে পরিশোধ করেন ? আমার জানামতে ১৫ হাজার টাকার সাপ্তাহিক কিস্তির পরিমাণ আনুমানিক ৩৫০ টাকা প্রায় । একজন দিনমজুরের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৫০ টাকার কিছু বেশি । বর্তমানে যে হারে সবজি বা তরিতরকারি এবং মসলা জাতীয় পণ্যের যে চরা দাম তাঁতে করে দুস্থদের অনেকেই ভাতের সাথে একটি মরিচ পিষেই হিংস্র ক্ষুধার্ত পেটটিকে কিছুটা শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন দিনে রাতে মাত্র দুইবারই । যা ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । এতে করে তাদের বাড়তি পুষ্টি চাহিদা থেকে তারা ব্যাহত হচ্ছেন ।
যা হোক , বাংলাদেশের এনজিও সংস্থার মূল উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট । তাঁরা গরিব দুস্থদের জন্য তাঁদের এনজিও খুলে বসেন নি । তাঁরা শুধুমাত্র লাভের দিকেই ঝুঁকে থাকেন । আর মিথ্যা ফটোগ্রাফি দেখিয়ে সবার কাছে এবং অবশ্যই সরকারের কাছে প্রশংসিত হতে চান । সরকার কেন এসকল ব্যাপারে নিরব ? যদিও এগুলো সরকারের চোখে ছোটখাঁটো ব্যাপার । না এগুলো কখনওই ছোটখাঁটো কিছু নয় । দেশে দুস্থদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ ভাগ প্রায় । সত্যিই , এ এক বিশাল জনগোষ্টি । সরকার কি পারবে ২০২১ এর মধ্যে এই ৬৬ কে ০ তে নামাতে ? কেননা সরকার শপথ নিয়েছেন যে ২০২১ এর মধ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুশীল সমাজ উপহার দেবেন ।
আর এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার । সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট একটি বাড়ি একটি খামার নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার । আজকের ঘটনায় কি প্রমাণিত হলো ? সরকারি এ প্রজেক্ট থাকা সত্যেও দুস্থ জনগণ কেন ঐ সকল বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলোর দিকে ঝুকছে ? মানলাম সরকারের সাথে তারাও কাধেকাধ মিলিয়ে কাজ করছে । কিন্তু তাঁরা বাস্তবে কতোটুকু করছে ? তাহলে কি সরকারের এ প্রজেক্ট সাধারণের আস্থা হারিয়েছে ? নাকি তাঁরা একেবারেই দুস্থ বলে সরকার বা ঐ এনজিওরা ঋণ দিতে ভয় পাচ্ছে ? নাকি অন্য কিছু ? এ ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ সরকার ।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের কি কোনই আইন নেই ? তাঁরা কি একটি পরিবারকে এভাবে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়াটাকে সহজ ভাবেই মেনে নেবে ? আমি মনে করি এ বিষয়ে আমাদের প্রসাশন ব্যাবস্থাকে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার এবং একটি বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন করা দরকার ।
নাজানি কতো পরিবার এভাবেই তীব্র দারিদ্র্যতার মুখে পরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । যার দরুণ দিনকেদিন চুরি , ডাকাতি , খুন , রাহাজানি , হত্যা এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মতো হিংস্র কাজগুলো বেড়েই চলেছে ।