somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাকলীদ ও মাযহাব অনুসরণ প্রসঙ্গ

২৮ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক মুসলমানের উপর মূলতঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) এর আনুগত্য ও অনুসরণ করা ফরয। কুরআন এবং হাদিসের অনুসরণের মাধ্যমেই এ ফরয আদায় হবে। কিন্তু সরাসরি যারা কুরআন-হাদিসের ভাষা আরবি বুঝেন না, কিংবা আরবি ভাষা বুঝলেও কুরআন-হাদিস যথাযথ ভাবে অনুধাবন ও তা থেকে মাস্আলা-মাসায়েল চয়ন ও ইজতিহাদ করার জন্য আরবি ব্যাকরণ, আরবি অলংকার, আরবি সাহিত্য, উসূলে ফিকাহ, উসূলে হাদিস, উসূলে তাফসির ইত্যাদি যে সব আনুষঙ্গিক শাস্ত্রগুলো বুঝা প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সেগুলো পাঠ করেননি বা পাঠ করলেও এসব বিদ্যায় পারদর্শী হতে পারেননি, তাদের পক্ষে সরাসরি সব মাসআলা-মাসায়েল কুরআন-হাদিস থেকে চয়ন ও ইজতিহাদ (গবেষণা) করে বের করা যেমন সম্ভব নয় তেমনি তা নিরাপদও নয় বরং গভীর বুৎপত্তি ও দক্ষতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর শিকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই স্বাভাবিক। তাই এসব শ্রেণীর লোকদের জন্য বিস্তারিত মাসআলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধানের জন্য এমন কোন বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত গত্যন্তর নেই, যিনি উপরোক্ত বিদ্যাসমূহে পারদর্শী ও দক্ষ হওয়ার ফলে সরাসরি সব মাসআলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধান কুরআন-হাদিস থেকে চয়ন ও ইজতিহাদ করে বের করতে সক্ষম। এরূপ বিজ্ঞ ও ইজতিহাদের ক্ষমতা সম্পন্ন আলেম তথা মুজতাহিদ ইমামের শরণাপন্ন হওয়া এবং তিনি কুরআন-হাদিস থেকে চয়ন ও ইজতিহাদ করে সব মাসআলা-মাসায়েল ও বিধি-বিধান যেভাবে বলেন তার অনুসরণ করাকেই বলা হয় উক্ত ইমামের তাকলীদ করা বা উক্ত ইমামের মাযহাব অনুসরণ করা। তাকলীদ করা তাই উপরোক্ত শ্রেণীসমূহের লোকদের জন্য ওয়াজিব এবং যে ইমামেরই হোক এরূপ যে কোন একজনেরই তাকলীদ করা ওয়াজিব। উম্মতের ইজমা (ঐক্যমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এক সাথে একাধিক ইমামের অনুসরণ করা যাবেনা অর্থাৎ এক এক মাসআলায় এক এক জনের অনুসরণ করা যাবেনা। বরং যেকোন একজন ইমামেরই পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে। এক এক মাসআলায় এক এক জনের অনুসরণ করার অবকাশ নেই এবং সেরূপ করা জায়েযও নয়, কারণ তাতে সুবিধাবাদ ও খাহেশাতের অনুসরণ করার সুযোগ সৃস্টি হয়ে যায় এবং তার ফলে গোমরাহীর পথ উন্মুক্ত হয়।

ইতিহাসে অনুরূপ মুজতাহিদ ইমাম অনেকেই অতিবাহিত হয়েছেন। তবে তন্মধ্যে বিশেষভাবে চারজন ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছেন। তাঁদের চয়ন ও ইজতিহাদকৃত মাসআলা-মাসায়েল তথা তাঁদের মাযহাব ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়ে আসছে। তাই আমরা চার ইমাম ও চার মাযহাবের কথা শুনে থাকি। উক্ত চার জন ইমাম হলেন হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ), হযরত ইমাম শাফেঈ (রহঃ), হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) ও হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)। তাদের মাযহাবকেই যথাক্রমে হানাফি মাযহাব, শাফেঈ মাযহাব, মালেকী মাযহাব ও হাম্বলী মাযহাব বলা হয়ে থাকে। এই সব মাযহাবই হক, তবে অনুসরণ যেকোন একটারই করতে হবে। উপমহাদেশের মুসলমানসহ পৃথিবীর অধিকসংখ্যক মুসলমান হানাফী মাযহাবের অনুসারী।

অনেকের মনে সন্দেহ জাগে যে, এক আল্লাহ, এক নবী, এক কুরআন তাহলে এত মাযহাব কেন! আসলে মাযহাব অর্থ কি তা তারা ভালভাবে খেয়াল করেনা। এখানে মাযহাব অর্থ ধর্ম নয় যে, একাধিক মাযহাব থাকলে ধর্ম একাধিক হয়ে গেল। বরং পূর্বেই বলা হয়েছে বিজ্ঞ ও ইজতিহাদের ক্ষমতা সম্পন্ন আলেম তথা মুজতাহিদ ইমামের ব্যাখ্যাকেই এখানে মাযহাব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব বিজ্ঞ ও ইজতিহাদের ক্ষমতা সম্পন্ন আলেম একাধিক থাকার ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যাও একাধিক হতে পারে। এভাবে মাযহাব একাধিক হয়ে গিয়েছে। আরও মনে রাখতে হবে অনুসরণীয় সব ইমামই কুরআন-হাদিসের আলোকে সব ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের কারো ব্যাখ্যাই কুরআন-হাদিসের বাইরে নয়। কোন বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে সকলের মতের স্বপক্ষেই কুরআন/হাদিস রয়েছে। অর্থাৎ, কুরআন-হাদিসে সে বিষয়ে একাধিক সুরতের অবকাশ রয়েছে। তাই সব মাযহাবই হক, তবে অনুসরণ করতে হবে যে কোন একটারই।


সুত্রঃ
আহকামে জিন্দেগী- মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
পৃষ্ঠা নং: ৪২-৪৪
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×