মগের মুল্লুক কথাটা দিন দিন আমার কাছে স্ফটিকের মত স্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে! greenzone মুভি দেখে আমার মনে হয়েছিল, কি আশ্চর্য, এই বক্তব্য ওদের জন্য ক্ষতিকর তবু কেন ওদের সেন্সরবোর্ড মুভিটা ছেড়ে দিল!!! কিন্তু পর মূহুর্তেই বুঝলাম, ওই বানর-মুখি বদমাশটা যদি বড় গলায় বলত, তেল অথবা আমার চুল্কানির জন্য আমি ইরাকের সাথে যুদ্ধ করব ,তাতেও কারই কিছু করার ছিলনা। জোর যার মুল্লুক তার, এই হচ্ছে এখন দুনিয়া ---অথবা চিরন্তন!
আমার মনে আছে , আমাদের দেশে যখন তত্তাবধায়ক সরকার এল এবং ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হল, তখন আমি আর আমার আম্মা খুবি আনন্দ করতাম এক একটা ধরা খাওয়ার পর - আমার যতদূর মনে পড়ে, হাসিনা-খালেদা-তারেক ইত্যাদি ধরা খাওয়ার খবর পেয়ে আম্মা প্রতিবার পোলাও রান্না করেছিল- আহা!
তখন একটা জিনিষ নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল, সেটা হচ্ছে জিনিশপাতির লাগামছাড়া দাম বেড়ে যাওয়া।এছাড়া আমরা ( আমি এবং আমার পরিবার এবং আমার পরিচিত তাবৎ জনসাধারন) তখন বেশ আনন্দেই ছিলাম।
তখন কিছু সচেতন নাগরিক গনতন্ত্র এর জন্য নাকি কান্না কাদত, কি নাকি আমাদের গনতন্তর মরে যাচ্ছে, এইটা নাকি খুবি খারাপ অবস্থা দেশের জন্য। তাদের মতে সম্ভবতএই চোর-বাটপার গুলা দেশে চুরি-চামারি-খুন-খারাবি না করলে আমাদের গণতন্ত্র মাঠে মারা যাবে! যারা এইসব বাণী দিত, বলাই বাহুল্য তারা কেউ কেউ বিদেশেই থাকত, আর তাদের অধিকাংশের ছেলে-পুলে বিদেশে থাকত। তাই আমাদের দেশের যা ইচ্ছা তাই হোক , ওদের কি?
তবু দেশবিদেশের সেইসব সচেতন নাগরিক এবং বিদেশি শক্তি পর্যন্ত উঠে পড়ে লাগলো - তত্তাবধায়ক সরকার নাকি দেশের জন্য খুবি ক্ষতিকর, দেশে চুরি-বাটপারি-তন্ত্র অথবা গনতন্ত্র কায়েম করতে হবে ইত্যাদি। তাই আমাদের উত্তেজনার দিন শেষ হয়ে গেল, এবং চিরাচরিত গনতান্ত্রিক সরকার এল । আমি কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম, হায়রে, উত্তেজনার দিন শেষ,পোলাও খাওয়ার দিন শেষ, আবার শুরু হবে বড় বড় কথা-সভা-সমাবেশ-হরতাল-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি--- চিরাচরিত, জঘন্য, বিপজ্জনক এবং বোরিং
পরে পত্রিকায় এসেছিল, তত্তাবধায়ক সরকার নাকি কি কি দুরনীতি করেছিল, তার সত্তিমিত্থা আমি জানি না। এইটা আমাদের দেশের নিয়ম হয়ে গেছে, যেই সরকার যাবে, অম্নি তার অনেক কুকীর্তি বের হবে - এ আর নতুন কি ?
তারপর আবার আমার নিস্তরঙ্গ জীবন। তারপর পিলখানার ঘটনায় মনটা দুঃখে ভরে গেল, আহারে, নিজের দেশের নিরাপত্তার জন্য যারা কাজ করে, তারা এইভাবে নিজের দেশে অরক্ষিত অবস্থায় মরে গেল, কুকুর-বিড়াল ও এভাবে মরে না। আমরা কিছুই করতে পারিনি তখন। তারা ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল, আমরা তখন " চমৎকার/ ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার" করছিলাম অথবা জাতিসংঘের গভীর পর্যবেক্ষনের মত কিছু একটা করছিলাম!
খুব বিপর্য্যয়ের সেই সময়ে আমাদের বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির বক্তব্য আমাকে কিছুটা হাসইর খোরাক জুগিয়েছিল যদিও - তারা নাকি অত্যন্ত সফলভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে - যদিও রাজনীতিবিদরা নির্লজ্জ হয় আমরা সবাই জানি, তবু ওই বক্তব্ব শুনে কার মাথায় তখন বাজ পড়েনি?
তখন বিভিন্ন পত্রিকা পরে জেনেছিলাম, আমাদের সেনাবাহিনীর সবচে মেধাবী সদস্যদের নাকি বিডিআর এ পাঠানো হয়, আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত হলে ভারতের সুবিধা, অথবা এইটা জঙ্গী কিংবা জামাতের কাজ - ইত্যাদি - আমি সত্যি মিথ্যা জানিনা, কিংবা কেউ জানে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
তারপর দিন যায়, মানুষ সব ভুলে যায়, ওই ঘটনার কোন সুরাহা আজও হয়েছে বলে শুনিনি - কবেই বা কিসের সুরাহা হয়েছে !
আজ হঠাৎ ব্লগে ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে দেখলাম বাসে আগুন দিয়ে ১১জন মানুষ মেরে ফেলার বিষয়ে স্বীকারক্তি সম্পরকিত পোস্ট , ন্যায় পথিক সম্ভবত লেখকের নাম । সেই পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, তারা খুবি শকড এবং এদের তারা ভোট দিয়েছেন ভেবে তাদের খারাপ লাগছে।আসলেই ত,আমরা আম-জনতা, আমাদের আর কিবা করার আছে, আমরা কিছুদিন মন্তব্য করব, কিছুদিন প্রতিবাদ করব, অথবা প্রেস্ক্লাবের সামনে গিয়ে বক্তব্য দিব,পিটিশন সাইন করব ---তাতে কি হবে? কচু অথবা মূলা অথবা কচু+আদা+আলু অথবা ( চলবে)
আমার এইসব রাজনীতিবিদ সম্পরকে এমনি কুতসিত ধারনা, আমি ভোট দেয়ার কথাই চিন্তা করতে পারিনা - কিন্তু এটা কি কোন সমাধান?তবু, ভোট যদি দেই,আমি কাকে ভোট দিব?
আমি অথবা আমরা বড় অসহায়, ক্ষমতাবান লোকেরা আমাদের কখনো ভালবাসেনি
কিজানি, মনটা আজকে আবার খারাপ লাগছে। ভাজ্ঞিস আমি পত্রিকা পড়িনা আর রাজনীতিও বুঝিনা, নয়তো রোজ রোজ মন খারাপ করে থাকতে হত!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১২