somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যেভাবে ভালোবাসি

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প, উপন্যাস আর সিনেমায় থাকে, প্রথম দেখাতেই শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতিটা হয়। তারপরে কয়েকরাতের ঘুম উধাও। ব্যাপক অস্থিরতা। এদিক সেদিক ঢুঁ মেরে খোঁজ খবর নেয়া। এবং সোজা প্রেম নিবেদন। একে বলে প্রথম দেখায় প্রেম। আমার নিজের বুঝে আসে না সে কি করে হয়, কিন্তু প্রথম দেখায় প্রেমটা নিশ্চয়ই কুচ্ছিত কারো সাথে হয় না। শ্বাসরুদ্ধ করে দেয়ার মত সুন্দর হতে হয়। অনেকেই যেহেতু এই প্রেমাভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন, তাই আমি ধরে নিচ্ছি, সত্যি সত্যিই প্রথম দেখায় প্রেম হয়। শর্ত একটাই, প্রেমের বস্তুকে সুন্দর হতে হবে।

আবার কারো গান শুনে, কবিতা পড়ে, আঁকা ছবি দেখে কিংবা নাচ দেখে ফিদা হওয়ার ঘটনাও বিরল না। 'এ বিউটিফুল মাইন্ড' এ জন ন্যাশ একজন অসামাজিক গণিতবিদ। ছোট্ট শিশুটাকে ভুল করে বাথটাবে কল ছেঁড়ে দিয়ে চলে যান, এমন একজন মানুষ। অথচ, তাঁরও উথাল পাথাল প্রেমে পড়ে যান একজন রূপবতী। তাঁর স্ত্রী পুরা একজীবন এই মানুষটার পাশে পাশে থেকেছেন, প্রবল মমতায়, ভালোবাসায়। বাহ্যিক সৌন্দর্যের কিচ্ছুটি নেই, কিন্তু গান, নাচ, গণিত, অভিনয়, লেখালেখি, বিতর্ক, কবিতা, ক্রিকেট কিংবা টেনিস--সৃষ্টিশীল কিছুতে বাড়াবাড়ি রকমের ভালো কাউকে দেখলে আকর্ষনটা টের পাওয়া যায় ভিতরে। আমরা, মানুষেরা সৃষ্টিশীলতা ভালোবাসি।

শরৎচন্দ্রের নায়িকাদের খুব সুন্দরও হতে হতো না, কিছুতে বাড়াবাড়ি ভালোও হতে হতো না। কিন্তু পিঁড়ি পেতে পাখার বাতাস করতে করতে খাওয়াতে জানতে হতো, মায়াবতী হতে হতো। আর এভাবেই ভালোবাসা হয়ে যেত। কেউ আমাদের ভালোবাসছে, মমতা ঢেলে দিচ্ছে, আমাদের খারাপ থাকায় উদ্বিগ্ন হচ্ছে--এই উদ্বেগ, মমতা আর ভালোবাসার প্রকাশ পাখার বাতাসেই হোক, কিংবা পাড়ার বখাটে ছেলেটাকে মাইর দেয়ার মাধ্যমেই হোক, আমাদের ভিতরটা ছুঁয়ে যায়। আমরাও কখন যেন ভালোবাসতে শিখে যাই।

কাউকে ভালোবাসার পিছনে কারণগুলো মোটামোটি এই তিনটার যে কোন এক ভাগে ফেলা যায়। প্রথম দৃষ্টিতে ভালোবেসে ফেললে, ভালোবাসার ঘোলাটে দৃষ্টিতে রূপ শুধু বেড়েই চলে। সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টিশীলতা যত দেখা হয়, ততই ভালো লাগে। মায়াবতীর মায়ার নেশা ধরে যায় খুব সহজেই। শুধু প্রেম প্রেম খেলার জন্য না, যে কোন বন্ধুত্বের ভিত্তিও এই তিনটার একটা।

ভালোবাসি আমি এই তিনটা কারণেই, কাউকে সবগুলো মিলিয়ে মিশিয়ে, কাউকে যে কোন একটা কারণে।

আর যিনি সৌন্দর্যের স্রষ্টা, নিজে সবচেয়ে সুন্দর? ডিকশনারীর সবগুলো অর্থে সুন্দর?
সবচাইতে বেশি সৃষ্টিশীল?
ভালোবাসতে জানেন সবচেয়ে বেশি? আমাকে একদম আলাদা করে খুব ভালোবাসেন? মায়াজালে ঘিরে রাখেন?

তাঁকে ভালোবাসবো না?

যখনই তাঁর সৌন্দর্যের একটু আভাস পাই, অপরিসীম সৃষ্টিশীলতার অল্প একটু দেখি, তাঁর মমতার সাগরে ডুবি, তখনই তাঁর উথাল পাথাল প্রেমে পড়ে যাই। প্রতিবার নতুন করে।

সমস্যা একটাই। প্রেম আর ভালোবাসার যত্ন নিতে হয়। যাকে ভালোবাসেন, তার থেকে অনেক দূরে থেকে, চব্বিশ ঘন্টায় একবারও তার কথা না ভেবে দেখবেন, তার গান হোক কিংবা ক্রিকেটই হোক, সব কিছু থেকে চোখ বন্ধ করে রেখেন, কিংবা মমতামাখা হাত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে দেখবেন, ভালোবাসা ফিঁকে হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। শর্ত একটাই, তার সাথে মনে মনে বা জোরে সোরে, কোন ভাবেই সময় কাটানো যাবে না। এক বছর এই নিয়ম মেনে আমার কাছে এসে বলুন, তাকে ঠিক আগের মত ভালোবাসেন, আপনাকে আমি একটুও বিশ্বাস করব না।

আল্লাহ সব চাইতে বেশি সুন্দর, সৃষ্টিশীলতার স্রষ্টা তিনি মমতায় চুবিয়ে রাখেন আমাকে, আপনাকে, আমাদের। চোখগুলো খোলা রাখলেই বৃষ্টি কিংবা সাগরের ঢেউয়েশ, নিজেতে কিংবা অন্য কারো চোখে, সব, স-অ-ব কিছুতে তাঁর সৌন্দর্য, সৃষ্টিশীলতা আর মমতার ছাপ দেখা যায়। তাঁকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখে ফেলা যায়। তাঁকে নিয়ে যত বেশি ভাবা হয়, তাঁর সাথে মনে মনে কিংবা জোরে সোরে যত সময় কাটানো হয়, ভালোবাসাটা একটু একটু করে গাঢ় হয়ে বুকে জায়গা করে নেয়। তাঁর কথা না ভাবলে, কিংবা তাঁর সাথে সময় না কাটালে খুব অস্থির লাগে। যেই মুহূর্তে তাঁর কাছাকাছি যাওয়া হয়, সেই মুহূর্তে সবটুকু দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা হুট করে উধাও হয়ে যায়। ভালোবাসা, স্বস্তি আর প্রশান্তিতে বুক ভরে যায়।

আমি এভাবেই ভালোবাসি, ভালোবাসাকে বাড়তে দেই।
৩৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×