somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী দেখতে সাথে নিতে না পারার কৈফিয়ত (সন্ধ্যাবাতি)

০৭ ই মে, ২০০৮ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর খানেক আগে আস্তমেয়ে নিকে লিখেছিলাম ,
"আমার খুব মানুষ দেখার শখ। উত্তর বঙ্গে খালি পায়ে ঠেলা গাড়িতে চলার পাশাপাশি ইউরোপের আল্পস মুগ্ধ চোখে দেখতে চাই। চীনের কোন গ্রামে বসে পূর্বপুরুষের বন্দনা করতে চাই। আফ্রিকার সুন্দর মানুষগুলোর সাথে আগুন ঘিরে বসে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চাই। সাউথ আমেরিকার খোলা মনের মানুষগুলোর সাথে গলা মিলিয়ে হাসতে চাই, গান গাইতে চাই। মধ্যপ্রাচ্যের মাথা গরম মানুষগুলোর পাশে কালো বোরখায় নাক ঢেকে 'কেউ একজন' হয়ে যেতে চাই। মেয়ে আমি। আস্তমেয়ে। মেয়েদের অনেক বাঁধা, নিজের তৈরি, সমাজের তৈরি, ভালবাসার তৈরি। কতদূর পায়ের চিহ্ন ফেলতে পারব জানি না। কিন্তু এই একটা বছর আপনাদের সাথে থাকলাম, অনেকগুলো 'মানুষ' দেখলাম... আমার খুব বেশি ভাল লেগেছে। খুব।"

তখন লিখি নি, আমি সিঙ্গাপুরে বসে সুদূর ইউরোপের এক ভবিষ্যত নিউরোসাইন্টিস্টের চোখ ভরা স্বপ্ন দেখতে চাই। মালয়শিয়ার তিওমান দ্বীপে পৃথিবী উদ্ধারের তীব্র স্বপ্নে ডুবে থাকা মানুষগুলোর সাথে সাগরের নীলে হারাতে চাই। বাংলা, ইংরেজি, একটু একটু আরবি শেষে এখন ইন্দোনেশিয়ানে নিজের জিভ নাড়াতে চাই। বলি নি, কারণ তখন জানতাম না, ঠিক এক বছর পরে পৃথিবীকে নিজের করে নেয়ার অভাবনীয় একটা সুযোগ নিজ দোরে দেখা দিবে। আমার ফ্যাকাল্টি থেকে ফান্ড করছে আমাকে, সিঙ্গাপুরগামী প্লেইনে চড়বো আর মাসখানেক পরেই।

লিখেছিলাম, সামহোয়ারে এক বছরে অনেক মানুষ দেখে তীব্র ভালো লাগার কথা। ভেবেছিলাম, যখন যেখানেই মানুষ দেখি, যেই সামহোয়ার আমার যাত্রা শুরু করিয়ে দিয়েছিল, সেই সামহোয়ারে এসে নিজেকে উজাড় করে যাবো। আমার প্রথম সত্যিকারের বিদেশ যাত্রা, সিঙ্গাপুর যাত্রার সম্ভবনার পর থেকেই ভাবছিলাম, সামহোয়ারে ভার্চুয়াল দিনলিপি লিখতে হবে ঠিক। থুঁটি নাটি সব লিখবো! কয়টা একুশ বছর বয়সী বাংলাদেশী, তাও আস্ত এক খানা মেয়ে, এমন সুযোগ পায় বলুন!

আজ লিখলাম প্রথম পর্ব। ভ্রমন পূর্ব 'কি হবে না হবে' অনুভূতিতে ভরা পোস্ট। ব্লগস্পটে পোস্ট করলাম, সামহোয়ারে পোস্ট করতে পারলাম না।

কেন?

উত্তর দেয়ার আগে, আপনাদের জন্য জন্য একটি সহজ ধাঁধাঁ। বলুন তো, পৃথিবীর কোন্ দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীকেই বধ হতে হয়? মেয়ে হলে তো কথাই নেই!

পারলেন না?

সে কি, সামহোয়ারইনে নিয়মিত আসেন, কিন্তু এই সহজ ধাঁধাঁর সহজ উত্তরটুকুও জানেন না?
উমম... হিন্ট দিচ্ছি, মানবীর ব্লগে যান। পড়ে দেখুন রাহেলা সংক্রান্ত পোস্টগুলো।

মেয়েটা কি নৃশংস ব্যবহার পেয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল, সেই কত বছর আগের কথা। এখনও ওর খুনী ধর্ষকের পৃথিবী দাপিয়ে হেঁটে বেড়ায়।

এ লজ্জার কাহিনী আপনার আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের কাহিনী।
কি, রাহেলার গল্প শুনে ঘেন্নায় রক্ত জ্বলে উঠে? রাহেলার সুবিচারের পিটিশনে সাইন করেন?

রাহেলাদের জন্ম এক দিনে হয় না। রাহেলা হত্যা মামলার আসামীরা ভূমি ফুঁড়ে বের হয় না। ওদের সৃষ্টিতে আপনার নিজেরও হাত আছে। আমাদের আশে পাশেই যে রাহেলার নির্যাতনকারী আর তাদের মাথায় তুলে রাখা মানুষে গিজ গিজ। আপনি কখনও তা নিয়ে সাহস করে কিছু বলেন নি, কারণ, রাহেলাদের নির্যাতনকারীদের হম্বিতম্বি আর কালো হাতের নিচে পিষে পড়বেন নিজেই।

পড়ুন, দেখুন, জানুন।
যা ভার্চুয়ালী প্রকাশিত হয়েছে, তা ভার্চুয়ালিটিতে সীমাবদ্ধ না থাকলে পৃথিবীতে আরেকটা রাহেলার জন্ম হতো। প্রচন্ড অশ্লীল মন্তব্য , দিনের পর দিন ঝুলে থাকার পরে আর অসংখ্য ইমেইলের মাধ্যমে প্রতিবাদ করার পরে কর্তৃপক্ষের চুপিসারে শুধু মন্তব্যটা ডিলিট করে দেয়া, আর একে সুবিচার মনে না করার 'অপরাধে' প্রতিবাদকারিনীর বধ হওয়া। হুম, রাহেলার খুনীরাও হয়তো 'এই দুষ্টু, আর এরকম করবি না' টাইপের বকা খেয়েছে। মানবীকে বলা দরকার, ওতটুকুই তো যথেষ্ট! কারো কোন অধিকার নেই একে সুবিচার মনে না করার!

ঘটনা এখানেই শেষ না, প্রতিবাদকারিনীকে বধ করার পরে অপরাধীর চরিত্রের যেই কালিমা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে , সেই দাগ উঠাতে, ওই অশ্লীল মন্তব্যকে জাস্টিফাই করার জন্য এর উপর একের পর এক পলিটিক্যাল রং চড়ানো হচ্ছে। রং চড়ানো বললাম, কারণ অপরাধীর এরকম মন্তব্য এই প্রথম না। এবারে শুধু পলিটিক্যাল রং চড়ানোর রাস্তাটা সহজ ছিল। আমার প্রিয় পোস্টে রাখা শেষ তিনটা পোস্ট নিজেই পড়ে নিন, নতুন চোখের জন্ম হবে।

ভার্চুয়াল জীবনে একটা প্রতিবাদ করতে কি এসে যায়? আপনি চাকরি খোঁয়াবেন না, আপনাকে বাসায় গিয়ে কেউ মেরে আসবে না, কিন্তু আমরা যে সম্মিলিত মেরুদন্ডহীনতায় ভুগছি, তা থেকে বেঁচে আসার জন্য ছোট্ট একটা প্রয়াস হতে পারতো!

আপনি নিজে মেয়ে না হলেও একজন মেয়েকেই বিয়ে করবেন, আপনার কোল আলো করে টুকটুকে এক মেয়ে আসবে। দেশটাকে কাঁটামুক্ত না করলে আপনাকে, আপনার প্রিয় স্ত্রীকে, কিংবা আপনার রক্তে মাংসে গড়া মেয়েকেই হেঁটে যেতে হবে এই কাঁটাপথে।

নিজের গা বাঁচাতে চুপ থেকে লাভ নেই। সামহোয়ারের মত একটা পাবলিক ফোরামে জনমতই সব। আমার প্রিয় পোস্টের শেষ তিনটা পোস্ট পড়ে দেখুন, কর্তৃপক্ষকে আপনার ভাবনার কথা জানান। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে চোখ বন্ধ করে আছে আমি বিশ্বাস করতে চাই না। দেখিয়ে দিন, আজ হোক, কাল হোক, তারা দেখবেন হয়তো!

এই পুরা ব্যাপারটায় আমি অনেক সময় ব্যয় করে সামহোয়ারে অন্তত: তিনটা ইমেইল করেছি, একটারও জবাব পাই নি। আমার দৃঢ় সন্দেহ হচ্ছে, অশ্লীল মন্তব্যটা অসংখ্য প্রতিবাদী ইমেইলের বেড়ী ভেদ করে অনেকদিন ঝুলে থাকলেও এই পোস্ট প্রথম পাতায় যাওয়ার সাথে সাথে বধ হবো।

হলে ক্ষতি নেই আমার, দীর্ঘ, দীর্ঘ দিন সামহোয়ারের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা নিয়ে থাকতে পেরেছি। রাগ ইমনকে করা ত্রিভুজের একটা কমেন্টের জন্য ত্রিভুজকে তিন মাসের জন্য ব্যান করা হয়েছিল। সামহোয়ারইন এ ধরণের অশালীন মন্তব্যের ব্যাপারে খুবই অসহনশীল বলেই জানতাম। অন্তত: এই রকম একটা বিষয়ে, যাকে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে অশোভন এবং অমানবিক বলে জানে, সেরকম একটা বিশ্বজনীন, অবিতর্কিত ক্রাইমের ব্যাপারে প্রতিবাদ করে কাজ হয় নি, সেরকম আগে দেখি নি। কিন্তু এবার কালো হাতের স্পর্শ অনেকদূর চলে গিয়েছে মনে হয়। কমেন্ট ডিলিটে অপরাধীর গা বাঁচানোই সহজ হয় কেবল, রেকর্ড ডিলিটেড।

তাই আপাতত: লেখা বিরতি দিচ্ছি সামহোয়ারইনে। উহু, পুরাপুরি চলে যাবো বলবো না, কারণ আমি স্বপ্নবাজ মানুষ। কখনও যদি রাহেলার খুনী মনস্কদের কালো হাতের ছায়া সরে যেতে দেখি, তাহলে আসবো।

কিন্তু দীর্ঘ দিন আপনাদের মাধ্যমে পৃথিবীকে চিনেছি বলে আপনাদের বলে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছি। আপাতত আমার পৃথিবী দেখার গল্প করবো ব্লগস্পট থেকে, সন্ধ্যাবাতি.ব্লগস্পট। আমার স্বপ্ন দেখার দিনগুলোতে আপনাদের স্বপ্ন ধার দেয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

ভালো থাকবেন সবাই, আপনার মা, মেয়ে, বোন, স্ত্রী, প্রিয়তমা, সবাইকে নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০০৮ ভোর ৬:০৭
৬৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×