কিং ফারম্নক, দি থিফ অফ কায়রো
আধুনিক ইজিপ্টের প্রথম কিং ফুয়াদ 1936 সালে দেহ ও প্রাণ ত্যাগ করার পর তার বালক পুত্র বাদল পালখিওয়ালা (ইধফধষ চধষশযরধিষধ) ওরফে কিং ফারম্নক 16 বছর বয়সে রেডিওতে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। ইজিপ্টের ইতিহাসে সেটিই ছিল পাবলিকের জন্যে রাজার দেয়া প্রথম ভাষণ। তরম্নণ রাজার রাজকীয় ভোগবিলাসের প্রতি দুর্মর আকর্ষণ ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি বিপুল বৈভবের অধিকারী হন। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল পাঁচটি প্রাসাদ, দুটি ইয়ট, কয়েকটি এয়ারক্রাফট, কয়েক হাজার একরের কৃষিজমি। এছাড়াও তার ছিল টকটকে লাল রঙে রাঙানো একশর বেশি গাড়ি। যাতে রাসত্দায় হাই স্পিডে গাড়ি চালানোর সময় অনুগত পুলিশরা ডিসটার্ব না করে। এ ছাড়া কোনো গাড়ি তার গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে তিনি গুলি করে অন্যদের গাড়ির টায়ার ফাটিয়ে দিতেন। অমিত পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও ফারম্নকের মনে শানত্দি ছিল না। তিনি ছিলেন ক্লেপটোম্যানিয়াক (শষবঢ়ঃড়সধহরধপ)। প্রতিবেশী দেশে বেড়াতে গিয়ে জিনিসপত্র চুরি করতেন তিনি। বেড়াতে আসা ইয়েমেনের আমিরের রত্নখচিত ড্যাগার মেরে দিয়েছিলেন একবার। আরেক বার ইরানের শাহের পিতার মৃতদেহ দৰিণ আফ্রিকা থেকে কায়রো হয়ে দেশে ফেরার পথে ফারম্নক গোপনে লাশ নিষ্কাশন করে একটি স্মারক তরবারি ও মেডাল তছরূপ করেন। সাধারণ লোকের জিনিসপত্রও চুরি করতেন তিনি। তার চুরিচামারি, ভোগবিলাস আর দুনর্ীতি এমন মার্গে পৌছায় যে দেশে তার আরেক নাম হয়ে দাড়ায় 'দি থিফ অফ কায়রো'। চুরিবিদ্যায় বুৎপত্তি লাভের উদ্দেশ্যে জেলখানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন এক দাগী আসামিকে। নিয়মিত ও প্রায়োগিক অনুশীলনের মাধ্যমে ফারম্নক পকেট মারায় নিপুণ দৰতা লাভ করেছিলেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলস্টন চার্চিল একবার ফারম্নকের সঙ্গে ডিনারে বসে টের পান যে, ডিউক অফ মার্লবোরোর কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার অতি মূল্যবান হেয়ারলুম ঘড়িটি উধাও হয়ে গিয়েছে। চার্চিলের চাপের মুখে ঘড়ি ফেরত দিতে বাধ্য হন চোর ফারম্নক। তবে সে বারে চুরির দায় চাপিয়েছিলেন কাল্পনিক এক চোরের ওপর। দুরারোগ্য মিথ্যাবাদী ফারম্নক নানারকম কাল্পনিক খেলাধুলায় ট্রফি জিতে প্রাসাদ ভরিয়ে তুলেছিলেন। 1942 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেৰ থাকতে গিয়ে ফারম্নক বৃটিশদের পৰের লোক মুসত্দফা আন নাহাস পাশাকে প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যার পরিণতিতে ক্রমে বৃটিশ কলকাঠির জোরে 1952 সালে জেনারেল মোহাম্মদ নাগিব এবং কর্নেল গামাল আবদেল নাসেরের কেরামতিতে রাজত্ব হারান তিনি। ইটালিতে নির্বাসন দেয়া হয় তাকে। পরে 1959 সালে মোনাকোতে নাগরিকত্ব পান তিনি। গণতন্ত্রে পদার্পণের পরে উৎসাহীরা ফারম্নকের সম্পত্তি নিলাম করতে গিয়ে মূল্যবান ঘড়ি, দুর্লভ মুদ্রা, স্ট্যাম্প ও দামি পাথরের বিপুল সংগ্রহ উদ্ধার করেন। এবং এসবের পাশাপাশি হাজার হাজার রেজর বেস্নডের প্যাকেট, অসংখ্য ম্যাচ বঙ্রে ছবি অাঁকা ওপরের ভাগ, রাশি রাশি পর্নোগ্রাফি, আমেরিকান কমিক বুক এবং 75টি বাইনোকুলার। অদ্ভুত এসব জিনিসের সমাবেশ সম্পর্কে এক সাংবাদিকের মনত্দব্য ছিল, এটি হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে মূল্যবান আবর্জনার সত্দূপ। নির্বাসনে গিয়ে ফারম্নকের ভোগবিলাসে কোনো কমতি পড়ে নাই। খাওয়া-দাওয়ার প্রতি তার অনত্দরঙ্গতা প্রসঙ্গে একবার বলা হয়েছিল, তিনি হচ্ছেন মাথাসহ একটি পেট (ধ ংঃড়সধপয রিঃয ধ যবধফ)। 300 পাউন্ড (136 কেজি) ওজন অর্জন করেছিলেন তিনি। 1965 সালের মার্চ মাসের 3 তারিখে অভ্যাস মোতাবেক অতিভোজনের কালে ডিনার টেবিলে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে মরে যান কিং ফারম্নক। কাকতালীয় ভাবে উইনস্টন চার্চিলও 65 সালেই মারা গিয়েছিলেন। ব্রাত্য রাইসু
অ্যানেকডট মিসেস মার্টিন ফন বুশেলের দেহরৰা
মার্টিন ফন বুশেল (গধৎঃরহ ঠধহ ইঁঃপযবষষ) 1760 দশকের হাই প্রোফাইল এক লন্ডনবাসী ছিলেন। বেপোরোয়া জীবনযাপন ও প্রায় সমাজবিরোধী কর্মকা- তাকে বিপুল কুখ্যাতি এনে দিয়েছিল। প্রায়ই তাকে গোলাপী স্পট অাঁকা একটি সাদা ঘোড়ায় হাতে গাধার চোয়ালের হাড় নাড়াতে নাড়াতে লন্ডনের রাসত্দায় ঘুরতে দেখা যেত। ডেন্টাল সার্জন হিসেবে রোগিদের কাছে তিনি অত্যনত্দ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। বিনা ব্যাথায় দাঁত লাগানো ও খোলার কাজ করতেন তিনি। তবে বুশেল ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন মৃত স্ত্রীর প্রতি তার আত্যনত্দিক অনুরাগের কারণে। মিসেস ফন বুশেল তার অশানত্দিময় বৈবাহিক জীবনের প্রতিশোধ হিসেবে একটি আক্রোশপূর্ণ উইল করে গিয়েছিলেন। যার ডিক্রি মতে তার মৃতু্য ও সমাধি (ঞযব সড়সবহঃ র ধস ফবধফ ধহফ নঁৎরবফ) হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি সব চলে যাবে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের দখলে। কৃতবিদ্য দনত্দচিকিৎসক মনে করতেন তিনি দলিলে একটি ফাঁক খুঁজে পেয়েছেন। 1775 সালের 14 জানুয়ারি স্ত্রী ম্যারির মৃতু্য সম্পন্ন হলে মি. বুশেল সিদ্ধানত্দ নেন প্রতিশোধকামী স্ত্রীর মৃতদেহটি তিনি আদৌ সমাধিস্থ করবেন না। সিদ্ধানত্দ বাসত্দবায়নের জন্য তার শিৰক ড. উইলিয়াম হান্টার এবং ড. উইলিয়াম ক্রুইকশাংকের শরণাপন্ন হন তিনি। ডক্টরদ্বয় মিসেস বুশেলের মৃতদেহ সংরৰণে তাকে সহযোগিতা করেন। দুই ডাক্তার মৃতদেহের ধমণীতে তারপিন তেল (ড়রষ ড়ভ ঃঁৎঢ়বহঃরহব) ও ক্যাম্পহোরেটেড স্পিরিট ওফ ওয়াইন (পধসঢ়যড়ৎধঃবফ ংঢ়রৎরঃ ড়ভ রিহব) ইনজেক্ট করেন। এবং চোখের জায়গায় তারা গস্নাস আই লাগিয়ে দেন। এরপর তাকে লেস গাউন পরিয়ে পস্নাস্টার অফ প্যারিসের সঙ্গে আটকে দিয়ে কাচের ঢাকনা অলা কফিনে সেঁটে দেওয়া হয়। ড্রয়িং রম্নমে রাখা হয়েছিল ম্যারির মৃতদেহটি। সপ্তাহের সোমবার থেকে শনিবার পর্যনত্দ প্রতিদিন সকাল 9টা থেকে দুপুর 1 টা পর্যনত্দ বুশেল তার বাড়ি কাম চিকিৎসালয়ের জানালায় মৃতদেহটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিলেন। মৃত স্ত্রীকে তিনি সর্বদা 'মাই ডিয়ারলি ডিপার্টেড' বলে সম্বোধন করতেন। লন্ডনবাসীদের অনেকেই এই অদ্ভুত প্রদর্শনী দেখতে এলেও বুশেল প্রভূত সমালোচনার সম্মুখীন হন। দর্শকের ভিড়ে বিরক্ত হয়ে শেষে বুশেল প্রদর্শনে কড়াকড়ি আরোপ করেন। সেন্ট জেমস ক্রনিকল-এর 21 অক্টোবর 1775 সংখ্যায় বুশেল একটি নোটিশ দিয়েছিলেন : 'ফন বুশেল আগ্রহীদের অবহিত করছেন এই বলে যে, কোনো আগন্তুক এখন থেকে বুশেলের পূর্বানুমতি ব্যতিত তার স্ত্রীর মৃতদেহ দেখতে পাবেন না। অনুমতির জন্য রোববার বাদে যে কোনোদিন নয়টা থেকে একটার মধ্যে যোগাযোগ করম্নন।' বুশেল পরে আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন স্ত্রী এলিজাবেথ পুরাতন স্ত্রীর মৃতদৈহিক উপস্থিতি মেনে নিতে চান নি। ফলে বাড়ি থেকে অৰয় মৃতদেহটি সরাতে বাধ্য হন বুশেল। ড. হান্টারের এক ভাইয়ের মিউজিয়ামে মৃতদেহটি তিনি দান করে দেন। শেষ পর্যনত্দ সংরৰিত দেহটি গিয়ে পৌছায় দি রয়েল কলেজ অফ সার্জনস-এ। মিসেস বুশেলের সমাধিস্থ হওয়ার লিগাল বাসনা প্রায় 166 বছর ধরে অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল। পরে 1941 সালে হিটলারের সৈনিকদের বোমার আঘাতে মিউজিয়ামটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে তিনি ভূগর্ভস্থ হয়েছিলেন, এমন ধারণা করা যায়। ব্রাত্য রাইসু

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



