somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পনগরী

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখনো কিশোর। ঘর থেকে বেড়িয়ে খেলতে যেতে হলেও মা-কে চৌদ্দবার জিজ্ঞেস করা লাগতো। বন্ধু-বান্ধব ক'জন ধুম মেরে বাচ্চু-জেমস্‌'এর গান শুনতো, আর আমি শুনতাম মায়ের আদেশে রবীন্দ্র-নজরুল (মর্ম বুঝি এখন)। বলা যায়, মায়ের বাধ্য সন্তান। এতটা অবশ্য বাধ্য ছিলাম না, সুযোগ পেলেই শুনতাম বাচ্চু/জেমস/হাসান/রেনেসাঁ/অঞ্জন/সুমন/Bryan Adams/Dire Straits/Eagles - আরও যেসব শুনলে আমার জন্য third degree ছিল সুনিশ্চিত। গানগুলো শুনে মনে হতো "ইস আমি কেন্‌ পারি না, কি সারাদিন রবি-নজরুল, আর সেই হারমোনিয়াম নিয়া পেঁ পেঁ করে আআআআ করা। উফফ! ভাল্লাগেনা"। সাহস করে একদিন মাকে বলেই দিলাম গীটার শিখবো।

যাই হোক। সময় গেলো... যেতে থাকলো... হঠাৎ... মা নেই! কিছুই বুঝে ওঠার আগেই সব কেমন যেন বদলাতে শুরু করলো। আগের বন্ধুরা নেই... সবকিছুই শান্ত আশেপাশে। ঘরে তখন একলা সময় কাটাতাম। বাবা থাকতো সারাদিন বাবার কাজ নিয়েই। আর আমি নিতান্তই নিজের সাথেই সময় কাটাতাম। বাবাকে একদিন বলেই দিলাম গীটার শিখব। বাবাও আপত্তি জানালেন না। গীটার কেনার টাকা দিয়ে দিলেন, আমি শেখা শুরু করলাম। ভালই চলছিল। কিন্তু কেমন যেন boring। ধুর ধুর করে গীটার বাজানোটাও বন্ধ করে দিলাম।

এরই মাঝে পরিচয় @Bonny ভাই-এর সাথে। বয়সে আমার ৩/৪ বছরের বড়। কিন্তু সময়ের সাথে পাকা বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। বনি ভাই দুরন্ত গান করেন, কম্পোজিসনও উনার অসাধারন। প্রথমদিন গান শুনেই পান্‌খা হয়ে গেছিলাম। ২০০৪ তখন। বনি ভাই এর circle'এর friend-রা তখন বনি ভাইএর গানগুলো লিখতো। বেশ ভাল গানগুলো। অন্তত আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছিল। গানগুলো শুনে আবার মনে হলো গীটারটা আবারো হাতে নি। যে কথা সে কাজ। নিয়ে নিলাম। মনে হলো নতুন জীবন। যা কিছু নেই মনে হচ্ছিল, সবকিছুই কেমন যেন ফিরে পাচ্ছিলাম। বনি ভাই'এর কাছ থেকেই গীটারের lesson গুলো নিলাম। বেশ ভালই চলছিল দিন, হেঁড়ে গলায় গান আর বেসুরা গীটার। একদিন হঠাৎ একটা লিরিক (বনি ভাই'র পছন্দের, আমার সবচাইতে অপছন্দের - গানটার নাম "রাত্রি")। এরপর থেকেই মোটামুটি ভাবে লেখা শুরু। গোটা পনের গান লেখার পরে ভাবলাম গানগুলোর গতি করা দরকার।

আমি আর বনি ভাই - দুজনই পুরোদমে বাপ্পা মজুমদারের অন্ধভক্ত। ভাবলাম, কেন না গানগুলো বাপ্পাদাকেই দি। বাস্‌ ! এক বন্ধুর সাথে বাপ্পাদার পরিচয় ছিল। তার সুতা ধরেই বাপ্পাদার সাথে পরিচয়। প্রথমদিন গেলাম বাপ্পাদার বাসায়। ঢুকতে গিয়ে দেখি গেট লক্‌। তিনতলার উপর থেকে বাপ্পাদা চাবি নিচে ফেলে দিয়ে বললেন,

- "তালা খুলে চলে আসেন"।

দিনটার প্রতিটা কথা ভোলার নয়। গেলাম বাপ্পাদার বাসায়। চা খাচ্ছিলেন আর টিভি দেখছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন কি উদ্দেশ্যে আসা। সরাসরি বললাম, গান নিয়ে এসেছি, গাওয়া লাগবে! শুনেতে চাইলেন। CD বের করে দিলাম। বাপ্পা দা ওয়াকম্যানে শুনতে লাগলেন। আধা ঘন্টা হয়ে গেল। কোন উচ্চ্য বাচ্চ্য নাই। বুকতো আমার আর বনি ভাই দুজনেরই দুরুদুরু। কান থেকে ইয়ারফোনটা রেখে বললেন,

- "গানগুলোতো ভাল। আমি ক'দিন সময় নিয়ে জানাই।"

এরপর চলে আসার সময় বাপ্পাদা বললেন,

- “নিচে আমার studio হচ্ছে দেখে যান”।

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বাপ্পাদা আমার পিঠে হাত চাপড়িয়ে বললেন,

- "ভাল লিখ তন্ময়!"

বিশ্বাস হচ্ছিল না তখন - আমার আইডলের হাত আমার পিঠে। অন্যরকম অনুভুতি। সেদিনের মত চলে এলাম ভীষণ ভালো লাগা নিয়ে। এর কিছুদিন পরই বাপ্পাদার ফোন। Studio গেলাম। বললেন,

- "গানগুলো আবার শুনবো"।

শোনালাম। একটার পর একটা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন আর পাশে বসে ছিলেন সবার প্রিয় শ্রদ্ধেয় সঞ্জীব দা। (কি ভয়াবহ ব্যাপার!!!) খানেক পড়েই বেজে উঠলো কল্পনগরী। দেখলাম দাদা চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ছেন। গান শেষ হল। আর বললেন,

- "এটা আমি নিচ্ছি। আরেকটা তোমাদের পছন্দের নিব।"

শুনে রীতিমত আমার গলা কাঁপছিল। এই অনুভূতি বোঝানোর ভাষা আমার কাছে নেই। আরেকটা গান দিলাম "হৃদয়পুরের মনরানী"। পরের দিনই গান দুটোর রেকর্ডিং হয়ে গেল। বেশ আনন্দ লাগছিল। গানগুলো বাপ্পাদার সলো আলবাম "দিন বাড়ি যায়"-তে থাকবে। ভাবতেই অবাক লাগছিল। এর ক'দিন পর, বাপ্পাদার স্টুডিওতে গেলাম। দাদা বললেন,

- "তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। চলো রেকর্ডিং রুমে।"

বাপ্পাদা পিসিতে বসলেন, একটা ভিডিও প্লে করলেন। ও কি!!! এ তো কল্পনগরী'র মিউজিক ভিডিও। আমি ত টাস্‌কি পুরাপুরি। মিউজিক ভিডিও দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমার লেখা গানের ভিডিও!!! সেই সাথে স্টুডিওতে আসা লোকজন সবাই বললেন, "ভাল লিখেছ তন্ময়" আর বনি ভাইকে বলা হল, "দারুন কম্পোজিসন বনি, দারুন হয়েছে গানটা"। সবার প্রশংসা পেয়ে আমার আর বনি ভাই'এর তখন দিশেহারা অবস্থা। বাসায় চলে এলাম। এসেই অনলাইন হয়ে রানা ভাইকে knock। ওমা! আমি বলার আগেই রানা ভাই বলে,

- “কি মিঁয়া? ফাটাই ফালাইলা পুরা। ভিডিও দেখসো?” বললাম দেখসি। পরে শুনি ভিডিওটা সম্পাদনার সময়টাতে উনিও ছিলেন। ভিডিওটা আসলেই অসাধারন। রানা ভাই, thanks দিয়া তো কুলাইতে পারবো না। পিজ্জা খাওয়াইয়া দিবো নে। :D

যাই হোক। share করলাম লিরিক আর ভিডিওটা।
-
গানঃ কল্পনগরী
কন্ঠঃ বাপ্পা মজুমদার
কথাঃ তন্ময়
সুর ও সঙ্গীতঃ বনি আহ্‌মদ
এ্যালবামঃ দিন বাড়ী যায় (২০০৭)

সন্ধ্যাতারায় খুঁজতে স্বপ্ন
কতযে পথ দিয়েছি পাড়ি
স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল সবই
বৃথা হল তাই স্বপ্নচাবি।

ধ্রুবতারায় এনেছি কল্পনাকে
রুপান্তর হবে ভেবে
কল্পনা হয়ে জানি থাকবে সবই
ধংস হলো তাই, কল্পনগরী।

শুকতারায় এনেছি ঘুম -
অচেতন থাকবো ভেবে
চেতনায় সারা সবই -
নতুন দিনের আগমনীতে।

ধ্রুবতারায় এনেছি কল্পনাকে
রুপান্তর হবে ভেবে -
কল্পনা হয়ে জানি থাকবে সবই,
ধ্বংস হলো তাই, কল্পনগরী।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩১
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×