somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাল আছি তো?

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকাল থেকেই সামি -র মেজাজ টা খারাপ হয়ে আছে।আব্বুর কাছে কালকে রাতে ৫০০ তাকা চেয়েও না পাওয়ায় মেজাজ খারাপ। অরিনকে নিয়ে আজকে KFC তে খেতে যাবার কথা।এখন টাকাটা কোথা থেকে ম্যানেজ করবে ভাবতে ভাবতে গাড়িতে উঠল সামি।সামিদের ধানমন্ডির বাসা থেকে স্কুল এ যেতে ৫ মিনিট এর বেশি লাগে না।মাঝে মাঝেই আব্বু বিরক্ত করে এই গাড়ি নিয়েও,বলে হেটে যাও।এতখানি রাস্তা কি হাটা যায়?কে বোঝাবে আব্বুকে.........আব্বুর মেন্টালিটি দেখে মাঝে মাঝে লজ্জা লাগে সামি র। স্ট্যাটাস বলে একটা জিনিস তো আছে।শীতের কারণে গাড়ির কাঁচটা উঠিয়ে দিয়ে এসব ভাবতে থাকে সামি।৮ নম্বর ব্রিজের উপর যখন গাড়ি উঠল,জ্যাম দেখে বিরক্ত হয়ে যায় সামি । এর মধ্যে একটা ফকির মেয়ে এসে গাড়ির কাঁচে নক করতে থাকে,মেয়েটির গায়ে নোংরা একটা জামা।দেখে ন্যাস্টি ফিলংস হয় সামি র।এরা এতো নোংরা থাকতে পারে।স্কুল এ পৌছেই বন্ধু শাফিন এর কাছ থেকে টাকা ধার নেয় সামি।পরে একসময় ফেরত দিলেই হবে।
স্কুল শেষ করেই অরিনকে নিয়ে KFC তে দৌড়,বাসায় যেতে দেরি হলেই নানা cause দেখাতে হবে আব্বুকে।সবকিছুই আব্বুর জানতে হবে......horrible.
kfc থেকে বের হতেই সকালের সেই ফকির মেয়েটাকে দেখতে পায় সামি। ওদের দেখেই এসে ২ টা টাকা চায়,বলে খেতে পায়নি সকাল থেকে। সামি আর অরিন হেসে ফেলে,২ টাকা দিয়ে আবার খাওয়া যাই নাকি! ধমক দিয়ে চলে যেতে বলে মেয়েটাকে।কিন্তু মেয়েটা এতো disturbing. ওদের পিছনেই আসতে থাকে।এর মধ্যে আবার হাত ধরার চেষ্টা করে অরিন এর। অরিন সামিকে বলে, 'can't you see. do anything' . সকালের থেকে ধরে রাখা রাগটা আর ধরে রাখতে পারে না সামি।একটা চড় বসিয়ে দেই মেয়েটার গালে,ছিটকে পরে মেয়েটা মাটিতে। অবাক হয়ে তাকায় সামির দিকে।অরিন ,সামিকে বলে , 'thank you for saving me from this disturbing creature'.
সামি খুশি হয়ে অরিন কে নিয়ে গাড়িতে উঠে......

শফিক সাহেব সকালে ঘুম থেকে উঠতেই তার ছেলেবেলার কথা মনে পরে।গ্রামে বাড়ির পাশে নদী ছিল।যতক্ষণ সময় পেতেন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কি ভালই না লাগতো।স্কুলে যেতে হতো ৩ মাইল হেটে,কিন্তু খারাপ লাগত না।কলেজ থেকে পাশ করে যখন ঢাকা চলে এলেন ভার্সিটিতে পড়তে সেদিন মায়ের কান্না তার এখনো চোখে ভাসে।ভার্সিটিতে পড়ার সময় হলে থেকে পড়াশোনা করেছেন,কি যে কষ্ট হতো চলতে।বাবা কৃষক ছিলেন।বেশি একটা টাকা পাঠাতে পারতেন না।কতোদিন সকালে না খেয়ে থেকেছেন।না খেয়ে থাকার দিনগুলোতে শুধু ভাবতেন, অনেক বড় হবেন।নিজের ছেলেমেয়ের কাছে কষ্টকে ভিড়তে দেবেন না।নিজের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রেখেছেন।এখন ধানমন্ডিতে ফ্লাট তার,২ টা গাড়ি।একমাত্র ছেলের কাছে কষ্টকে আস্তে দেননি।তবুও এখনকার ছেলে মেয়েদের দেখে কেমন যেন ভয় হয় তার......কেমন যেন একটা অস্বাভাবিকতা এদের মধ্যে।নিজের ছেলেকে খুব সাবধানে রাখতে চান তিনি।সব সময় খোঁজ রাখার চেষ্টা করেন,ছেলে কি করছে,না করছে। ছেলের হাতে টাকা দিতে ভয় হয় তার।খারাপ হয়ে যাওয়া এতো সহজ এখন!!!চলার জন্য সব সময় গাড়ি থাকে ছেলের।না থাকলে যদি এক্সিডেন্ট করে বসে,তবুও মাঝে মাঝে হাটতে বলেন ছেলেকে। শরীরটাও তো ঠিক রাখতে হবে.........কথা শুনতে চায় না ছেলেটা।মাঝে মাঝে নিজেকে জিজ্ঞেস করেন তিনি ভুল করছেন না তো ছেলেকে এতো আরাম এর মধ্যে রেখে?
নিচে নেমে শাহানাকে জিজ্ঞেস করেন,'সামি কি খেয়েছে?'
শাহানা জবাব দেয়,'না,রাগ করে না খেয়েই বের হয়ে গিয়েছে'।
শফিক সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন...............

নিতু মোহাম্মদপুর থেকে হেটে রওনা দেয়,ধানমন্ডি যেতে ৪০ মিনিটের মতো লাগবে তার।২ টা টিউশনি করবে আজকে।এক বন্ধু টিউশনি জোগাড় করে দিয়েছে।এগুলো না থাকলে কি হতো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে তার বুক থেকে।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ২ ভাইবোন টিউশনির টাকা দিয়েই তো চলছে।মাঝে মাঝে বড় কষ্ট হয়,ভাল থাকতে ইচ্ছে করে...।
গায়ের শালটা ভালোমতো জড়িয়ে নেয় সে,কি ঠান্ডা যে পরেছে এই বছর! রাস্তার পাশে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর জন্য ভারি মায়া হয় তার।১৫ নম্বর দিয়ে যাচ্ছে,kfc র দিকে তাকিয়ে ভাবে,একদিন এখানে খেয়ে দেখতে পারলে হতো।নিচে তাকাতেই দেখে একটা ছেলে একটা বাচ্চা মেয়েকে কি ভীষন জোরে একটা চড় মারল,মেয়েটা ছিটকে গিয়ে মাটিতে পড়ল।অবাক হয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে।কিন্তু ছেলেটা একটা গাড়িতে উঠে চলে যায়।মাটিতেই বসে থাকে মেয়েটি,চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা পানি।নিতু এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে।মেয়েটা তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।শীতে কাঁপতে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কি মনে করে গায়ের চাদর টা খুলে মেয়েটিকে দিয়ে হাটতে শুরু করে নিতু।তার শীতটাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে এক অসম্ভব শান্তি তাকে জড়িয়ে ধরে।নিজের মনেই সে বলে,'আহ, ভালো আছি তো।'
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×