গাইবান্ধা জেলার একটা গ্রামের মাঠে-ঘাটে ফুটবল খেলে বড় হওয়া ছেলে রফিক। দুইবারের চেষ্টায় সে SSC পাস করেছে। HSC দিয়েছিল একবার কিন্তু পাস করতে পারেনি। ইংরেজি আর অর্থনীতিতে ফেল করে পড়ালেখার সেখানেই ইতি টেনে কাজের খোঁজে ঢাকায় আগমন। প্রায় ছয় মাস একটা গার্মেন্টসে কাজ করার পর দুঃসম্পর্কের এক মামার বদৌলতে বর্তমান চাকরিটা জুটিয়ে ফেলে সে।
বেতন একেবারে খারাপ না। শুরুতে ছিল ৬৫০০ টাকা। এখন চাকরির বয়স এক বছর পেরিয়ে গেছে। বেতনও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০০ টাকা। অফিসের গেস্ট হাউজেই থাকার ব্যাবস্থা আছে। তাই ঐ টাকায় ভালোভাবেই চলে যায়। প্রতি মাসে কিছু টাকা গ্রামে মায়ের কাছে পাঠিয়ে আবার কিছু জমাও থেকে যায়। বিড়ি সিগারেট খাবার অভ্যাস নেই। তাই খরচও তেমন একটা নেই।
রফিকুলের সবসময় চেষ্টা থাকে একটু ভালো কাপড় চোপড় পরার। মানে একটু ফিটফাট থাকতে চেষ্টা করে আরকি। পিয়নের চাকরি করলেও তাকে মোটামুটি স্মার্টই বলা যায়। এমনকি ফেসবুকেও তার একাউন্ট আছে। সে যেখানে থাকে সেখানে একটা কম্পিউটার আছে এবং ইন্টারনেটের লাইনও আছে। তাই অফিস ছুটির পরের সময়টা তার ভালোই কাটে।
এই অফিসেই রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করে রাত্রি। সদ্যই গ্রাজুয়েশন শেষ করে সে এই অফিসে জয়েন করেছে। তাকে এককথায় সুন্দরী বলা যায়। এই শহরেরই মেয়ে। যথেষ্ট স্মার্ট এবং সুন্দরী হওয়ায় খুব সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন একটা মেয়ে রাত্রি। কাজেও খুব চটপটে। আর তাই অল্পদিনেই অফিসের সবার খুব পছন্দের একজন হয়ে গেছে সে।
রাত্রিকে প্রথমদিন দেখার পর থেকেই রফিক তার বিরাট ভক্ত হয়ে গেছে। প্রায় সবসময় তার খেয়াল থাকে রাত্রির কখন কি প্রয়োজন সেদিকে। দেখা গেলো সবার জন্য চা এসেছে, রফিক সেই চা প্রথমে রাত্রিকে দিয়ে তারপর অন্য কাউকে দেবে। বিভিন্ন ভাবে রাত্রির মনোযোগ আকর্ষণ চেষ্টায় তার কোন কমতি নেই।
হ্যা রফিকুল ইসলাম প্রথম দেখাতেই রাত্রির প্রেমে পড়ে গেছে। যেমন তেমন প্রেম নয় একেবারে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা! তার শুধু একটা কথাই মনে হয়, রাত্রিকে তার ভাললাগে। ওকে দেখতে ভাললাগে, ওর হাসি দেখতে ভাললাগে, কথা শুনতে ভাললাগে। রাত্রির সবকিছুই রফিকের প্রচন্ড রকমের ভালোলাগে।
কিছুদিন আগে সে ফেসবুকে একটা নতুন একাউন্ট খুলেছে। ভিন্ন একটা নামে। সেখান থেকে রাত্রিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ড করেছে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। রাত্রি সেই রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেনি।
অফিসে সামনা সামনি হলে "ম্যাডাম চা দেই বা ম্যাডাম কিছু লাগবে" এই কথা ছাড়া কোন কথাই সে বলতে পারে না।
তবে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে সে অনেকক্ষণ ধরে রাত্রির সাথে কথা বলে। একা একাই দুজনের কথোপকথন চালিয়ে যায় রফিক।
- আজকে খুব ইচ্ছা করতেছিল তোমার সাথে রিকশায় ঘুরতে।
- তাহলে আমাকে বললে না কেন?
- এমনিতেই
- এটা কোন কথা হল!
- কালকে অফিস ছুটির পর যাবা আমার সাথে?
- কোথায়?
- জানিনা, রিকশায় করে ঘুরবো
- আচ্ছা যাবো
- তুমি কালকে শাড়ি পইরা আসবা?
- কেন? আমিতো কখনো শাড়ি পড়ে অফিসে আসিনা
- সেইজন্যেই তো বললাম
- মানে
- আমার খুব ইচ্ছা করে তোমারে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে
- তুমি একটা পাগল
- লাল রঙয়ের শাড়ি পইরা আসবা
- না, শাড়ি পড়ে অফিসে আসতে আমি পারবোনা।
- তাইলে আমি কি তোমারে শাড়ি পইরা কোনদিন দেখতে পাবো না?
- পাবা না কেন? ছুটির দিনে আমরা যখন ঘুরতে যাবো তখন আমি শাড়ি পরে আসবো
রফিক স্বপ্ন দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
অফিসে এখন মাঝেমাঝেই রাত্রির সাথে তার টুকটাক কথা হয়। রফিকের কল্পনার পালে হাওয়া লাগে। এইতো সেদিন রাত্রি তাকে জিজ্ঞেস করছিল গ্রামে বাড়িতে কে কে আছে। সে মাথা নিচু করে প্রস্নের উত্তর দিয়েছিল। সামনা সামনি সে কখনোই রাত্রির চোখের দিকে তাকাতে পারেনা। কেমন যেন ভয় লাগে। মনে হয় এই বুঝি ধরা পড়ে গেলো! সে কয়েকবার রাত্রির মোবাইলে কল দিয়েছিল। কল রিসিভ হবার পর সে আর কোন কথা বলতে পারেনাই। অথচ শুধুমাত্র রাত্রির সাথে কথা বলার জন্যই সে একটা নতুন সিম কার্ড কিনেছে।
সরাসরি বা মোবাইলে কথা বলতে না পারলেও কল্পনার কথা কমেনি বরং আরও বেড়েছে। এখন প্রতি রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাল্পনিক কথোপকথন করেই রফিকের দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে কয়েকটা মাসও কেটে গেলো।
একদিন সকালে অফিসে যাবার কিছুক্ষন পরেই রাত্রি রফিককে ডেকে দুই হাজার টাকা বের করে দিয়ে বলল
- রফিক ভাই, আপনি এখনি একটা ভালো মিষ্টির দোকানে যাবেন। তারপর দোকানের সবথেকে ভালো মিষ্টি কিনে নিয়ে আসবেন। এক কাজ করেন আপনার যে মিষ্টিটা খেতে ইচ্ছা করবে সেই মিষ্টিটাই নিয়ে আসবেন।
- দুই হাজার টাকার মিষ্টি কিনে আনবো ?
- হ্যা, এই টাকায় যতটুকু পান পুরোটাই নিয়ে আসেন।
রাত্রির মুখ খুশিতে ঝকমক করছে। রফিক কোন কথা না বলে মিষ্টি কিনতে বেরিয়ে গেলো। তার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে কিন্তু কোনটারই উত্তর সে জানে না।
মিষ্টি কিনে আনার পর রাত্রি তাকে বলল অফিসের সবাইকে মিষ্টি পরিবেশন করতে। এবার রফিক সাহস করে মিষ্টি খাওয়ানোর কারন জানতে চাইলো। রাত্রি খুব সুন্দর করে হেঁসে বলল কারণটা সে কিছুক্ষন পর সবাইকে বলবে।
তার কিছুক্ষন পর রাত্রি পুরো অফিসের সবাইকে দুইটা খুশির সংবাদ জানালো। প্রথমটা হচ্ছে, তার একটা ব্যাংকে খুব ভালো চাকরি হয়েছে। এবং দ্বিতীয় কারণটা তার জন্য আরও বড় খুশির। তার দীর্ঘদিনের পরিচিত বন্ধুর সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়েটা এতদিন দুই পরিবারের অমতের কারনে আটকে ছিল। এবং এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। দুই পরিবার থেকেই বিয়ের বিষয়ে আর কোন অমত নেই। হয়তো সামনের মাসেই বিয়েটা হয়ে যেতে পারে। আর যেহেতু ভালো একটা চাকরি হয়ে গেছে তাই এই চাকরিটা সে ছেড়ে দিচ্ছে। আগামি কালকের দিনটাই এই অফিসে রাত্রির শেষ দিন।
রফিকের কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে।
রাত্রি এখন আর এই অফিসে কাজ করেনা। তার জায়গায় নতুন একটা মেয়ে জয়েন করেছে। বার্তা-বাহক রফিকুল ইসলাম এখনও আগের মতই আছে। নতুন মেয়েটার নাম তানিয়া। এই মেয়েটিকে তার ভালোই লাগে। কিন্তু তাকে সে রাত্রির মতই পছন্দ করে কিনা এই বিষয়টা এখনও ঠিক পরিস্কার হয়নাই। তবে তানিয়ার হাসি দেখলে রফিকের কেমন যেন লাগে!
(ছবি-গুগল থেকে ধার করা )
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




