somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতার শেষ প্যারা

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক ঝুড়ি বর্ণমালা নিয়ে বসেছি
সহস্র নির্ঘুম রাতের নিরাকার যন্ত্রণা,
বর্ণমালায় ছন্দে তালে তোমাদের মস্তিস্কে
গোপন সমীরণে, নিউরনের ছন্দপতনে গেঁথে দিবো

আমার জানালার ফ্রেমেবন্দী আকাশে অস্থিরতা , দৃষ্টিনন্দন আঁধার , একাকী শূন্যতা , আহত প্রজাপতির ব্যাথার করুণ সুর। এইসব রাত্রিকালীন বিষাদেরা আমার জানালায় ভর করে , নিঝুম নিদ্রার ভ্রান্তি হতে!
দৃশ্যপটে নিস্তদ্ধ অন্ধকার , অন্ধকারে ঘাসফুলও কুঁকড়ে থাকে … এমন ভয়ানক অন্ধরাতে কবিতার শব্দেরা নীরব আততায়ী ... বর্ণমালার নীলাভ যন্ত্রণা!
ক্রমশই বিলুপ্ত অতীত , অনাগত ভবিষ্যৎ আর নিষ্প্রভ বর্তমানের মিলন হয় এমন অন্ধরাতের কল্পভ্রমে !!


তারপরেই থমেক যায় সাঈফের কলম । নিজেকে খন্ড- বিখন্ড করেও আর এগিয়ে নিতে পারেনা। অথচ সমাপ্তিটা কখনোই অসমাপ্ত রাখতে চায় না, মাঝরাতের অন্ধঘরে শব্দহীন এক লেখকের এ যেন পূর্ণদৈর্ঘ্য যন্ত্রণা। জানালা খুলে দিলেই মস্ত বড় একটা চাঁদ তার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে , চাঁদটাকেও তার রক্তাত্ব মনে হয় ।
সময়ের সমীকরণে মুছে যাওয়া অতীতটার এখানে থাকার কোন কথা ছিলনা , অথচ সেই অতীত ই এখানে সাঈফের মধ্যরাতের ব্যাকুলতার একমাত্র কারণ । তার কবিতার খাতাটার অক্ষরহীনতার আসামী।
অথচ দৃশ্যপটে এমন বিরক্তিকর বিষাদ ছিলনা । তার আশেপাশে থাকা চরিত্রগুলো নিতান্ত আপনজনই। কিছুটা আত্নকেন্দ্রিক সাঈফের আশেপাশের মানুষগুলো তাকে খুব ভালো না বাসলেও ঘৃণা করেনা এমনটাই ধারণা ছিল তার ।
একান্নবর্তী পরিবারের ঘরকুনো ছেলে সাঈফ । নিজের ছোট্ট একটা জগৎ নিয়ে নিতান্তই সুখী একটা ছেলে। তার কল্পজগতের দুতিনটা কবিতার লাইন , প্রিয় গানের সুর , আর পছন্দের অল্প কিছু মানুষ আর নিশার মাঝেই তার আনন্দ – বিরহ সীমাবদ্ধ !
মহাবিশ্বের সংক্রমণযোগ্য কাঠিন্য তাকে ছুঁয়ে দেবে ভাবতে পারেনি , হয়তো তার জগৎটা নোংরামি আর পঙ্কিলতা মুক্ত কিন্তু তার এই ছোট্ট জগৎ রঙ্গমঞ্চের এক টুকরো মাত্র।
বাবার ব্যাবসা , মায়ের অসুস্থতা , চাচাদের সাথে বাবার মানসিক আর আর্থিক টানপোড়ন কখনোই তার চিন্তা জগতে প্রভাব ফেলতে পারেনি । এক বিকেলে দুর্ঘটনায় বাবার মরণ নিদারুণ বাস্তবতার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করে সাঈফকে। পরিবারে চাচাদের বদলে যাওয়া আচরণ আর মায়ের অসুস্থতা ক্রমশ গ্রাস করতে থাকে সাঈফকে। বাবা মারা যাবার পর আর্থিক অনটনে নিজের অবস্থান বুঝে উঠতে উঠতেই মা তাকে ছেড়ে চলে যায়।

চারপাশের শূন্যতার মাঝেই সে নিশাকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখতে থাকে , বন্ধুদের আড্ডায় কিছুটা সময় দিয়ে নিজেকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করে সাঈফ। খারাপ সময়ের সংজ্ঞা জানান দিতে কিছুদিন পরই তাকে জানানো ছাড়াই তার প্রিয় বন্ধুকে বিয়ে করে বসে নিশা।

এই সময়ে সাঈফের মানসিক আর পারিপার্শিক পরিস্থিতি কেমন সেটা কেবল সাঈফ অনুভব করতে পারে । বন্ধুদের ও বিশ্বাস করতে সাহস পায়না সাঈফ । ঘরকুনো শান্ত ছেলেটির বিধাতার কাছেও কোন প্রশ্ন নেই , কোন চাওয়া নেই ।

রংধনুর আবেশী বিকেলে এক মেঘবালিকার সাথে তার দেখা , মেঘবালিকা নাচতে জানে , গাইতে জানে , খুব সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করে সাঈফকে শোনায় । ধীরে ধীরে মেঘবালিকার মায়ায় জড়িয়ে পড়ে , তার নাচের মুদ্রায় ঘুরে দাঁড়ানোর ছন্দ খুঁজে পায় , তার হাসিতে বিশ্বাসের সুর খুঁজে পায়।
বাবার ব্যাবসা আর নিজের পড়াশুনার দিকে ধীরে ধীরে মনোযোগী হয়ে উঠে সাঈফ। গভীর রাতে এখন সাঈফ আর শূন্যতার কাব্য লিখেনা । সে মেঘবালিকার জন্য কবিতা লিখে
শিউলীতলায় তার হাত ধরি
তার ব্যাকুলতা ফোটে শ্রাবণের জলে
আমি পুড়ি দিগন্তের অনলে
দৃশ্যতঃ স্বপ্ন দেখি
বেঁচে থাকার, জেগে উঠার ।
মেঘবালিকা তাকে ডেকে দেয় রোজ সকালে , রোজ রাতে ভিতরে জমে থাকা কষ্টগুলো বমি করার সাথী ।
বিধাতা সব কেড়ে নিতে জানে , সব ফিরিয়ে দিতে পারে ! নিজের ঘুরে দাঁড়াবার গল্পে বিধাতার তৈরী কোন চরিত্রের অপেক্ষায় ছিলনা সাঈফ। আগের অসমাপ্ত কাব্যের শেষ প্যারাটাও লিখে ফেলেছে সাঈফ ।

এক ঝুড়ি বর্ণমালা নিয়ে বসেছি
সহস্র নির্ঘুম রাতের নিরাকার যন্ত্রণা,
বর্ণমালায় ছন্দে তালে তোমাদের মস্তিস্কে
গোপন সমীরণে, নিউরনের ছন্দপতনে গেঁথে দিবো

আমার জানালার ফ্রেমেবন্দী আকাশে অস্থিরতা , দৃষ্টিনন্দন আঁধার , একাকী শূন্যতা , আহত প্রজাপতির ব্যাথার করুণ সুর। এইসব রাত্রিকালীন বিষাদেরা আমার জানালায় ভর করে , নিঝুম নিদ্রার ভ্রান্তি হতে!
দৃশ্যপটে নিস্তদ্ধ অন্ধকার , অন্ধকারে ঘাসফুলও কুঁকড়ে থাকে , এমন ভয়ানক অন্ধরাতে কবিতার শব্দেরা নীরব আততায়ী ... বর্ণমালার নীলাভ যন্ত্রণা!
ক্রমশই বিলুপ্ত অতীত , অনাগত ভবিষ্যৎ আর নিষ্প্রভ বর্তমানের মিলন হয় এমন অন্ধরাতের কল্পভ্রমে !!
বর্ণমালায় এঁকেছি মেঘ , মেঘের দূত মেঘবালিকা ! মেঘবালিকা মুছে দেয় অতীতের দীর্ঘশ্বাস!
অন্ধরাতের কল্পভ্রমে সমীকরণ বদলে যায়।।
মেঘদূত , ঘোরগ্রস্থ বালকের উদ্দেশ্যে লিখে যায়
ঘুরে দাঁড়াও, আপন শক্তিতে !!





উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় মামুন রশিদ ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫
৫৯টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×