somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়েশিয়া ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আপনারও কাজে লাগবে - ১

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল মালয়েশিয়া ঘুরতে যাবো। ইন্টারনেট আর ট্রিপ এ্যাডভাইজরের কল্যাণে মালয়েশিয়া যাবার আগেই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করলাম। মূলত কোথায় কি করতে হবে, কি কি দেখতে হবে, কোথায় থাকবো, কি কি খাবো ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বরাবরই সব কিছু সময়ের আগে আগেই গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসি। তাই মালয়েশিয়া যাবার প্রায় ১মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করে রাখলাম, সাথে বিমানের টিকিটও বুক করে রাখলাম।

ভিসা খুব সহজেই পেয়ে যাবেন যদি স্বামী স্ত্রী বা পরিবারের সবাই মিলে আবেদন করেন। একা একা করলে হয়ত পেতে একটু কষ্ট হতে পারে। সাধারনত ৭ দিন লাগে ভিসা পেতে। মালয়েশিয়া দুতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র নিয়ে পুরণ করুন, সাথে আপনার পাসপোর্টের কপি, দু কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, অফিসের এনওসি, ভিজিটিং কার্ড, সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক বিবরণী (একাউন্টে কিছু টাকা জমা থাকতে হবে) নিয়ে ভালো কোন ট্র্যাভেল এজেন্টকে দিতে হবে, কারন মালয়েশিয়ার ভিসা এজেন্ট ছাড়া সাধারণত হয় না।
হোটেল আগে থেকে বুক করার দরকার নাই যদি না আপনি টুরিস্ট সিজনে যান। আর যখনই যান একটা কথা মনে রাখবেন অবশ্যই কুয়ালালামপুরে বুকিত বিন্তাং এলাকায় আর লংকাউই’এ পান্তাই চেন্নাং বা কুয়াহ এলাকায় হোটেল নিবেন। তাহলে সকল বিনোদনের কেন্দ্রস্থলে থাকতে পারবেন আর সব দিকে সহজে চলাচলও করতে পারবেন।

আপনি যখন ভ্রমন করবেন তার অনেক আগ থেকেই বিমানের টিকিট বুক বা কেটে রাখুন অনেক কমে পাবেন না হয় শেষ সময়ে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে। আপনি যদি শুধু কুয়ালালামপুর ঘুরতে চান তবে ঢাকা টু কুয়ালালামপুর বিমানের টিকিট ঠিক আছে, না হয় কুয়ালালামপুর থেকে লংকাউই বা পেনাং’র টিকিটও বাংলাদেশ থেকেই কেটে রাখুন কারন বাস বা ফেরীতে ভ্রমন করলে আপনার অনেকটা সময় নষ্ট হবে, স্থল ও জল মিলিয়ে আপনার প্রায় ৮-৯ ঘ্ন্টা করে লেগে যাবে। সাথে অনেকটা ক্লান্তও হয়ে যাবেন। আর বিমানের টিকিট কেটে রাখলে টাকা হয়ত একটু বেশী লাগবে কিন্তু খুব আরামদায়ক আর স্বল্প সময়ে ভ্রমণটা শেষ করতে পারবেন।
এবার আপনার ব্যাগ গোছাবার পালা। প্রচুর জামা কাপড় দিয়ে ব্যাগটা না ভরে হালকা কিছু নিয়ে নিন। ছোট একটা হ্যান্ড ব্যাগে রাখতে পারেন আপনার পাসপোর্ট, টিকিট, টুকটাক কাগজপত্র, পাসপোর্ট সাইজ দু এক কপি ছবি, অফিসের এনওসি, ছাতা, সান্সক্রিম লোশন, ক্যাপ, সানগ্লাস সাথে টুকটাক কিছু শুকনা খাবার নিয়ে নিতে পারেন কাজে আসবে যখন এদিক ওদিক যাবেন। একটা কথা বলে রাখি পুরো মালয়েশিয়ায় কিন্তু বাংলাদেশের তুলনায় জিনিসপত্রের দাম অনেকটা বেশী।

মালয়েশিয়া ঘুরতে যাবার আগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজেট এবং কোথায় কতদিন থাকবেন, কি কি করবেন তা ঠিক করা। যদি আপনি শুধু কুয়ালালামপুর আর লংকাউই ঘুরতে চান একেবারে আরামদায়ক ভাবে তবে আমি মনে করি সব মিলিয়ে ৭ রাত ঠিক হবে যার মাঝে ৩ রাত লংকাউই আর ৪ রাত কুয়ালালামপুর আর আপনি যদি পেন্নাং ও ঘুরতে চান তবে সব মিলিয়ে ৮-৯ রাত থাকলেই চলবে। অবশ্য আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে আরো কম বেশীও হতে পারে। এতোসব কিছু পরিকল্পনা করার সাথে সাথে ট্রীপ এ্যাডভাইজর ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে থাকুন যাবার আগেই ভালো একটা আইডিয়া পেয়ে যাবেন পুরো মালয়েশিয়ার উপর। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি ঠিক করলাম ৭ রাত কাটাবার। ৩ রাত লংকাউই আর ৪ রাত কুয়ালালামপুর। ঢাকা থেকে সোজা গিয়ে নামলাম কুয়ালালামপুর ভোর ৫টা। বিমান থেকে নেমেই বুঝতে পারবেন আপনি একটি উন্নত দেশে এসেছেন। সবকিছুতেই এরা অনেক বেশী এগিয়ে এরা আমাদের চেয়ে। স্পষ্ট দিকনির্দেশনার কারনে একবারের জন্যও কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করেও সুন্দর এবং সুষ্টভাবে আপনার সকল কাজ সম্পন্ন করে বের হয়ে যেতে পারবেন বিমানবন্দর থেকে।

বিমান থেকে নেমে ট্রেনে চড়ে আমরা চলে গেলাম ইমিগ্রেশন পার হবার জন্য। যথাসময়ে সব কাজ শেষ করে ছুটলাম (কেলিয়া ১ – আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) থেকে পাশের আভ্যন্তরীন বিমানবন্দরে (কেলিয়া ২ - আভ্যন্তরীন বিমান বন্দর)। কয়েকতলা নিচে নেমেই পেয়ে গেলাম কেলিয়া এক্সপ্রেস (ট্রেন – যা কেলিয়া ১ থেকে কেলিয়া ২ হয়ে কেএল সেন্ট্রাল পর্যন্ত যায়)’র কাউন্টার, ৩ রিঙ্গিত করে দুইটা টিকিট কাটলাম সবমিলিয়ে মাত্র ৫-৭ মিনিটে পৌঁছে গেলাম খানিক দুরের আভ্যন্তরীন বিমানবন্দরে । লংকাউই’র উদ্দেশ্য আমাদের ফ্লাইট ৯.৩০এ তাই আমরা সকালের নাস্তা সেরে নিলাম এই এয়ারপোর্টে। মোটামুটি পৃথিবীর সবগুলো খাবারের ব্র্যান্ড রেস্তোরাই খুঁজে পেলাম। পছন্দসই কোনটাতে আপনার নাস্তা সেরে নিন। এবার একটু আশে পাশে চোখ বুলিয়ে চেকইন করে নিন পরের ফ্লাইটের জন্য।


লংকাউইঃ
প্রায় ১ ঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম লংকাউই বিমানবন্দরে। ব্যাগ বুঝে নিয়ে একটা মোবাইল সীম কিনলাম। একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিলাম (হোটেল এশিয়া, কুয়া, লংকাউই) হোটেলের উদ্দেশ্যে। মনে রাখবেন কেবলমাত্র কাউন্টার থেকেই ট্যাক্সি বুক করবেন তাহলে ধোকা খাবার ভয় থাকবে না। লংকাউইতে চমৎকার একটা পদ্ধতি চালু আছে। আপনি চাইলে এবং আপনার যদি গাড়ী চালানোর লাইসেন্স থাকে তবে আপনি একটি কার বা স্কুটি ভাড়া করতে পারবেন আপনার পুরো ট্যুরের জন্য। হোটেলে পৌঁছে রুম বুঝে নিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে নিলাম। তারপর হোটেলের ম্যানেজারের কাছ থেকে বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিকালের জন্য একটা প্যাকেজ বুক করে নিলাম। মনে রাখবেন পুরো মালয়েশিয়া জুড়েই আপনি বিভিন্ন প্যাকেজ পাবেন ঘুরে বেড়ানোর জন্য। প্রায় সবখানে একই দামে পাবেন তবে হোটেল যদি ভালো হয় আমি বলবো হোটেলের মাধ্যমেই আপনি প্যাকেজ নিয়ে নিতে পারেন।

দুপুরের খাবারটা পাশের এক হোটেল থেকে সেরে নিলাম। এখানেও একটা টিপস সবার জন্য না বুঝে নতুন কোন খাবার চেখে দেখতে যাবেন না ভালো নাও লাগতে পারে। টাকাটাই পরে জলে যাবে। অবশ্য এটা নির্ভর করে আপনার স্বাদের উপর। আমি প্রায় সব দিনই ফাস্টফুড দিয়ে কাজ চালিয়ে দিয়েছি, সাহস হয়নি স্থানীয় খাবার চেখে দেখার। একদিন অবশ্য সী-ফুডের স্বাদ নিতে গিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

যা যা দেখতে পারেনঃ
প্রথম দিনঃ লামান পাদি, আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, ওরিয়েন্টাল ভিলেজ, প্যানোরোমা লংকাউই, তেলেগা তুঝ। যা দেখে শেষ করতে আপনার অর্ধেক দিনের মত লাগবে। এবার বিকালের দিকে ঘুরে আসতে পারেন পান্তাই কক, তেলেগা হারবার, পান্তাই চেন্নাং ইত্যাদি। একটা প্যাকেজ নিয়ে নিতে পারেন।

দ্বিতীয় দিনঃ সকালে চলে যান কিলিম কারষ্ট জিওফরেষ্ট পার্ক প্রায় অর্ধেক দিন লেগে যাবে। বিকালে চলে যান তামান লেজেন্ডা, ঈগল স্কয়ার, লংকাউই ফেয়ার মল, লংকাউই প্যারেড দেখতে।

তৃতীয় দিনঃ সকালে আইল্যান্ড হপিং এ গেলে অর্ধেক দিন লেগে যাবে বিকালটা নিজের মত করে এদিক ওদিক ঘুরতে পারবেন। আসলে সবকিছু নির্ভর করে বাজেট আর সময়ের উপর। আপনি চাইলে সব কিছু না দেখে ধীরস্থির ভাবে কয়েকটা পছন্দসই জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। আমার কাছে মনে হয়েছে আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, প্যানোরোমা লংকাউই, তেলেগা হারবার, পান্তাই চেন্নাং, কিলিম জিওফরেষ্ট পার্ক, ঈগল স্কয়ার আর আইল্যান্ড হপিং একয়টি দেখলেই আপনার পুরো লংকাউই দেখা হয়ে যাবে।


প্যানোরোমা লংকাউইঃ
পূর্ব নির্ধারিত সময়ে আমি আর আমার অর্ধাঙ্গিনী; আমাদের যাত্রা শুরু হলো প্যানোরোমা লংকাউই’র উদ্দেশে। এখানে মূলত অনেক কিছুই আছে যার মধ্যে ক্যাবল কার, স্কাই ব্রিজ, স্কাই ডোম, ত্রিডি আর্ট মিউজিয়াম ইত্যাদি উল্ল্যেখযোগ্য। আপনি বিভিন্ন প্যাকেজ থেকে বেছে নিতে পারেন যা যা আপনি উপভোগ করতে চান সে অনুযায়ী। টিকেট কেটে চড়লাম ক্যাবল কারে সত্যি ভাষায় বোঝানো যাবে না। এ এক মিশ্র অনুভুতি, ভয়, আনন্দ আর উত্তেজনা পুরোটাই টের পাবেন যখন উপরের দিকে উঠতে থাকবেন। আর আস্তে আস্তে চোখের সামনে খুলে যাবে এক আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য। পুরো লংকাউই যেন আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। অনেক দূরে দূরে দ্বীপ গুলো, নীল জলরাশি আর সবুজে ঘেরা সব পাহাড়। একটা সময় আপনি পৌঁছে যাবেন পর্যবেক্ষণ করার একটা সুন্দর ডেকে। চার পাশ অপূর্ব সুন্দর যা আপনাকে মুগ্ধ করে দিবেই আর এতক্ষণের পেড়িয়ে আসা ভয় উত্তেজনা সব নিমিশেই উবে যাবে। এই পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে আপনি দেখতে পাবেন তেলেগা তুঝো নামে এক পাহাড়ি সুন্দর ঝরনা। অনেক উচু পাহাড় থেকে ঝরে পড়া সুন্দর এক ঝরনা। (আমরা আর আলাদা করে এই ঝরনা দেখতে যাইনি, আপনি চাইলে দেখে আসতে পারেন ভালো লাগবে) এরপর আপনাকে ক্যাবল কার নিয়ে যাবে স্কাই ব্রীজের দিকে। এটিও অপূর্ব সুন্দর। হাজার হাজার ফুট উচ্চতায় কি নিখুত কারুকাজে তৈরি স্কাই ব্রীজ। না দেখলে আসলে লিখে পুরোটা প্রকাশ করতে পারবো না। ইচ্ছে মত ছবি তুললাম এতো কষ্ট করে এসে ছবি না তুলে ফিরে গেলে স্মৃতি রোমন্থন করা যাবে না। অবশেষে আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে ক্যাবল কার, আপনাকে আপনার জায়গায় ফিরিয়ে দেবার জন্য। এবার আরেক অজানা অনুভুতি না জানি কি হয়, কত দ্রুত নেমে যায় ইত্যাদি চিন্তা, কিন্তু আসলে নামতে গিয়ে অতটা ভয় পাবেন না। এরপর স্কাই ডোমে উপভোগ করলাম রোলার কোষ্টারে চড়ার অভিজ্ঞতা। আসলে এটি ৩ মাত্রিক ভিডিও যা চশমা ছাড়াই দেখতে পাবেন, মনে হবে নিজেই চড়ে যাচ্ছেন ভয়ঙ্কর এক রোলার কোষ্টারে। পুরো প্যানোরোমা জায়গাটাই খুব সুন্দর করে সাজানো। অনেকগুলো রাইড আছে চাইলে সবগুলোই চড়তে পারেন আর আছে রেস্টুরেন্ট, ফোয়ারা, ত্রিমাত্রিক আর্ট গ্যালারী ইত্যাদি।


আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ডঃ
এবার চললাম পরের গন্ত্যবে। টিকিট কেটে ঢুকলাম আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড - সামুদ্রিক মাছ, প্রবাল আর পাখির রাজ্যে। হাঙর, জেলি ফিস, পেঙ্গুইন সহ আরো অনেক প্রানীর খুব চমৎকার সব সংগ্রহ দেখে ভালোই লাগবে। এই সংগ্রহশালা থেকে বের হলেই পাবেন বিশাল বড় শুল্কমুক্ত সুপারশপ যেখানে পাবেন প্রচুর চকোলেট, পারফিউম, বিস্কিট সহ আরো অনেক কিছু।

পান্তাই চেন্নাংঃ
কক্সবাজারের মতই সমুদ্র সৈকত কিন্তু আমাদের মত অত বিশাল নয়। এই একটা জায়গায় মনে হয়েছে আমাদের এতো বিশাল সম্পদ থাকতেও আমাদেরকে এতো দূরে এসে, এতো পয়সা খরচ করে সমুদ্রের রূপ দেখতে হচ্ছে। পান্তাই চেন্নাং সুন্দর ছোটখাটো একটা সৈকত আর বসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় রাখা আছে অনেকগুলো বিনে পয়সার আরাম কেদারা। আমি একটু সঙ্কোচ বোধ করছিলাম বসবো কি বসবো না, টাকা চেয়ে বসে কিনা ঘণ্টা অনুযায়ী। আমার বউ সাহস যোগালো, উৎসাহে বসে পড়লাম আর অনেকটা সময় অলস বসে দেখছিলাম লংকাউই দ্বীপের অপূর্ব সুন্দর সব দৃশ্য, ওই দূরে দেখা যায় আরো অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপ, মাঝে মাঝে সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান, নীল রঙ্গের পানি, সাদা বালি, সাথে প্যারা গ্লাইডিং, জেটস্কিইং, স্পীড বোটের ছুটে চলা, বাচ্চাদের বালি দিয়ে খেলা করা আর অনেক মানুষের জলে ঝাপাঝাপি করে গোসল করা। চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়েও দেখলাম কেউ দৌড়ে আসেনি টাকা চাইতে। সূর্য অস্ত গেলে তবে ফিরে চললাম একটু আশেপাশের বাজার, দোকানপাট ঘুরে দেখতে। এখানে অনেক কিছুই পাবেন কেনার মত, তবে টাকার অঙ্কে গেলে ভালো নাও লাগতে পারে। তবে খাবারের জন্য এখানে রয়েছে অনেক গুলো রেস্তোরা, বেশ ভালো কিছু সীফুড আর ফাস্টফুড সবই পাবেন এখানে।


লংকাউই নাইট মার্কেটঃ
হোটেলে ফেরার পথে পেলাম “লংকাউই নাইট মার্কেট” আমাদের হোটেলের খুব কাছেই। এই রাত্রিকালীন বাজার খুব জনপ্রিয় লংকাউইতে এবং এই বাজার সপ্তাহে বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন জায়গায় বসে। এখানে পাবেন স্থানীয় অনেক ফলমূল, সব্জি, কমদামী অনেক দ্রব্যাদি, হরেক রকম স্থানীয় খাবার আর জুস।

অবশেষে শেষ করলাম প্রথম দিনের কর্মকাণ্ড। গতরাতের ভ্রমণ আর সাথে কাল থেকে আজ সারাদিন জেগে থাকার পর আর পারছিলাম না চোখ মেলে থাকতে। তাই রাতের খাবার শেষ করেই ছুটলাম হোটেলে ঘুমানোর জন্য। ঘুমানোর আগে একটা টিপস দেই কোথাও ঘুরতে গিয়ে হোটেল রুমে যত পারেন কম সময় কাটাবেন, বউয়ের সাজগোজ আর আপনার আরাম আয়েশ করতে গিয়ে সময় কুলিয়ে উঠবে না। তাই ঠিকঠিক ঘড়ি ধরে সবকাজ সমাধা করুন।


আইল্যান্ড হোপিংঃ
আগের দিন ঠিক করে রাখা প্যাকেজের অংশ হিসেবে আজকে সকাল সকাল যেতে হবে আইল্যান্ড হোপিং এ। মোট তিনটি দ্বীপ আর ঈগলকে খাবার দেবার এক অপূর্ব সুন্দর মুহূর্ত দেখা যাবে এই প্যাকেজে। ভালো করে সানস্ক্রিন লোশন মেখে, ছাতা আর ক্যাপ নিয়ে নিলাম রোদের হাত থেকে বাঁচতে, সাথে রাখলাম পানি। আর একটি কথা সাথে করে বাড়তি কাপর আর তোয়ালে নিয়ে নিন পরে কাজে লাগবে। যথাসময়ে শুরু হলো আমাদের ভ্রমণ ঈগল স্কয়ারের পাশ থেকে স্পীড বোটে চড়ে। প্রায় ১৫মিনিট অবিরাম চলার পর এসে থামলাম একটা দ্বীপে।

বেরাস বাসাহ আইল্যান্ডঃ
অসম্ভব সুন্দর পুরো দ্বীপ সাদা বালিতে ভরা, নেই মানুষের বানানো কোন স্থাপনা এ যেন প্রকৃতি আর প্রকৃতি শুধু। কিছু দূরে আরো কিছু দ্বীপ দেখা যায় সাথে সবুজ জলের ঢেউ। নানা রঙের ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ, দ্বীপ ভর্তি হাজার প্রজাতির গাছ গাছালী, মাঝে মাঝে ঈগলদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ, এ এক অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতি যা চোখে না দেখলে লিখে প্রকাশ করা যাবে না। প্রায় একঘন্টা পর ফিরে যাবার পালা জেটিতে, যেখান থেকে স্পীড বোট আমাদের নিয়ে যাবে পরবর্তী গন্ত্যবে। অল্প কিছুক্ষণ চলার পর আমরা এসে থামলাম অন্য একটি দ্বীপের কাছাকাছি।

সিঙ্গা বেসার – ঈগল ইটিংঃ
আমাদের বোটের উপর উড়ছিল অনেকগুলো ঈগল। আমাদের সাথে আরো কিছু বোটও ছিল। প্রথমে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি হবে। কিছুখন পরই আমাদের বোটের চালক কিছু একটা ছুড়ে দিল উপরের দিকে আর মুহূর্তে কয়েকটি ঈগল ঝাপিয়ে পড়ে ছুড়ে দেয়া খাবার লুফে নিল। অসম্ভব ক্ষিপ্রতা, দুর্ভেদ্য অস্ত্রের মত নখ আর নির্ভুল নিশানা একবারের জন্যও ভুল করলো না ঈগলগুলো। আমরা যেখানে ছিলাম এই জায়গাটি পরিচিত “সিঙ্গা বেসার - ঈগল ইটিং” নামে। খানিক বাদে আমরা আবার চলতে থাকলাম পরবর্তী গন্ত্যবে। পথে আমাদের ড্রাইভার একটা জায়গায় এসে একটু দূরের পাহাড়ের দিকে তাকাতে বলল। আমরা তাকিয়ে দেখি তিনটি পাহাড় এমনভাবে পাশাপাশি যেন মনে হচ্ছিল পেট মোটা কেউ একজন শুয়ে আছে।


ডায়াং বান্টিং মার্বেল জিওফরেষ্ট পার্কঃ
এই দ্বীপটি আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে আসলে প্রত্যেকটা দ্বীপই আলাদা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্পীড বোট আমাদেরকে ছোট একটা জেটিতে নামিয়ে দেয়ার পর আমরা হেঁটে আর অনেকগুলো সিঁড়ি বেয়ে আসলাম এই লেকে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ও নামার সময় আপনি আপনার চারপাশে অনেকগুলো বানর দেখতে পাবেন আর অসংখ্য পাখিতো আছেই। সমুদ্রের মাঝখানে একটি দ্বীপ যেটি পাহাড়ে ঘেরা এবং যার ঠিক মাঝে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর একটা শান্ত লেক যার নাম তাসিক ডায়াং বান্টিং। কথিত আছে যেসকল মেয়েরা মা হচ্ছেনা বা হবে না তারা যদি একবার এই লেক ঘুরে যায় তবে তাদের সমস্যার সমাধান হয়। মাথার উপর খাঁ খাঁ রোদ্দুর কিন্তু লেকের মিঠা জল হিম শীতল শরীর জুড়িয়ে দেয়। এখানে রয়েছে সোলার দ্বারা চালিত প্যাডল বোট, ডিঙ্গি নৌকা আর সুইমিং পুল। আপনি একবার এই লেকে এলে পানিতে না নেমে থাকতেই পারবেন না। আমার কথা অনুযায়ী যদি আপনি বাড়তি কাপড় আর তোয়ালে সাথে নিয়ে এসে থাকেন তবে এখন আপনার খুব কাজে লাগবে। ইচ্ছে মত পানিতে লম্ফ ঝম্ফ করে শরীর জুড়িয়ে নিলাম। বুক ভরে কিছু বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নিতেও ভুল করিনি। চোখ জুড়িয়ে দেয়া সুন্দর এই লেক মনে হয়না কোন দিন ভুলতে পারবো। এবার ফিরে যাবার পালা। শেষ হলো আইল্যান্ড হপিং যা লংকাউই সফরে আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগার ছিল।

ফিরে এলাম ঈগল স্কয়ারে। এখানেই সেরে নিলাম আমাদের দুপুরের খাবার এখানে অনেকগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক খাবারের দোকান আছে পছন্দমত কোথাও খেয়ে নিতে পারেন। খাবার শেষ করে পাশেই একটা শপিং মলে ঢুকলাম লংকাউই ফেয়ার। এদের আসলে সবগুলো মলই প্রায় একই। ফিরে এলাম হোটেলে সারাদিনে কম ধকল যায়নি। একটু ফ্রেস হয়ে হালকা একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হতে যাবো শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। অগত্যা কোথাও যাবার চিন্তা বাদ দিয়ে হোটেলের লবিতে বসে বৃষ্টি উপভোগ করতে থাকলাম। খানিক বাদে বৃষ্টি কিছুটা ধরে এলো, এবার ছাতা মাথায় দিয়ে দু কপোত কপোতি বেড়িয়ে পড়লাম রাতের খাবার আর চকলেট কেনার জন্য। লংকাউই এলেন আর চকলেট কিনবেন না তাকি হয়। এখান থেকে আপনি খুব কম দামে চকোলেট কিনে নিতে পারেন আর কোথাও এতো বিশাল সংগ্রহ নাও পেতে পারেন। তবে কুয়াহ এলাকায় এইচআইজি ও আজিক সহ কয়েকটা দোকান আছে যেখানে সবচেয়ে কম দামে পাবেন। রাতের খাবার আর বেশ কিছু চকলেট কিনে ফিরে চললাম হোটেলে। ঘুমাবো, সত্যিই আর পারছিলাম না চলতে ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল।

ভোর হল নতুন সূর্য নিয়ে আমাদেরও ফিরে যেতে হবে। হোটেল ছেড়ে চললাম আবার বিমানে চড়তে, ফিরে যাবো কুয়ালালামপুর। লংকাউই’এর রাস্তাগুলো খুব সুন্দর দুপাশ জুড়ে সবুজ আর সবুজ। পরিপাটি করে সাজানো সবকিছু। আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলাম নির্ধারিত সময়ে চলে এলাম বিমানবন্দরে।

চলবে।

শেষপর্ব - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×