somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন হুমায়ুন আহমেদ

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার খুব মনে আছে যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, প্রথম প্রেমে পড়লাম। খুব সিরিয়াস প্রেম। না খেয়ে না দেয়ে, খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়ে বন্ধুদের সাথে সময় না কাটিয়ে চুটিয়ে প্রেম করতে থাকলাম। সে কি মোহ, সে কি প্রেম, কি যে ভালো লাগার অনুভূতি, শিহরিত হতেও শিখে গেলাম। স্বপ্ন দেখতে শিখলাম সেই প্রথম। আগেও হয়ত দেখতাম। গাড়ি চালাবো, স্পাইডার ম্যান হবো, আরো কত মজার স্বপ্ন। কিন্তু সেই প্রথম প্রেমে পড়ার পর শুরু হলো সত্যিকারের স্বপ্ন দেখা। প্রকৃতিকে নতুন ভাবে বুঝতে শিখলাম, নানান রঙের পার্থক্য ধরতে পারছিলাম, কষ্ট বা সুখ কেমন হয় ধারনা পাচ্ছিলাম। কিভাবে অবাক হতে হয় বা করতে হয় তারও একটা ধারনা রপ্ত করতে পারলাম। সত্যিকারের প্রেমে পড়লে যা হয় আর কি?

হুম আমি আমার সত্যিকারের প্রেমের কথাই বলছিলাম, একজন মানুষ যার লেখা পড়ে জীবন কি জিনিস বুঝতে শিখলাম, ভালোবাসা চিনলাম, রহস্যময়তা আবিষ্কার করলাম, বৃষ্টিতে ভেজাও যে একটা বিষয় তাও জানলাম। পাগলামী করতে জানলাম। লেখার জাদু যে কি সেই প্রথম টের পেলাম।



স্যার হুমায়ুন আহমেদ আজ আর নেই কিন্তু রেখে গেছেন অনেকগুলো পাগল হিমু, রুপা, মাজেদা খালা, শুভ্র, রুমালী আর মিসির আলিকে। খেয়াল করে দেখলাম এই চরিত্রগুলো আমাদেরই এক একটা স্বত্বা। প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্রই কোন না কোন ভাবে আমাদের মাঝে ভর করে খুবই অল্প সময়ের জন্য হলেও। হুমায়ুন স্যারের লেখাই ছিল আমার প্রথম প্রেম। আমি জানি আমার মত প্রায় প্রত্যেকটা ছেলে মেয়েই তখন তাঁর প্রেমে পরেছিল তাঁর লেখা পড়ার পর। লুকিয়ে চুড়িয়ে কেউ কেউ হয়ত হলুদ পাঞ্জাবীও বানিয়ে ফেলেছিল। আর নীল রঙের তো মনে হয় জন্মই হল তখন থেকে। একবারের জন্য হলেও বৃষ্টিতে ভিজে চা খাবার লোভটা কেউ না কেউ অন্তত সামলাতে পারেনি।

সে সময় আমাদের একটা ঐতিহ্য চালু হলো ঘটা করে জন্মদিন পালন করার। জন্মদিন পালন করার উদ্দেশ্য ছিল উপহার, আর উপহার হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে হুমায়ুন আহমেদ 'র বই। এমন করে আমরা অনেকগুলো বই জমিয়েছিলাম। আমার মনে আছে আমি অনেকটা পথ হেঁটে চলে গেছি এক বন্ধুর বাসায় একটা নতুন বই আছে শুনে।

একবার খুব ইচ্ছে হলো হলুদ রঙের পাঞ্জাবী বানাবো তারপর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটবো। কিন্তু সাহসে কুলায় নাই তাই করাও হয়ে উঠেনি। আমার এক বন্ধু চেষ্টা করেছিল, সাহস আর পাঞ্জাবী দুটোই নিয়ে হেঁটেও ছিল কিন্তু ফলাফল হলো পুলিশের জেরার মুখে পরতে হয়েছিল।

একবার প্রাইভেট পড়ার টাকা দিয়ে বই কিনে ফেললাম কোন কিছু চিন্তা না করে। কিন্তু যখন স্যারকে টাকা দেবার সময় হলো তখন পড়লাম বিপদে। সেই সময় রুপার মতই আমার এক বন্ধু আমাকে টাকা দিয়ে বাঁচিয়েছিল। আজও তার সেই টাকা শোধ দেয়া হয়নি। এবার দিয়ে দিবো বন্ধু আবার দেখা হলে।

এমন হাজারটা লাইন লেখা যাবে স্যারকে নিয়ে পাতার পর পাতা স্মৃতি জমা হয়ে আছে। লিখে শেষ করা যাবেনা। ভালোবাসি আপনাকে স্যার, হয়ত দেখে গেছেন হয়ত দেখছেন কত মানুষ আপনাকে আজও বুকের কতটা গভীরে রেখেছে যে প্রতিনিয়ত মনে করছে।

শেষ করছি স্যারের কিছু লেখা দিয়েঃ

১। চাঁদের বিশালতা মানুষের মাঝেও আছে, চাঁদ এক জীবনে বারবার ফিরে আসে...ঠিক তেমন মানুষ প্রিয় বা অপ্রিয় যেই হোক,একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসে..

২। ভালবাসাবাসির ব্যাপারটা হাততালির মতো। দুটা হাত লাগে। এক হাতে তালি বাজে না। অর্থাৎ একজনের ভালবাসায় হয় না......

৩। হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফিরে আসলে সে আর আগের মত থাকে না….. কেমন জানি অচেনা অজানা হয়ে যায় । সবই হয়তো ঠিক থাকে কিন্তু কি যেন নাই…… কি যেন নাই……

৪। আমার হারিয়ে ফেলার কেউ নেই । কাজেই খুঁজে পাওয়ারও কেউ নেই । আমি মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি , আবার খুঁজে পাই..

৫। "যে স্বপ্ন দেখতে জানে ,সে তা পূর্ণও করতে পারে" আমরা মনে হয় স্বপ্ন দেখাই ভুলে গেছি...আর যেটুকুই বা দেখি তা নিজেরাই বিশ্বাস করতে চাই না...তাই পূর্ণও করতে পারি না।

৬। নারীদেরকে সৃষ্টিকর্তা পূর্ণতা দিয়েই পাঠিয়েছেন । শুধু পূর্ণতাই না অতিরিক্ত দিয়ে দিয়েছেন। তাই তো আমরা ‘অপূর্ণ পুরুষ’ পূর্ণ হতে এই নারীদেরই প্রয়োজন হয়.

৭। তুমি দশটি সত্য এর মাঝে একটি মিথ্যা মিশিয়ে দাও…সেই মিথ্যাটিও সত্য হয়ে যাবে…কিন্তু তুমি দশটি মিথ্যার মাঝে একটি সত্য মিশাও… সত্য সত্যই থেকে যাবে….সেটি আর মিথ্যা হবে না…সত্য আসলেই সুন্দর…

৮। নোংরা কথা শুনতে নিষিদ্ধ আনন্দ আছে, কথা যত নোংরা তত মজা।

৯। যাদের জীবনে মজার অংশ কম …তারা অন্যের মজা দেখে আনন্দ পায় …দুধের স্বাদ ভাতের মাড়ে মেটানোর মত.

১০। “গার্লফ্রেন্ড বিহীন তরুনের পৃথিবীতে বেঁচে থাকা, ঘাসবিহীন মাঠে গরুর পায়চারির মত”

১১। জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর! এতো বেশি সুন্দর যে, মাঝে মাঝে অসহ্য লাগে।

১২। ছেলে এবং মেয়ে বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তারা অবশ্যই একে অপরের প্রেমে পড়বে। হয়ত খুবই অল্প সময়ের জন্য, অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য।

১৩। "পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নাই।"

১৪। এ জগতে সবচে' সুখী হচ্ছে সে, যে কিছুই জানে না। জগতের প্যাঁচ বেশি বুঝলেই জীবন জটিল হয়ে যায়.

১৫। অনুশোচনার হাড়ি নিয়ে বসলেও অতীতকে বদলানো যাবে না

১৬। সবাই তোমাকে কষ্ট দিবে, তোমাকে শুধু এমন একজন কে খুঁজে নিতে হবে যার দেয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে....

১৭। যে মানুষটিকে তুমি দেখছো তাকেই যদি ভালো না বাসতে পারো, তবে তুমি কিভাবে ঈশ্বরকে ভালোবাসবে যাকে তুমি কোনদিন দেখোই নি?

১৮। স্বপ্ন থাকা খুবই জরুরি...স্বপ্ন না থাকলে ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠার কোনো মানেই হয় না...সারা জীবন শুয়ে থাকলেই তো হয়...

১৯। মানুষই একমাত্র প্রাণী যে পুরোপুরি সফল জীবনযাপন করে আফসোস নিয়ে মৃতবরণ করে.
আজকের এই দিনে আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন স্যারের জন্য। স্যার অনেক অনেক শুভ জন্মদিন, ভালো থাকবেন যেখানেই থাকুন।

ছবি সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×