মানব দেহের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ক্ষত শুকায় মুখের চামড়া। সকালে কোন কারণে যদি চামড়া উঠে যায় বা ঘা হয় দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তা শুকিয়ে যায়। তার মানে মুখের ঘা বা ক্ষত ক্ষণস্থায়ী এবং দ্রুত সাড়ে এটা বলা যায়। এবার যদি আমরা আমাদের বিবেক টাকেও একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেই তাহলে মনে হয় একটু আগের দেয়া তথ্যটি ভুল প্রমানিত হবে। ঘা শুকানোর গতির দৌড়ে মুখও হেরে যাবে বিবেকের কাছে। আমাদের বিবেক এতো বেশি ক্ষত সহ্য করার মত যে মুহূর্তেই তা শুকিয়ে গিয়ে বেমালুম উধাও হয়ে যায়। ইদানিং এক একটা ঘটনা ঘটছে আর সমাজের বুকে বারবার দগদগে ঘা এঁকে দিচ্ছে, এই ঘা আবার যেনতেন ঘা না ভয়ংকর ঘা। কিন্তু যতই ভয়ঙ্কর হউকনা কেন দিন গড়াতে না গড়াতেই সেই ঘা আবার কেমন করে জানি মুছেও যাচ্ছে।
প্রায় প্রতিদিন এক একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে, আমরা সোশাল মিডিয়া আর পত্র পত্রিকার কল্যাণে জানতে পারছি। এরপর মুহূর্তের মধ্যে আমাদের বিবেক ক্ষানিক জাগ্রত হচ্ছে আর যথারীতি কলমের খোঁচায় টুকটাক নড়েও উঠছে, মিছিল মিটিং, মানব্বন্ধন, টকশো কতো কি। কিন্তু তা খুব অল্প সময়ের জন্য, যেন বিবেকের হাতে অনেক কাজ, এতো দেখার সময় কই? কারন একটু পরই তো আরেকটা ঘটনা সামলাতে হবে, বিবেককে তৈরি করতে হবে নতুন ঘা সামলানোর জন্য। টকশো ওয়ালারা মনেহয় স্ক্রিপ্ট লিখারও সময় পায়না নতুন ইস্যু এসে ভীর করে। টিভি চ্যানেলগুলোর ব্রেকিং নিউজের স্ক্রলিংএ এখন আর চোখ আটকায় না। বড্ড সয়ে গেছে, ব্রেকিং নিউজই হয়ে গেছে এখন রোজকার সাধারন খবর।
আমাদের বিবেক, মন, মনুষত্ত বড্ড বেহায়া, বড্ড সহনশীল। না হয় দেখেন না ঐ যে ম্যনহোলে পড়ে একটা ছোট্ট ছেলে মারা গেলো, রানা প্লাজার মানুষগুলো, রোজ রোজ রাজপথে থেতলে যাওয়া মানুষগুলো, পুরুষের নির্লজ্জ অঙ্গের খোচায় বিদ্ধ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধা নারী, কুপিয়ে মারা এক একটা আত্নার আহাজারি, অত্যাচারিত সংখ্যালগুরা, সাওতালের খোলা আকাশের নিচে সুপার মুন দেখা এইসব পেরেছে আপনার আমার ওই বিবেক, মন বা মনুষত্ত কোনটাকেই এতোটুকু নাড়াতে?
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, ধরে নেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এ যুগের সবচেয়ে বড় বর্ণবাদী কিন্তু আপনি আমি বা যারা লিখছি এই লোকের বিরুদ্ধে, তার ভুল খুঁজে বের করছি চুলচেরা বিশ্লেষণে তারা কি একবার নিজের বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আমি বর্ণবাদী না? স্কুল, কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে কালো মেয়েটার থেকে সুন্দর বর্ণের মেয়েটার কাছকাছি থাকতেই পচ্ছন্দ করি আমরা। পাশাপাশি চায়ের দোকান অনেকগুলো থাকলে আগে তাকিয়ে দেখি কোন দোকানীর চেহারা ভালো, বাসে উঠে কয়েকটা সিট খালি পেলে আগে খুঁজে দেখি কোনটা অপেক্ষাকৃত কম ময়লা, বিয়ের পাত্রী খুজতে গেলে কালো মেয়েটা যত তাড়াতাড়ি রিজেক্ট করেন সাদা মেয়েটাকে রিজেক্ট করতে কি একটুও কষ্ট হয়না? অতএব ভাই এর ওর দোষ খোজার আগে নিজের শরীরের গন্ধ তাড়ানোটা আশু কর্তব্য।
এই যে আমি লিখছি কি হবে? আমারও বিবেক ক্ষনিকের জন্য নড়ে উঠে আর টুকটাক লিখি তাতে কার কি যায় আসে? আমিও বা কি করতে পারলাম? বড় বড় বুলি আওড়ানো ছাড়া? আশা করি না তবুও যদি মানবতার কোনদিন জয় হয় তবে তা কাকতাল ব্যতিত কিছুই হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৪