somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল ট্যুর টু সংসদ ভবন ( ৫ মিনিটের প্যাকেজ ট্যুর)

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নির্বাচন তো শেষ।এবার সসদ অধিবেশনের পালা।আমাদের দেশ পরিচালক গন কিছুদিনের মধ্যে শুরু করবেন সংসদ অধিবেশন, আসুন তার আগে আমরাই একটু ঘুরে আসি।আচ্ছা,যাবার আগে আল্প একটু ইতিহাস জেনে নেয়া যাক।
আমাদের সংসদ ভবন শুধু আমাদের রাজ কার্যালয় নয়,বিশ্বের বিখ্যাত স্হাপত্য শিল্পকর্ম গুলোর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন।মূলত তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সময় পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মানের পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে এর নকশা ও পরিকল্পনার দায়িত্ব দেয়া হ্য় বাংলাদেশের স্হাপনাশিল্পের প্রবাদ পুরুষ মাজহারুল ইসলাম কে। নিঃসন্দেহে একজন স্হপতির জন্য এটি একটি লোভনীয় প্রস্তাব।কিন্তু তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করেন।ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়,ররং দেশকে এগিয়ে নেবার দিকে দৃষ্টিপাত করেন।তাঁর মতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভবন টির নকশাটি আসা উচিত সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তির হাত হয়ে যে হাতের স্পর্শে এ ভবনে প্রান প্রতিষ্ঠা হবে,বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আধুনিকতার দিকে একধাপ। প্রস্তাব করেন স্হাপত্য জগতের কিংবদন্তি পুরুষ মার্কিন স্হপতি লুই আই কান কে এর দায়িত্ব অর্পন করার জন্য।

লুই আই কান এর নকশা ও পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন ১৯৬১ সালে।তার ।এর নকশা শুরুর আগে বাংলার আবহাওয়া, বাঙ্গালীর জীবন যাপন প্রনালী,সংস্কৃতি - সকল বিষয় অনুধাবনের জন্য তিনি বেশ কিছুকাল এদেশে বসবাস করেন। অতপর তিনি মূল কাজ শুরু করেন।মূল ভবন্,মূল ভবন ঘিরে অবস্থিত কৃত্রিম হ্রদ, দুটি বাগান, এম পি হোষ্টেল সহ সম্পূর্ন কমপ্লেক্স টির নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে।ধরা হয় এটি লুই আই কানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ।অবশ্য লুই আই কান এর স ম্পুর্ন রূপ টি দেখে যেতে পারেন নি। বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে নিউ ইয়র্কের প্যানসেলভেনিয়ার এক স্টেশনে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।তাঁর এই স্থাপনার স্থাপত্য দর্শনের মূলে ছিল স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা, প্রকৃতির বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা ।ভবনটিতে আলোর নান্দনিকতা ও সর্বোচ্চ ব্যবহার লুই কানের স্থাপত্য ক্ষমতার নিদর্শন বহন করে।

লুই আই কান তার যে কীর্তি দেখতে পারেন নি,চলুন আমরা দেখে আসি।আমরা বাইরের যে দেয়াল টি দেখতে পাই,সেটা আসলে সম্পূর্ন ভবন টিকে ঘিরে একটি আলাদা খোলশ।এর গায়ে রয়েছে বড় বড় ত্রিভূজাকৃতি ও বৃত্তাকার ফাকা অংশ।এ রকম খোলশ তৈরীতে প্রথমত কমপ্লেক্স এর উচ্চতা আপাত দৃষ্টিতে কম মনে হয় দ্বিতীয়ত, ভেতরের দেয়াল গুলো আতিরিক্ত তেতে উঠা রোধ করে।জ্যামিতিক ফাকা অংশগুলো মূল ভবনে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের চলাচল নিশ্চিন্ত করে।সব দেয়ালগুলো তৈরীতে মূলত কংক্রীট আর কিছু বিশেষ স্হানে মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। রং ও বর্নের প্রলেপ সযত্নে পরিহার করে মূল উপকরন গুলোর স্বরূপে প্রকাশ যেন স্বচ্ছতার ই এক অন্য রূপ।

এবার যাই মূল ভবনটি তে।মূল ভবনটি নয়টি পৃথক ব্লক দিয়ে তৈরী: মাঝের অষ্টভূজ ব্লকটির উচ্চতা ১৫৫ ফুট এবং বাকি আটটি ব্লকের উচ্চতা ১১০ ফুট। প্রতিটি ব্লকের জায়গাকে বিভিন্ন কাজের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে। করিডোর, লিফট, সিড়ি ও বৃত্তাকার পথ দিয়ে আনুভূমিক ও উলম্বিকভাবে ব্লকগুলোর মাঝে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পুরো ভবনটির নকশা এমনভাবে প্রনয়ন করা হয়েছে যাতে সব ব্লকগুলোর সমন্বয়ে একটি ব্লকের অভিন্ন স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যায়।ঠিক মাঝখানের মূল অষ্টভূজাক্রতি অংশটি হচ্ছে সংসদ অধিবেশন কক্ষ। এর ছাদটি যেন স্বচ্ছ একটি ছাতার মত।এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে দিনের আলো এতে প্রবেশ করতে পারে, সূর্যের আলো চারদিকের ঘেরা দেয়াল ও অষ্টভূজকৃতির দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে অধিবেশন কক্ষ প্রবেশ করে।কৃত্রিম আলোর উৎস এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে যে সূর্যের আলোর প্রবেশের ক্ষেত্রে তা কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারে না।

বেশী ভেতরে আর যাবনা। চলুন একটু ভবনের বাইরে ঘুরে দেখি।সম্পূর্ন ভবনটিকে এক টি কৃত্রিম জলাধারে বসানো হয়েছে,এতে চারিদিক থেকে এর দূরত্ব তৈরী হয়েছে।যেন এক নিরাপত্তা বেষ্টনী।আর স্হির জলাধার মনকেও করে প্রশান্ত। সামনের বড় প্লাজাটি যেন সাধারন মানুষের জন্য একটি উম্মুক্ত প্রান্ত হতে পারে,সাথে নিরাপত্তার সমস্যা না হয়,সেদিকে লক্ষ্য রেখে তাই মূল ভবন টি থেকে এর সংযোগটি সংকীর্ন করা হয়েছে।সম্মুখে পাম ও বকুল গাছের সারি,দুপাশে রাধাচুড়া,দেবদারু আর পিছনে কৃষ্ণচূড়ার বিন্যাস এর সব ও মূল নকশার ই অংশ।
আমরা পাম ও বকুল গাছ দেখতে দেখতে চলে এসেছি মানিক মিয়া এভিনিউতে।তাহলে এখানেই আজ আমাদের ভ্রমন শেষ করতে হচ্ছে যে!ছোট্ট ভ্রমন টি তে সাথে থাকার জন্য আপনাদের শুভেচ্ছা।আবার দেখা হবে অন্য কোথাও।সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×