ছেলেটি ভয়ানক বাউন্ডুলে ছিল, আড্ডাবাজিকেই সে তাহার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করিত। অলক্ষুনে এই লক্ষ্য হইতে ছেলেকে ফেরাইতে বাবা মা অনেক চেষ্টাই করিয়াছে। কিন্তু তাহাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হইয়াছে। কোন ভাবেই কোন কিছু হইতেছে না দেখিয়া প্রতিবেশীদের পরামর্শে শেষ চেষ্টা হিসাবে বাবা-মা তাঁহাকে একটা বিয়া করাইয়া দেয়ার সিদ্যান্ত নিল এবং সেটা সম্পন্য করিল।
বাসর সন্ধায় বাসর ঘরে ঢুকিবার আগে বউয়ের সাথে ভাল ব্যবহার ও এতদসংক্রান্ত নানা উপদেশ ছেলেটিকে দেওয়া হইলো। কিন্তু ছেলেটি প্রতিদিনকার মতো সব উপদেশ দরজার বাহিরে রাখিয়া ঘরে ঢুকিয়া একটা সিগারেট ধরাইলো। তারপর মেয়েটিকে পাশকাটিয়া বিছানায় জানালার পাশটিতে শুইয়া সিগারেট টানিতে লাগিল। সিগারেট টানিতে টানিতে তাহার যে বিয়া করিবার একদম ইচ্ছা ছিলনা,বাবা-মায়ের মন রক্ষা করিতেই কেবল বিয়েটা করিয়াছে এই কথাটি নববধুকে জানাইয়া দিল। নববধুটিকে এও জানাইয়া দিল যে হাতের সিগারেটটিই তাহার সব। ইহাকে ছাড়া তাহার একবিন্দুও চলেনা এবং চলিবেওনা। তাই সেটা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা সে যেন কোন দিন না করে। সে বউ ছাড়িতে পারিবে কিন্তু সিগারেট ছাড়িতে পারিবেনা।
বাউন্ডুলে আরও কিছু বলিতে যাইতেছিল। কিন্তু তাহার কথা ছাপিয়ে কান্নার আওয়াজ,নাকটানার আওয়াজ কানে আসিলো। সে আওয়াজ শুনিয়া বুঝিলো ইহা তাহার মন গলানোর ফন্দি! তাই সে কর্কশ ভাষায় জানাইয়া দিল এই সব মায়া কান্না তাহার কাছে কোনদিন পাত্তা পাইবেনা, তাই এই সব অযথা করিয়া কোন লাভ নেই!! এই কথাতে নববধু কি পরিমাণ কষ্ট পাইতে পারে বোধকরি সেই বোধ বাউন্ডুলের ছিলনা। তাই উল্টা দিকে মুখ ফিরাইয়া সে ঘুমাইয়া পড়িলো। প্রায় দু-তিন ঘন্টা পর একপাশ থেকে অন্যপাশের ফেরার সময় নববধুর শরীরে বাধা পাইয়া তাহার ঘুম ভাঙিয়া গেলো। নববধুটিকে যেভাবে দেখিয়া সে ঘুমিয়েছিল এখনও ঠিক সেভাবে দেখিতে পাইলো। সে কিছুটা অবাক এবং কিছুটা বিরক্ত হইলো। তাহাকে এই উটকো ঝামেলায় ফেলানোর জন্য মা-বাবাকে মনে মনে গালিগালাজ করিতে করিতে বিছানা থেকে উঠিলো। আরও কিছু কর্কশ কথা শুনাইবার জন্য নববধুর সামনাসামনি বসিল এবং প্রথমবারের মতো বউটির মুখের দিকে তাঁকাইলো।
ছোটবেলায় সে অনেক পরীর গল্প শুনিয়াছে,অনেক জান্নাতি হুরের গল্প শুনিয়াছে। হুর-পরী সে দেখেনাই। কিন্তু কল্পনায় সে নিজের মতো করিয়া হুর-পরীর ছবি আকিয়াছে। যে মেয়েটি তাহার সামনে বসিয়া আছে তাহাকে তাহার কল্পনার সেই হুর-পরী বলিয়া মনে হইলো। পার্থক্য হইলো কল্পনার পরীদের ডানা ছিল বাস্তবের পরীটির ডানা নেই। আরেকটি পার্থক্য হইলো গল্পের হুরপরীরা কাঁদিতনা বরং মনুষ্য কূলের কান্না থামাইতো, কিন্তু সামনে বসা পরীটি কাঁদিতেছে। অঝোর নয়নে কাঁদিতেছে। কাঁদিতে কাঁদিতে চোখদুটি ফুলিয়া গিয়াছে। এই অবিরত কান্না দেখিয়া পরীটির প্রতি তাহার মায়া হইলো। প্রথম দেখাতে এত কঠিন কথা বলা উচিত হয়নাই এই বোধটি তার ভিতরে জাগিলো। তাই পরীর জলে ভেজা হাতটি ধরিয়া পরীর কাছে সে সরি বলিলো। পূর্বে বলা কঠিন কথা গুলো এবার নরম করিয়া বলিলো। সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারে তাহার সাথে একটা সমঝোতা করিলো। যেহেতু সিগারেটের প্রতি তাহার প্রবল দুর্বলতা আছে তাই পরী তাহাকে সিগারেট খাইতে নিষেধ করিতে পারিবেনা, আবার যেহেতু এটি পরীর পছন্দ না তাই পরীর সামনে সে সিগারেট খাইবেনা। নববধু শর্ত মানিয়া নিল এবং মুচকী হাসি দিয়া তাহাকে স্বাগত জানাইলো। অতঃপর দুজনেই বাকী রাতটুকু বেশ আনন্দেই কাটাইলো।
সঙ্গত কারণেই পরদিন তাদের সকালটা একটু দেরিতে হইলো। ঘুম হইতে উঠিয়া ফ্রেশ হইলো,নাস্তা সারিলো। নাস্তা সারিবার পরপর বাউন্ডুলের নিত্যনৈমিত্তিক কাজের কথা মনে পড়িলো। বাহিরে যাবার জন্য তাহার ভিতরটা ছটফট করিতে লাগিলো। কিন্তু নববধুর সম্মানার্থে ইচ্ছাটাকে দমন করিয়া দুপুরের খাবার সারিয়া বাহির হইলো। সারাটা বিকেল আড্ডাবাজি করিয়া রাত নয়টার দিকে বাড়ীর পথ হাঁটা ধরিলো। ফিরিতে ফিরিতে বউয়ের সাথে প্রতিজ্ঞার কথাটি মনে পড়িলো এবং রাস্তার ধারে দাড়াইয়া সিগারেটে শেষটান দিলো। সারাদিন বন্ধুবান্ধব আর রাতে সুন্দরী বধুর ভালবাসা! এদুইয়ের কম্বিনেশনে তাহার জীবন আরো সুখের হইবে এই ভাবনা ভাবিতে সে বাসায় ঢুকিলো। কিন্তু ঘরে ঢুকিয়াই সে বউয়ের অভিমানে ফোঁলা মুখ দেখিল। বউয়ের কাছে এই ফোঁলা মুখের কারণ জিঙ্গাসা করিলে জানিতে পারিলো সে এখন বিবাহিত,তাহার ঘরে বউ রহিয়াছে,সে কীভাবে বউকে রাখিয়া এতরাত পর্য্ন্ত বাহিরে থাকে? বউ বুঝি তাহার একেবারে পছন্দ হয়নাই! যদি পছন্দ নাই হইবে তবে সে কেন বিবাহ করিলো! কেনই বা একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করিলো! ! বউয়ের এহেন চরম সত্যকথাগুলো শুনিয়া ছেলেটির আবারও বোধোদয় হইলো। বধুর কাছে প্রতিজ্ঞা করিলো এহেন কর্ম সে আর কোনদিন করিবেনা, এখন থেকে সে সন্ধার আগেই ঘরে ফিরিয়া আসিবে।
ছেলেটি কথামতো কাজ করিলো। সে এখন সন্ধা হইতেই বাসায় ফিরিয়া আসে। সুখটানের সুখ বাহিরে রাখিয়া পরীর ভালবাসার সুখে নিমজ্জিত হয়। তাহাকে সুখে নিমজ্জিত রাখিয়া পরী কথাচ্ছলে নানা কথা বলে। সে যে পরীর জীবনের সব,তাহাকে ছাড়া যে পরী একমুহুর্ত কল্পনা করিতে পারেনা,সে না থাকিলে পরীর যেন মরণ হয় এমন আরও অনেক কথা সে পরীর কাছ থেকে শুনিতে পায়। শুনিয়া খুশিতে গদগদ হয়,এমন সুন্দরী বধুর গভির ভালবাসা উপলদ্ধি করিয়া বউয়ের চোখে চোখ রাখিয়া সেও একদিন বলিয়া ফেলেঃ-
-“আমিও তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অচল। তোমাকে যেন আমার কোনদিন হারাতে না হয়!!”
বউটি বোধকরি একথাটি শোনার জন্যই কয়েকদিন ধরিয়া অপেক্ষা করিতেছিল। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কথাটি ছেলেটির মুখ দিয়া বাহির হওয়াতে সে অভিমানে মুখ ফোলাইল!!
-“ছাই বাসো!! তুমি আমাকে একটুও ভালবাসনা!”
“কেন! তোমার কেন এমন মনে হয়??” বাউন্ডুলে অবাক হইয়া জিঙ্গেস করিল।
-তুমি যদি আমাকে সত্যি সত্যি ভালবাসিতে তবে ওই বাজে জিনিসটা প্রতিদিন খাইয়া ঘরে ঢুকিতে না! তুমি জান ওটা আমি একদম সহ্য করিতে পারিনা। ওটার গন্ধে আমার বমি আসে।
-ওটা কি??
-কি আবার? সিগারেট!!
কথাটি শুনিয়া ছেলেটি চটিয়া গেল। এটা ছাড়া তাহার পক্ষে সম্ভব নয় এই কথাটি পুনরায় জানাইয়া দিয়া মুখ ঘুরাইয়া নিল।
-“আমি জানতাম,তুমি একথাই বলবে! কারণ এটাই সত্য। তুমি আমাকে ভালবাসো না! তুমি ভালবাস তোমার সিগারেট কে!
কথাটি শেষ করিয়াই বধুটিও অন্যদিকে মুখ ফিরাইলো। ছেলেটি বধুর নাক টানার শব্দ পাইলো। নাকের কাছে হাত দিয়া ভেজা বালিশের স্পর্শ পাইলো। কিন্তু তবু সে নিজের অবস্থানে অনড় রইলো! একঘন্টা দুইঘন্টা করিয়া রাত পার হইলো,সারাদিন গিয়া সন্ধা নামিলো,কিন্তু নববধুর কান্না ও ফোলামুখে একবারের জন্যও হাসি ফুটিলোনা। ছেলেটির মায়া লাগিলো। আর কতক কষ্ট দেয়া যায় এই অবলা মেয়েটিকে? সিগারেট ছাড়িতে তাহার কষ্ট হইবে ঠিকই সেটা নিশ্চয় এতবেশী নয় যে সারাদিন রাত ব্যাপিয়া কাঁদিতে হইবে! যে এতটা সময় ধরিয়া কাঁদিতে পারে তাহার কষ্ট নিশ্চয় সিগারেট ছাড়ার কষ্ট হইতে অনেক বেশী। তাই সে ভালবাসার মানুষটির ভালোর কথা ভাবিয়া সিগারেট ছাড়িয়া দেয়ার সিদ্যান্ত নিল। বউ খুশি হইলো, বউয়ের মুখে হাসি ফুটিলো।
ছেলেটি এখন সন্ধা হইতেই বাড়ী ফেরে,ছেলেটি সিগারেট খায়না। তবে ছেলেটি উচ্চশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও এখনও বাপের হোটেলে খায়। এটাও মেয়েটির পছন্দ না। তাই সুযোগ বুঝিয়া মেয়েটি আবারও অভিমানে ঠোট ফোলায়। ছেলেটিকে একটি চাকুরী করার জন্য চাপ দেয়। বাপ-চাচার জোরের বৌদলতে খুব সহজে তাহার একটা চাকুরী হইয়া যায়। সে এখন আর সারাদিন চায়ের দোকানে,খেলার মাঠে অথবা বন্ধুর রুমে বসিয়া কার্ড খেলিয়া কাটায়না। দশটা পাঁচটা অফিস করে। কিন্তু সারাজীবনের অভ্যাস,আত্ত্বার বন্ধনে আবদ্ধ বন্ধুগুলিকে সে ছাড়িতে পারেনা। সারাদিন অফিসে থাকা অবস্থায় তাহার ভিতরটা ছটফট করে বন্ধুদের জন্য। তাই সে অফিস শেষে ক্যাম্পাসে চলিয়া আসে। বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাইয়া সন্ধায় বাসায় ফিরে। বাকীটা সময় বউয়ের সাথে টিভি দেখিয়া গল্প করিয়া কাটায়। সবকিছু নিয়ে সে সুখী হইলেও বউকে সুখী মনে হয়না। বউয়ের ভিতর সে কি যেন অপূর্ণতা দেখে। অভিমানি মেয়েটি একদিন বলিয়াই ফেলেঃ-
-সারাদিন তোমায় দেখিনা। অফিস শেষে তোমাকে কোথায় আমি প্রথম দেখবো তাহা না তুমি দেখা দাও তোমার বন্ধুদেরকে! আর বন্ধুদেরকে সময় দিতে যাইয়া যেখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করো, ঘোরাঘুরি করিয়া দিন দিন কাল হইয়া যাইতেছো, নিজের দিকে একদমে খেয়াল রাখিতেছো না!
একদমে এতগুলো অভিযোগ শুনিয়া বাউন্ডুলে কিছুটা অবাক হয়। বুঝিতে পারে ইহা বিকালের আড্ডা ছাড়ানোর পায়তারা। প্রসঙ্গ যাতে উত্তপ্ত না হয় তাই নিজের রাগ সংবরন করিয়া হাসি হাসি মুখে বলেঃ-
-“কই কালো হইছি? আমি ঠিকই আছি। তাছাড়া আমি যেখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করিনা। একটা জায়গায় বসিয়া বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব করিয়া বাসায় ফিরিয়া আসি।”
কিন্তু ছেলেটির কোন কথাই বধুটির কানে যায়না। সে বাউন্ডুলের হাতদুটো ধরিয়া আকুলি-বিকুলি করিয়া বলিতে থাকেঃ-
-“তুমি অসু্স্থ হইয়া গেলে আমি কাকে নিয়া বাঁচবো,আমার কি হইবে? প্লিজ তুমি এমনটি করোনা!!
-“আরে বাবা শুধু শুধু পাগলামি করিতেছো, আমার কিচ্ছু হইবেনা।” কিছুটা বিরক্তির স্বরে বাউন্ডুলে বলে।
বাউন্ডুলের বিরক্তি টেরপাইয়া বউটি কাঁদিয়া ফেলে এবং হরবর করিয়া আরো অনেক গুলি কথা বলিয়া দেয়। কথাগুলোর সারমর্ম পুরোনো কথার মতোই:- মেয়েটি বাউন্ডুলেকে জীবন দিয়া ভালবাসে কিন্তু বাউন্ডুলে তাঁহাকে একবিন্দুও ভালবাসেনা তাই তাহার কথার কোন পাত্তাই দেয়না।
বাউন্ডুলে বিরক্ত হয়। বউয়ের উদ্ভট যুক্তি সে কিছুতেই মানিয়া নিতে পারেনা। কিন্তু এখন এমন অবস্থা হইয়াছে যে বধুটির কান্না সে একদম দেখিতে পারেনা। বউটির চোখের জল তার হৃদয়ে রক্তক্ষরন ঘটায় । বুকের ভিতর অজানা ব্যাথার সৃষ্টি করে। না পারে মানিতে না পারে সইতে। তাছাড়া তাহাদের সংসারে একজন নতুন মানুষ আসার সম্ভাবনা উকিঝুকি দিতাছে। এই সময় বউকে কড়া কথা শুনানো ঠিক না তাই বউকে দু-একবার রাগ দেখাইতে যাইয়া,কড়া খতা শুনাইতে যাইয়াও চুপ হইয়া যায়। অনেকক্ষন এদিক-সেদিক চিন্তা করিয়া সংসারে সুখের আশায়,সুন্দরী বধুর হাসিমাখা মুখ দেখিবার আশায় সে বউয়ের এই কথাটিও মানিয়া নেয়। দীর্ঘদিনের বন্ধু সঙ্গ ত্যাগ করিবার মনঃস্থির করে।
ইতোমধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটিয়াছে। বধুটি দীঘদিনের চেষ্টায় বাউন্ডুলেকে বুঝাইতে সমর্থ হইয়াছে যে বর্তমানে যৌথফ্যামিলি প্রথা একেবারে অচল। মা-বাবা,ভাইবোনের সাথে থাকিলে স্বতন্ত্রতা নষ্ট হয়, প্রাইভেসি থাকেনা। ভালবাসাবাসি বা খুনসুটির কোনটিই করা যায়না। তাই তারা যদি আলাদা সংসার করে তবে সুখে শান্তিতে ভালবাসায় পরিপূর্ণ হইয়া সংসার করিতে পারিবে। তাই বাউন্ডুলে বউয়ের কথামতো দীর্ঘদিনের বাবা-মা সঙ্গ ছাড়িয়া বাউন্ডুলে আলাদা বাসা নিয়াছে সেও প্রায় একমাস হইলো।
এভাবে একে একে বাউন্ডুলে বউয়ের সব চাওয়ায় পূর্ণ করিয়াছে। বধুটির এখন আর কোন চাওয়াই অপূর্ণ নাই। যেহেতু বউয়ের সব চাওয়া পূর্ণ্ করিয়াছে এখন কেবল তার চাওয়াগুলোই বাকি রহিয়াছে। তার চাওয়া খুব ছোট:- “বউয়ের হাসিমাখা মুখ, বউয়ের নির্ঝঞ্জাট অফুরান ভালবাসা সর্বোপরি একটা হাসিখুশি সুখের জীবন! কিন্তু কেন জানি দিনে দিনে তাহার মনে হইতে থাকে তাহার চাওয়াগুলো কোনদিন পুরণ হবার নয়। প্রথম প্রথম কিছুদিন বাউন্ডুলে অফিস থেকে ফিরিয়া আসিলে বউ তাহার কথামতো কাজ করিয়াছে। বউ দু কাপ চা নিয়া এককাপ তাঁহাকে দিয়া এককাপ নিজ হাতে নিয়া পাশে বসিত, হাসিমুখে কথা বলিতো, ক্ষনে ক্ষেন আবেগে জড়াইয়াও ধরিতো। তাই সবকিছু ছাড়িলেও বউয়ের ভালবাসা পাওয়ায় বাউন্ডুলে নিজেকে স্বান্তনা দিতেছিলো এবং সুখী ভাবতে শুরু করিয়াছিল। কিন্তু কিছুদিন যাইতে না যাইতেই বউটির অন্যরুপ তাহার কাছে ধরা দিতে লাগিল। বউটি এখন আর অফিস থেকে আসিলে আগের মতো ছুটিয়া আসেনা, নাস্তা নিয়া দাড়াইয়া থাকেনা। বাউন্ডুলে নিজে নিজে গোসল সারিয়া ফ্রেশ হইয়া টিভির রিমুট হাতে নিয়া বসিতে না বসিতেই বউ বাজারের লিস্ট ধরাইয়া দেয়। বাউন্ডুলে রিমোট ফালাইয়া বাজারে যায়, বাজার নিয়া ফিরিয়া আসিয়া আবার রিমোট হাতে নেয়,বউয়ের অপেক্ষা করে। বউ আসে, সাথে আসে পেঁয়াজ,মরিচ,ছুরি বাটি। এসেই বউ গর্জন দেয়ঃ-
“সারাক্ষন কি এতো টিভি দেখো? আমাকে একটু সাহায্য করতে পারোনা? আমি খাইটা মরি আর সে মনের সুখে টিভি দেখে!....................!!
বাউন্ডুলে ছুরি হাতে নেয়, একবার বউয়ের দিকে তাঁকায়,একবার পেঁয়াজের দিকে তাঁকায়।বউ আবার গর্জন দেয়ঃ-
-হা করে দেখিেতছো কি? পেঁয়াজ কাটো!আমি রান্না করিবো নাকি পেয়াজ-মরিচ কাঁটিবো ??.....!!
বাউন্ডুলে পেঁয়াজ কাটে, পেয়াজের ঝাঝে চোখে পানি আসে। যে হাতে বউয়ের চোখের পানি সে মুছিতো সেই হাতে এখন নিজের চোখের পানি মুছে। মুছিতে মুছিতে বউয়ের চোখের দিকে তাঁকিয়ে পানি খোজে। কিন্তু বউয়ের চোখে পানি নেই!! বোধকরি বউয়ের চোখের সব পানি শেষ হইয়া গিয়াছে এখন কেবল তাহার চোখেরটা বাকী রহিয়াছে………..!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:২১