somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তি!!

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‌বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের এক ছোট ভাই,মাস্টার্সে পড়ে, আমার জেলায়ই বাড়ী। একদিন ফোন দিয়ে বল‌লো, "ভাই, এক হাজার টাকা দি‌তে পার‌বেন? আগামী মা‌সে টিউশ‌নির বেতন পে‌য়ে দি‌য়ে দি‌বো।"
আ‌মি বললাম, “পারবো, এ‌সে নি‌য়ে যেও”।
‌ছোটভাই সেদিন বিকালে বাসার কাছে এসে টাকা নি‌য়ে গেল। আমি সরকারী চাকরী ক‌রি, মাস শে‌ষে বেতন একাউন্টে ক্রে‌ডিট হ‌তে দে‌খি কিন্তু প‌কেটে ঢুকা‌তে পারিনা, তার আ‌গেই এ ‌দেনা ,‌সে‌ দেনা দি‌তে দি‌তেই শেষ। তাই কেউ টাকা চাই‌লে কেবল লজ্জাই দেই, টাকা দি‌তে পা‌রিনা।
এবার বাসা ভাড়ার টাকাটা তখনও না দেওয়ায় দি‌তে পারলাম। যা‌হোক মা‌স শে‌ষে আ‌মি ছোটভাই‌য়ের আসার অ‌পেক্ষা কর‌তে থা‌কি, টাকাটার আশা করতে থাকি। কিন্তু এক সপ্তাহ চ‌লে গেলেও ছোট ভাই এলোনা। প‌রের সপ্তা‌হেরও ক‌য়েক‌দিন চ‌লে গেল, ছোট ভাই এলোনা। অ‌পেক্ষা কর‌তে করতে একসময় ভু‌লে গেলাম টাকাটার কথা। ধ‌রে নিলাম এমা‌সে হয়‌তো আস‌বেনা। প‌রের সপ্তা‌হের শে‌ষের দি‌কে ছোট ভাই ফোন দিলঃ- “ভাই, কেমন আ‌ছেন?”
-‌জি,‌ভাল, তু‌মি!
-“ আ‌ছি মোটামু‌টি। ভাই, দুইটা সার্কুলার দি‌ছে, হা‌তে কোন টাকা নাই, এপ্লাই কর‌তে পার‌তে‌ছি না। আপ‌নি য‌দি কিছু টাকা দেন তবে সাম‌নের মা‌সে আ‌গের এক হাজার সহ এ টাকাটা দি‌য়ে দিব।”

বুঝলাম ছোটভাইয়ের না আসার কারণ। ছোট ভাইকে বললামঃ-

- “কত টাকা লাগবে তোমার?
-ভাই, পাঁচশ হ‌লেই হ‌বে।
-‌ঠিক আ‌ছে, এ‌সে নি‌য়ে যেও।
‌ছোট ভাই এসে টাকা নি‌য়ে গেল। প‌রের মা‌সে প্রথম মা‌সের ম‌তো অ‌পেক্ষা না কর‌লেও ছোট ভাই সপ্তা‌হের শুরুর দি‌কেই আমাকে ফোন দিলঃ
-“ভাই, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই”

ধ‌রে নিলাম সে আমার টাকা দিতে আসছে। আমি বললাম-

“কখন আসবা?”

-“আপনি যখন বলেন।”

-ঠিক আছে, তাহলে এখনই অফিসে চলে আসো।

-না ভাই, অফিসে না, আমি পান্থপথে আপনার বাসার আশেপাশে আসবো, আপনি কখন বের হতে পারবেন?

- ঠিক আছে, সন্ধা সাতটার দিকে আসো।

ছোট ভাই আসলো, একটি চায়ের দোকানে বসলাম। ছোটভাইকে বেশ বিষন্ন মনে হলো। আ‌মি জি‌ঙ্গেস করলামঃ

-কি ব্যাপার? কি হইছে তোমার?

“ভাই কি করুম বুঝতেছিনা। মাসে তিন চারটা চাকরীর এপ্লাই করতে হয়। গত মাসে দুইটা টিউশনি ছিল,এমাসে একটা চলে গেছে এখন একটা আছে, এক টিউশনির টাকায় না পারি চলতে, না পারি এপ্লাই করতে। আবার এপ্লাই করি, ভাইবা দেই, চাকরী হয় না। চারদিকে তো অন্ধকার দেখতাছি”

আমি চুপ করে রইলাম। আমি ছোট ভাইটির কষ্টটা বুঝতে পারি। এই সময়টা আমিও পার করেছি। পৃথিবীতে একটা ছাত্রের জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর সময় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ এবং চাকরী পাওয়ার পূর্বের সময়। ছাত্র জীবনে বাপ-মার কাছ থেকে টাকা আনা গেলেও এই সময় সেটা আনা সম্ভব হয়না। কিন্ত খরচ ছাত্রজীবনের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যায়। অন্যান্য খরচের সাথে যোগ হয় চাকরীতে এপ্লাইয়ের খরচ, বাসা/মেস ভাড়ার খরচ। যা টিওশনি করে মেটানো একেবারে অসম্ভব।

ছেলেটি মাথা নিচু করে ছিল। হঠাৎ তার চোখে পানি দেখলাম। তার গলা ভারী হয়ে আসলো। ভারী গলায় বললোঃ-

-“ভাই ,একবার চিন্তা করি গ্রামে চলে যাই, গ্রামে গিয়ে বাসায় বসে পড়াশোনা করি আর বাড়ীর কাজ করি। কিন্তু সেখানে গেলেও অনেক কথা শুনতে হবে। বলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও চাকরী হয়না। বাপের ঘাড়ে বসে খায়! কি করবো ভাই একটা বুদ্ধি দেন!”

কথা গুলো বলতে বলতে সে চোখ মুছে। আমি বুদ্ধি নয়, স্বান্তনা দেই। বলি "এ সময়টা একটু কঠিন, কিছুদিন কষ্ট করো,আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে। আর এপ্লাই করা ছেড়োনা। এপ্লাই না করলে তো সুযোগই তৈরি হবেনা, চাকরী পাবে কীভাবে?"

ছোট ভাই ভরসা পায়না। চোখে-মুখে প্রশ্ন,“পকেটে টাকা নাই, এপ্লাই করবো কীভাবে?”

আমি বলি, “তোমার যখন এপ্লাই করা লাগে আমার কাছে এসো, আমি চেষ্টা করবো।”

ছোট ভাই আশ্বস্ত হয়। চা খায়, চা খেয়ে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা একটা ছেলের আত্ত্বসম্মানবোধ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সে যেখানে কোথাও মাথা নত করেনি ‌সেখা‌নে পড়া‌শোনা শেষ ক‌রে চাকরী‌তে এপ্লাই‌য়ের টাকার জন্য হাত পাত‌তে হচ্ছে। যত কাছের বড় ভাই ই হোক,নিজের ব্যার্থ্যতার কথা স্বীকার করে চোখে পানি আনা যে কতটা লজ্জার সে বুঝ‌তে পারে। অসহা‌য়ের ম‌তো কারও কা‌ছ থে‌কে টাকা নি‌য়ে এপ্লাই করা যন্ত্রণাটা সে নি‌তে পারে‌নি। তাই হয়তো পরে আর আমার কাছে টাকা চাইতে আসেনি। আমি কয়েকবার সার্কুলার দেখে ডেকে এনে নিজে পে-অর্ডার করে হাতে দিয়েছি। সে সেটা নিয়ে মাথা নীচু করে চলে যেত। আ‌মি বলতামঃ
-‌"বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, তু‌মি তো এ‌কেবা‌রে নিচ্ছনা। ধার নিচ্ছ। চাকরী পে‌য়ে দি‌য়ে দিও।"

আমি এখানে একটা ছোটভাইয়ের কথা বললাম। আ‌মি নি‌শ্চিত এ‌দে‌শের অ‌র্ধে‌কের বেশী ‌বেকার যুব‌কে‌র অবস্থাই এরকম। অসংখ্য বেকার ছে‌লে বাংলাদেশে আছে যারা চাকরীতে এপ্লাইয়ের টাকা জোগার করতে পারেনা। একবেলা না খেয়ে কিংবা দু-মাইল রাস্তা হেঁটে রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে পাঁচটাকা দশটাকা ক‌রে পরীক্ষার ফি জোগার করে। যখন জোগাড় হয় এপ্লাই ক‌রে, যখন হয়না ছে‌ড়ে দেয়। এরা না পারে হাত পাততে না পারে ভিতরের যন্ত্রণার কথা কাউকে বলতে। শুধু ভিতর ভিতর পুড়ে। আত্ত্ববিশ্বাস হারায়,তারুণ্য হারায়, নিঃশেষ হয়, হতেই থাকে!!

শুন‌ছি, সরকার চিন্তা কর‌ছে চাক‌রী‌তে এপ্লাই‌য়ের জন্য পরীক্ষার ফি না নেওয়ার। শুধু চিন্তা নয় এটা বাস্তবায়ন হওয়া খুবই দরকার। এটা বাস্তবায়ন হ‌লে বেকার‌ যুব‌কদের ঘা‌ড়ে বিষ ফোঁড়া হ‌য়ে যে যন্ত্রণাটা আ‌ছে সেটা স‌রে যা‌বে। এপ্লাই করার টাকা জোগাড় করার টেনশান বাদ দি‌য়ে পড়া‌শোনায় মন দি‌তে পার‌বে। প্র‌য়োজ‌নে চাকরী হওয়ার পর দ্বিগুণ বা তিনগুণ ফি বাবদ প্রথম মা‌সের বেতন থে‌কে কে‌টে নেওয়া হোক, আমার‌ বিশ্বাস সবাই সেটা হাস‌তে হাস‌তে মেনে নি‌বে। কিন্তু চাকরী হওয়ার আ‌গে চাকরী ফি টা যে এ‌দের জন্য বোঝার উপর শা‌কের আ‌টি!! ‌সেটা থে‌কে তা‌দের মু‌ক্তি দেওয়া হোক!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×