ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস! পরপর চারটি শব্দ হলো। শব্দের তীব্রতা আগের তিনটার চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ করে বেশী। যে নিয়মিত অন্যের গালে চড় কষায় তার গালে এভাবে কেউ চড় কষাবে এটা সে ভাবতেও পারেনি। প্রথম তিনটা চড়ের প্রতিবাদে কোন চড় আসবেনা এব্যাপারে সে হান্ড্রেট পারসেন্ট নিশ্চিত ছিল। তার অনুমান ঠিকই ছিল, বৃদ্ধ সবজিওয়ালা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কেবল ভ্যাবলার মতো তাঁকিয়েই ছিল,কোন প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু প্রতিবাদ এসেছে তৃতীয় পক্ষ থেকে! যেই সেই প্রতিবাদ নয়, পর পর চারটা রাম থাপ্পর! চড়ের ঘোরে নাসিম সাহেব কিছুক্ষন আন্ধা দেখলেন।
পাক্কা দুমিনিট লাগলো ধোয়া ধোয়া ভাবটা কাটতে!
ঘোর কাটার পর দেখলেন তার নাক বরাবর দাড়িয়ে আছে ছ-ফুটি এক ছেলে! ছেলেটির চোখ-মুখ থেকে রাগে আগুন বের হচ্ছে!
কিন্তু জীবনের প্রথম রাম চড় খাওয়া মন্ত্রীর ভাইয়ের রাগের কাছে এ রাগ নস্যি! চড় খেয়ে রাগ,অপমান,যন্ত্রণার বিস্ফোরন ঘটলো নাসিম সাহেবের চোখে মুখেও!
-"হু আর ইউ?" ঝড় শুরু হওয়ার আগে সর্বপ্রথম বাতাস যেমন ধীরভাবে ঘুট পাকাতে থাকে ঠিক তেমনিভাবে শুরু করলো নাসিম সাহেব।
ছেলেটি তার নাকটা নাসিম সাহেবের নাকের সাথে প্রায় স্পর্শ করাতে করাতে পাল্টা প্রশ্ন করলোঃ
-হু আর ইউ?
নাসিম সাহেব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আরো উচুস্বরে পাল্টা প্রশ্ন করলেনঃ "হোআআই ইউউ স্লাপ মিইই?"
"হোআআই ইউউ স্লাপ হিম?" পাশে দাড়ায়ে গাল হাতাতে থাকা সবজিওয়ালা বৃদ্ধটিকে দেখিয়ে বললো ছেলেটি।
"-গিভ মি দা আনসার! আমাকে চড় মারার মতো সাহস তোকে দিল কে?" প্রচন্ড রাগে কাঁপতে কাঁপতে আরো ক্ষিপ্রতার সাথে প্রশ্ন করলো নাসিম সাহেব।
"-গিভ মি দা আনসার! ওকে চড় মারার মতো সাহস তোকে দিল কে?"একই প্রশ্ন আরো উচ্চস্বরে রিপিট করলো ছেলেটি।
এর চেয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে আর রাগ প্রকাশ করা যায়না। ভদ্রলোক একটু থামলেন, মাথা ঝিম ধরে গেছে। তাঁকে চড় মারার স্পর্ধা কারও হতে পারে কিংবা মুখে মুখে তর্ক করার মতো বুকের পাটা কারও থাকতে পারে এটা কল্পনাতেও আসেনি তার। গলা নামিয়ে একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে তিনি ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেনঃ
-তুমি জান আমি কে? তোমাকে যে আমি কিছুক্ষনের মধ্যে পৃথিবী ছাড়া করতে পারি এটা কি তোমার বিশ্বাস হয়?
- "আমি যে তোমাকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবী ছাড়া করতে এটা কি তোমার বিশ্বাস হয়?" ছেলেটি বললো।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো নাসিম সাহেব। কথায় কাজ হবেনা, বুঝলেন তিনি। হাত বাগিয়ে চড় উঠালেন। কিন্তু ক্ষমতায় নাসিম সাহেব অনেক শক্তিধর হলেও বাহুর শক্তি ছেলেটির বেশী। ছেলেটি টগবগে তরুণ, বাহুতে বাঘের শক্তি, ভিতরে তারুণ্যের তেজ! দ্রুততার সাথে নাসিম সাহেবের হাতটা ধরে মুচড়ে দিল সে। অন্য হাত উঠালো নাসিম সাহেব,সেটিও ধরে ফেললো ছেলেটি। উপায় না দেখে ফোন দিল বড় ভাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেঃ
"ভাই, আমি ইন্দিরা রোড কাঁচাবাজারে, আমাকে একটা ছেলে চড় মেরেছে তুমি তাড়াতাড়ি লোক পাঠাও।"
এতক্ষনে তাদের ঘিরে বেশ মানুষ ঝড়ো হয়েছে। ছেলেটি নাসিম সাহেবের কথা না শোনার ভান করে মানুষের ভিড়ের ভিতর দিয়ে এলোপাথাড়ী ভাবে কয়েকজনকে ডাকলো এবং কিছু নির্দেশ দিলঃ
" কিংসু! দৌড় দে, ক্লাবে যা, ওখানে সবাই আছে ডেকে নিয়ে আয়। রনি! ইরান ভাইকে ফোন লাগা! সে আশে পাশেই আছে। - আর প্রিন্স! এইদিকে আয়। তুই খেয়াল রাখবি এই ব্যাটায় যেন কাউকে ডাকার ছল করে না পালিয়ে যায়! আর আমি এক মিনিটের মধ্যে মেশিন টা নিয়ে আসছি"
ভিড়ের মধ্যে ছেলেটি ঠিক কাকে কাকে ডাকলো ঠিক চিনতে না পারলেও মেশিন বলতে সে কি বুঝিয়েছে এটা সবাই বুঝে গেল। তাই সবাই ছেলেটির দৌড় দিয়ে গলিতে ঢুকে পড়া পথের দিকেই দৃষ্টি ফেরালো।
নাসিম সাহেবের ভিতর এতক্ষন ছিল ক্রোধ,অপমান,চড়ের ব্যাথা! কিন্তু মেশিন আনার কথা শুনে যোগ হলো ভয়!গুলি খাওয়ার ভয়, মরে যাবার ভয়! তাই মেশিনের ব্যাপারটা সাথে সাথে ভাইকে জানিয়ে দিলেন।
নাসিম সাহেব দরদর করে ঘামছেন আর ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে কোন বিপদ ডেকে আনলেন তাই ভাবছেন। সেই সাথে প্রাণপ্রণে দোয়া করছেন তার লোক আসার আগে যেন ছেলেটি এসে না পড়ে! হলোও তাই। মন্ত্রী সাহেব ফোন দিয়েছেন তেঁজগাঁও থানার ওসিকে। সাথে সাথে ১০-১২ বারজন স্বশস্ত্র পুলিশ এসে হাজির হলো। তারা নাসিম সাহেবকে চতুর্দিক থেকে মানববর্ম করে দাড়ালো। নাসিম সাহেব আশ্বস্ত হলেন, ভয় লুকিয়ে আবার ক্রোধ প্রকাশ শুরু করলেন, নিজের কত ক্ষমতা সেটা আশেপাশের মানুষকে দেখাতে লাগলেন। পুলিশকে নির্দেশ দিলেন ছেলেটির সাঙ্গপাঙ্গদের ধরতে। নির্দেশমতো পুলিশ ওদের খুজতে লাগলো।
এদিকে ওসি সাহেবও কয়েকজন পুলিশ নিয়ে চলে এসেছেন। তিনি দ্রুত আশেপাশের পরিস্থিতি দেখলেন। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে তেমন কিছু টের না পেয়ে নাসিম সাহেবের কাছে আসলেন। ইতোমধ্যে আশপাশে খোজাখুজি করে কয়েকজন পুলিশ ফেরত এসেছে। তারাও কিছু পায়নি। ওসি সাহেব নাসিম সাহেবের নিকট বিস্তারিত শুনতে চাইলেন। নাসিম সাহেব সব বললেন। পিস্তল আনতে যাওয়া ছেলেটির বর্ননা শুনে ওসি সাহেব একি সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আবার নিরাশও হলেন। বিড় বিড় করে বললেন- "হারামজাদাটাকে এবার ধরে রাম ধোলাই দিয়ে জেলে পুরতে হবে, মান ইজ্জত আর রাখবেনা দেখছি!
ওদিকে বিভিন্ন গলিতে যে পুলিশগুলো ঢুকেছিল তারা সবাই ফেরত আসলো। ওসি সাহেব উপস্থিত জনতাকে দুএকটি প্রশ্ন করে নাসিম সাহেবকে বললেনঃ স্যার বেয়াদবটা আর আসবেনা, চলেন, আপনাকে বাসায় পৌছে দেই।
- "মানে কি? আপনি ওকে চিনেন?" নাসিম সাহেব চেঁচিয়ে ওঠলো।
" কেবল আমি না। আশেপাশের সব থানার ওসিরা তাঁকে চিনে কিংবা নাম জানে। আচ্ছা, আপনি কি এমন কিছু করেছেন যেটা অশোভন বা অন্যায় মনে হয়?"
-"অন্যায় হবে কেন? সবজি ওয়ালা একটা বেয়াদব, আমার মুখে মুখে তর্ক করেছে, আমি বেয়াদবির শাস্তি দিয়েছি।"
- ওকে স্যার, বুঝতে পারছি। চলেন আপনাকে বাসায় পৌছে দেই।
-কিন্তু-----।
"কোন কিন্তু নেই। ছেলেটিকে সন্ধার মধ্যে আপনার সামনে হাজির করবো কথা দিচ্ছি। আপনি নিশ্চিন্তে বাসায় যান। এর নাম মুসাব্বির, এসবই করে বেড়ায়। তার কোন মেশিন নেই, সাঙ্গপাঙ্গ নেই, ইরান ভাই নেই! আছে কেবল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, মানুষকে হিপনোটিজম করার অসাধারন ক্ষমতা আর সাধারনের জন্য এক বুক--------!" ভালবাসা শব্দটা বলতে চেয়েও বললেন না। "সরি স্যার। চলেন । আর আমি এখুনি ব্যাবস্থা করছি ওকে ধরে আনার।" এমন সময় একটু আগে তাদের সাথে যোগ দেয়া এক এসআই বললোঃ স্যার, মুসাব্বিরকে তো দেখলাম পান্থপথ সিগনালের এক চা স্টলে নিশ্চিন্ত মনে বসে চা খাচ্ছে!! "
ওসি সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেনঃ তাড়াতাড়ি যাও! ওকে এক্ষুনি ধরে নিয়ে আসো।!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১০