মকুল তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে এমনটি জেবার মনে পড়ে না। তারপরও সে বারবার মুকুলের কাছে আসে,কথা বলার চেষ্টা করে। যেমন আজকে করছেঃ
-কি করো?
-দেখতাছস না কি করি?
-দেখতাছি তো, রিক্সা ধুইতাছো। মুখে বললে কি অয়?
-যা ভাগ! জ্বালাইস না।
- বিকাল বেলায় ঠান্ডা পানি ধরো ক্যান? জ্বর বাড়বো না?
-যাবি এখান থাইকা, না পানি ঢাইল্যা দিমু??
-এমন চ্যাডাং চ্যাডাং কতা কও ক্যান? ভালো মতো কতা কইতে পারোনা?
-তুই কেডা যে তোর লগে বালা মতোন কতা কইতে অইবো?
-কেউ অওন লাগেনা। বালা মাইনসে সবার লগে বালা মতোন কতা কয়। তোমার লাহান চ্যাডাং চ্যাডাং করেনা!!
-বালা মাইনসের কাছে যা, আমার এইহানে আইছস ক্যান??
মুকুলের একথার জবাব জেবা দেয়না, যায়ও না। চুপ কইরা দাড়াইয়া দাড়াইয়া মুকুলের রিক্সা ধোয়া দেখে। মুকুল রিক্সার সামনের চাকায় পানি ঢালে, পিছনের চাকায় পানি ঢালে, রিক্সার বডিতে পানি ঢালে, হাতের নেকড়া দিয়ে রিক্সার ময়লা পরিস্কার করে, তারপর কাঁধের শুকনো গামছা দিয়ে চাকার শিক মুছে, বডি মুছে। যদিও এখানে দেখার কিছু নেই তবু জেবা মনোযোগ দিয়ে রিক্সা ধোয়া দেখে,মুকুলকে দেখে। দেখতে দেখতে আবার বলেঃ-
-"যে যত্নে তুমি এই রিক্সা পরিস্কার করো, এর এদুল্লা যত্নও যদি শরীরের নিতা তাইলে দুইদিন পরপর তোমার জ্বর অাইতোনা!!"
মুকুল চোখ বড়বড় করে জেবার দিকে তাঁকায়।
-"এ্যাহ!!! তোমার চোখ রাঙানোরে আমি ডরাই!!" ভেংচি কেটে বলে জেবা।
"এত চোখ রাঙান ভালোনা,একবার হারাই গেলে বুজবা আমি কেডা আছিলাম" কিছুটা অভিমান করে বলে জেবা। বলতে বলতে ওড়নার আড়াল থাইকা দুইটা টিফিন বক্স বের করে মুকুলের দিকে এগিয়ে দেয়ঃ-
-তোমার লাইগ্যা আনছি নেও, খাও।
-"না, খামু না, ভাগ!" বক্সের দিকে না তাঁকিয়েই মুকুল বলে।
জেবার মন খারাপ হয়। কথা না বলে দাড়িয়ে থাকে। মুকুলের জন্য তার মায়া লাগে। মুকুলের জন্য তার মন পুড়ে। অথচ মুকুল তাঁকে পাত্তাই দিতে চাইনা। অভিমান হয় তার। বাক্স দুটো রিক্সার সীটে রাখতে রাখতে বলেঃ
- "বক্স দুটো গদির উপর রাখলাম, মন চাইলে খাইয়ো, না খাইলে বক্স দুইডা পরিস্কার কইরা ঘরে পৌছায়া দিও, আমি গেলাম।" তারপর হনহন করে শেখের টেক ৭নম্বর রোডের টিনসেড বিল্ডিং এর দশ নম্বর রুমটিতে ঢুকে পড়ে।
মুকুল জেবার রাগের তোয়াক্কা করে না, ওদিকে তাঁকায়ও না। মনোযোগ দিয়ে রিক্সা ধুয়ে শেষ করে। শরীর টা জ্বর জ্বর লাগছে, একটু বিশ্রাম নিতে হবে। রিক্সাটা টান দেয় একটু শুকনা জায়গায় নেয়ার জন্য, টান লেগে সিটে রাখা টিফিন বক্স নড়ে উঠে, নড়ার শব্দে মুকুল পিছনে তাঁকায়। আঙ্গুরের থোকা আকৃতির দুটো টিফিন বক্স তার চোখে পড়ে। বিরক্তি নিয়ে টিফিন বক্স দুটি হাতে নেয়। বাক্স দুটি স্বচ্ছ হওয়ায় বাহির থেকে দেখা যায় ভিতরে কি আছে। একটিতে দুধ চিতই; তার প্রিয় খাবার। অন্যটিতে ঝাল গুড়া। চালভাজা, মরিচ,ধনেপাতা আর দমকলসের পাতা দিয়ে বানানো এই গুড়া ছোট বেলায় জ্বর আসলেই মা বানিয়ে দিত। জ্বরের মুখে খাওয়ার জন্য এর চেয়ে স্বাদের কিছু হয়না। দুটো খাবারই মুকুলের জিভে পানি নিয়ে আসে। মুকুল আশে পাশে তাঁকায়। কেউই নেই, জেবার ঘরের দিকে তাঁকায়, জেবাও নেই। বক্স খুলে প্রথমে দুধ চিতই খায়। দুধ চিতই খেয়ে ঝাল গুড়া খায়। ঠান্ডায় এগুড়াটার প্রয়োজন ছিলো মুকুলের, কিছুটা আরাম পাবে সে। খাওয়া শেষে বক্সের ঢাকনা লাগাতে লাগাতে জেবার ঘরের দিকে আবার উকি দেয়। এবার জেবাকে চোখে পড়ে। জেবা দরজায় হেলান দিয়ে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে। মুকুল ইশারায় ডাকে। জেবা সাড়া দেয়না। মুকুল আবার ডাকে। জেবা তবু সাড়া দেয়না। এবার একটু জোর দিয়ে অধিকার খাটিয়ে হাসি হাসি মুখে ডাক দেয়।
-আরে আয়না!!
জেবা অভিমানী ভাব নিয়ে কাছে আসে। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রিক্সা থেকে একটু দুরে দাড়ায়।
-"দুধ চিতই কই পাইলি?" মুকুল জিঙ্গেস করে।
-"মামায় আনছে।" মুড অফ করে বলে জেবা।
-ঝাল গুড়া তুই বানাইছস?"
জেবা মাথা ঝাকায়।
-"ঝাল গুড়াটা অনেক স্বাদ হইছে এবং আমি মনে মনে এইটা খুজছিলাম।" মুকুল বলে।
জেবা কথা কয়না।
-রিক্সায় ঘুরবি?
জেবা চুপ থাকে।
মুকুল এগিয়ে গিয়ে চালকের সীটে বসে, বসে জেবার দিকে তাঁকিয়ে ইশারা দিয়ে রিক্সার গদিটা দেখিয়ে দিয়ে বলেঃ
-উঠ!!
জেবা মুকুলকে অনেক সময় দেখেছে রিক্সায় করে পেসেঞ্জার নিয়ে যেতে। চালকের আসনে মুকুলকে বসা দেখলেই জেবার যাত্রীর আসনে বসার ইচ্ছে হতো। সে সীটে বসে থাকবে আর মুকুল প্যাডেল দিবে এভাবনা তাকে শিহরিত করতো। কিন্তু মুকুল তাঁকে সহ্য করতে পারেনা তাই কখনও বলার সাহস হয়নি। আজকে মুকুল নিজে থেকে বলায় জেবা অভিমান ভুলে যায়।
একটা মুচকী হাসি দিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। মুকুল রিক্সার প্যাডেল দেয় আর হাসি হাসি মুখে জেবার দিকে তাঁকায়। জেবা হাসে,মুকুল হাসে। রিক্সা এগিয়ে চলে শেখের টেকের এগলি থেকে ও গলি। নিম্মবিত্ত পরিবারের দুজন তরুণতরুণীর মধ্যে জীবনের প্রথম ডেটিং চলে। এ ডেটিং এ তাদের মধ্যে কোন শারীরিক স্পর্শ হয়না, কোন আবেগি কথা হয়না। অথচ দুজনেই শিহরিত বিশুদ্ধ ভালবাসার স্বর্গীয় সুখে!!
মুকুল তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে এমনটি জেবার মনে পড়ে না। তারপরও সে বারবার মুকুলের কাছে আসে,কথা বলার চেষ্টা করে। যেমন আজকে করছেঃ
-কি করো?
-দেখতাছস না কি করি?
-দেখতাছি তো, রিক্সা ধুইতাছো। মুখে বললে কি অয়?
-যা ভাগ! জ্বালাইস না।
- বিকাল বেলায় ঠান্ডা পানি ধরো ক্যান? জ্বর বাড়বো না?
-যাবি এখান থাইকা, না পানি ঢাইল্যা দিমু??
-এমন চ্যাডাং চ্যাডাং কতা কও ক্যান? ভালো মতো কতা কইতে পারোনা?
-তুই কেডা যে তোর লগে বালা মতোন কতা কইতে অইবো?
-কেউ অওন লাগেনা। বালা মাইনসে সবার লগে বালা মতোন কতা কয়। তোমার লাহান চ্যাডাং চ্যাডাং করেনা!!
-বালা মাইনসের কাছে যা, আমার এইহানে আইছস ক্যান??
মুকুলের একথার জবাব জেবা দেয়না, যায়ও না। চুপ কইরা দাড়াইয়া দাড়াইয়া মুকুলের রিক্সা ধোয়া দেখে। মুকুল রিক্সার সামনের চাকায় পানি ঢালে, পিছনের চাকায় পানি ঢালে, রিক্সার বডিতে পানি ঢালে, হাতের নেকড়া দিয়ে রিক্সার ময়লা পরিস্কার করে, তারপর কাঁধের শুকনো গামছা দিয়ে চাকার শিক মুছে, বডি মুছে। যদিও এখানে দেখার কিছু নেই তবু জেবা মনোযোগ দিয়ে রিক্সা ধোয়া দেখে,মুকুলকে দেখে। দেখতে দেখতে আবার বলেঃ-
-"যে যত্নে তুমি এই রিক্সা পরিস্কার করো, এর এদুল্লা যত্নও যদি শরীরের নিতা তাইলে দুইদিন পরপর তোমার জ্বর অাইতোনা!!"
মুকুল চোখ বড়বড় করে জেবার দিকে তাঁকায়।
-"এ্যাহ!!! তোমার চোখ রাঙানোরে আমি ডরাই!!" ভেংচি কেটে বলে জেবা।
"এত চোখ রাঙান ভালোনা,একবার হারাই গেলে বুজবা আমি কেডা আছিলাম" কিছুটা অভিমান করে বলে জেবা। বলতে বলতে ওড়নার আড়াল থাইকা দুইটা টিফিন বক্স বের করে মুকুলের দিকে এগিয়ে দেয়ঃ-
-তোমার লাইগ্যা আনছি নেও, খাও।
-"না, খামু না, ভাগ!" বক্সের দিকে না তাঁকিয়েই মুকুল বলে।
জেবার মন খারাপ হয়। কথা না বলে দাড়িয়ে থাকে। মুকুলের জন্য তার মায়া লাগে। মুকুলের জন্য তার মন পুড়ে। অথচ মুকুল তাঁকে পাত্তাই দিতে চাইনা। অভিমান হয় তার। বাক্স দুটো রিক্সার সীটে রাখতে রাখতে বলেঃ
- "বক্স দুটো গদির উপর রাখলাম, মন চাইলে খাইয়ো, না খাইলে বক্স দুইডা পরিস্কার কইরা ঘরে পৌছায়া দিও, আমি গেলাম।" তারপর হনহন করে শেখের টেক ৭নম্বর রোডের টিনসেড বিল্ডিং এর দশ নম্বর রুমটিতে ঢুকে পড়ে।
মুকুল জেবার রাগের তোয়াক্কা করে না, ওদিকে তাঁকায়ও না। মনোযোগ দিয়ে রিক্সা ধুয়ে শেষ করে। শরীর টা জ্বর জ্বর লাগছে, একটু বিশ্রাম নিতে হবে। রিক্সাটা টান দেয় একটু শুকনা জায়গায় নেয়ার জন্য, টান লেগে সিটে রাখা টিফিন বক্স নড়ে উঠে, নড়ার শব্দে মুকুল পিছনে তাঁকায়। আঙ্গুরের থোকা আকৃতির দুটো টিফিন বক্স তার চোখে পড়ে। বিরক্তি নিয়ে টিফিন বক্স দুটি হাতে নেয়। বাক্স দুটি স্বচ্ছ হওয়ায় বাহির থেকে দেখা যায় ভিতরে কি আছে। একটিতে দুধ চিতই; তার প্রিয় খাবার। অন্যটিতে ঝাল গুড়া। চালভাজা, মরিচ,ধনেপাতা আর দমকলসের পাতা দিয়ে বানানো এই গুড়া ছোট বেলায় জ্বর আসলেই মা বানিয়ে দিত। জ্বরের মুখে খাওয়ার জন্য এর চেয়ে স্বাদের কিছু হয়না। দুটো খাবারই মুকুলের জিভে পানি নিয়ে আসে। মুকুল আশে পাশে তাঁকায়। কেউই নেই, জেবার ঘরের দিকে তাঁকায়, জেবাও নেই। বক্স খুলে প্রথমে দুধ চিতই খায়। দুধ চিতই খেয়ে ঝাল গুড়া খায়। ঠান্ডায় এগুড়াটার প্রয়োজন ছিলো মুকুলের, কিছুটা আরাম পাবে সে। খাওয়া শেষে বক্সের ঢাকনা লাগাতে লাগাতে জেবার ঘরের দিকে আবার উকি দেয়। এবার জেবাকে চোখে পড়ে। জেবা দরজায় হেলান দিয়ে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে। মুকুল ইশারায় ডাকে। জেবা সাড়া দেয়না। মুকুল আবার ডাকে। জেবা তবু সাড়া দেয়না। এবার একটু জোর দিয়ে অধিকার খাটিয়ে হাসি হাসি মুখে ডাক দেয়।
-আরে আয়না!!
জেবা অভিমানী ভাব নিয়ে কাছে আসে। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রিক্সা থেকে একটু দুরে দাড়ায়।
-"দুধ চিতই কই পাইলি?" মুকুল জিঙ্গেস করে।
-"মামায় আনছে।" মুড অফ করে বলে জেবা।
-ঝাল গুড়া তুই বানাইছস?"
জেবা মাথা ঝাকায়।
-"ঝাল গুড়াটা অনেক স্বাদ হইছে এবং আমি মনে মনে এইটা খুজছিলাম।" মুকুল বলে।
জেবা কথা কয়না।
-রিক্সায় ঘুরবি?
জেবা চুপ থাকে।
মুকুল এগিয়ে গিয়ে চালকের সীটে বসে, বসে জেবার দিকে তাঁকিয়ে ইশারা দিয়ে রিক্সার গদিটা দেখিয়ে দিয়ে বলেঃ
-উঠ!!
জেবা মুকুলকে অনেক সময় দেখেছে রিক্সায় করে পেসেঞ্জার নিয়ে যেতে। চালকের আসনে মুকুলকে বসা দেখলেই জেবার যাত্রীর আসনে বসার ইচ্ছে হতো। সে সীটে বসে থাকবে আর মুকুল প্যাডেল দিবে এভাবনা তাকে শিহরিত করতো। কিন্তু মুকুল তাঁকে সহ্য করতে পারেনা তাই কখনও বলার সাহস হয়নি। আজকে মুকুল নিজে থেকে বলায় জেবা অভিমান ভুলে যায়।
একটা মুচকী হাসি দিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। মুকুল রিক্সার প্যাডেল দেয় আর হাসি হাসি মুখে জেবার দিকে তাঁকায়। জেবা হাসে,মুকুল হাসে। রিক্সা এগিয়ে চলে শেখের টেকের এগলি থেকে ও গলি। নিম্মবিত্ত পরিবারের দুজন তরুণতরুণীর মধ্যে জীবনের প্রথম ডেটিং চলে। এ ডেটিং এ তাদের মধ্যে কোন শারীরিক স্পর্শ হয়না, কোন আবেগি কথা হয়না। অথচ দুজনেই শিহরিত বিশুদ্ধ ভালবাসার স্বর্গীয় সুখে!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫