somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিনয়!!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনাব আবুল কালাম আজাদ, এক‌টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাং‌কের শীর্ষ স্থানীয় প্রভাবশালী কর্মকর্তা। সরকারী-‌বেসরকারী নানা প্র‌তিষ্ঠান/ব্যাংক তাঁ‌কে প্রায়ই ডা‌কে; সভা-‌সে‌মিনার,‌ট্রে‌নিং এ বক্তৃতা দেয়ার জন্য। হাই প্রোফাইল,সফল মানুষ। তার কথায় অন্যরা অনু‌প্রেরণা পায়,‌দিক নি‌র্দেশনা পায়। আজ‌কে একটা স্বনামধন্য এন‌জিও ডে‌কেছি‌লো। বক্তৃতার বিষয় ছি‌লো কর্মজীব‌নে শুদ্ধাচার চর্চা ও সাফল্য। বক্তৃতা শে‌ষে আজাদ সা‌হে‌বের ম‌নে হ‌লো তি‌নি আজ‌কে একেবা‌রে ফাটি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন। সবার তন্ময় হ‌য়ে বক্তৃতা শোনা এবং হাততা‌লি দেওয়া সেটাই ব‌লে। তাই বেশ ফুরফু‌রে মেজা‌জ নি‌য়ে বাসায় যাওয়ার উ‌দ্দে‌শ্যে গা‌ড়ি‌তে উ‌ঠে ব‌সে‌ছেন। আ‌য়েশী ভ‌ঙ্গি‌তে সী‌টে ব‌সে চশমাটা খু‌লে নরম টিস্যু দি‌য়ে আল‌তোভা‌বে চশমার গ্লাস প‌রিস্কার করছেন আর ম‌নে ম‌নে নি‌জের পারফরম্যা‌ন্সের প্রশংসা কর‌ছেন। এমন সময় গাড়ীর ড্রাইভার রমজান ভিত‌রের লু‌কিং গ্লাস দি‌য়ে আজাদ সা‌হেবের দি‌কে তাঁ‌কি‌য়ে একটা তৈলাক্ত হা‌সি দিয়ে বল‌লোঃ-
-স্যার, সেইরম বক্তৃতা দি‌ছেন,ফাটি‌য়ে দেয়া যা‌কে ব‌লে।"
-"তাই না‌কি? ভা‌লো হই‌ছে?" ঠোঁ‌টে আত্নতৃ‌প্তির হা‌‌সি নিয়ে আয়নায় রমজা‌নের চো‌খের দি‌ক তাঁ‌কি‌য়ে পাল্টা প্রশ্ন করে আজাদ সা‌হেব।
"অবশ্যই স্যার! হাততা‌লি দে‌খে বু‌ঝেন নাই!"
- "হুমম!"
ড্রাইভা‌রের সা‌পোর্ট তার আত্নতৃ‌প্তি আরও বা‌ড়ি‌য়ে দেয়।
রমজান আলী, আজাদ সা‌হে‌বের দীর্ঘ দি‌নের সঙ্গী, তার প্রাই‌ভেট কা‌রের ড্রাইভার। অ‌নেক কা‌জের সাক্ষী এবং সহায়কও।‌ তার ডান হাতও বলা যায়। ছে‌লেটা বিশ্বস্ত।
"স্যার,বি‌শেষ ক‌রে সফল হ‌তে সততা, সত্যবা‌দিতা এবং ব্য‌ক্তিত্ত্ব ধ‌রে রাখার অংশটা অসাধারন হই‌ছে।" রমজান আবার বল‌লো।
"তাই না‌কি!" এবার আজাদ সা‌হে‌বের চো‌খেমু‌খে রহস্যময় হা‌সি, যেটা‌কে অ‌নে‌কে শয়তানি হা‌সিও ব‌লে।
"‌জি স্যার, অ‌ডি‌টো‌রিয়া‌মে তখন পিনপতন নিরবতা ছি‌লো। বক্তৃতা শে‌ষে সবাই বল‌ছি‌লো যে ভিত‌রে ডে‌ডি‌কেশন ছাড়া এমন বক্তৃতা কেউ দিতে পা‌রে না।"
ডে‌ডিকেশন শব্দটা শু‌নে উচ্চ স্ব‌রে হে‌সে উ‌ঠেন আজাদ সাহেব।
প্রশংসা সবারই ভা‌লো লা‌গে। ত‌বে আজাদ সা‌হে‌বের বেশী ভা‌লো লাগ‌ছে। কারণ এখা‌নে এক ঢি‌লে দুই পা‌খি মারা হ‌য়ে‌ছে। তাই রহস্যময় হা‌সিটা ধ‌রে রে‌খেই তাঁকা‌লেন ড্রাইভা‌রের দি‌কে। ড্রাইভারও তাঁ‌কি‌য়ে আ‌ছে আজাদ সা‌হেবের দি‌কে। সম্ভবত স্যা‌রের খু‌শি ও ম‌নের ভাব আঁচ কর‌তে পার‌ছে।
-স্যার, সবাই তন্ময় হ‌য়ে শুনলেও শ‌হিদ সাব সাম‌নে ব‌সে মুচ‌কি মুচ‌কি হাস‌ছি‌লো!!
-‌"কোন শহিদ?"
-"স্যার ওই‌ যে, গত সপ্তা‌হে যে তার প্র‌মোশ‌নের জন্য আপনা‌কে প‌নের লাখ দি‌লো। আ‌মি গি‌য়ে নি‌য়ে আসলাম।"
-অঅহ!
- "উ‌কিল সা‌হেবও হাস‌ছি‌লো মুচ‌কি মুচ‌কি।"
-‌কোন উ‌কিল, ইকরা গ্রু‌পের মামলার?
- না না স্যার। সাংবা‌দিক‌দের সা‌থে কথা বলার আ‌গে যার এডভাইস নেন এবং শেখা‌নো কথা ব‌লে আ‌সেন।
-"হুমম।" আজাদ সা‌হে‌বের চোখ নি‌চের দি‌কে। মু‌খে বাঁকা ও শয়তা‌নি হা‌সি।
"স্যার,মঞ্চে ব‌সে ঘুদক (ঘুষ দমন ক‌মিশ‌ন) এর চেয়্যারম্যানও একটু একটু হাস‌ছি‌লেন।"
ঘুদ‌কের চেয়ারম্যা‌নের নাম শু‌নে আঁত‌কে উঠ‌লেন আজাদ সা‌হেব। কি বাঁচাটাই না‌ বেঁচে‌ছেন তি‌নি। পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ঘুষ নেয়ার অপরাধে ধরা খে‌য়ে‌ছি‌লেন হা‌তে না‌তে,অ‌নেক প্রমাণও ছি‌লো। রক্ষা পাওয়ার কথা ছি‌লো না। ওই‌দিন য‌দি ওনার বাসায় গি‌য়ে পা‌'য়ে প‌ড়ে নি‌রপরাধ,অসহায় কান্নার অ‌ভিনয়টা ঠিকম‌তো না কর‌তেন এবং হেল‌দি প্যা‌কেটটা ধ‌রি‌য়ে না দি‌তেন ত‌বে চেয়ারম্যান সদয় হ‌তোনা। সদয় না হ‌লে আজ‌কে জে‌লের ভাত খে‌তে হ‌তো। মান-সম্মান সব যেত!
নি‌জের অ‌ভিনয় পারদ‌র্শীতার কথা ম‌নে ক‌রে নি‌জেই অ‌ভিভূত হ‌লেন,তাই শরীর ঝাঁ‌কি‌য়ে ফিক ক‌রে হে‌সে উঠ‌লেন আজাদ সা‌হেব। হা‌সি শে‌ষে রমজা‌নের দি‌কে তাঁ‌কি‌য়ে বল‌লেনঃ-
"বুঝলা রমজান! সততা-ফততা কিচ্ছু না। সব অ‌ভিনয়,ভূয়া কথা! উপ‌রে উঠ‌তে লা‌গে বু‌দ্ধি আর ভা‌লো সাজার অ‌ভিনয় পারদর্শীতা।
এ‌দে‌শের মানুষগু‌লো অ‌নেক বোকা,সহজ সরল। অ‌ভিনয় দি‌য়ে এ‌দের‌কে খুব সহ‌জেই কাবু করা যায়!"
-‌"জি স্যার! এ জন্যই আজকাল অ‌ভি‌নেতার সংখ্যা অ‌নেক বে‌ড়ে গে‌ছে! সবাই অ‌ভিনয় ক‌রে। নেতা,ব্যবসায়ী,আমলা,পু‌লিশ সবাই! পা‌রেও সেরম। তয় আপনার ম‌তো কেউ পা‌রে না। আপনি ব্যাং‌কে চাকরী না ক‌রে অ‌ভিনয় কর‌লে অস্কার পে‌তেন!!"
-"চুপ ক‌রো! বেশী কতা কও।" ছে‌লেটা লি‌মিট ছা‌ড়ি‌য়ে যা‌চ্ছে,থামা‌নো দরকার, তাই ন‌ড়েচ‌ড়ে ব‌সে ধমক দিয়ে চোখ মুদ‌তে মুদ‌তে বল‌লেন আজাদ সা‌হেব।
রমজান চুপ হ‌য়ে গেল।
"গান দেও, রবীন্দ সংগীত"
রমজান ক্যা‌সেট প্লেয়ার অন কর‌লো। গাড়ীর ক্যা‌সেট প্লেয়া‌রে রবীন্দ্র সংগীত বে‌জে উঠ‌লো।
"আগু‌ণের পরশম‌ণি ছোয়াও প্রা‌ণে, এজীবন পূণ্য ক‌রো,
এজীবন পূণ্য ক‌রো-------------।"
:) :)
(সব চ‌রিত্রই কাল্প‌নিক)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×