মনে কি পড়ে প্রিয়? - (১)
এর পর দিন সকালে উঠে শুভ আবার চলে যায় ক্যাম্পাসে। আমি কাজের অযুহাতে থেকে যাই রুমেই আর এলোমেলো ভাবনায় ডুবিয়ে দেই নিজেকে। আর দশটা সাধারন দিনের মতই সময় কেটে যায়। সন্ধ্যের পরে ঘরে ফিরেই শুভ শুয়ে পরে ওর বিছানায়, আমার সাথে কোন কথা বলে না। বিপদের গন্ধ পাই, কিন্তু ঘাটাইনা ওকে, জানি নিজে থেকেই এক সময় বলবে কি হয়েছে।
শুভ অনেক্ষন পর উঠে আসে বিছানা থেকে। আমার বিছানায় এসে বসে। তারপরে যা বলে তার সারমর্ম হলো - আজকে তিথী বেশীক্ষন থাকেনি ওদের সাথে। দুপুরের আগেই চলে গেছে হলে। আর যাবার আগে আমার কথা জিজ্ঞ্যেস করেছে, বলেছে আমি আসিনি কেন? তাই রানার ধারনা হয়েছে যে আমার কারনেই তিথী বেশীক্ষন বসেনি আজকে। ওকে ভাল মত বোঝাই যে এবার আর আমার কারণে ওর প্রেমের কুড়ি ফোটার আগেই ঝড়ে যাবেনা, নিশ্চই তিথীর কাজ ছিলো, ফলে আমি থাকলেও সে চলে যেত। শুভও মনে প্রানে এটাই বিশ্বাস করতে চাইছিলো। ফলে খুশী হয়ে যায় সে, আমাকে বসিয়ে রেখে এক দৌড়ে বাইরে থেকে কিনে আনে বেনসনের প্যাকেট, কোক আর ক্রিম বিস্কিট, আমার সব পছন্দের খাবারগুলো
পরের দিন সকাল থেকে শুরু হয় শুভর ট্রেনিং। ওকে আমার জ্ঞ্যান ভান্ডার উন্মুক্ত করে জ্ঞ্যান বিতরন করি। ও সাধ্য মত বুঝতে চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে রেগেও যায় "আমি এমনে কথা কইতে পারুম না, ওইটা কিছুতেই করুমনা ...
কিছুক্ষন পরে প্লান মাফিক ওদের একা করে দিয়ে আমার ভেগে যাওয়ার সিন। উঠতে যাবো - এমন সময় পরিচিত কিছু ছেলের সাথে দেখা হয়ে যায়। বাঁদরের হাড্ডি গুলো অবস্থা আঁচ করতে পেরে সৌজন্য করে বসতে বলার সাথে সাথেই বসে পরে, ফলে সবার জন্য খাবার আনতে গিয়ে শুভর পকেট থেকে বেড়িয়ে যায় অতিরিক্ত বেশ কয়েকটা টাকা। মনে মনে হাসি আমি আর উঠে পড়ার ফাঁক খুঁজি। এমন সময় জ্যাকেটের কলারে হ্যাচকা টান দিয়ে কে যেন প্রায় মাটিতে ফেলে দেয় আমাকে।
"তুই ক্যাম্পাসে? আমার হলের পাশে? আমাকে কল দিস নাই কেন? আমি কি করছি? ঠিকানা ভুইলা গেছিস? চিনতে পারছিস আমাকে? না কি তাও পারিস নাই? বল তো আমি কে? তুই এমন হয়ে গেলি কেন?......" প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যায় রিতু আপা। আমি থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়াই। মিন মিন করে বলার চেষ্টা করি যে আমি জানতামনা যে আপু এখন রাজশাহীতে, কিন্তু আপু কিছু শোনেনা। ইচ্ছেমত কথা শুনিয়ে গটগট করে হেটে চলে যায়, রিতু আপু আমার ফুফাতো বোন। আমি জানি এখন হাজারবার ডেকেও আর ফেরানো যাবেনা ওকে। অনেক বেশী অভিমানী আমার বোনটা। ওদিকে তিথীর কয়েকজন বান্ধবী এসে জুটেছে এর মধ্যেই। কাজেই প্লান বদলে ফেলি সাথে সাথেই। 'একটু আসছি' - বলে শুভকে নিয়ে সরে আসি। ওর হাতে ঝটপট এক গোছা কামিনি ফুল তুলে ধরিয়ে দেই, বুঝিয়ে দেই কি করতে হবে। তারপর আবার ওকে আড্ডায় বসিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে আসি ভার্সিটির মিলনায়তনের পেছনে, নাট্ট্যচক্রের ছেলেমেয়ে গুলোর সাথে জমিয়ে আড্ডা দেই কিছুক্ষন। সন্ধ্যের একটু পর শুভকে তুলে নিতে ফিরে যাই প্যারিস রোডে।
তাপসী রাবেয়ার দিঘীর পাশে শুভ আর তিথীকে গল্প করতে দেখতে পাই। ওদের কাছ থেকে একটু দূরে বাইক থামিয়ে সিগারেট ধরাই। শুভকে ইশারা করতেই সে উঠে পরে, তারপর মাঠের মধ্যে দিয়ে না এসে একটু ঘুরে তিথীকে নিয়ে হাটতে থাকে। কামিনীর ঝোপের পাশ দিয়ে যাবার সময় শুভ একমূঠো কামিনী তুলে তিথীকে দেয়। তিথী খুব আনন্দের সাথে ফুলগুলো হাতে নেয়। মেয়েরা জন্মগত ভাবেই অনেক ভাল অভিনেত্রী। সে মুহুর্তে তিথীকে দেখলে সে কেউ মনে করবে যে এই মেয়ে কামিনী ফুল এই মাত্র দেখেছে এবং সে কামিনী দেখে অভিভুত। অথচ ওদের হলের আশেপাশে, আর গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে কামিনীর ঝোপ
ওরা হল গেটে পৌছালে এগিয়ে যাই বিদায় নিতে। ওদের সময় দিতে না পারায় কৃত্তিম দুঃক্ষ প্রকাশ করি। এমন সময় কে যেন শুভকে ডাকে, শুভ দাঁড়িয়ে পরে কথা বলে সেই ছেলের সাথে, আমরা এগিয়ে যাই। একটু এগিয়ে গিয়েই তিথী আমাকে বলে "থ্যাঙ্কস" - মুখে ওর দুষ্টুমির হাসি। "থ্যাঙ্কস কেন?" - বোকার মত মুখ করে জিজ্ঞ্যেস করি। "কামিনীগুলোর জন্য" - এবার সত্যি বোকা হয়ে যাই, বলি - 'ফুল তো আমি দেইনি'। 'কার মাথা থেকে কি আইডিয়া আসতে পারে সেটা বোঝার মত বয়স হয়েছে আমার'। বিদায় নিয়ে হলে ঢুকে যায় তিথী। আমি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকি। মনে মনে বলি - 'সর্বনাস, মানুষ এত সহজে আমার প্লান গুলো বুঝে ফেলছে কি করে? এমন ভাবে চলতে থাকলে তো আমার কপালে দুঃখ আছে। ছেলেদের কাছ থেকে এসব বুদ্ধির বিনিময়ে বেশ ভালই চা, সিগারেট, কোক, কেক খেতে পারছি। আমার ব্যবসা তো লাটে উঠবে এমন হলে'। চিন্তিত মুখে শুভকে নিয়ে ফিরে আসি হলে।
ক্রমশ ...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




