somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখী হবার সহজ তরিকাঃ শত ক্ষোভ আর দুঃখের মাঝেও হাঁসবেন কেন জানতে হলে আসুন!

০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাপানী সাধক হো তেই এর জীবন দর্শন দিয়েই শুরু করা যাক!
হো তেই বুদ্ধের বাণী প্রচার করতেন।
কিন্তু তাঁর পুরো শিক্ষাই ছিলো হাসি। শুধুমাত্র হাসি। তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে; বাজার থেকে বাজারে ঘুরে বেড়াতেন।
গ্রামের মাঠে বা বাজারের মাঝখানে দাঁড়াতেন। তারপর হাসতে শুরু করতেন।
এই হাসি ছিল তার বাণী। তাঁর হাসি যেমন ছিল প্রাণবন্ত, তেমনি ছোঁয়াচে। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসত এই হাসি।
দমকে দমকে সারা শরীর নাচিয়ে, পেটে ঢেউ তুলে উঠে আসত এই হাসি। হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি যেতেন তিনি।
তার চারপাশে সমবেত জনতাও হাসতে শুরু করত। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ত চারপাশে। পুরো গ্রাম-জনপদের সবাই যোগ দিত হাসিতে, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যেত তারা।

গ্রামের লোকেরা হো তেই-এর জন্যে অপেক্ষা করত। কখন তিনি আসবেন। কারণ তিনি নিয়ে আসতেন হাসি, আনন্দ, উচ্ছলতা, আশীর্বাদ। তাঁর সাথে হাসিতে যোগ দিয়ে দুঃখ-শোক ভুলে যেত, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত হতো মানুষ।

অবাক হলেন? হাঁসির মাধ্যমে না হয় দুঃখ-শোক ভুলে থাকা যায় মানলাম, কিন্তু তাই বলে রোগ-ব্যাধি সারানো!
হাসির নিরাময় ক্ষমতা নিয়ে ডাক্তাররা প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং করছেন।
যত গবেষণা হচ্ছে তত নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে, এবং প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রমাণিত যে হাঁসির মাধ্যমে ছোটখাটো অনেক রোগ-ব্যাধি সেরে যায়!
কেউ যখন হাসে তখন তার সারাদেহেই স্পন্দন তৈরি হয়। আর এই স্পন্দন অবশ্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনে।
তাই অনেকে বলেন হাসিই সর্বোত্তম ওষুধ। ছোটখাটো যে কোনো রোগ সেরে যায় হাসিতে।
সাধারণ সময়ের থেকে হাসির সময় গভীর নিশ্বাস নেয়া হয়, যা পুরো শরীরে প্রভাব ফেলে। গভীর শ্বাস নেয়ার জন্য অক্সিজেন শরীরে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করে। ফলে শ্বাসনালীতে বায়ু চলাচল বাড়ে, মাংসপেশির আরাম হয়, হৃৎপিণ্ড ও রক্তসঞ্চালন উদ্দীপ্ত হয়।
হাসতে থাকা মানুষের মস্তিষ্ক শরীরে অবসাদের হরমোন যেমন অ্যাড্রেনালিন, এপিনেফ্রিন ও কর্টিজন তৈরি বন্ধ করে দেয়।
যখন কেউ হাসে তখন সেরোটনিন নিঃসরণ হয়। এটা সুখী হরমোন হিসেবে পরিচিত।
তাই যত বেশি হাসবে মানুষ তত বেশি সুখী বোধ করবে।

অনেকে বলে সব সময় হাঁসা পাগলের লক্ষণ, তখন বুঝতে হবে কথাটি যে বলেছে সে নিজেই হাঁসির উপকারীতা সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা সে নিজেই একটা পাগল! :)
কেউ হাসলেই যে তার পার্সোনালিটি কমে যাবে আর মুখ ভেড়ার মত গম্ভীর করে রাখলেই যে তার পার্সোনালিটি বেড়ে যাবে এমন হাস্যকর চিন্তা শুধুমাত্র বোকাদের মাথাতেই আসা সম্ভব!
এখন আপনি বলতে পারেন, মাথার মধ্যে নানা দুঃশ্চিন্তা, ক্ষোভ, রাগ আর কস্টের অনুভূতি নিয়ে কিভাবে হাঁসবো!
এটা ঠিক যে মনের মধ্যে ক্ষোভ-রাগ-বিষাদ নিয়ে হাঁসা টা খুবই কঠিন একটা কাজ, কিন্তু অসম্ভব নয়!
আরো অনেকের মত আমার নিজের ও এমন মাইনকার চিপায় পড়া অনুভূতি অনেকবার ই হয়েছে।
ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে-
“Fake it, Until you make it!” ;)



তাই যতক্ষন না আপনার ভেতর থেকে রাগ-ক্ষোভ বা বিষাদের অনুভূতি পুরোপুরি না যাচ্ছে, অভিনয় করে হলেও হাসুন! তাতেও আপনি হাঁসির পজিটিভ ফলগুলো পাবেন।
কারন আপনি যখন হাঁসবেন, আপনার রাগ-ক্ষোভ আর কস্টের অনুভূতি গুলো আস্তে আস্তে মিইয়ে যেতে থাকবে। এক সময় একেবারেই নাই হয়ে যাবে! ফলে আপনি রিল্যাক্সড বোধ করবেন। পাশাপাশি আপনার অবদমিত রাগ-কস্ট বা অন্যান্য অনুভূতি গুলির সাথে লড়াই করার মত মানসিক শক্তি ততক্ষনে পেয়ে যাবেন।
অতএব! বেশি বেশি হাসুন! সব সময় হাসুন!! প্রাণ খুলে হাসুন!!!
হো তেই-এর মত করে হাসুন। :D

হাঁসির উপকারীতাঃ
সময়াভাবে এবং পোস্ট বেশি বড় হয়ে যাবে সেজন্য উপরে অল্প কিছু শারিরীক এবং মানসিক উপকারীতা কথা উল্লেখ করেছি। তবে হাঁসির সামাজিক উপকারীতার কথাও একেবারে ফেলনা নয়।

•হাঁসি যেকোন সম্পর্ককে মজবুত করে।
প্রবাদে আছে, “হাঁসি মুখের লোক ছাড়া দোকান খোলা উচিৎ নয়”। আপনি যখন কোন শপিং মলে বা দোকানে আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য যান, দোকানদার যদি আপনার সাথে হাঁসিমুখে অভ্যর্থনা জানায় এবং ভাল ব্যবহার করে-আপনি সে দোকান/শপিং মলের নিয়মিত একজন কাস্টোমার হবেন এটা নিশ্চিত।

•একজন গোমড়া মুখো রাশভারী লোকের সঙ্গ খুব কম মানুষেই পছন্দ করে। হাঁসিখুশি মানুষের দিকেই সবাই বেশি আকৃষ্ট হয়। আপনি যতক্ষন একজন হাঁসিখুশি মানুষের সাথে সময় কাটাবেন, আপনার মনটাও ভাল থাকবে।

•কর্পোরেট লাইফেও হাঁসির উপকারীতা অনেক! অফিসের বস যদি হাঁসিখুশি হয় তাহলে সে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তার সহজেই একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে যায়। কেউই হুকুম পছন্দ করেনা, কিন্তু একটি হাঁসিমুখের অনুরোধ সবাই ফেলতে পারেনা! ;)

•প্রেম-ভালবাসার ক্ষেত্রেও হাঁসির ভূমিকা অপরিসীম! নতুন কোন সম্পর্ক তৈরিতে হাঁসি একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। কারো দিকে তাকিয়ে আপনি যখন মোলায়েম ভাবে হাঁসছেন, স্বভাবতই সে কৌতুহলি হবে আপনার প্রতি।

•প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও হাঁসতে পারাটা আপনার প্রচন্ড মানসিক ক্ষমতার পরিচয় বহন করে। আপনার আশে-পাশে অনেককেই দেখবেন বুকের ভেতর এক সমুদ্র কস্ট নিয়েও মুখে সারাক্ষন হাঁসি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
মুভিতে দেখে থাকবেন, ভিলেন কোন কারনে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত কিন্তু তারপর ও তার মুখে একটা ক্রুর হাঁসি খেলা করে! হাঁসির মাধ্যমেই সে তার রাগকে দমন করছে। আমি আপনাকে ভিলেনের মত ক্রুরভাবে হাঁসতে বলছিনা। তার মানসিক ক্ষমতার উদাহরণ দিতে চেয়েছি মাত্র! ;)

এবার আসুন দেখি কিভাবে আমরা আরো বেশি বেশি হাঁসির সুযোগ তৈরি করে নিতে পারি।
•হাতের কাছে মজার কোন কমেডী মুভি থাকলে দেখতে বসে যান।
•মজার কোন কৌতুক বা কমিক্সের বই সংগ্রহে রাখুন এবং মাঝে মাঝে পড়ুন।
•ফেসবুকের বিভিন্ন জোক্সের গ্রুপ আছে ওগুলোতে জয়েন করতে পারেন, পাশাপাশি ব্লগের বিভিন্ন মজার মজার পোস্ট গুলো পড়তে পারেন।
•যারা সবসময় হাঁসি-খুশি থাকে বা মজা করতে পারে এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন।
•বাসায় পোষা কোন প্রাণী যেমন কুকুর বা বিড়াল থাকলে ওগুলোর সাথে খেলা করতে পারেন।
•বাসায় বা আশে-পাশে কোন ছোট বাচ্চা থাকলে খেলা বা খুনসুটি করতে পারেন।
•ছোটখাটো কিছু পাগলামি করতে পারেন। (এই পাগলামির ব্যাপারটা ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবোনা, একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম। তাই এটাকে আপেক্ষিক হিসাবে ধরে নিতে পারেন!)

আজ এ পর্যন্তই, সবাই ভাল থাকুন। হাঁসিখুশি থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৬
৪৮টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×