somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছিস তুই?

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকে খুব ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেছিলাম। ছুটির দিন। তাই রোজকার মত হুড়োহুড়ি করে রেডী হয়ে কাঁধে ভারি ব্যাগ আর হাতে একটা মোটা বই নিয়ে কলেজে দৌঁড়ানিও ছিলনা। তাই খুব আয়েশি ভঙ্গিতে ল্যাপটপ চালু করে ফেইসবুকে লগ ইন করেই দেখি তুই প্রোফাইল পিকচার বদলেছিস। ভাইয়ার সাথে তোর হাসিহসি মুখের মিষ্টি ছবিটা দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেল! কিন্তু যথারীতি তোকে পঁচানি দেওয়ার দুষ্টু বুদ্ধিটা মাথা থেকে নামাতে পারলাম না। তাই ছবির নিচে কমেন্ট করেই ফেললাম-"তোর গায়ের গন্ধে তো ভাইয়া মুখ পুরা কুঁচকে ফেলসেন রে!" #:-S


কতদিন হয়ে গেল তুই কানাডায় চলে গেছিস। তুই যেদিন চলে গেলি তার আগের রাতে ফোন করে তোকে বলেছিলাম,"তুই দেখিস তোকে রোজ ফেইসবুকে এক্‌টা করে বিশাল সাইজের এসএমএস পাঠাব"। অথচ ব্যস্ত এবং স্বার্থপর আমি কি ভয়ঙ্কর অবলীলায় নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতিটা কাঁচের কাপ-পিরিচ ভাঙ্গার মত ভেঙ্গে ফেললাম। তুই কি আমাকে স্বার্থপর ভাবিস তোর খোঁজ-খবর ঠিকমত নেইনা দেখে? ভাবতে পারিস--সেটা তোর ব্যপার। কিন্তু স্বার্থপরতার সাথে মিশে থাকা আমার অভিমান টুকু কেন তোর চোখে পড়েনা রে?




তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব সেই ক্লাস ফাইভ থেকে। তখন আমরা দু'জনেই ঝুঁটি করা পিচ্চি দুইটা বাবু। (তুই কি বেণী করতি তখন? হ্যাঁ মনেহয়) এরপর কখন যে সময় গড়িয়ে গেল জানিনা। কখন যে তুই আমার অনেক বেশি আপন হয়ে গেলি। আমিও কি তোর আপন হয়েছিলাম? এর উত্তর টা আমি জানি রে। হয়ত তুই লেখাটা পড়লে প্রতিবাদ করবি রাগ করবি আমাকে একরোখা,স্বেচ্ছাচারী বলবি কিন্তু আমি জানি,আমি সত্যি বলছি তুই কখনই আমাকে তোর কাছের কোন বন্ধু ভাবতে পারিসনি। হয়ত আমার দোষেই। এত বেশি অর্ন্তমুখী ছিলাম আমি সবসময়! কিংবা কেন জানি আমাদের চিন্তা-ভাবনা গুলো একই সরলেখা না হয়ে বক্ররেখা হয়ে যেত! আমি তোর উপর বিরক্ত হতে পছন্দ করতাম,তোর সাথেই চিৎকার করতাম,ঝগড়া করতাম আবার আলতো ভালবাসার পরশে তোকেই কিন্ত কাছে টেনেছি বারবার। আমাদের টিনএজ বয়সের প্রতিদিন প্রেমে পড়ার সেই মুহূর্তে কিনবা হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপ করা বিষন্ন দিনগুলোতে তুই-আমি ছিলাম কতটা কাছাকাছি!




দুরত্ব সময়ের সাথে বেড়ে যায় বলে আমরা সবসময় সময়কেই দোষারোপ করি। কিন্ত তোর আর আমার দুরত্ব এতখানি বেড়ে যাওয়ার জন্য কি শুধু সময়-ই দায়ী ছিল নাকি দায়ী ছিল আমাদের এক জন আরেক জন্‌কে ক্রমাগত ভুল বোঝা? তুই চেয়েছিলি আমি তোর নতুন বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে থাকি,তাদের কাছাকাছি থেকে যেন তোর কাছাকাছি হই। কিন্তু এমন এক সময়ে তুই এই দাবিটুকু করেছিলি যখন আমি সেটা রাখতে পারিনি রে। সেই বিষন্ন,ভেঙ্গে পড়া সময়ে আমার অন্য কারো সাথে হাসাহাসি করতে,ঘুরে বেড়াতে একদম-ই মন চায়নি। বরং বদ্ধ ঘরে একলা থাকাটাই আমার ভাল লাগত। আর তখন-ই তুই আমাকে আরো বেশি একা করে দিয়ে আনন্দে মেতে উঠলি অন্যদের নিয়ে। তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবি,ফেইসবুকে তাদের নিয়ে স্ট্যাটাস আপডেট দেখতে দেখতে আমি বুঝতে পারলাম তুই আর আমার সেই "তুই' নেই,যার কাছে মন খুলে সব বলে ফেলা যায় নিমিষে,যার কাছে করা যায় সন্ধ্যেবেলা বাদাম খাওয়ার আবদার! :(




অবশেষে একদিন পড়ালেখার জন্য তুই পাড়ি জমালি সূদুর পরবাসে। তুই চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই তোর ফেইসবুক ওয়াল,ইনবক্স ভরে উঠেছিল শুভানুধ্যায়ীদের বিদায় বার্তায়। কিন্তু আমি? আমি তোকে কিচ্ছু বলতে পারিনি। কত্ত কিছু বলব ভেবে ঠিক করে রেখেছিলাম কিছু বলতে পারিনি। শেষ যেদিন তোর সাথে আমার দেখা হল তোর জন্মদিনে সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ,সেদিন তোর বাসায় তোর অনেক ফ্রেন্ড--ভার্সিটি,কলেজ,স্কুলের। অনেক ব্যস্ত ছিলি তুই,সবার সাথে ফটোসেশন,কেক কাটা। এসবের মধ্যেও তোকে আলাদা করে ডেকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম। তোকে যখন ডাক দিলাম তুই এসে বললি-
-"কি রে কি বলবি?"
-"তুই কি জানিস তুই চলে গেলে বাংলাদেশ আর্বজনা মুক্ত হবে?"
তুই নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিলি,
-"হ্যাঁ জানি তো। তবে তুই আগে নিজের পা-এর ময়লা দূর কর":D
নাহ! তুই চলে যাবার আগে তোকে এক্‌টাও নাটুকে টাইপ ইমোশনাল কথা বলতে পারিনি। তুই চলে যাওয়ার রাতে যখন ফোন করলাম,তখন কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। যার সাথে এতদিন এত কথা বলেছি তার সাথে বিদায় বেলায় যে কোন কথা বলতে পারবনা এটা হয়ত শুধু ঈশ্বর-ই জান্‌ত! ফোন রাখার সাথে সাথে সব আবেগের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে শিশুর মত চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। তুই কি জানিস সেটা? না তুই জানিস না,তোকে বলা হয়নি,বলাও হবেনা হয়ত কোনদিন!


তুই কানাডা চলে যাওয়ার পর যতবার ইয়াহুতে তোর সাথে চ্যাট করেছি-ঝগড়া ছাড়া একটা চ্যাট ও শেষ হয়নি। তাই এখন আর আমি ইয়াহু তে তুই আসলেও ইচ্ছা করেই অনলাইন হইনা,ফেইসবুকে তোর স্ট্যাটাস-এ ইচ্ছা করেই লাইক দেইনা,কমেন্ট করিনা। তুই ও কি তাই? সদা ব্যস্ত এবং পরীক্ষার চাপে ক্লিষ্ট আমি তোর কথা মনে করার ও আসলে তেমন সময় পাইনা। শুনে রাগ করলি তাইনা? অথচ এই আমি-ই হঠাৎ কোন কোন একদিন কলেজ থেকে এসে ঘুম দিয়ে উঠে চোখ খুল্‌লেই যেন তোর মিহি গলা শুনি,মাথার কাছে বসে তুই বলছিস,"কিরে আর কত ঘুমাবি? আন্টি দেখেন কেমন ফোঁস ফোঁস করে ঘুমাচ্ছে! অই ওঠ! বাইরে থেকে ফুচকা খেয়ে আসি!"




কেমন আছিস রে তুই? তুই কি জানিস রে,তুই চলে যাওয়ার পর আমার আর একদিনও লেকের পাড়ে বসে ফুচকা খাওয়া হয়নি? তাড়াতাড়ি চলে আয় না বাংলাদেশে! তোর ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছা হলেই তুই চলে আসবি আমার বাসায়,আমাকে ঘুম থেকে তুলে ফুচকা খেতে নিয়ে যাবি আর আমি তোর-ই টাকায় তোর সাথে ফুচকা খাব!:P
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৪
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×