somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি তোমাকেই বলে দেব সেই ভুলে ভরা গল্প.....কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়..(৩য় প্‌র্ব)

১১ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম প্‌র্ব

দ্বিতীয় পর্ব

সায়ন্‌কে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছিল আনিলা। হয়ত তার উচিত ছিল সায়নের থেকে দূরে সরে যাওয়া,কিন্তু সে পারেনি। কিসের টানে যেন সায়নের সাথে প্রতিদিন কথা বলত আনিলা। সায়ন ও খুব আগ্রহ নিয়েই কথা বলত আনিলার সাথে। এখন আনিলার কেন জানি মনে হয় আনিলার সাথে পাগ্‌লটা কথা বলতই শুধু সামিহার জন্য। সামিহা আর আনিলা একই কলেজে পড়ায় সামিহার সব খোঁজখবর আনিলার কাছ থেকেই পেত সায়ন। সামিহা ক্লাসে কখন হাসল,কখন কথা বলত সব খেয়াল করত আনিলা। সব সময় হীনমন্যতায় ভুগত আনিলা। ভাবত সে দেখতে অনেক খারাপ,সামিহা কত্ত সুন্দর, সে দেখতে খারাপ দেখে তাকে কেউ পছন্দ করেনা! ক্রমাগত বিষন্নতায় ডুবে যাচ্ছিল সে। অথচ হাসিখুশি থাকত জোর করেই,যদি বাসার মানুষেরা কিছু সন্দেহ করে! কলেজ থেকে বাড়ি ফিরেই আনিলার একমাত্র কাজ ছিল সামিহার কথা সায়নকে বলা।

আনিলার সাথে ফোনেই কথা হত সায়নের। এর মধ্যেই সায়ন একদিন হঠাৎ করেই আনিলাকে “তুই” করে বলা শুরু করে। আনিলাও ভেবেছিল “তুই” বললেই হয়ত সায়ন্‌কে শুধু বন্ধু ভাবা যাবে! বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু নয়। ইন্টারে সায়নের সাথে একসাথে ফিজিক্স কোচিং এ ভর্তি হল আনিলা। মনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করত আনিলা,সায়নকে শুধু বন্ধু ভাবার জন্য। সায়ন একদিন কিভাবে যেন টের পেয়ে যায় আনিলা পছন্দ করে তাকে। হাসান স্যারের বাসায় ক্লাস শেষ করে আনিলাকে একদিন থামায় সায়ন।

--নীলু,পরীক্ষা ফাটায় দিলি,না?
--হ্‌ইসে একরকম। তুই কিছু বলবি? আমাকে নিতে গাড়ি চলে আসছে।
--তোকে সন্ধ্যায় ফোন দিব।
--আজকে সামিহা কলেজে আসেনাই। তাই নতুন কোন নিউজ নাই।
--আমি কি শুধু ওর কথা শোনার জন্য্‌ই তোকে ফোন দেই?

কি স্‌হজেই সায়ন বলে ফেলল সামিহাকে “ও”। “ও" তোর কে রে সায়ন? তোর ও তোর কথা কয়দিন ভাবে বল? আমার মত করে তোর কথা কি তোর “ও” ভাবে? তুই তো ওকে ফোন করসিলি আমার থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে। অপমান করে ফোন রেখে দেয়নাই? এখনও,এরপরও তোর ভালবাসা কমেনা?—কথাগুলো মনের মধ্যে এক্‌টানে ঘুরপাক করছে আনিলার। কিচ্ছু ভাল লাগছেনা। সায়নের সামনে থেকে যেতে পারলে বাঁচে সে এখন। সায়নের ডাকে ধ্যানমগ্ন হয় তার।

--কি রে কথা কানে যায়না?
--কি?
--আমাকে একটা কথার উত্তর দিবি? কোন ভনিতা ছাড়া? স্‌রাস্‌রি জ্ঞিজ্ঞেস করব কিন্তু!
--ভাইরে এত কথা বলার টাইম নাই। ভনিতা তো তুই করতেসিস। কি বল্‌বি বল?
--তুই কি আমাকে পছন্দ করিস নীলু? স্‌ত্যি এনসার দে।

স্‌মস্ত পৃথিবীটা যেন টলে উঠল আনিলার। সে চেষ্টা করছিল বলতে,’’আমার কি ছেলের অভাব পড়সে?” কিন্তু কিচ্ছু বলল না। আবার কথা বলে উঠে সায়ন,

--চোখের পানি মুছ নীলু। প্‌রের ব্যাচের জুনিয়রা তাকায় আছে তোর দিকে। চোখে পানি কেন? চোখে পানি আসার মত কি বললাম তোকে?
--আমি আসি সায়ন। মা মিস্‌কল দিচ্ছে।
--শোন নীলু...

সায়নকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেদিন প্রায় দৌড়ে গাড়িতে ঊঠে পড়ে আনিলা। সেদিন রাত্রে অনেকবার ফোন করে সায়ন। একবার্‌ও ধরেনি সে। অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নেয়। সায়নকে সরাসরি বলবে যে সে তাকে পছন্দ করে। এরপর যা হবার হবে। মিথ্যে অভিনয় আর নয়,আর নয়—দেখে নিব আমি এর শেষ! পরের দিন ক্‌লেজ থেকে ফিরে আনিলা নিজেই ফোন করে সায়নকে,

--হ্যালো সায়ন!
--তোর সাথে কথা নাই। এতবার ফোন করলাম কাল।
--আমি আজকে তোকে কিছু কথা বল্‌ব। তুই মনোযোগ দিয়ে শুনবি। কথার মাঝে কোন কথা বলবি না।
--আল্লাহ গো! আমার কান শেষ!
--আচ্ছা! তাইলে থাক। আমি রাখি।
--না না বল। আমি এখন সিরিয়াস। বল,নীলু। আমি শুন্‌ছি।
--তুই কাল স্যারের বাসায় জ্ঞিজ্ঞেস করেছিলি আমি তোকে পছন্দ করি কিনা? হ্যাঁ সায়ন,আমি তোমাকে অনেক বেশি পছন্দ করি। এই পছন্দের শুরুটা ক্লাস টেনের বাংলা কোচিং-এ। তুই অবশ্য আমাকে তখন চিন্‌তি না আর আমিও জানতাম না যে তুই সামিহাকে...জানলে হয়ত...আর প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা মোহ ছিল। কিন্তু এখন আমি জানি এটা আসলে মোহ না...তোর সাথে কথা বল্‌তে বল্‌তে আমি সত্যিই তোকে...
--আনিলা,থাম। তুই কি শিউর? তুই কি জানিস তুই কি বলছিস?
--হ্যাঁ সায়ন,আমি জানি। কাল রাতে আমি অনেকটা সময় এটা নিয়ে চিন্তা করেছি।
--দেখ আনিলা,আম্‌রা এখনো অনেক ছোট,এখনো কি এসব নিয়ে ভাবা...আর আম্‌রা তো খুব ভাল ফ্রেন্ড!
--সায়ন,তুই আসলে ব্যাপারটা কাটিয়ে যেতে চাইছিস ফ্রেন্ডশীপের দোহাই দিয়ে। আমি জানি আসল ব্যাপারটা কি? তুই আসলে সামিহাকে পছন্দ করিস। আমি তো ওর মত এত সুন্দ্‌র না! তোর গার্লফ্রেন্ড হ্‌ওয়ার যোগ্যতা কো্‌থায় আমার? আমি তো সামিহার মত পর্দা করে চলিনা,তোর সাথে ফোনে কথা বলি,টাঙ্কি মারি! আমি তো খারাপ মেয়ে!

গলা ধরে আসে আনিলার। কথাগুলো বলে হুট করেই ফোন রেখে দেয় সে। ফোন রাখার পরে সায়নের পাঠানো এসএমএস টা সারাজীবন মনে থাকবে আনিলার।

আমাকে ভুলে যা নীলু। তুই অনেক ভাল মেয়ে। তোর চেহারা দিয়ে কোন্‌দিন তোকে বিচার করা ঠিক হবেনা। তোর মত সোজা স্‌রল মেয়ে আমি আর জীবনেও দেখিনি। কিন্তু তোকে যে আমি শুধু খুব ভাল বন্ধু হিসেবেই দেখি রে! আর তুই তো জানিস আমি সামিহাকে পছন্দ করি অনেক বেশি। ওর জায়গা আমি অন্য কাউকে দিতে পারবনা কোন্‌দিন। আমাকে মাফ করে দিস,নীলু। আমার সাথে বরং কয়েকটা দিন তুই কথা বলিস না। তোর জন্য্‌ই ভাল হবে। আমি জানি একদিন অনেক ছেলে তোকে পছন্দ করবে!

চোখের সামনে ভেসে ঊঠা নষ্ট অতীতটাকে ঠেলে ফেলে ব্‌র্তমানে ফিরে আসে আনিলা। কেন আজ আবার এসব ভাবছে যে! স্‌ময়টাই নষ্ট! সব সায়নের দোষ। এখন তো সে আর সায়ন্‌কে চায় না। কিন্তু এক্‌সময় সায়ন্‌কে যখন ফোন করে বারবার কথা বলতে চাইত আনিলা—তখন সায়নের কত ভাব ছিল! সায়ন এক্‌সময় তার ফোন ধরতে ধরতে তার প্রতি বিরক্ত হয়ে বলেছিল—“তুই আমার জন্য একটা পেইন। আমাকে আর ফোন করবিনা।’’ এত অপমানের পরও সায়নের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করেনি আনিলা। হয়ত সেটা বোকামি ছিল,তবুও পাগলটার জন্য ভাল্‌বাসাটা একস্‌ময় কেন জানি মায়ায় পরিণত হল।

সায়নের প্রতি কিশোরী বয়সের ভালবাসাটা হঠাৎ করেই কমে আস্‌তে থাকে আনিলার। ইন্টারের পর ভর্তি ঢাকা ভার্সিটিতে বায়োকেমিষ্ট্রিতে চান্স পাওয়া, ন্‌তুন বন্ধু,ব্যস্ত জীবন, ফোন করলেই সায়নের অকারণ ব্যস্ত্‌তা দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে দেওয়া—এসব উপলক্ষ্য হঠাৎ করে সায়নের সাথে দূরত্বটা বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুন। হয়ত কিছুটা ইচ্ছা করেই—পুরোনো ক্‌ষ্ট,পুরোনো জীবন ভুলে ন্‌তুন করে শুরু করতে চেয়েছিল আনিলা। সায়ন্‌কে আর আগের মত ফোন করার সময় পেত না আনিলা। এই এতগুলো বছ্‌রে আনিলা নিজেকে ধীরে ধীরে সুন্দর করেছে, আগের বিষন্নতা ভুলে সে এখন হাসিখুশি এক্‌জন।

ঢাকা ভার্সিটিতে ভ্‌র্তির প্রায় আট মাস পর সায়নের সাথে আনিলার দেখা হল এক ফেব্রুয়ারিতে বই মেলা চত্বরে! হঠাৎ করেই দেখা হল। সেদিনের কথাগুলোও ডায়রিতে লিখে রেখেছে সে। ওই লেখাটা আজো অস্‌ম্পূর্ণ! সেদিনের পর আর কোন্‌দিন্‌ও সায়ন্‌কে নিয়ে লেখেনি আনিলা।

(চল্‌বে)[/si

শেষ পর্ব

অঃটঃ গল্পটা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি পাঠকেরা বিরক্ত হচ্ছেন। এর পরের পর্বেই গল্পটা শেষ হয়ে যাবে। কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। :)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৩৭টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×