somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো থাকুক সবুজেরা,ভালো থাকুক তাদের হাসিমুখ!

০১ লা এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকাল সাড়ে নয়টা। দিনের বেশির ভাগ সময় ঝিমিয়ে থাকা কলেজ ক্যান্টিনটা এইসময় একটু প্রাণ ফিরে পায়। গল্প আর আড্ডায় মুখরিত পুরো ক্যান্টিন। 1st year-এর আঁতেল শ্রেণীর পিচ্চিগুলো ভুরু কুঁচকে bones-এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত,তাদের টেবিলে রাখা সমুচাতে মাছি বসছে,কোন নজর নাই সেদিকে। আবার কেউ কেউ গ্রুপ ষ্টাডি করার নামে ক্যান্টিনের সবচেয়ে লম্বা টেবিলটা দখল করে বই-খাতা ছড়িয়ে রেখে বাংলাদেশ ৫৮ রানে আউট হওয়ায় সাকিবের গুষ্টি উদ্ধারে মত্ত! কোন কারণ ছাড়াই তাঁরা এক্‌টু পর পর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। আমি আর অনু সেই গ্রুপটার দিকেই বারবার বিরক্ত চোখে তাকাচ্ছি। কিন্তু সিনিয়র ব্যাচ বলে কিছু বলতেও পারছিনা। আমাদের বিরক্তির একমাত্র কারণ হল আমরা এক হাতে চায়ের কাপ আর এক হাতে মোটা এক্‌টা বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,বসার জায়গা নাই। ভাইয়া-আপুরা গল্প বাদ দিয়ে উঠে গেলে আমরা আরাম করে বসে চা'টা খেতে পারি। এমন সময় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সবুজ এসে আমাদের ডাক দিল--

--দোস্ত! দোস্ত! আপনাদের লাইগ্যা চেয়ার খালি করসি । আর খাড়াইয়া থাকতে হইবনা! গিয়া বহেন!
--কই ছিলা তু্মি এতক্ষন? আগে দেখলাম না ক্যান্টিনে?
--নিচে গেসিলাম টেহা ভাঙ্গাইতে। আপ্‌নারা গিয়া বহেন তো!

সবুজের বয়স কিছুতেই আট থেকে দশের বেশি হবেনা। আমাদের ক্যান্টিনের মামাদের সাথে থাকে,টুকটাক কাজ করে। টুকটাক কাজ করে বললে বরং ভুল-ই হবে,বরং সবচেয়ে বেশি দৌঁড়াদৌড়ি তার উপর দিয়েই যায়। "সবুজ,চা বানাও;সবুজ সিঙ্গারা আন;সবুজ,আজকে মুরগি নাই কেন? ডিম ভাজি আন"। এতসব হুকুমের ভিড়েও আমরা অবাক হয়ে দেখি তার বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নাই কাজ করায়। সবুজকে স্নেহ করে কলেজের সিনিয়র-জুনিয়র সবাই। কিন্তু আমাদের পাঁচজনের গ্রুপটার সাথে সবুজের অন্যরকম একটা হৃদ্যতা আছে। আমরা ক্যান্টিনে আসলেই সবুজ দুষ্টু-মিষ্টি এক্‌টা হাসি দেয়। আমরা খাওয়া-দাওয়া সংক্রান্ত ব্যাপার ছাড়াও সবুজের সাথে অনেক কথা বলি--ও এই কথা বলার লোভেই কিনা জানিনা অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের দেখামাত্র ছুটে আসে! আমাদের বোনরূপী ভাই রাব্বি যেহেতু আমাদেরকে "দোস্ত" বলে তাই সবুজ তার প্রিয় রাব্বি মামার দেখাদেখি আমাদেরকেও "দোস্ত" বলে। ভালোই লাগে পিচ্চিটার মুখে "দোস্ত" ডাকটা শুনতে! সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যপার আমি একদিন ক্যান্টিনে না আসলেই সবুজ পরের দিন মুখ ভার করে রাখে অভিমানে--কথা বলেনা! সেদিন কথোপকথনগুলো এমন হয়--

--কিরে সবুজ,ভাল আছ? নাস্তা করছ?
(সবুজের মুখ বন্ধ)
--কথা বল না ক্যানো? মামারা বকা দিয়েছে? নাকি আম্মার কথা মনে পড়ছে?
(সবুজ খুব ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে)
--আচ্ছা যাও,আমাকে এক্‌টা ডালপুরি এনে দাও।
--আপনারে কিছু দিমুনা। কাল ক্যান্টিনে আহেন নাই ক্যান? কি করেন হারাদিন? ধুত্তারিক্যা! আইজক্যা সিঙ্গারা খান। গরম আছে অহনও!


সবুজের সাথে আমাদের সবচেয়ে মধুর স্মৃতিটা এ বছর কলেজের পিকনিকে। আমাদের পিকনিক স্পট ছিল স্বপ্নপুরী-তে। সেখানে পৌঁছানোর আগে বাসেই যা মজা হওয়ার হয়ে গেছে। গরমে-ঘামে-ক্ষুধায় আমরা তখন ক্লান্ত! উপরন্তু পিকনিক ষ্পট ভাল লাগছেনা। মনে হচ্ছে একটা বিশাল ফুটবল মাঠের মধ্যে আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। ছবি তোলার-ও উৎসাহ পাচ্ছিনা কেউ। এমন সময় সবুজ এসে বলল,"দোস্ত চলেন ছবি তুলি"। আমরা প্রথমে মনে করলাম ও হয়ত তার ছবি তুলতে চায়। তাই তার কিছু ছবি তুলে দিলাম ফারজানার ক্যামেরা দিয়ে। দেখলাম সে মোটামুটি খুশি হল। কিন্তু দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর সে আবার আমাদের কাছে আসল। এবার সরাসরি-ই বলল,"দোস্ত! ক্যামেরাটা আমারে দিবেন? আমি আপনাদের ছবি তুইল্যা দিমু? আর নাহয় ক্যামরাটা এক্‌টু ধইরা দেহি?" বুঝলাম বাচ্চা ছেলে--ক্যামেরাটা একটু হাতে নেওয়ার শখ হয়েছে। ফারজানা একটু ইতস্তত করে "ভালভাবে ধইরো" বলে ক্যামেরাটা সবুজের হাতে তুলে দিল। আর এরপর-ই বদলে গেল সবুজের মলিন চেহারাটা! পালটে গেল আমাদের বিষন্ন পিকনিক্‌টার রং!

পিকনিকের পুরোটা সময় সবুজ ক্যামেরাটা আকড়ে রেখেছে পরম যত্ম আর ভালবাসায়। আমাদেরকে বহুবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে তার ইচ্ছামত pose-এ,পছন্দমত জায়গায়। সেইসব ছবির বেশিরভাগেই আমরা হয়ে গেছি গলাকাটা ভূত অথবা হাতকাটা রবিন! আর তা দেখে সবুজটার হাসি যেন থামতেই চায়না! তার সহজ- সরল হাসি আর নিষ্পাপ আনন্দ দেখে সেদিন আমরা পাঁচ বন্ধুর কেউ-ই তার ক্যামেরা নিয়ে চঞ্চলতায় রাগ করতে পারিনি--বরং মনে হয়েছে নিষ্প্রাণ পিকনিকের আনন্দ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুন!

পিকনিক থেকে ফেরার সময় সবুজ আমাদের বাসেই উঠল। আমাদের পাশে এসে ফিসফিস করে বলল,"আইজক্যার দিনটা যে ভালা কাটছে! ঢাকায় আইবার পর এমুন দিন কুনুকালে কাডেনাই! খালি বাড়িত যাইব্যার লাইগ্যা মুন কেমুন করে! অহন মনে হইতাছে ঢাকা আইস্যা ভালা হইছে। মা-রে গিয়া কমু আমি ক্যামরা দিয়া ফুডু তুলছি!"

সবুজ আরো অনেক কথা বলে চলেছে। তার প্রায় বেশিরভাগ-ই আমার কানে ঢুকছে না। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ক্যামেরাম্যান সবুজের আনন্দে চকচক করা চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে ঐ নিষ্পাপ চোখের আনন্দ হিমালয় জয়ী মুসা ইব্রাহীম বা কোন খেলায় জয়ের পর বাংলাদেশের তরুন ক্রিকেটারদের আনন্দময় মুখের তুলনায় কোন অংশেই কম নয়! পিচ্চিটার এত খুশি দেখে আমার কেন জানি চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার! আনন্দে উদ্ভাসিত সবুজের ছোট্ট মাথায় আমি আমার স্নেহের হাতটা রাখলাম পরম মমতায়!

ভালো থাকুক সবুজেরা! ভালো থাকুক তাদের হাসিমুখ! :)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৬০টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×