somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনসিকিউর

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। শীতের এই সময়ে ঘর থেকে শুধুমাত্র দুই শ্রেণীর লোকজন বের হবার কথা। একঃ যাদের অনেক কাজ আছে এবং দুইঃ যারা বেকার।
আমি বেকার শ্রেনীর অন্তর্গত। বেকারকে একটা শ্রেনীর অন্তর্গত অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে।
সরকারের করা শ্রেণীবিভাগটা অবশ্য একটু অপমাণজনক। তারা বেকার শব্দটার পরে তিন অক্ষরের একটা শব্দ যোগ করেছে। এবং জোর প্রচারণা চালাচ্ছে "বেকারসমস্যা" শব্দটা নিয়ে। আমি অথবা আমরা যারা নিজেকে বেকারদলের অধিপতি বলে দাবী করি তারা বিষয়টা নিয়ে মোটেও চিন্তিত না। বরং কালে ভদ্রে খুশি হই এই ভেবে যে অন্তত সরকার আমাদের নিয়ে ভাবছে। দেশে কতশত সমস্যা।

পরিবেশ দূষণ, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, গালাগালির উচ্চারণ, যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রহসন!

তারমধ্যে যে আমাদের উপর একটা চোখ আছে তাতেই আমি খুশী। আর খুশী হলে একটাই কাজ করা হয়। তা হল ঘুমানো। শীতের রাতের একঘন্টা ঘুম সমান গরমের রাতের দশ রাতের ঘুম। এত সুন্দর একটা রাত, এখন না ঘুমিয়ে আমি বেকার পদবী মুছে ফেলতে বের হয়েছি। একটা ইন্টারভিউ আছে।
একরকম নিরুপায় হয়েই বের হয়েছি।

এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা লাইটার কিনে পকেটে রাখলাম। বেকার যুবকদের পকেটে টাকা পয়সা না থাকলেও সিগারেট, লাইটার অথবা ম্যাচ রাখার নিয়ম আছে। কঠিন নিয়ম। এই নিয়মের অন্যথা হলে বেকার লিস্ট থেকে নাম বাদ পড়ারও আশংকা আছে।

সব প্রস্তুতি শেষ। এইবার যে জায়গাটাতে যাব সেটার একটু খোজ খবর নেয়া যেতে পারে। সবই মোটামুটি জানি তবুও সময় কাটানোর জন্য কথা বলা। আশেপাশের কয়েকজন লোককে জিজ্ঞেস করলাম। কিভাবে যাবো? জানতে চাইলাম এক দোকানীর কাছে।

চা দোকানদারঃ উহু! খুবই খারাপ জায়গা। আর রাতের এই সময়তো মামা বুঝেনই। ভালা কতা কই রুমে গিয়া ঘুমান।

হারামজাদা আমি ঘুমামু না বাল ছিড়মু তোরে জিগাইসি। গায়ে পৈড়া উপদেশ দেছ।
এইরকম একটা লাইন মাথার ভিতর থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলেও সেটা সম্ভব না। উপদেশ হজম করা এখন একটা নিয়মিত অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে।

টুলে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। পাশেই এক সাদা দাড়িওয়ালা মুরুব্বী।
হঠাত করেই যুব সমাজ ধ্বংসের কারণ এবং তার সাথে মদ গাজা ও সিগারেটের মত ভয়ংকর নিরপরাধ বস্তুসমূহের লেখচিত্র এঁকে দেখাতে লাগলেন। এবং তার একমাত্র উপদেশ আমার প্রতি যেন সিগারেট না খাই।

বিরস বদনে উঠে গিয়ে গন্তব্যস্থলের দিকে রওয়ানা দিলাম। কয়েকটা সিএনজিতে উঠার অনেক চেষ্টা তদবীর করেও হলো না। এখানেও আরেকজন ভদ্রলোক এসে উপদেশ দিয়ে গেলেন।
অন্য একটা সহজ রাস্তা থেকে কিভাবে ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যাবে। এবং তাতে করে দেশ ও দশের কিরুপ উন্নতি সাধিত হতে পারে তাও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝাতে লাগলেন। আমি কিছু বিরক্ত হয়ে যতটা সম্ভব চোখ গরম করে তাকালাম। রিয়েকশন হল উল্টো। তিনি আরো উত্‍সাহ নিয়ে বলতে লাগলেন।


[উপরে এতক্ষণ ধরে ছোট্ট একটা ভুমিকা ছিল।]




ইনসিকিউর
__________________________
কিছু মানুষের চেহারা দেখলেই মনে হয় এরা সবসময় উপদেশ শুনে অভ্যস্ত। তাদের একটা নাম দেওয়া উচিত। নাম দেওয়া হলো ভ্যানব (ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মানব। ঠিক এই মুহূর্তে আর কোন কিছু মাথায় আসছে না)।

এই ধরনের ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাত পাওয়া মাত্রই সকল ধরনের হিত এবং অহিত উপদেশের প্রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপজাতসমূহ তাদের নিকট সমার্পণ করার দায়িত্ববোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সূক্ষ রসবোধ এবং অতিদার্শনিকতার আপাতদৃষ্টিতে উচ্চমূল্যের বায়বীয় জ্ঞানসমূহের সফল প্রায়োগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার গুরু দায়িত্ব অজান্তেই টের পাই। শিক্ষক এবং ছাত্রের বাস্তবিক অবস্থা এবং পদমর্যাদার হিসাব এখানে উহ্য নয় বরং অনুপস্থিত।

এইসমস্ত জ্ঞানসমূহ যেকোন ভাবেই হোক আমার ফাঁকা ব্যাগে পুরিয়ে নেই। দূর্মূল্যের বাজারে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটিমাত্র বস্তু পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে নিতে আপত্তি কোথায়?
বাঙালী ফ্রি পেলে আলকাতরাও মাথায় মাখে। সম্পূর্ণ ভুল কথা।
আলকাতরা মাথায় মাখার কোন বস্তু না। জমে যাওয়া আলকাতরা থেকে ছোট ছোট কালো বল বানানোর আনন্দ বুঝতে হলে একই সাথে আপনাকে অবুঝ এবং ভ্যানব হতে হবে। বলগুলোকে সংরক্ষণ করা এবং কিছুক্ষণ পরপর নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে কোন আকর্ষিত তলে আটকে যেতে না পারে। একবার আটকে গেলে বিরাট বিপদ। কারণ বলগুলো অন্য আরেকজন ভ্যানবের কাছে পৌছানোর দায়িত্বও আপনার উপর অর্পিত হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার সর্বনিম্ন শাস্তি আবারও এইরকম বল পাওয়া। এবং তলে আটকে না থাকা নিশ্চিত করা। আমি অবশ্য ব্যাগে রেখে দেই। আর কাউকে দেই না। মাঝে মাঝে ব্যাগ হাতড়ে বের করি, গণণা করি এবং আবারও ব্যাগেই রেখে দেই। ফলস্বরুপ প্রায়ই নিত্য নতুন বল জমা হচ্ছে এবং ব্যাগটা ভারী হয়ে উঠছে। বহন করার জন্য অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দেবার প্রয়োজনীয়তাও মন থেকে উড়িয়ে দিতে পারছি না।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অণুলিপিঃ

চব্বিশঘন্টা জেগে থাকতে পারদর্শী, মস্তকবিহীন জীবিন্মৃত একজন অকাট বেকার হোমো সেপিয়েন্স নিয়োগ দেওয়া হইবে।

অতিরিক্ত যোগ্যতাঃ চোখ বন্ধ রাখায় পারদর্শী হইতে হবে।

বেতনঃ ধমকসাপেক্ষে।

যোগাযোগঃ লবিং সহকারে।

এখন নিশ্চিন্ত। অসংখ্য হোমো সেপিয়েন্স ভীড় জমাবে। তাদের প্রত্যেকেই মাথা নামক একটা অঙ্গ নিয়ে মহাবিরক্ত। মস্তক ফেলে দিয়ে সবাই একে একে আসতে শুরু করবে। মস্তকসমেত কাউকে দেখলেই গেটের বাইরে থেকে বিদায় করে দেয়ার দায়িত্ব দারোয়ানের। গেটে বসে আছে দাড়োয়ান।

মস্তকবিহিন দারোয়ান!


উত্‍সর্গঃ এই অংশটা আমার কাছে অনেক বড় একটা প্রহসন। অলেখকদের জন্য তো মহাপ্রহসন। সেই হিসাবে আমার জন্যও মহাপ্রহসন। একদিন প্রহসনটা করার ইচ্ছা আছে অবশ্য একটা সুন্দর লিখা লিখতে পারলে। কিন্তু আজকে আর করা গেল না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৩
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×