যে সময়ের কথা বলছি তখন বাংলায় ফাল্গুন মাসের শেষ বা চৈত্রের শুরুর দিকের ঘটনা রাতে তখনো ঠান্ডা লাগে হালকা কুয়াশাও পড়ে।
বয়স তখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পন,যেহেতু শরীরের রক্ত গরম,পৃথিবীর কোন বাঁধাই তখন বাঁধা মনে হতো না।
জ্বিন ভুত পেত্নী স্কন্ধকাটা ডাইনি মেছোভুত বিশ্বাস করতাম ,তথা শৈশবে শোনা রুপকথার গন্ধ তখনো শরীরে লেগে আছে।
হঠাৎ বিশেষ প্রয়োজনে শহর হতে প্রায় দশ কিঃমিঃ দূরে গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি যেতে হবে আমাদের চার বন্ধুকে।
রাত তখন প্রায় তিনটা চারজনে দুই রিকশায় রওনা হলাম,রাস্তা নীরব শহর হতে বেরোনোর পর চারিদিকে কোন আলো ছিলো না। আকাশে চাঁদও নেই সম্ভবত অমাবশ্যার রাত তবে আকাশ পরিষ্কার, তারার আলোয় আর রিকশায় বাঁধা তৎকালীন হারিকেনের আলোতে যেটুকু দেখা যায় তাতেই পথ চলছি।
আমি আর আমার এক বন্ধু যে রিকশায় উঠেছি তার চালক ছিলো যুবক সে দ্রুত রিকসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, অপর রিকশার চালক ছিলো একটু বৃদ্ধ সে আস্তে আস্তে চলছে। এতে আমরা অনেকটাই এগিয়ে যেতাম ওরা অনেক পিছনে পড়ে থাকতো। বার বার রিকসা দাঁড় করিয়ে পিছনের রিক্সাকে সাথে নিয়ে এগুতে হচ্ছে। শেষে বিরক্ত হয়ে পিছনের রিক্সার এক বন্ধু বলল,"তোরা চলে যা আমারা আসছি। বাড়ি তো আমরা চিনিই শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থেকে রাত শেষ করতে হবে না"। অগত্যা পিছনের রিক্সাকে ফেলেই আমাদের রিক্সা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে গেল।
গন্তব্য বলতে গ্রামের বাজার ,সেখানেই পাকা রাস্তা শেষ। সেখানেই আমাদের রিক্সা হতে নেমে যেতে হবে। তারপর হাঁটা পথ খালের পাড় ঘেঁষে কাঁচা রাস্তা।আমরা রিক্সা হতে নেমে পিছনের রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অনেক্ষণ হয়ে যাবার পরও রিক্সা আসছে না দেখে আমার সাথের বন্ধুটি বলল,"আমার ঘুম পাচ্ছে চল বাড়ি যাই ওরা আসতে থাকুক"। উপায়ন্তর না দেখে আমি আমার বন্ধুকে নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম। যেই রাস্তা ধরে যেতে হয় সেদিকে কিছুটা এগুলেই বামে আরেকটা কাঁচা রাস্তা এসে মিশেছে সেটা খালের উপর একটা ব্রিজ দিয়ে ওপারের কাঁচা রাস্তার সাথে সংযুক্ত। দুই রাস্তার সংযোগ স্থলে খুব বড় একটা তেতুল গাছ আছে আর আছে একটা পুরানো গোরস্তান। জনশ্রুতি আছে এই গোরস্তানের জায়গা তৎকালীন স্থানীয় হিন্দু জমিদার দিয়েছিলেন। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে শতবছরের পুরোনো গোরস্তান। আমরা গোরস্তানের পাশ দিয়ে খাল পাড়ের রাস্তা ধরে কিছুক্ষণেই হেটে চলে আসলাম বাড়ি। বাড়ি এসেই আমার বন্ধু নাক ডেকে ঘুম আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন বাকিরা আসলো না তখন চিন্তা হতে লাগলো। ভাবলাম কিছুটা এগিয়ে দেখি কি হলো। ঘুমন্ত বন্ধুকে ডাকলাম সে আর সাড়া দিলো না তাহলে একাই যেতে হবে, ভাবতেই কেমন একটু ভয় হতে লাগলো তাছাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ নেই পাকা রাস্তার বাজার পর্যন্তই বিদ্যুৎ আছে। আত্মীয়র কাছ টর্চ চাইলাম ওনি টর্চ দিলেন কিন্তু তাতে যেই ব্যাটারি তাও দুর্বল। আলো জ্বলে টিমটিম করে। তাই নিয়ে রওয়ানা দিলাম নদীর পাড় ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর যখন তেতুল গাছটার কাছাকাছি আসলাম তখনই টর্চটাও নিভে গেল। যদিও আমি ছোটবেলা হতেই সাহসী তবুও এমন পরিস্থিতিতে আমি কেন যে কারো ভিতরে কাঁপন ধরবে। কারন জায়গাটার একটু আধটু দুর্নাম আছে গ্রামের লোকের মুখে মুখে। তার কিছুটা আমার কানেও এসেছে। সেগুলো বাদ দেই শুনা ঘটনা বলবো না বলবো নিজের দেখা সত্যি ঘটনাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৬