সনাতন ধর্মের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক হলো বর্ণপ্রথা বা বর্ণাশ্রম। সেই সুদূর অতীতে সমাজের প্রয়োজনে বর্ণপ্রথার প্রচলন হলেও এখন তা সনাতন সমাজে গলার কাঁটায় রুপ নিয়েছে।
যদিও অতীতে মানুষের কর্মদক্ষতা,চিন্তাশক্তি,শিক্ষাদীক্ষা,জ্ঞানের ভিত্তিতে সনাতন ধর্মে চার বর্ণে বিভক্ত করা হয়েছিলো কিন্তু এতোকাল পরেও মানুষ সেই বর্ণপ্রথার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে।
বর্ণাশ্রমের প্রবর্তনের শুরুর দিকে বংশ মর্যাদা বিবেচ্য ছিলো না। তখন শিক্ষাদীক্ষা,জ্ঞান,কর্মদক্ষতা,শারীরিক সক্ষমতা,যুদ্ধ কৌশলী,বৈষয়িক জ্ঞানের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণ,ক্ষৈত্রীয়,বৈশ্য,শুদ্রের নির্ধারণ করা হতো। পরবর্তীতে স্বার্থন্বেষী ব্রাহ্মণদের প্ররোচনায় তা জন্ম পরিচয়ের উপর নির্ভর করা শুরু হলো, যেমন-ব্রাহ্মণের ছেলের ব্রাহ্মন হবে, ক্ষৈত্রীয়র ছেলে ক্ষৈত্রীয় হবে।
মনে প্রশ্ন জাগে জ্ঞানী ব্রাহ্মনের পুত্র কি অকালকুষ্মান্ড হতে পারে না?
ক্ষৈত্রিয়র পুত্র কি ভীতু কাপুরুষ হয় না?
নীচু জাতের শুদ্রের পুত্র কি ব্রহ্ম জ্ঞানী হতে পারেনা?
বৈদিক ইতিহাস বলে, হয় এমন অনেক নজির বেদের পাতায় পাতায় আছে।
ব্রাহ্মনরা আরো প্রচার করে যে,ব্রাহ্মনদের সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের মস্তক থেকে, ক্ষৈত্রীয়র সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের বুক থেকে, বৈশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের পেট থেকে আর শুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের পা থেকে।
সুতরাং,ব্রাহ্মনরা উচু জাতী আর শুদ্র সর্বনীচু জাতী।
ব্রাহ্মনরা তাদের স্বার্থের জন্যই প্রচার করে যে নীচু জাতীর কেউ বেদ স্পর্শ বা অধ্যয়ন করতে পারবে না। এতে নাকি সে ঘোর নারকী হবে। এভাবেই তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মনরা অন্যান্য জাতীর সাথে একটা বৈশম্যের সৃষ্টি করে দিয়েছিলো।
কিন্তু প্রকৃত সত্য বেদে নিহিত আছে।
বেদে স্পষ্ট বলা আছে, যার যার কার্যকারণে তার বর্ণ নির্ধারণ করবে। এবং সকলেই সকলের উপর নির্ভরশীল। এখন দেখি বেদে বর্ণপ্রথা নিয়ে কি
বলে -
ব্রাক্ষ্মন কে? ঋগবেদ ৭.১০৩.৮
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস ,সত্,নিষ্ঠাবান , সুশৃঙ্খল,বেদ প্রচারকারী , বেদ
জ্ঞানী সে ব্রাক্ষ্মন।
ক্ষত্রিয় কে? ঋগবেদ ১০.৬৬.৮
দৃড়ভাবে আচার পালনকারী ,সত্কর্মের দ্বারা শূদ্ধ ,
রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস ,ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ন,বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসত্ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।
বৈশ্য কে? অথর্ববেদ ৩.১৫.১
দক্ষ ব্যবসায়ী দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী
প্রদানকারী।
শূদ্র কে? ঋগবেদ ১০.৯৪.১১
যে অদম্য ,পরিশ্রমী, অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।
,
কোথাও বলা নেই এক বর্ণের মানুষ আরেক বর্ণের অস্পৃশ্য। কোথাও বলা নেই যে নীচু বর্ণের মানুষ উচু বর্ণের মানুষের ছায়াও মাড়াতে পারবে না।
বর্তমান সনাতন সমাজে তাই চলছে। উচ্চ বর্ণের মানুষরা নীচু বর্ণের মানুষদের মানুষ মনে করে কিনা সন্দেহ।
এতো কথা বলতে হচ্ছে কারণ একটিই, ভারতে এই বর্ণপ্রথার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে,হয়তো এতে রাজনৈতিক কারনটাও জড়িত। বর্ণের দোহায় দিয়ে চলছে মানুষের উপর অত্যাচার যা লোমহর্ষক।
আমি ধর্ম বুঝিনা, রাজনীতি বুঝিনা,বেদ বুঝিনা,আমি ব্রাহ্মন,ক্ষৈত্রিয়,বৈশ্য,শুদ্র মানি না।
আমি জানি মানবতা, আমি মানুষ তুমিও মানুষ সেও মানুষ এই পৃথিবী তোমার আমার সবার।
ধর্মের নামে বর্ণের নামে যারা মানুষের উপর অত্যাচারের খাড়া উচু করে ধরে আছে, সেই ধর্ম গরুদের প্রতি জানাই চরম ঘৃণা।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৪৫