দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে, এলাকা সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ির পরিচিত এক এসআই এর সাথে বসে চা খাচ্ছিলাম।
কথা প্রসঙ্গেই বললো খুবই ব্যাস্ত সময় পার করছে, কবে যে এই নির্বাচন শেষ হবে, এই প্রহসনের নির্বাচনের পর বিএনপি জামায়াত না জানি আবার কোন তামাশা শুরু করে এসবই সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। এখনি যেতে হবে অমুক জায়গায় কয়েকজন ওয়ারেন্টের আসামী আজ শহরে ঢুকেছে।
আমি প্রশ্ন করলাম আসামী শহরে ঢুকেছে আপনারা জানলেন কিভাবে?
এসআই বলল শহরে কতজন অপরাধী আছে কত জন শহরে আছে কতজন শহরের বাইরে আছে সবই আমাদের জানা। বলেই পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে দেখালো এই দেখুন।
দেখলাম নামের বিশাল এক লিস্ট।
জানতে চাইলাম এরাই কি শহরের অপরাধী?
এসআই বলল, আরে না এটা হলো আমার আওতাধীন এলাকার চোরের লিষ্ট। এখানে গরু চোর হতে শুরু করে মসজিদের জুতা চোর পর্যন্ত সবার নাম আছে। তার মাঝে কয়টা এলাকায় আছে কয়টা জেলে আছে কয়টা এলাকার বাইরে আছে কোথায় আছে সবই আমাদের জানা।
এছাড়াও ছিনতাইকারী, ডাকাত, মাদক ব্যাবসয়ী,বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের আলাদা আলাদা লিষ্ট আছে।
সত্যি বলতে বুকটা ভরে গেল গর্বে,কত এডভান্স আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী। অপরাধীরা যতই যা করুক না কেন কেউ তাদের আওতার বাইরে না।
৫ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন শেষ হলো, পুতুল সরকার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হলো।
তারপরই শুরু হলো দেশজুড়ে নতুন নতুন সব ইতিহাস সৃষ্টি। আর অপরদিকে সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের বানী শুনে মনে হয় তাদের জন্যই হয়তো বাংলাদেশ নামের দেশটি এখনো টিকে আছে, নয়তো বিএনপি জামায়াত এতোদিনে দেশটাকে টেনে নিয়ে বঙ্গোপসাগরের ফেলে দিতো।
কিন্তু পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা,এই সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরে দূর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এই সরকারের আমলে যত সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে তা স্বাধীনতার পরে আর কোন আমলে দেখা যায় নি। মুক্তমনা লেখক হত্যায় এই সরকার সব থেকে এগিয়ে। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন শুন্যের কোঠায়। কেউই এখন নিরাপদ নয় ঘরে কিংবা বাইরে।
পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃত উদিয়মান জঙ্গি দেশ হিসাবে বাংলাদেশর নাম। তারপরও দেশের মন্ত্রিরা মিডিয়ার সামনে দাঁত বের করে বলছেন,"দেশে কোন জঙ্গি নাই"!
ওনারা সবচেয়ে জ্ঞানী, ওনারাই ভাল জানেন। ওনাদের কথাই বিশ্বাস করে আমরা বলি দেশে কোন জঙ্গি নেই। তাহলে আল কায়দা ভারতীয় শাখা, আনসারুল্লাহ বাংলা, হরকাতুল জিহাদ, আল জামায়াতুল মুজাহিদিন ওরা কারা? প্রতি মাসে গড়ে একজন করে ব্লগার হত্যা এগুলো কিসের আলামত? কারা করছে এইসব? প্রশ্নের বিপরীতে মুখস্থ বুলি, "বিএনপি জামায়াত"।তাহলে আপনাদের নিরাপত্তা বাহিনী করছে কি? যাদের হাতে জুতা চোরের লিষ্ট থাকে, তাদের হাতে কি এইসব সিরিয়াল কিলারদের লিষ্ট নেই?
যতই বলেন,"সুষ্ঠু তদন্তের পরে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে"।
হুমায়ূন আজাদ স্যার হতে হালের দীপন হত্যা,কোন হত্যারই তো সুষ্ঠু তদন্তও দেখলাম না বা বিচারের আওতা কতদূর তাও দেখলাম না।
যাও কয়টা উল্টাপাল্টা গ্রেফতার দেখান তারপর কোন অদৃশ্য হাতের কারসাজিতেই হোক বা আপনাদের বিচার বিভাগের দূর্বলতার কারণেই হোক তার জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। দোষীদের বিচার কতটুকু হয় বা হয়েছে তা আপনারাই জানেন।
আর দেশের জনগণ টিনের চশমা পড়ে বসে আছে কিছুই দেখছে না। মনে হয় ডাক্তার দেখিয়ে চশমার পাওয়ারটা আরেকটু বাড়াতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৩৪