এক লোকের পেটে গন্ডগোল, প্রচন্ড পাতলা পায়খানা। হাত থেকে বদনা রাখার সুযোগই পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় তার বাজারে যাওয়া খুবই জরুরি, তো গেল বাজারে। বাজারে যেতেই আবার নিন্মচাপ, কোন উপায়ান্তর না দেখে সে বাজারের পাশেই একটু আড়ালে গিয়ে কর্ম সম্পাদন করছিলো। তা দেখে বাজার হেফাজতকারী কিছু লোক লাঠি হাতে দৌড়ে এলো,"আর বলতে লাগলো,এখানে পায়খানা করে বাজারের পরিবেশ নষ্ট করছিস,পাজি আজ তোর মাথা ফাটিয়ে দেবো"।এভাবেই গালাগালি করতে করতে বাজার হেফাজতকারীরা লোকটির দিকে দৌড়ে গিয়ে লাঠি উচিয়ে মারলো বাড়ি। লোকটিও ভয় পেয়ে তার আগেই দিলো দৌড়, সেই বাড়ি লোকটির শরীরে না পরে পরলো গিয়ে ত্যাগ করা মলের উপর। পাতলা মলে লাঠির বাড়ি পরতেই সেই মল ছিঁটে গিয়ে পরলো সকল বাজার হেফাজতকারীর পরিহিত কাপড়ে। অবশেষে আর কি, তখন বাজার হেফাজতকারীরাই ঘুরে ঘুরে বাজারে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নিজেরাই পরিবেশ নষ্ট করলো। যেটা একজনে বাজারের কোন আড়ালে বসে করছিলো সেই কাজ তখন দশজনে মিলে বাজারময় ঘুরে ঘুরে করলো।।
এই গল্পের সত্যতা যাচায়ের চেষ্টা করা নিছক বোকামি। কারণ ইহা একটি কাল্পনিক ঘটনা। নিন্মের আলোচনার সাথেও কোন যোগসূত্র নেই।
সেই ২০০৪এর ঘটনা হুমায়ূন আজাদ স্যার, একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। নাস্তিক কি, যা বাংলার আপামর জনগণ বলতে গেলে জানেই না। হুমায়ূন আজাদ খুন হলেন কিছু ধার্মিক দ্বারা, দেশের জনগণে প্রথম পরিচয় নাস্তিকতার সাথে। পরে তসলিমা নাসরিন ধার্মিদের কারনেই দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন।দেশের শিক্ষিত মানুষ কৌতুহল বসত তাদের লেখাগুলো পড়েছেন। অধিকাংশেরই মতামত ছিলো নীতিবাচক, কম সংখ্যক মানুষের মাঝেই এক নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়েছে,আর এক হতে দশের জন্ম হয়েছে।
সেই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক রাজিব হায়দার হতে দীপন পর্যন্ত সকল মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যার পর দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ মানুষের মাঝে নীতিবাচক মনোভাব নয় বরং মিশ্র মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু লোক ধর্মের দোহায় দিয়ে এই হত্যাকান্ডের সমর্থন করছে, কিছু লোক যৌক্তিকতার মাপকাঠিতে এর বিশ্লেষণ করছে। তাতেই আবার সেই কৌতুহল কাজ করছে নিহতদের লেখাগুলো পড়ার জন্য আগ্রহী হচ্ছে অনেকেই। যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সকল ব্লগগুলোতেও এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঘৃণাও প্রকাশ করছে অনেকে। দেখেই মনে হচ্ছে সেই নাস্তিকতার রোগে এখন দশ হতে সংক্রামিত হয়ে একশ বা হাজার বা লাখে উন্নীত হয়েছে।
ধার্মিকরা এইসব নাস্তিকতা আর ব্লগারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যার পর দেশে নাস্তিকতা আর ব্লগ কোন অচেনা অজানা বিষয় না। এখন যদি কারো কাছে জানতে চাওয়া হয়, ব্লগ কি? সে বলবে না যে"ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালায়"।
যদি কারো কাছে জানতে চাওয়া হয়,নাস্তিকতা কি?
অনেকেই বলবে না যে"আল্লাহ খোদায় অবিশ্বাসী"।
অনেকেই বলবে যে,"যুক্তি আর বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মের বিচার করার নামই নাস্তিকতা"।
সেই ২০০৪এ হুমায়ূন আজাদ হতে চলতি সপ্তাহে দীপন হত্যা পর্যন্ত, পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। দেশের মানুষ আজ অনেক সচেতন। আর এই সচেতনতার পিছনে যদি বলেন লেখকদের হাত আছে তবে ভুল ভাবছেন। এর সবটুকু কৃতিত্বই ধার্মিকদের। লেখকরা হয়তো সারা জীবনে দুইচারটা পাঁচটা বই লিখে মরে যেতো।ঘরের কোণে পড়ে থাকতো উঁই পোকায় কাটতো এইসব ছাইপাশ পড়তো কে? ধার্মিকরা তাদের নেতার কথা শুনে সেই লেখকের বিরুদ্ধে আন্দোলন তাদের হত্যা করে পাঠকের কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। আর তাতেই অধিকাংশ পাঠকেরা নাস্তিকতা মুক্তমনার রোগে সংক্রামিত হচ্ছে।
প্রতিটা মুক্তমনা লেখকের উচিৎ এইসব ধার্মিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারন তারা যেই সপ্ন নিয়ে মুক্তচিন্তার চর্চা করছে তার বাস্তবায়ক এইসব তথাকথিত ধার্মিকরা। তা না হলে বই লিখে তাদের চিন্তা ছড়িয়ে দিতে পারতো না আগামী হাজার বছরেও। তারা যে পণ্য উৎপাদন করছে তার প্রচারের কাজ করছে এই ধার্মিকরাই। কথায় আছে পণ্যের প্রচারেই প্রসার।কিন্তু মুক্তমনা অকৃতজ্ঞরা তা করবে না। কারণ তারা জ্ঞানের গরিমায় গর্বিত।
প্রিয় ধার্মিক ভাইয়েরা, মনে কষ্ট নিয়েন না। আপনারা যেভাবে প্রচারণার কাজ করছেন সেভাবেই চালিয়ে যান। বুঝেনই তো এই দেশে কাজের সঠিক মুল্যায়ন কেউ করে না।।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২৮