ভিষণ জটলা,চিৎকার চেচামেচি, জানতে উঁকি দিলাম বিষয়টা কি দেখার জন্য। দেখলাম এক ঝালমুড়ি ওয়ালাকে পেটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে হুজুর টাইপের কিছু উঠতি বয়সের ছেলে ছোকড়া। দেখে মনে হচ্ছে পাশের মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র ওরা। কারণটা কি? জানতে চাইলে বলল ঝালমুড়ি ওয়ালা নাকি কোরআন শরীফের কাগজে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। কি আষ্পর্ধা!
ঘটনাক্রমে সেখানে এক স্থানীয় বড় ভাইয়ের আগমন,তার হস্তক্ষেপে হুজুরেরা কিছুটা শান্ত হলেও মিমাংসা হচ্ছে না, মিমাংসার ভার পরলো বড় ভাইয়ের উপর।
সেই বড় ভাই দেখতে চাইলো কোন কাগজে ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলো সেই ঝালমুড়ি ওয়াল।
ঝালমুড়ি ওয়ালা তখন একটা বই বের করে দিলো। বড় ভাই দেখে বলল, আরে এতো গাইড বই। দাখিল পরিক্ষার গাইড। এটা তো কোরআন শরীফ না। কোরআন শরীফ কোথায়?
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল,"ভাই কিসের কোরআন শরীফ আর কিসের গাইড আমি এই বইয়ের কাগজ দিয়েই ঝালমুড়ি বিক্রি করছি,ভাঙ্গারির দোকান থেকে ওজন দিয়ে কিনে এনেছি। ভাই আমি মূর্খ মানুষ আরবীও চিনি না বাংলাও চিনি না। সব লেখাই আমার একরকমই মনে হয়"।
বড় ভাই তখন হুজুরদের কাছে জানতে চাইলো, কোথায় কোরআন শরীফ"?
হুজুরেরা বলল,"দেখেন না আরবী লেখা কাগজ? লোকজন ঝালমুড়ি খেয়ে রাস্তায় কাগজ ফেলে দেবে মানুষে পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে এতে গোনাহ হবে না"?
বড় ভাই বলল,"আরবী লেখা হলেই কি তা কোরআন শরীফ হয়ে গেল? আরবে তো আরবী ভাষায় পত্রিকা বের হয় সেই পত্রিকা পড়ে সবাই ফেলে দেয় এতে আরবের মানুষের গোনাহ হয় না? আর এতো গাইড বই, যেহেতু দাখিলের গাইড সেহেতু এই বই তোমাদের মতো কোন হুজুরই পড়েছে। পড়া শেষ বিক্রি করে দিয়েছে কাগজওয়ালার কাছে। সে বিক্রি করলো কেন?আর তোমরা এই গাইড বইয়ে আরবী লেখা দেখে এই ঝালমুড়ি ওয়ালাকে মারতে চাইছো, এর দোষ কি?
আরবে তো আরবী অক্ষরে চটি বইও ছাপানো হয় সেই বই এনে দিলে তো তোমরা মনে হয় সেজদা করা শুরু করে দিবা। এখনই জিহাদী ভাব চলে আসছে ভিতরে? কোন শিক্ষকে শিক্ষা দিচ্ছে এইসব"?
হুজুরেরা হালে আর পানি না পেয়ে একে একে কেটে দিলো। আর আমরা দুচোখ ভরে নব্য জিহাদীদের পরাজয় দেখলাম।ভীড় কমে যাওয়ার পরে সেই বড় ভাই ঝালমুড়ি ওয়ালাকে জিজ্ঞেসা করলো আসলে কি হয়েছে বলতো?
ঝালমুড়ি ওয়ালা তখন যা বলল আমরা স্থম্ভিত হয়ে গেলাম।
ছেলেগুলো জোড় করে ঝালমুড়ি খেয়ে যায় বাকির কথা বলে পরে আর টাকা দেয় না। আজ যখন ঝালমুড়ি ওয়ালা বাকি দিতে অস্বীকৃতি জানালো তখন ছেলেগুলো সামনে রাখা আরবীতে লেখা বইটাকে ইস্যু করে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে পেটানোর পরিকল্পনা করে ফেলল। যাতে করে তাদের বাকি না দেওয়াতে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে শায়েস্তাও করা যায় আবার আশেপাশে লোকজনের সমর্থনও পাওয়া যায়।
উপরোক্ত এই সত্য ঘটনাটিতে আমরা কি শিখলাম?
চুপ করেন, যাই শিখেছেন তা মনে মনে রাখেন। মুখে বললে হয়তো ৫৭ধারার রোলার এসে কাঁধে চাপবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৫০